পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

নৌকার টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ, সংঘাতের আশঙ্কা তৃণমূলে

Posted on July 7, 2017 | in Uncategorized, জতীয় সংসদ, রাজনীতি, সারা দেশ | by

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমান তালে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা থেকে শুরু করে প্রবীণ নেতারাও এখন ব্যস্ত জনসম্পৃক্ততা ও এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জনে। প্রায় প্রতিটি আসন থেকেই দুই বা ততোধিক প্রার্থী তৎপরতা শুরু করেছে। ফলে মনোনয়ন দৌড়কে কেন্দ্র করে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা ক্ষমতায় থাকায় এমনিতেই মাঠ পর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীদের দাপট বেশি। এমনকি অনেক স্থানে তৈরি হয়েছে একাধিক নেতৃত্বের। এতোদিন এসব চাপানো থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বেড়েছে সবার মধ্যেই। আবার শুনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট সম্প্রসারিত হতে পারে। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হয়ে পড়েছে।

দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৯ অনুষ্ঠিতব্য একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে গোয়েন্দাদের কাছ থেকেও। এরই মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছেছে।

এসব জরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় শতাধিক সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে খারাপ খবরের শিরোনামও হয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী মহল এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে অপোকৃত তরুণ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করছেন।

অন্যদিকে, নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়টি ভাবছে আওয়ামী লীগ। তাই যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা ও এলাকায় জনপ্রিয়তাকে। এলাকার জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি নৌকার টিকিট তার হাতেই যাবে এমন আভাস দিয়ে রেখেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দল বা এলাকায় যতই প্রভাবশালী হোন না কেন ভোটারদের প্রিয়পাত্র না হলে সে ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ।

তিনি বলেছেন, জনসম্পৃক্ততা না থাকলে বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে।
জানা গেছে, এমন বার্তায় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীরা মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন। সাবেক ছাত্রনেতারা এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছেন। একই দৌড়ে সামিল হয়েছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী। মাঠ গোছাতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সফর করছেন। এমপিরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার, বর্তমানে জেলা পর্যায়ে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন বা দলের জেলা পর্যায়ের সভাপতি হিসেবে আছেন, তারাও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে এখনই তৃণমূল থেকে হাইকমান্ডে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশের প্রতিটি এলাকায় মনোনয়ন পাওয়ার আশা করা বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণেই সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে অধিকাংশ স্থানে। এক্ষেত্রে ‘জনপ্রিয়তা’র মাপকাটিকেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পন্থা হিসেবে বিবেচনা করছে দল। তাই সংঘাতের আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে বলে দলটির সিনিয়র একজন রাজনীতিক মন্তব্য করেছেন।

জমা পড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বর্তমান সংসদের অর্ধশত এমপি। কর্মী বিচ্ছিন্ন, উগ্র আচরণ, হাইব্রিড লালন ও লুটপাটে জড়িতদের বদলে খোঁজ হচ্ছে কর্মীবান্ধব, জনসম্পৃক্ত, এলাকায় গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। সূত্র মতে, ইতোমধ্যে যেসব গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আগামী নির্বাচনে ৪৩ জেলার ৮৫ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। যদিও শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থিতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিপক্ষের প্রার্থী মনোনয়নের ওপর।

দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মাথায় রেখে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী বাছাইয়ে আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এজন্য সরকারি ও দলীয় গোয়েন্দাদের একাধিক টিম কাজ করছে। এসব গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরাসরি যাবে দলের হাইকমান্ডের কাছে। ইতোমধ্যে বর্তমান এমপি ও আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামাভিত্তিক একাধিক প্রতিবেদন জমাও পড়েছে।

এসব প্রতিবেদন অনুসারে, দিনাজপুরের ছয়টি আসনের সবই আওয়ামী লীগের। কিন্তু এখানে সবক’টি আসনেই পরিবর্তনের আভাস রয়েছে কেন্দ্র থেকে। ফলে এখানে মনোনয়ন প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই সংঘাতের আশঙ্কাটা এখানেই বেশি।

নীলফামারীতে বাদ পড়তে পারেন দুই এমপি। রংপুরে পরিবর্তন হচ্ছে দুটি আসনে। কুড়িগ্রামের চারটি আসনই এখন জাতীয় পার্টির। আগামী নির্বাচনে দুটি আসন নেবে আওয়ামী লীগ। গাইবান্ধায় পরিবর্তন আসতে পারে দুটি আসনে। বগুড়ায় নতুন মুখ আসতে পারে তিনটি আসনে। এসব স্থানে শেষ সময় পর্যন্ত সমীকরণ মেলাবেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

রাজশাহীতে নতুন মুখ আসতে পারেন দুটি আসনে। নাটোরে বাদ পড়তে যাচ্ছেন একজন। এখানে মন্ত্রীর বিএনপিপন্থী আত্মীয়-স্বজনের কারণে অবস্থান নড়বড়ে। সিরাজগঞ্জের চারটি আসনে পরিবর্তন হতে পারে। মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় দুটি আসনে পরিবর্তন হতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় বদল হচ্ছে একটি আসন। ঝিনাইদহ জেলায় নতুন প্রার্থী আসতে পারে তিনটি আসনে। যশোরের তিন এমপি’র খুব বেশি পোক্ত নয়। যশোর ও মাগুরায় পরিবর্তন হতে পারে একটি আসনে। খুলনায় নতুন মুখ আসছেন তিনটি আসনে। পিরোজপুর ও সাতক্ষীরায়  দুটি করে আসনে, পটুয়াখালী ও বরিশালে একটি করে আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। ঝালকাঠিতে নিশ্চিত পরিবর্তন আসছে একটি আসনে। এসব আসনের অংক মেলানোর দৌড়ে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী বলেও দলটির সিনিয়র নেতাদের আশঙ্কা।

জামালপুর ও শেরপুরে পরিবর্তন হচ্ছে একটি করে আসনে। ময়মনসিংহ জেলায় ১১টি আসন, তার চারটিতে জাতীয় পার্টি। সূত্র মতে, এবার জেলায় চারটি আসনে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। নেত্রকোনার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নতুন মুখ আসার ইঙ্গিত রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের একটি আসনে পরিবর্তন আসছে নিশ্চিত। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির একটি, ওয়ার্কার্স পার্টির একটি, স্বতন্ত্র একটি ও বিএনএফের একটি। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের ১৬টির মধ্যে চারটিতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। গাজীপুর ও নরসিংদীতে বদল হতে পারে দুটি করে আসনে।

নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুটি আর জাতীয় পাটির দুটি। এখানে আগামীতে আরো একটি আসন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। রাজবাড়ীতে দুটি আসনের একটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। শরীয়তপুরে একটি আসনে বদল হচ্ছে। ফেনীতে আলোচিত এমপি নিজাম হাজারী বাদ পড়তে পারেন। নোয়াখালীতে বাদ পড়তে পারেন একজন। চট্টগ্রামে এবার নিশ্চিত বাদ পড়ছেন নানা কারণে আলোচিত নগর থেকে নির্বাচিত এক এমপি। বাদ পড়তে পারেন একজন সাবেক মন্ত্রীও। এ ছাড়া সৌদি কানেকশনের একজন বর্তমান এমপিও বাদ পড়তে পারেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাদ পড়তে পারেন একজন। কুমিল্লায় বাদ পড়ছেন দুইজন। চাঁদপুরে একটি আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। খাগড়াছড়ি আসনে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এসব আসনে তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান মতে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনের এখনো ১ বছর ৯ মাস সময় হাতে রয়েছে। কিন্তু টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিন বছর পূর্ণ করেই পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud