December 6, 2024
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন : রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতা এই যে আমরা আবার দেখলাম, তা তো নতুন কিছু নয়। সহিংসতাটা এর আগেও ছিল, বিশেষ করে গত বছরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বড় ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। তখন মিয়ানমারের ৯জন পুলিশ সদস্য মারা গিয়েছিল এবং পাশাপাশি রোহিঙ্গা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের সীমান্তের উপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এটার পরে আবার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। এর মাধ্যমে একদিকে আমরা দেখছি যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কতগুলো শান্তি উদ্যোগ ছিল, বিশেষ করে জাতিসংঘের তৎপরতা আমরা লক্ষ্য করছিলাম, সেই তৎপরতার আরও গুরুত্ব বাড়তে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ তার সীমান্তে যতই বাধারোপ করুক না কেন, যে ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন রোহিঙ্গাদের উপর চলছে, এর ফলে হয়তো পুরোপুরি সীমান্ত সুরক্ষা করা সম্ভব হবে না। ফলে বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গাদের উপরে চাপ সৃষ্টি হবে এবং পাশাপাশি এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটা টানাপড়েন তৈরি হবে বা টানাপড়েনের এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে এমনিতেই অনেক ধরেই সম্পর্কটা চাপের মধ্যে আছে। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। সেখানে এটি আবার নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। আবার বাংলাদেশ সরকারের উপরে বহির্বিশ্ব থেকে তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিও আসবে। এবং বাস্তবতা হচ্ছে দেশের ভেতরে এমনিতেই একধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে।
এবারের আক্রমণটি ছিল সহিংস। রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি তারা তাদের আক্রমণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। ফলে ওই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলো তাদের যে লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে যে তৎপরতা চালাচ্ছে, ফলে এ ধরনের সহিংস কার্যক্রমের ফলে তাদের কার্যক্রম বাড়বে। ফলে আমরা একটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছি। বিশেষ করে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এবং রোহিঙ্গাদের ইতোমধ্যে ব্যাপক সংখ্যক বাংলাদেশে অবস্থানের কারণে এটি এখন আমাদের জন্য বড় রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকি সামনে চলে আসছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের যে ন্যায্য অধিকার মিয়ানমারের ভেতরে, সেটির প্রতি বিশ্ব জনমত সৃষ্টি দরকার। যদিও আমরা জানি যে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র তারা খুব একটা দায়িত্ব পালন করেনি। তবে এ ধরনের সহিংসতার ফলে হয়তো এ সমস্যার গুরুত্ব আরও অনুধাবন করতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ইতোমধ্যেই বলেছেন, যদি এ ধরনের সমস্যা সমাধান না করা হয় তাহলে সহিংসতা আরও বাড়তে পাড়ে। ঘটনাটি কিন্তু তাই ঘটছে। আমার মনে হয় মিয়ানমারের উপরে বহির্বিশ্বের চাপটা আরও বাড়ানো উচিত। এবং এ ধরনের সহিংসতার যে মূল কারণ সে কারণটি হচ্ছে যে মিয়ানমারের ১৯৮৩ সালের নাগরিত্ব আইন। এ আইনটি যদি তারা পরিবর্তন না করে এবং মিয়ানমারের জনগণ যদি তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার না করে তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
আমরা হয়তো রোহিঙ্গা সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করব। এখানে দ্বিপাক্ষিক এবং কূটনৈতিক বিষয়। তবে রোহিঙ্গা সমস্যাকে যদি একটা মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখি তাহলে তা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের যা করার দরকার তার কিছুই করছে না তারা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উপর বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর চাপ দেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার। বাংলাদেশকে আরও কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো প্রয়োজন। তার কিছুটা হয়তো আমরা দেখছিও। কিন্তু এটি আরও বাড়াতে হবে। সত্যিকারের বিপদগ্রস্ত বিপন্ন রোহিঙ্গারা হয়তো কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশে ঢুকে যাবে। কিন্তু এমন একটি ধারণা যেন অতীতের মতো না হয়, ওখানে সহিংসতা হলে এখানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে আসবে। তবে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মানবিক দিকটি মাথায় রাখতে হবে।
পরিচিতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন