May 18, 2024
ডেস্ক রিপোর্ট : কয়েক মাস ধরে চড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ঈদের ছুটির এক দিন আগে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। ওই দিনই হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ব্যবসায়ীরা প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করে। তবে ঈদের লম্বা ছুটির কারণে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে বাজারে এখনো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চাল ৪৮-৫০ এবং অন্যান্য চাল ৫০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত এক মাসে কোনো ধরনের চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। এর মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩.৩০ শতাংশ, যা এক বছরের হিসাবে প্রায় ৪৭ শতাংশ। এখন বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪৮ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া এই এক মাসে সরু চালের দাম বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ, এক বছরের হিসাবে বৃদ্ধির পরিমাণ ১৬.১৬ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে বাজারে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেটের কেজি ৫৫-৫৮ টাকা আর ভালো মানেরটা ৫৮-৬০ টাকা।
ঢাকার কারওয়ান বাজার ও পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো আমদানি করা চাল বাজারে আসেনি।
বাদামতলীর চালের পাইকারি বিক্রেতা শাওন ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ঈসমাইল বলেন, এখনো বাজারে আমদানি করা চাল আসেনি। সেগুলো আসতে থাকলে দাম কমে আসবে। সরবরাহে কোনো ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে তাঁরা জানান, মাস দেড়েক হয়েছে নতুন চাল বাজারে এসেছে। দাম বেশি হলেও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
রাজধানীর শাহজাদপুরের ফাতেমা ট্রেডার্সের কামাল জানান, বাজারে এখন বেশির ভাগই নতুন চাল। তার পরও গত এক মাসে দাম তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। আমদানি করা চাল বাজারে এসেছে কি না সে বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
হাতিরপুল বাজারে মিল্টন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি চাল আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু বাজারে সেসব দেখছি না। যে কারণে বেশি দামেই কিনছি। ’
ঈদের ছুটির আগে ২৩ জুন ভোমরা ও হিলি বন্দরে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ছাড় করিয়েছে আমদানিকারকরা। গত ২ তারিখে বন্দর খুললেও এদিন কোনো চাল আসেনি।
ভোমরা বন্দরের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা বিকাশ কান্তি বড়ুয়া জানান, বন্দর রবিবার খোলা থাকলেও সেদিন কোনো চাল আমদানি হয়নি। কারণ সেদিন ভারতে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্দর বন্ধ ছিল। তবে আমদানিকারকরা চালের প্রচুর এলসি খুলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ট্যাক্স কমবে এই খবরে বন্দরে আটকে থাকা পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল ঈদের আগে দেশে প্রবেশ করেছে। আমদানিকারকরা আরো প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টনের ঋণপত্র খুলেছে। তবে ঈদের পর রবিবার কোনো চাল আমদানি হয়নি।
জানা গেছে, শুল্ক কমানোর আগে যেখানে প্রতি টন চাল আমদানিতে ৯ হাজার ১২৫ টাকা শুল্ক দিতে হতো, এখন সেখানে দিতে হচ্ছে তিন হাজার ২২৫ টাকা।
সরকারি গুদামে মজুদ কমে যাওয়ায় এবং চুক্তি করেও মিলাররা সরবরাহ না করায় সরকারও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কালের কণ্ঠ
রমজান প্রায় শেষ। তিন মাস আগে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনও কমেনি। ঈদের বাকি আর মাত্র একদিন। এই সময়ে রাজধানীর বাজারে কিছু পণ্যের দাম আবারও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচ, শসা, লেবু, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, টমেটো, সেমাই ও চিনির দাম। অতিবৃষ্টির কারণে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর ও শাহজাহানপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। দোকানিরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আজ রবিবার এ দাম আরও বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সব ধরনের সেমাইয়ে প্যাকেট প্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। মসলায় দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর চিনির দাম খুব কম সময়ের জন্য মাঝখানে প্রতিকেজি ৭০ টাকায় নামলেও, আবার তা বেড়ে গিয়ে ঠেকেছে ৮২ টাকায়।
এদিকে সবজির বাজারও বেশ চড়া। নতুন করে বেড়েছে টমেটো ও কাঁচামরিচের দাম। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া টমেটো ১২০ টাকা এবং ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনিয়া পাতার কেজি স্থানভেদে ২০০ টাকা । পুদিনা পাতার দামও একই রকম। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটোর দাম ৭০ টাকা এবং মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। অন্য পণ্যগুলোর দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্য দোকানিদের মতো ব্যস্ততা বেড়েছে মুদি দোকানিদেরও। ক্রেতাদের কাছে প্যাকেট সেমাইয়ের কদর বেশি।বাজারে ৫ থেকে ৬ রকমের প্যাকেট সেমাই পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে কুলসুম, বনফুল, ফুলকলি ও ড্যানিশ লাচ্ছা সেমাই। খোলা লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। গতবছর যে সেমাই বাজারে পাওয়া যেত ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এ বছর প্রতি কেজি খোলা লাচ্ছা সেমাই কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে। স্পেশাল সেমাইয়ের দাম উঠেছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটো কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। কেজিপ্রতি চিনি ৭৫ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ছোলা ৯০, দেশি মুগ ডাল ১৩০, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০, মাশকলাই ১৩৫, দেশি মসুর ডাল ১২৫ ও ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল ব্রান্ড ভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীনের আদা ১২০ এবং কেরালা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্যের বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ৫০ থেকে ৭০, শসা ৪০, চাল কুমড়া প্রতিপিস ৩৫ থেকে ৪০, কচুরলতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পটল ৪০, ঢেঁড়স ৫০, ঝিঙ্গা ৬০, চিচিঙ্গা ৪০, করলা ৫০ থেকে ৬০, কাঁকরোল ৪০, আলু ১৮ থেকে ২০, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ ও কচুরমুখী ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া লেবু হালিপ্রতি ২০ থেকে ৪০, লালশাক ১৫, পুঁইশাক ২০ ও লাউশাক ২০ টাকা আটি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৮, পারিজা চাল ৪৬, মিনিকেট (ভালো মানের) ৬০, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৬, বিআর২৮ ৫০ থেকে ৫২, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬২, পাইজাম চাল ৫০ থেকে ৫২, কাটারিভোগ ৭৬ থেকে ৭৮, পোলাওর চাল ১০০ (পুরনো) ও নতুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৪০ থেকে ৩২০, সরপুঁটি ১৮০ থেকে ৩৫০, কাতলা ৩৩০ থেকে ৩৬০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০ ও চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ ও প্রতিটি ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৬০০ টাকা। গরুর মাংস ৫০০ থেকে ৫২০ ও খাসির মাংস ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০, লেয়ার মুরগি ২০০, দেশি মুরগি প্রতি পিস ৪০০ ও পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের গেটে আসলে বোঝা কঠিন যে নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়েছেন অনেক মানুষ! প্রবল ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকেও মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যেতে হবে আপনাকে। একই দৃশ্য চোখে পড়লো নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনীসহ সব মার্কেটেই। ঈদের শেষ সময়ের কেনাকাটার জন্য মানুষ ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে।
বাসাবো থেকে ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে নাজমা খানম এসেছিলেন গাউসিয়া মার্কেটে। জানালেন মেয়ের জামা কিনেছেন আগেই। এখন চুলের ব্যান্ড ও চুড়ির মতো ছোটখাট কেনাকাটাগুলো সারতে এসেছেন। একই কথা জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা হোসনে আরা। তবে ভিড়ের জন্য পছন্দের জিনিস খুঁজতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন। জামার সঙ্গে মিলিয়ে কানের দুল ও গলার সেট কিনছিলেন বীথি। জানালেন, গাউসিয়ার এখানে অনেক ধরনের গয়না থাকে। ফলে পছন্দ করে কেনা সহজ। তবে ভিড় অনেক বেশি। সালোয়ার কামিজের খোঁজে নিউমার্কেটের দোকান ঘুরছিলেন দুই বোন সুমি ও তানিয়া। ‘শেষ সময়ে আসলে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়। এজন্যই প্রতি বছর রোজার শেষের দিকে কেনাকাটা করি’- বলেন তানিয়া।
কম দামে বিক্রি করার বিষয়টি স্বীকার করলেন গাউসিয়ার তৈরি পোশাক বিক্রেতা আবদুল্লাহ। ‘ঈদের আগে আগে সবাই ক্রেতা না ফেরানোর চেষ্টা করে। একটু কম দামে হলেও বিক্রি করে দেয়। অনেকে আবার স্টক ক্লিয়ার করতে ডিসকাউন্টও দেয়’- বললেন তিনি। হকার্স মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা নাজমুল করিম জানালেন, চাঁদরাতে কেনা দামেও বিক্রি করা হয় শাড়ি।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আড়ংয়ে ঘর সাজানোর পণ্য কিনছিলেন গুলশানের বাসিন্দা তানজিলা। তিনি জানালেন কেনাকাটা বেশিরভাগই শেষ। এখন কেবল শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি প্রস্তুতি। ‘শেষ কয়েকদিন মার্কেট ঘুরে কাটাতে বেশ ভালোই লাগে’এমন কথা জানান ধানমন্ডির জেনেটিক প্লাজায় আসা মিম। এত ভিড়ে ঠিকমতো কেনাকাটা করা যায়? ‘ভিড় মানেই উৎসবের আনন্দ। সবাই কিনছে, ঘুরছে। এই উৎসবের আমেজটা যেমন ভালো লাগে, তেমনি ঘোরাঘুরি করতে করতে চোখে পড়ে যায় প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই যেটা কিনা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম কিনতে’ বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। জেনেটিক প্লাজা ও সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটে চাঁদরাতে মেহেদি উৎসব চলে। এইসব উৎসব ঘুরে মেহেদি লাগাতেও পছন্দ করেন তিনি।
গাউসিয়া মার্কেটের সামনে চুলের ব্যান্ড বিক্রি করছিলেন হকার চান মিয়া। তিনি জানালেন শেষ দুইদিন ধরেই বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। বাকি দিনগুলোতেও এমন বিক্রির প্রত্যাশাই করছেন। সীমান্ত স্কয়ারে কেনাকাটা করছিলেন আলতাফ চৌধুরী। তিনি জানান, অফিসের কারণে কেনাকাটার সময় পাননি। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর তাই এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। পরিবারের সবার জন্যই উপহার কিনবেন আগামীকাল পর্যন্ত।
বসুন্ধরা সিটির তৈরি পোশাক বিক্রেতা শমসের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। জানালেন, পুরো রমজানে যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকই হয় সাতাশ রোজার পরে। এ সময় মানুষ কাপড় দেখতে নয়, কিনতে আসেন। ফলে রোজার শেষ সময়টা ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিন শেষে দেশের রিজার্ভ ভাণ্ডার ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল। এ রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে। রেমিট্যান্স ভাটার কারণে ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়নে আসতে সময় লাগল প্রায় ৭ মাস।
বছরের মাঝপথে এসে সব উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটিয়ে রেকর্ড গড়েছে দেশের রিজার্ভ ভাণ্ডার। যদিও বছরের শুরুতেই রেমিট্যান্স খরা। বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে এ খরা রূপ নেয় মহামারিতে। গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে। কপালে ভাঁজ পড়ে যায় সরকারের শীর্ষ মহলে। দেশের রিজার্ভের কী হবে? রেমিট্যান্সই যে বাংলাদেশের রিজার্ভর প্রধান উৎস।
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতি ঈদের মতো এবারও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে নতুন নোটের বেচাকেনা। ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন টাকার বিনিময়ের পাশাপাশি ফুটপাথেও জমে উঠেছে নতুন নোটের বাজার। রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিলসহ গুলিস্তান, চকবাজার এবং সদরঘাটের বেশ কয়েকটি জায়গায় চলছে নতুন টাকার ব্যবসা। পাশাপাশি চলছে পুরনো ও ছেঁড়া টাকার বদল। নতুন টাকার গ্রাহকরা জানান, ঈদে নাতি-নাতনীদের বকশিশ দিতে নতুন টাকার কোনো বিকল্প নেই। নতুন টাকা পেয়ে যেন ওরা চাঁদ হাতে পায়। এজন্য নতুন টাকা সংগ্রহ করা। তাছাড়া নতুন টাকা আমার নিজেরও ভালো লাগে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে যারা ব্যাংকে যেতে পারছেন না এবং লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে চান না, মূলত তারাই ফুটপাথ থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করছেন। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশেই গত কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে নতুন টাকার এই রমরমা বাণিজ্য। ফুটপাথে ডালায় নতুন টাকা সাজিয়ে বসে আছেন এই মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ আবার হেঁটে হেঁটে ক্রেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিক্রি করছেন নতুন টাকা।
নতুন টাকার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে প্রতিটি ৫ টাকার বান্ডিলে রয়েছে ৫০০ টাকা। পুরনো টাকার বিনিময়ে যা বিক্রি করছেন ৬০০ টাকায়। ২ টাকার প্রতিটি বান্ডিলে রয়েছে ২০০ টাকা। যা বিক্রি করছেন ২২০ টাকায়। ১০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলে রয়েছে ১ হাজার টাকা। যা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৮০ টাকায়। ১০০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলে রয়েছে ১০ হাজার টাকা। যা বিক্রি করছেন১০ হাজার ১০০ টাকায়। তবে আরো কয়েকদিন পর এই দাম আরো বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা।
আফরোজা বেগম মানুষের বাসায় কাজ করেন। যা আয় করেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু টাকা পুঁজি করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করেন নতুন নোট। আর এই নিয়ে নেমে পড়েছেন ব্যবসায়। ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় বলে জানান আফরোজা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সপ্তাহে একদিন আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মাত্র ৮ হাজার ৭০০ টাকা দেয়। সেখানে গিয়েও লাইন ধরতে হয়। অনেক চেষ্টার পর টাকা নিয়ে ফুটপাথে এসে বসি। আরেক টাকা ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা আনতে সেখানকার কিছু কর্মচারীদের কমিশন দিতে হয়। তাই তেমন একটা লাভ থাকে না।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহাদত মতিঝিলে ফুটপাথে নতুন টাকার বাজার থেকে ৫ ও ১০ টাকার দুটি বান্ডিল কিনেছেন। তিনি জানান, ঈদ আসার আগেই নাতি-নাতনীদের বকশিশ দিতে হয়। তাই আগেভাগেই সংগ্রহ করে রাখলাম। ঈদ বকশিশে নতুন টাকার জুড়ি নেই। নতুন টাকা পেয়ে যেন ওরা চাঁদ হাতে পায়।
এদিকে ব্যাংক থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনাসহকারে নতুন টাকা সংগ্রহ করছে মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করছেন সাধারণ মানুষ। গত ৮ই জুন থেকে নতুন টাকার বিনিময় শুরু করে ব্যাংকগুলো। যা চলবে আজ পর্যন্ত।
নতুন টাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড কর্পোরেট, অগ্রণী ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড, সিটি ব্যাংকের মিরপুর, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাওরান বাজার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ); উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার, সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট, ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান, রূপালী ব্যাংকের মহাখালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর; জনতা ব্যাংকের রাজারবাগ, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো, ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দক্ষিণ খান এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বনানী ও ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখায় পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র: মানবজমিন
চার লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উন্নয়নমূলক হলেও এর বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। বরাদ্দ যা ই থাক বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতেরও তাগিদ দেন তারা। নতুন ভ্যাট আইনে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন হবে বলে মত তাদের।
বৃহস্পতিবার সংসদে ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই বাজেট ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আর এনবিআর যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করে এই লক্ষ্যমাত্রা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
প্রায় সব মন্ত্রণালয় বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ রাখা হয়েছে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে।
সন্ত্রাসীদের ধরতে ফেইসবুক, গুগল আর ইউটিউব আর টুইটারের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একত্র হয়ে কাজ করা উচিৎ, এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
