November 2, 2024
ডেস্ক রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে অংশ না নিয়েও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন জানাতে ক্ষমতাসীনদের পাশে থাকতে চায় ছোট ছোট কয়েকটি ইসলামি দল। দৃশ্যত নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বাড়ানোর চিন্তা থাকলেও কার্যত যেকোনও উপায়ে নৌকা মার্কার ফল ভোগ করতে চায় এই দলগুলো। এদের মধ্যে একাধিক দলের নিবন্ধন না থাকায় নিবন্ধন করা, নির্বাচনের প্রার্থিতা নিশ্চিত করা, সরকারি ধর্মীয় কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ নেওয়া এবং রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় থাকতে নৌকার পক্ষে থাকার কৌশল নিচ্ছে ধর্মভিত্তিক অন্তত ছয় থেকে আটটি দল।
জানা গেছে, গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করার চেষ্টা করছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল। বাংলা ট্রিবিউনে এ নিয়ে ‘তরিকতের নেতৃত্বে আসছে নতুন ইসলামি জোট!’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
এম এ আউয়ালের প্রচেষ্টা কিছুটা ঢিমেতালে হওয়ায় গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগের কাছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী ও গণতান্ত্রিক ইসলামী মুভমেন্টের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাদের উদ্যোগে সাড়া দেয় কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খানও ছিলেন বলে প্রচার হয়। যদিও জাফরুল্লাহ খান এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, মিসবাউর রহমান ও নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার বৈঠক হলেও কোনও জোট হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘জোট হলে বৃহত্তর স্বার্থে জোট হবে, সেই জোটে আমরা যাব।’
জানা গেছে, এম এ আউয়ালের উদ্যোগে মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সাবেক ছাত্র মজলিস সভাপতি মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সাবেক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাও আছেন। তরিকতের মহাসচিব তার উদ্যোগকে সফল করতে এরই মধ্যে মিসবাহুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে এই জোট হওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের সরাসরি সাড়া না পাওয়ায় এখনও জোটের প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিসবাহুর রহমানের সঙ্গে আটটি দলের বৈঠক হলেও আদতে তরিকত, খেলাফত আন্দোলন, ইমাম-ওলামা পরিষদসহ একটি বড় জোট করতে চান এম আউয়াল এমপি। এরই মধ্যে তারা কয়েকটি সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন বলেও সরকারের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
জোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ ইসলামি ভাবধারার বিরুদ্ধে— এমন অভিযোগ প্রচলিত থাকলেও এই দলগুলো আগামী নির্বাচনে এর বিপরীত চিত্র দেখাতে চায়। ইসলামি দলগুলোও আওয়ামী লীগের পক্ষে— সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন বার্তা পৌঁছে দিতে চান এসব দলের নেতারা।
উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগকে নিয়ে একটি ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখেছি ও অনুভব করেছি, ইসলামের জন্য ও আলেম ওলামাদের কর্মসংস্থানের আওয়ামী লীগ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, গত ৫০ বছরে এমন পদক্ষেপ কেউ নেয়নি।’
পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে এম এ আউয়াল ও মিসবাহুর রহমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে এম এ আউয়াল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে একটি ইসলামি জোট করা সময়ের দাবি। ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি।’
সূত্র জানায়, ইসলামি জোট করার নেপথ্যে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা, অনিবন্ধিত দলগুলোর নিবন্ধন করানো এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো কাজ করছে। পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে মাদ্রাসা কোর্স চালু এবং সারাদেশে মসজিদ নির্মাণ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ওই সব প্রকল্পে আলেমদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও সূত্রের দাবি।
মিসবাউর রহমানের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘জোট করার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। বলার মতো কোনও খবর নেই। গত সপ্তাহে পুরাতন বন্ধু-বান্ধব এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এটি নিয়ে নিউজ হলেও ওই ধরনের কোনও জোট এখনও নিশ্চিত নয়।’
মিসবাহুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছি। যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকেই আগে ২০ দলীয় জোটে ছিলেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য মিসবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এরই মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দারুল আরকাম নামে প্রকল্প চালু করেছে। আশা করি, আগামীতে দেশের সবগুলো মসজিদে এই প্রকল্প চালু করতে পারব।’
মিসবাউর রহমান জানান, সরকারিভাবে দেশের প্রতিটি জেলায় দুইটি ও উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এতে অর্থ সহযোগিতা করছে সৌদি আরব। সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ চলছে, অনেকে জমি দানও করছেন।
এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্টের নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আলোচনা চলছে, এখনও অব্যাহত আছে। কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।’
জানতে চাইলে মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আগে জোট নিয়ে বিভিন্ন কথাই ছড়িয়ে পড়ে। চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি।’
তবে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, জোট গঠনের বিষয়ে এখনও আওয়ামী লীগের কোনও সিগন্যাল পাননি উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে জোট একটি নাকি দু’টি হবে, নাকি শুধুমাত্র কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোকে নিয়েই জোট হবে— এসব বিষয় এখনও স্পষ্ট হয়নি। সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জোটের বিষয়ে ক্ষমতাসীনরা জোট করার সম্মতি দেবে বলেও সূত্রের দাবি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ আউয়াল বলেন, ‘জোট হবে রাজনৈতিক কারণে। রাজনৈতিক আবেদন থাকলে কার্যকর জোট হবে। এখানে অন্য কোনও স্বার্থ নেই।’
সূত্র জানায়, খেলাফত আন্দোলন, ইমাম-ওলামা পরিষদ, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভেমন্ট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলসহ অনেক দলেরই নিবন্ধন নেই। এছাড়া এই দলগুলোর দায়িত্বশীলদের নির্বাচনের চেয়ে দলের নিবন্ধন নিয়েই বেশি চিন্তা বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে জোটভুক্ত দলগুলোর নৌকাঘেঁষা রাজনীতির অন্যতম প্রধান কারণ কোনও না কোনোভাবেই নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া।
মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বলেন, ‘নিবন্ধন না থাকলে নিবন্ধন করাই তো নিয়ম। এখানে তো প্রত্যাশার কিছু্ নেই। নিয়ম মেনে রাজনীতি করলে নিবন্ধন কেন পাব না?’
নিবন্ধনের চিন্তা আরও পরে বলে জানান ইমাম-ওলামা পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা রুহুল আমীন সাদী। তিনি বলেন, ‘আগে দল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এরপর নিবন্ধন।’
সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।
ডেস্ক রিপোর্ট : জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় না ভোটের সংযোজন প্রয়োজন বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এর মাধ্যমে প্রার্থী পছন্দ না হলে ভোটাররা না ভোট দিতে পারবেন। অন্যদিকে দলগুলোর দেয়া প্রার্থী ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তাও স্পষ্ট হবে। বিশ্লেষকদের মতে তখন দলগুলো ভালো প্রার্থী নির্বাচনে আরো বেশি মনোযোগী হবে ।
কোন প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে জনগনের জন্যে বিশেষ সুযোগ হচ্ছে ‘না ভোট’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, যার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৮২ কোটি। বিশ্বের ১৪তম দেশ হিসেবে সব শেষ ভারতের ব্যালটে না ভোটের যায়গা হয়েছে।
বাংলাদেশেও ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘না ভোট’ ছিল। কিন্তু পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ‘না ভোট’ বাতিল করে। ভারতে এ সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন বাংলাদেশে আবারও এ সুযোগ ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে ।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতেই ‘না ভোট’।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জনগনের মতামত না নিয়েই প্রার্থী চুড়ান্ত করে আসছে। যার ফলে অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন লোকও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবার সুযোগ পাচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আমি যদি ভোট দিতে গিয়ে দেখি কোন ক্যান্ডিডেট আমার পছন্দ না তখন আমার উপায়টা কি হবে? তাহলে আমাকে সেখানে ভোট না দিয়েই চলে আসতে হবে! অনেক ক্যান্ডিডেট আছে যারা সংসদে যাওয়ার উপযুক্ত না। তাদের কোন যোগ্যতা নাই, বা তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তখন করণীয় কি হবে? এ জন্যেই না ভোট।
ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, চিলি, ইউক্রেন, কলোম্বিয়া ও সুইডেনের নির্বাচনে না ভোট দেয়ার সুযোগ আছে। বাংলাদেশেই একমাত্র না ভোট চালুর পরেও তা বাতিল করা হয়।
সূত্র : নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি
ডেস্ক রিপোর্ট : চলতি দশম সংসদে বেসরকারি সদস্যদরা আটটি বিল উত্থাপন করলেও ছয়টি বিলই নাকচ হয়ে গেছে।
বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটি বাকি দুটি বিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপিত বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির প্রথম প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কমিটির সভাপতি জিল্লুল হাকিম সংসদে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
সংসদে মন্ত্রীর বাইরে কোনো সাধারণ সদস্য কোনো বিল উত্থাপন করলে সেগুলোকে বেসরকারি বিল বলা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সদস্য এ বিল উত্থাপন করলে তার বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিলটি পর্যলোচনা করে সংসদে পেশ করা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই কমিটি বিল সংসদে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
সংসদে উত্থাপিত বেসরকারি সদস্যদের বিলগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) -বিল ২০১৪, সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৪, বাংলা ভাষা প্রচলন (সংশোধন)-বিল ২০১৫, বিধি ও প্রবিধান প্রণয়ন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৫, সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৪, জেলা জজ আদালত মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ (এখতিয়ার)-বিল ২০১৫ এবং ইসরাফিল আলম উত্থাপিত বিদেশী নিবন্ধন বিল-২০১৫ ও অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা (অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত) বিল-২০১৫।
বিলগুলোর মধ্যে জেলা জজ আদালত মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ (এখতিয়ার) বিল-২০১৫ এবং অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা (অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত) বিল-২০১৫ সশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলতি সংসদে এ পর্যন্ত আটটি বেসরকারি বিল উত্থাপন হলেও এখনও কোনো বিল পাস হয়নি।
এর আগে নবম সংসদে বেসরকারি সদস্যদের উত্থাপিত ১৪টি বিলের মধ্যে তিনটি পাস হয়েছিল। পাস হওয়া বিলগুলোর মধ্যে ছিলো সাবের হোসেন চৌধুরীর দ্য লেপার্স (রহিতকরণ) বিল-২০১০ এবং জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১৩ ও নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন- ২০১৩।
ডেস্ক রিপোর্ট : শেষ হলো চলমান দশম জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশন। এই অধিবেশনেই গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের ২০৭ জন সংসদ সদস্য ৫৬ ঘণ্টা ১৪ মিনিট আলোচনা করেন। পরে গত ২৯ জুন চার লাখ ৪০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়।
বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশনের ইতি টানেন।
সমাপনী বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ পরিচালনায় সহযোগতিার জন্য, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকারসহ সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যগণ বাজেটের উপর গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। সকলের সরব অংশগ্রহণে এবারের এ অধিবেশনটি হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত ও কার্যকর।”
গত ৩০ মে এই অধিবেশন শুরু হয়। মাঝে ঈদের জন্য কিছুদিন বিরতি দিয়ে চলতি মাসের ৯ তারিখ আবার শুরু হয়।
বাজেট আলোচনায় সরকারের মন্ত্রী, সরকারি-বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট আইন ও সঞ্চয়পত্রে সুদ কমানো এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে সরব ছিলেন।
বাজেটে কয়েকটি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তার সহকর্মীদেরও সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। যদিও সব চেয়ে আলোচিত ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট আইন নিয়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে সরকার।
বাজেট পাস হওয়ার পর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে উত্তপ্ত হয় সংসদ। ৯ জুলাই অধিবেশনে এ নিয়ে আদালতের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারি ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২৪ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে মোট ৭টি বিল পাস হয়। এছাড়া ৭১ বিধিতে পাওয়া ১৯০টি নোটিসের মধ্যে ১২টি গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে আলোচনা হয়েছে ৭টি। ৭১(ক) বিধিতে ৫৭টি নোটিস আলোচিত হয়েছে।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন জমা পড়ে ১৬৯টি। যার মধ্যে সংসদ নেতা জবাব দেন ৭০টি প্রশ্নের। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের জন্য দুই হাজার ৮০৯টি প্রশ্ন জমা পড়ে; মন্ত্রীরা উত্তর দেন এক হাজার ৯৩৮টির।
ডেস্ক রিপোর্ট : ভ্যাট আইন স্থগিত করায় রাজস্ব আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে, বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভ্যাট স্থগিত করায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে।’ বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভ্যাট আইন স্থগিত করা হয়েছে। এতে কিন্তু ক্ষতি হয়েছে। এখন সেটা আমাদের যেভাবে হোক ব্যবস্থা করতে হবে। হয় ব্যাংকের লোন নিতে হবে, নয় তো আমাদের উন্নয়ন বাজেট কাটছাট করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন স্থগিত করা হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, এতে রাজস্ব ক্ষতি হবে না। ক্ষতি কিন্তু হয়েছে। কারণ ভ্যাট ধরে আর মোবাইল ফোন থেকে কী আয় হবে সেটা ধরেই কিন্তু বাজেট করা হয়েছে। তবে আমরা দেখবো কোথায় কীভাবে এটা অ্যাডজাস্ট করা যায়।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই যদি আয়কর দেন, তাহলে সেটা দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। ওই রাস্তাঘাট তৈরি হবে, মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারবো, ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারবো। সব দিক থেকে কিন্তু মানুষ উপকৃত হবে। কাজেই সামান্য একটু ট্যাক্স দিলেই মানুষ অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বাজেটের ঘাটতিও পূরণ হবে। দেশটারও উন্নতি হবে।’
বাজেট নিয়ে সংসদ সস্যদের সমালোচনার প্রসঙ্গ তুলে সংসদ নেতা বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যে নিজেদের মতামত দিতে পারে, তার প্রমাণ এই সংসদ। তারা স্বাধীনভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা রয়েছে তা প্রমাণিত সত্য। সরকার দলের সদস্যরাই সব থেকে বেশি অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। সরকারের সমালোচনা করেছেন। তাদের সমালোচনায় অর্থমন্ত্রী বাজেটে বেশকিছু সংশোধনী এনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। মন্দা সত্ত্বেও আমরা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পেরেছি। অর্থনীতিকে গতিশীল করেছি। বাজেট বৃদ্ধি করেছি। এত বড় বাজেট কোনদিনও দেওয়া হয়নি। আমরা তেল মাথায় তেল নয়, উন্নয়ন যেন হতদরিদ্রদের মাঝে পৌঁছে সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। এজন্য আজ বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে বিস্ময়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে এক লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি। অথচ অনেক পত্রিকায় উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় হয়নি বলে শতাংশ হিসেব করে বড় বড় হেডলাইন করেছেন। তারা হয়তো দেখেনি কত কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট ছিলো আর কত কোটি টাকা বাস্তবায়ন হয়েছে। এবারও আমরা উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা রেখেছি। আরা ইনশাল্লাহ এটা পূরণ করতে পারবো। এতে আমাদের উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।’
সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিজ নিজ এলাকায় যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলির যেন যথাযথ উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয় সেদিনে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারব।’
খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে। কোথাও ভেজাল প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির বিধান করা হচ্ছে, এটা চলমান রয়েছে। ফরমালিন বন্ধের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগের মতো এখন ফরমালিন ব্যবহার হয় না। আপনারা নিশ্চিন্তে আম খেতে পারেন। ভেজাল খাই আর যা খাই আমাদের আয়ুষ্কাল কিন্তু বেড়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি বলেই আয়ুষ্কাল বেড়েছে।’
লবণ আমদানি প্রসঙ্গে রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লবণের উৎপাদন কম হয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ রয়েছে। এটাকে মাথায় রেখে লবণ আমদানি করা হয়েছে। যাতে কোরবানির সময় চামড়া সংরক্ষণে কোনও সমস্যা না হয়।’
বৃষ্টিতে রাজধানীতে পানি জমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডিতে এক সময় ধান হতো, সেখানে বিল ছিলো। বিল ভরাট করে বসুন্ধরা সিটি করা হয়েছে। মতিঝিল নাম আছে কিন্তু সেখাকার ঝিলটা আর নেই। ধোলাইখাল বন্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো বন্ধ করেনি। জিয়াউর রহমান-এরশাদ এগুলো বন্ধ করেছেন। পান্থপথ খাল আর শান্তিনগর খাল বন্ধ করেছেন এরশাদ। সচিবালয়ে বৃষ্টি নামলেই দেখি হাঁটু পানি। সেই পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা আমি করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে পানি জমতো সেটাও নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করেছি। এখন আমার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হচ্ছে যেখানেই যা হোক না কেন সেখানে জলাধার রাখতে হবে। একটা সরকার এলে সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলে বলেই এই সমস্যা হয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন আমি করে দিয়েছিলাম এবং জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। তার জন্য বিশেষত ভূমিখেকো যারা, যারা পত্রিকার মালিক, যারা টেলিভিশনের মালিক তারা তো এর বিরুদ্ধে বহু কিছু লিখে-টিখে আমার প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানকে চোর বানাতো। যেহেতু আমরা ড্যাপ করলাম, তার জন্য কতরকম কথা। নিজেরা চুরি করে যে, এত বড়লোক সে নিউজ নেই।’
জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে। এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি অবস্থান নিয়েছে। জঙ্গিদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বহুমুখী পরিকল্পনা নিচ্ছি। দুর্নীতি রোধ করা দেশের মানুষের উন্নতি করা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা দেওয়া এগুলো করবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
সামনাসামনি উত্তর না দিলে মজা থাকবে না
এইচএম এরশাদের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেব নেই। তিনি কিছু কথা বলেছিলেন, আমি লিখেও রেখেছিলাম। তার উত্তর দেবো, এখন এখানে তিনি নেই। সামনাসামনি না বললে তো উত্তর দিয়ে কোনও মজাই থাকবে না। কাজেই ওটা রেখে দিলাম, সেদিন সামনে পাবো সেদিন তাকে সামনে রেখে বলবো।’
ডেস্ক রিপোর্ট : বিভিন্ন মহলের দাবি থাকলেও আগামী ‘দুই-তিন বছরের মধ্যে’ অর্থবছরের সময় জুলাই-জুন কাঠামো থেকে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা এত জলদি হবে না। এটা হতে হতে আরও দু’তিন বছর লাগবে। আলোচনাটা শুরু হোক, এখন পর্যন্ত (আলোচনা শুরু) হয় নাই।”
বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে। জুন মাসে অর্থমন্ত্রী সরকারের ব্যয়ের পরিকল্পনা ও আয়ের উৎস হিসাব করে পরবর্তী এক বছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। সংসদে পাস হওয়ার ওপর অর্থবছরের শুরু থেকে সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়।
বর্তমান ব্যবস্থায় অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বর্ষার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করার তোড়জোর লেগে যায়।
বর্তমানে বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ভুটান পাকিস্তানের মত কয়েকটি দেশ জুলাই-জুন সূচিতে অর্থবছর হিসাব করে। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশও ওই কাঠামো অনুসরন করে আসছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার অর্থবছর শুরু করে ১ এপ্রিল থেকে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে শুরু হয় ১ জানুয়ারি থেকে। আর নেপাল ১৬ জুলাই থেকে অর্থবছর হিসাব করে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপানে পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১ অক্টোবর থেকে অর্থবছর হিসাব করে।
বাংলাদেশেও জুলাই থেকে শুরু না করে বঙ্গাব্দের সঙ্গে মিল রেখে এপ্রিল থেকে অথবা বছর শুরুর সঙ্গে জানুয়ারি থেকেই নতুন অর্থবছর শুরুর দাবি রয়েছে বিভিন্ন মহলের।
এর আগে গত ৫ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিনে, বেশিরভাগের মত তিনি পেয়েছেন ডিসেম্বর-জানুয়ারি অর্থবছরের পক্ষে। তবে এ নিয়ে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র : বিডিনিউজ২৪।
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীতে প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যের অর্ধেক দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ লক্ষে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার (১২ জুলাই) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তার কাছে জানা যায় এসব তথ্য।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরুর পর ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ সময় সরকারি দলের সদস্য বজলুল হক হারুণের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৬-৭ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত এই বর্জ্যের মাত্র অর্ধেক (তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন) বর্জ্য স্তুপিকরণ এলাকা বা ডাম্পিং সাইটে যায়। এই পরিমাণ বর্জ্য দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব।’
বিজ্ঞানভিত্তিক পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও এনার্জি উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান নসরুল হামিদ। তার ভাষ্য, ‘ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে এক মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর কার্যক্রম চলমান আছে। এই প্রকল্পে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ বর্জ্য সরবরাহের লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি চুক্তি সই হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকায় সাড়ে চার হাজার আবাসিক প্রি–পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। জরিপে প্রকল্পের ফল সন্তোষজনক। গ্রাহকদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহারের সুবাদে প্রতিটি ডাবল বার্নার চুলায় গড়ে ৩৩ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হতে দেখা যায়। এডিবির অর্থায়নে ৮ হাজার ৬০০টি আবাসিক প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। জাপান সরকারের ৩৫তম ওডিএ লোন প্যাকেজের আওতায় টিজিটিডিসিএল কর্তৃক দু্ই লাখ আবাসিক প্রি–পেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম এলাকায় ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে এখন পর্যন্ত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র, পাঁচটি কয়লাক্ষেত্র, একটি কঠিন
শিলাক্ষেত্র, একটি চুনাপাথরক্ষেত্র ও কয়েকটি পিট ডিপোজিট আবিষ্কৃত হয়েছে। ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টির উৎপাদন চলমান আছে। চারটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এবং দুটি ক্ষেত্র এখনও উৎপাদনে যায়নি।
সূত্র : বাংলাাট্রিবিউন।
ডেস্ক রিপোর্ট : আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় খুবই নগণ্য সংখ্যক গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি করলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বুধবার (১২ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় অনেক সাংবাদিক নিগৃহীত হচ্ছে এমন তথ্য সঠিক নয়। বাংলাদেশে দুই হাজার ৮০০টির বেশি পত্রপত্রিকা এবং ১ হাজার ৮০০টির বেশি অনলাইন পোর্টাল রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন করে সাংবাদিক থাকলে কত হাজার সাংবাদিক কাজ করছে তা বোঝা যায়। সংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য অর্থাৎ দু’একজন সাংবাদিক এই আইনে গ্রেফতার হয়েছে। আর তারা আদালতে যাওয়ার দুই-একদিনের মধ্যে জামিনও পেয়েছে।’
দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তার জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দণ্ডবিধি ৫৭ এবং ৫৬ ধারাটি গণমাধ্যম বা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়নি। এটি একটি সাধারণ দণ্ডবিধি। বর্তমান সরকার যাত্রা শুরুর আগেই আইনটি করা হয়েছিল। তবে সাংবাদিকদের জন্য তা করা হয়নি। এই আইনটি করা হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের জন্য। যে কোনও নাগরিক সামাজিক গণমাধ্যম যেমন ফেসবুক ও টুইটারে যদি অন্যের চরিত্রহনন করে পোস্ট দেন তাহলে তাকে এই আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিজিটাইটেশনের ফলে গণমাধ্যমের প্রসার ও বিকাশ ঘটেছে জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিধি বেড়েছে। কেউ যদি অপব্যবহার,
চরিত্রহনন, নিন্দা, মিথ্যাচার ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন বা বিদ্বেষ তৈরি করে সেখানে এই আইনটি প্রয়োগ হয়। অনলাইন বা সামাজিক গণমাধ্যমে এমন কাজে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ হয়। সাংবাদিকদের বেলায় শুধু প্রয়োগ হয় এটি, এমন তথ্য সঠিক নয়।’
হাসানুল হক ইনু জানান, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা, নারীর সম্মান, শিশু নিরাপত্তা, রাষ্ট্র ও ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠান নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম হলেই কেবল আইনটি প্রয়োগ করা হয়।
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার মামলা জামিন অযোগ্য তথ্যটি সঠিক নয় উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘এটাকে অজামিনযোগ্য বলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এই আইনে যারা গ্রেফতার হয় তারা কিন্তু একটা পর্যায়ে জামিনযোগ্য। এই আইনে যারা গ্রেফতার হয়েছে তার সবাই জামিন পেয়েছেন। নিম্ন আদালতে না পেলেও উচ্চ আদালতে ঠিকই জামিন মিলছে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে ৩০-এর অধিক আইন রয়েছে সেগুলো জামিনযোগ্য নয়। কিন্তু প্রতিটি জায়গাতেই উচ্চ আদালতে গেলে বিচারকরা যদি মনে করেন তাহলে জামিন দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ওপর এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা হয় বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী। কোনও জায়গায় এই আইনের বরখেলাপ বা হয়রানির ঘটনা হলে সেখানে তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে বলেও জানান তিনি। তার কথায়, ‘কোনও মিথ্যাচার হয়ে থাকলে বিচারকরা তা পর্যবেক্ষণ করে আসামিকে জামিন দিচ্ছেন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তায় সরকার নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সাইবার অপরাধ মোকাবিলা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। সেটি আসার পরে আইনমন্ত্রী ও সরকার বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবে ৫৭ ধারার আইনটি রাখা দরকার আছে কিনা। তবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আইনটি মানবাধিকারবিরোধী বলে মনে করি না। বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এতদিনে এটি উচ্চ আদালতে গেলেই বাতিল হয়ে যেত। আজ পর্যন্ত কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রমাণ করতে পারেনি।’
সূত্র : বাংলাাট্রিবিউন।
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশ ও দেশের জনগণের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে নিজের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতা আমার কাছে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়।মানুষের কল্যাণের জন্য যেকোনও অবস্থা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলোম,মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজেও ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী। নিজের ভাগ্য কী করে গড়ব সেই চিন্তা কখনও করিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তরের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ছিলো।
তিনি ও তার বোন শেখ রেহানার সন্তানেরা কখনও এটা—সেটা চেয়ে বিরক্ত করেন না মন্তব্য করে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমি ও আমার বোনের ৫টি ছেলে মেয়ে, তাদেরকে একটা কথা বলে দিয়েছি। লেখাপড়া শিখেছো, ওইটুকুই তোমাদের সম্পদ। তারাও প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করছে। কখনও বিরক্ত করে না, এই ব্যবসা দিতে হবে, সেই ব্যবসা দিতে হবে। এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এই ধরনের বিরক্ত কখনোই তারা করেনি। বরং আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, অটিজমের জন্য কাজ করা। দলের ডাটা সেন্টারটাকে গড়ে তোলা। দেশের উন্নয়নমূলক অনেক কাজেই তারা সাহায্য করছে। ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ এই নিয়ে দুবার লন্ডনে এমপি নির্বাচিত হয়েছে।
ক্ষমতাকে মানুষকে সেবা করার সুযোগ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সেবক হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগটা পাচ্ছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বার বার নির্বাচিত করে দেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে মানুষ যখন শান্তির মুখ দেখতে শুরু করেছে, দেশের সম্ভাবনার স্বর্ণ দুয়ার খুলে গেছে ঠিক তখনই জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি ও আমার ছোট বোন একদিনেই নিঃস্ব রিক্ত হয়ে যাই। এই শোক ও ব্যথা সহ্য করা যায় না। তবে এই শোক ও আঘাত আমি ও আমার বোনের ভেতরে শক্তি যুগিয়েছে।মানুষের ভালোবাসার পরশ থেকে শক্তি পেয়েছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশে থাকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ৫টি বছর রিফুজি (শরণার্থী) হিসেবে বিদেশের মাটিতে আমাদের থাকতে হয়েছে। রিফুজি হিসেবে অন্য দেশে থাকা এটা যে কতটা বেদনাদায়ক ও কষ্টকর আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।
তিনি বলেন, একটি বৈরী পরিবেশে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই উৎরাই ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আমাকে এগুতে হয়েছিল।সত্য ও সততার পথে থাকলে যে কোনও বাধাই অতিক্রম করা যায়। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে—এই অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, ভয় পাইনি। একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি তো কোনও অন্যায় করিনি। এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবে। দেশের মানুষও নিশ্চয় বুঝতে পারবে।
এর আগে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের ১৬ কোটি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আমাদেরকে বায়ান্নো ও একাত্তরে অর্জিত গৌরবের পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতায় সরকার বদ্ধপরিকর।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে চীন হতে সাবমেরিন কেনার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের একটি জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না বলে বিশ্বাস করি।
সরকার দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে এবং দেশের জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং অনুকরণীয় দৃষ্টিান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ উদ্ভুত সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে পুলিশের আলাদা উপযোগী ইউনিট গঠন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম আগামি দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান, ভাবমূর্তি ও অবস্থান আরও উন্নত ও সুদৃঢ় হবে।
আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (১৫ জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
সূত্র : বাংলাাট্রিবিউন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমান তালে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা থেকে শুরু করে প্রবীণ নেতারাও এখন ব্যস্ত জনসম্পৃক্ততা ও এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জনে। প্রায় প্রতিটি আসন থেকেই দুই বা ততোধিক প্রার্থী তৎপরতা শুরু করেছে। ফলে মনোনয়ন দৌড়কে কেন্দ্র করে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ক্ষমতায় থাকায় এমনিতেই মাঠ পর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীদের দাপট বেশি। এমনকি অনেক স্থানে তৈরি হয়েছে একাধিক নেতৃত্বের। এতোদিন এসব চাপানো থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বেড়েছে সবার মধ্যেই। আবার শুনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট সম্প্রসারিত হতে পারে। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হয়ে পড়েছে।
দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৯ অনুষ্ঠিতব্য একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে গোয়েন্দাদের কাছ থেকেও। এরই মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছেছে।
এসব জরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় শতাধিক সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খারাপ খবরের শিরোনামও হয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী মহল এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে অপোকৃত তরুণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছেন।
অন্যদিকে, নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়টি ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাই যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা ও এলাকায় জনপ্রিয়তাকে। এলাকার জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি নৌকার টিকিট তার হাতেই যাবে এমন আভাস দিয়ে রেখেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দল বা এলাকায় যতই প্রভাবশালী হোন না কেন ভোটারদের প্রিয়পাত্র না হলে সে ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ।
তিনি বলেছেন, জনসম্পৃক্ততা না থাকলে বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে।
জানা গেছে, এমন বার্তায় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীরা মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন। সাবেক ছাত্রনেতারা এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছেন। একই দৌড়ে সামিল হয়েছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। মাঠ গোছাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করছেন। এমপিরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার, বর্তমানে জেলা পর্যায়ে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন বা দলের জেলা পর্যায়ের সভাপতি হিসেবে আছেন, তারাও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে এখনই তৃণমূল থেকে হাইকমান্ডে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশের প্রতিটি এলাকায় মনোনয়ন পাওয়ার আশা করা বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণেই সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে অধিকাংশ স্থানে। এক্ষেত্রে ‘জনপ্রিয়তা’র মাপকাটিকেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পন্থা হিসেবে বিবেচনা করছে দল। তাই সংঘাতের আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে বলে দলটির সিনিয়র একজন রাজনীতিক মন্তব্য করেছেন।
জমা পড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বর্তমান সংসদের অর্ধশত এমপি। কর্মী বিচ্ছিন্ন, উগ্র আচরণ, হাইব্রিড লালন ও লুটপাটে জড়িতদের বদলে খোঁজ হচ্ছে কর্মীবান্ধব, জনসম্পৃক্ত, এলাকায় গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। সূত্র মতে, ইতোমধ্যে যেসব গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আগামী নির্বাচনে ৪৩ জেলার ৮৫ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। যদিও শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থিতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিপক্ষের প্রার্থী মনোনয়নের ওপর।
দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মাথায় রেখে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী বাছাইয়ে আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এজন্য সরকারি ও দলীয় গোয়েন্দাদের একাধিক টিম কাজ করছে। এসব গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরাসরি যাবে দলের হাইকমান্ডের কাছে। ইতোমধ্যে বর্তমান এমপি ও আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামাভিত্তিক একাধিক প্রতিবেদন জমাও পড়েছে।
এসব প্রতিবেদন অনুসারে, দিনাজপুরের ছয়টি আসনের সবই আওয়ামী লীগের। কিন্তু এখানে সবক’টি আসনেই পরিবর্তনের আভাস রয়েছে কেন্দ্র থেকে। ফলে এখানে মনোনয়ন প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই সংঘাতের আশঙ্কাটা এখানেই বেশি।
নীলফামারীতে বাদ পড়তে পারেন দুই এমপি। রংপুরে পরিবর্তন হচ্ছে দুটি আসনে। কুড়িগ্রামের চারটি আসনই এখন জাতীয় পার্টির। আগামী নির্বাচনে দুটি আসন নেবে আওয়ামী লীগ। গাইবান্ধায় পরিবর্তন আসতে পারে দুটি আসনে। বগুড়ায় নতুন মুখ আসতে পারে তিনটি আসনে। এসব স্থানে শেষ সময় পর্যন্ত সমীকরণ মেলাবেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
রাজশাহীতে নতুন মুখ আসতে পারেন দুটি আসনে। নাটোরে বাদ পড়তে যাচ্ছেন একজন। এখানে মন্ত্রীর বিএনপিপন্থী আত্মীয়-স্বজনের কারণে অবস্থান নড়বড়ে। সিরাজগঞ্জের চারটি আসনে পরিবর্তন হতে পারে। মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় দুটি আসনে পরিবর্তন হতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় বদল হচ্ছে একটি আসন। ঝিনাইদহ জেলায় নতুন প্রার্থী আসতে পারে তিনটি আসনে। যশোরের তিন এমপি’র খুব বেশি পোক্ত নয়। যশোর ও মাগুরায় পরিবর্তন হতে পারে একটি আসনে। খুলনায় নতুন মুখ আসছেন তিনটি আসনে। পিরোজপুর ও সাতক্ষীরায় দুটি করে আসনে, পটুয়াখালী ও বরিশালে একটি করে আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। ঝালকাঠিতে নিশ্চিত পরিবর্তন আসছে একটি আসনে। এসব আসনের অংক মেলানোর দৌড়ে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী বলেও দলটির সিনিয়র নেতাদের আশঙ্কা।
জামালপুর ও শেরপুরে পরিবর্তন হচ্ছে একটি করে আসনে। ময়মনসিংহ জেলায় ১১টি আসন, তার চারটিতে জাতীয় পার্টি। সূত্র মতে, এবার জেলায় চারটি আসনে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নেত্রকোনার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নতুন মুখ আসার ইঙ্গিত রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের একটি আসনে পরিবর্তন আসছে নিশ্চিত। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির একটি, ওয়ার্কার্স পার্টির একটি, স্বতন্ত্র একটি ও বিএনএফের একটি। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের ১৬টির মধ্যে চারটিতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। গাজীপুর ও নরসিংদীতে বদল হতে পারে দুটি করে আসনে।
নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুটি আর জাতীয় পাটির দুটি। এখানে আগামীতে আরো একটি আসন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। রাজবাড়ীতে দুটি আসনের একটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। শরীয়তপুরে একটি আসনে বদল হচ্ছে। ফেনীতে আলোচিত এমপি নিজাম হাজারী বাদ পড়তে পারেন। নোয়াখালীতে বাদ পড়তে পারেন একজন। চট্টগ্রামে এবার নিশ্চিত বাদ পড়ছেন নানা কারণে আলোচিত নগর থেকে নির্বাচিত এক এমপি। বাদ পড়তে পারেন একজন সাবেক মন্ত্রীও। এ ছাড়া সৌদি কানেকশনের একজন বর্তমান এমপিও বাদ পড়তে পারেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাদ পড়তে পারেন একজন। কুমিল্লায় বাদ পড়ছেন দুইজন। চাঁদপুরে একটি আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। খাগড়াছড়ি আসনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এসব আসনে তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান মতে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনের এখনো ১ বছর ৯ মাস সময় হাতে রয়েছে। কিন্তু টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিন বছর পূর্ণ করেই পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।