প্রতারকদের ধরতে ক্যাসিনোগুলো যেভাবে একে অন্যের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে, ঠিক সেভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এর মাধ্যমে হ্যাকিং, ম্যালওয়্যার, ভুয়া সংবাদ ও শিশু পর্নোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লড়াইয়ে সহায়তা পাওয়া যাবে। ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন ডিজিটাল সিটিজেনস অ্যালায়েন্স’স এর নতুন প্রকাশ করা ‘ট্রাবল ইন আওয়ার ডিজিটাল মিডস্ট’ প্রতিবেদনে এই ‘বিতর্কিত’ পরামর্শগুলো দেওয়া হয়, বলা হয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে।
সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “যখন ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো নীতিমালা ও কারিগরি বিষয়গুলোতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে, তখন তারা বাজে লোকদের নিয়ে তথ্য শেয়ার করছে কিনা তার কোনো প্রমাণ নেই। তারা অপরাধী ও বাজে লোকদের কোনো ঝামেলা ছাড়াই এক প্লাটফর্ম থেকে অন্যটিতে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।”
“অপরাধমূলক আচরণের বিষয়ে তথ্য শনাক্ত ও শেয়ারে একত্রিত হয়ে কাজ করার উদাহরণ অনেক খাতেই রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাসিনোগুলো প্রতারণার বিষয়ে তথ্য শেয়ার করে, আর কয়েক দশক ধরে খুচরা বিক্রির খাতে জাল ক্রেডিট কার্ডের তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে।”
“গ্রাহকদের ক্ষতি করতে প্লাটফর্মগুলোকে যারা ব্যবহার করতে চায় তাদের আরও দ্রুত ঠেকাতে ও শনাক্ত করতে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও এমন কিছু করা যেতে পারে।”
বড় প্রতিষ্ঠান আর সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ডেটা শেয়ারের এই ধারণা ‘বিশাল উদ্বেগের’ বিষয়, এর মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেছে দৈনিকটি।
লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ছয় শতাংশ কাজ পিছিয়ে থাকার কারণে পদ্মা সেতুর কাজের গতি বাড়াতে আরও একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামার আনা হয়েছে। বর্তমানে যে দু’টি হ্যামার দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ চলছে, এ দুটোর ক্ষমতা যথাক্রমে ২ হাজার ৪০০ ও ২ হাজার কিলোজুল। আর নতুন যে বিশাল হ্যামারটি দুই একদিনের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হবে, সেটির ক্ষমতা ৩ হাজার কিলোজুল। এতে দ্রুত গতিতে পদ্মা সেতুতে পাইলিংয়ের কাজ করা যাবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
জার্মানির মিউনিখে তৈরি এ হ্যামারটি গত ২৭ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসে পোর্ট অব রটারড্যাম থেকে রওনা দেয়। গত ৫ জুন সোমবার সকালে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছে হ্যামারটি।
বাংলা ট্রিবিউনকে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ শতাংশ, কিন্তু কাজ হয়েছে ৪২.৫০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে। সেজন্য একটি নতুন হ্যামার আনা হয়েছে । আর এখন যেখানে ছয়টি কপার ড্রামে কাজ চলছে, তার পরিবর্তে ১৩টি প্ল্যাটফর্মে কাজ করা হবে।’
যদিও ৪২.৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু সাধারণ চোখে তা বোঝা যায় না উল্লেখ করে দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, বেশিরভাগ কাজই পাইলিংয়ের, যা মাটির নিচে হয়েছে। ৪০টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি স্প্যান রেডি, কিন্তু বসানো হয়নি একটিও। যে সুপার স্ট্র্যাকচারগুলো তৈরি হয়েছে, তা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে প্যানেল করে রাখা আছে। ২০টির মধ্যে মাওয়ায় আছে সাতটি, আর বাকি ১৩টি রয়েছে চীনে। স্প্যানগুলো চীনের ডক ইয়ার্ড থেকে সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে জাহাজে করে। চীন থেকে মাওয়ায় এসে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৮ দিনের মতো। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্থান সংকুলানের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হয়। তাই তৈরি স্প্যানগুলো এখনও চীনে আছে, পর্যায়ক্রমে আনা হবে।
এদিকে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ প্রায় শেষের দিকে। মাওয়া প্রান্তে ১.৬৭ কিলোমিটার মেইন রোড ও দুই কিলোমিটার লিংক রোডের কাজ গত জুলাইতে শেষ হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে ১০.৫৭ কিলোমিটার (প্রায়) মেইন রোড, তিন কিলোমিটার লিংক রোড, ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও ছয় কিলোমিটার ফেরি শিফটিং রোডের কাজের মধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ।
নির্বাহী প্রকৌশলী (এপ্রোচ রোড) সৈয়দ রজব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ডিসেম্বর মাসেই অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হলেও গত পাঁচ মাসে ধীর গতিতে বাকি ১৩ শতাংশ কাজ করতে হয়েছে। কারণ মাটি সেটেলমেন্ট ও সেতুর দুই প্রান্তে থানা নির্মাণের কাজও নতুন করে আমাদের দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এএমএল-এইচসিএম জেবি’কে (আব্দুল মোনেম গ্রুপ) অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজটি দেওয়া হয়। ২০১১ সালে মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের এ কাজের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৯৩ কোটি টাকা (প্রায়) ও জাজিরা প্রান্তের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা (প্রায়)। তবে এখন থানা নির্মাণ, ফেরি ঘাট শিফটিংয়ের কিছু কাজ নতুন করে দেওয়ার ফলে মূল্য কিছুটা বাড়বে।
এদিকে, দ্রুত গতিতে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে প্রচণ্ড রোদ ও গরমের মধ্যেও শ্রমিকরা কাজ করছেন। পাইলিংয়ের কাজ নদীর মধ্যে বসানো কপার ড্রামের মধ্যে করতে হয়। সেখানে বাতাস না ঢোকায় সাধারণ শ্রমিকদের কষ্ট কমাতে এয়ার কুলার বা চিলারের মাধ্যমে ‘কুলিং বাতাস’ ঢুকিয়ে পরিবেশ কিছুটা অনুকূল করার চেষ্টা হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেফটি ইঞ্জিনিয়ার যারা আছেন, তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। কপার ড্রামে কুলিং বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে। এছাড়া শ্রমিকদের স্যালাইনও সরবরাহ করা হচ্ছে। ’
এই সেতু প্রকল্পে দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, প্রায় ৮০০ বিদেশি শ্রমিকের মধ্যে চীনাদের সংখ্যাই বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৫০০ শ্রমিকসহ প্রজেক্ট ম্যানেজার ও ম্যানেজমেন্ট লেভেলের কর্মকর্তা রয়েছেন।
এদিকে, দ্বি-স্তর বিশিষ্ট পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপর বসানোর জন্য স্ল্যাব নির্মাণের কাজ গত দুই সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে। স্ল্যাব বসানো হবে মোট তিন হাজার । এর ওপর বিটুমিন দেওয়া হবে। মূলত এই স্ল্যাবের ওপর দিয়েই যানবাহন চলবে।
পদ্মা নদীতে এখন অপেক্ষা করছে চার হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ক্রেন, যার কাজ হবে স্প্যানগুলোকে দুই পিলারের ওপর সঠিকভাবে বসিয়ে দেওয়া। চলতি মাসেই স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হলে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সবার কাছে দৃশ্যমান হবে, বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান পদ্ধতিকে বাতিল করে এটিকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে এই প্রস্তাবসহ মোট ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশে কার্বন নির্গমন হ্রাসকরণ, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের স্যানিটারি অবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুদান দেবে জাইকা। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল একনেক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন প্রাথমিক ধাপের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এর ফলে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। নিন্দুকেরা যে যাই বলুক স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, এটি হবে।’
মঙ্গলবার (৬ জুন) একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ২৫১ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প। ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প। সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজসমূহের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এছাড়া, শ্রম পরিদফতরাধীন ৬টি অফিস পুনর্নির্মাণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি টাকা। প্রকিউরমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কেরানীগঞ্জে বিউবোর নিজস্ব জমির ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা দেয়াল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী উপমন্ত্রী সচিবসহ পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ও আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।