April 28, 2024
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লিতে তাণ্ডব চালিয়েছে তার ভক্তরা, যাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। দুই রাজ্যের অনেক শহরে রেল স্টেশন, পেট্রোল পাম্প ও টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িতে হামলা হয়েছে। দিল্লিতে একটি বাস ও ট্রেনের দুটি বগি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার হরিয়ানার যে শহরে রাম রহিমের মামলার রায় হয়েছে, সেই পাঁচকুলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ও প্রাণহানি হয়েছে। সহিংসতায় প্রাণহানি হয়েছে হরিয়ানার সিরসায় রাম রহিমের আশ্রম এলাকায়ও।
সহিংসতায় ৩০ জন নিহত এবং আড়াইশ মানুষ আহত হওয়ার খবর দিয়েছে এনডিটিভি। রাম রহিমের প্রায় আড়াই হাজার অনুসারীকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
এই মামলার রায় ঘোষণার দিন থাকায় চণ্ডিগড়ের কাছের পাঁচকুলা শহরে চলে আসে রাম রহিমের দেড় লাখের বেশি ভক্ত। রায় ঘোষণার পর তারা তাণ্ডব শুরু করলে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করলেও আদালতের আশপাশের এলাকা কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়।
পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে রাম রহিম ভক্তরা আগুন দেয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কয়েক ডজন গাড়ি, যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের গাড়িও রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্রণে বিকাল ৫টার দিকে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়।
ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লিতে তাণ্ডব চালিয়েছে তার ভক্তরা, যাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। দুই রাজ্যের অনেক শহরে রেল স্টেশন, পেট্রোল পাম্প ও টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িতে হামলা হয়েছে। দিল্লিতে একটি বাস ও ট্রেনের দুটি বগি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার হরিয়ানার যে শহরে রাম রহিমের মামলার রায় হয়েছে, সেই পাঁচকুলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ও প্রাণহানি হয়েছে। সহিংসতায় প্রাণহানি হয়েছে হরিয়ানার সিরসায় রাম রহিমের আশ্রম এলাকায়ও।
সহিংসতায় ৩০ জন নিহত এবং আড়াইশ মানুষ আহত হওয়ার খবর দিয়েছে এনডিটিভি। রাম রহিমের প্রায় আড়াই হাজার অনুসারীকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
এই মামলার রায় ঘোষণার দিন থাকায় চণ্ডিগড়ের কাছের পাঁচকুলা শহরে চলে আসে রাম রহিমের দেড় লাখের বেশি ভক্ত। রায় ঘোষণার পর তারা তাণ্ডব শুরু করলে পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করলেও আদালতের আশপাশের এলাকা কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়।
পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে রাম রহিম ভক্তরা আগুন দেয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কয়েক ডজন গাড়ি, যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের গাড়িও রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্রণে বিকাল ৫টার দিকে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়।
বিকালে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল রয়টার্সকে বলেন, “সম্ভাব্য সব উপায়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।”
রাম হরিমের আশ্রম ডেরা সাচ্চা সওদার সদর দপ্তর সিরসায়ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সহিংসতা হয় তার ভক্তদের। সেখানে বেশ কয়েকটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়। ওই এলাকায় সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয় বলে এনডিটিভির খবর।
রায় ঘোষণার পর পর পাঞ্জাবের বাথিন্ডা, মালুত ও বাল্লুয়ানাসহ বিভিন্ন শহরে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই রাজ্যে দুটি রেলস্টেশনে আগুন দেওয়া হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালানোতেই নিহতের ঘটনা ঘটে বলে শোনা গেছে। তবে প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি।
চণ্ডিগড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে এবং পাঞ্জাবের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি হয়।
হরিয়ানা ও পঞ্জাবজুড়ে তাণ্ডবের মুখে দুই রাজ্যের সীমান্তই সিল করে দেওয়া হয়। বাতিল হয়েছে এই দুই রাজ্যে চলাচলকারী প্রায় দুইশ ট্রেনযাত্রা।
রাজধানী দিল্লির আনন্দ বিহার রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনের দুটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, বাসও জ্বালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
রাম রহিমের অনুসারীদের তাণ্ডবে সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এই গোষ্ঠীর অনেক সম্পদ জব্দ করা হবে বলে আদালত বলেছে।
সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “এটা খুবই বেদনাদায়ক।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ রাম রহিম সমর্থকদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। রাম রহিম নিজেও শান্তি চাইছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রাম রহিম সিংয়ের লাখো সমর্থককে চণ্ডিগড়ে ঢুকতে দেওয়ার জন্য হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিং।
‘ধর্মগুরুর’ মামলার রায় শুনতে আগে থেকেই শহরটিতে রাম রহিমের দুই লাখের বেশি ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন।
আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে।
উত্তেজনার মধ্যেই সিরসায় নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে ২০০ গাড়ির বহর নিয়ে রওনা হয়ে আড়াইশ কিলোমিটার দূরে পাঁচকুলা আদালতে পৌঁছান রঙদার চরিত্র রাম রহিম সিং।
আদালত দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই ৫০ বছর বয়সী রাম রহিমকে কড়া পাহারার মধ্যে আম্বালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বহু সমর্থক। টেলিভিশন ফুটেজে ওই সময়ই রাম রহিমের অনুসারীদের সহিংসতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়।
বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা গড়ে ওঠে শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনার মিশেলে। ভারতের গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘রকস্টার বাবা’।
হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন।
কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।
২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মাথায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান। বিডিনিউজ২৪।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্যামেরুনে সন্দেহভাজন বোকো হারাম জঙ্গীদের হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। নাইজেরিয়ার সীমান্তের কাছের একটি গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আল-জাজিরা।
গাকার নামে ওই গ্রামটিতে ৩০টি বাড়ি পুড়িয়েও দেয়া হয়েছে। বোকো হারাম বিভিন্ন সময়ে এই গ্রামটিতে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে।
ক্যামেরুনের সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল নিহতের সংখ্যা ১১ বললেও একজন জেলা কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, মোট ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, মাঝরাতে ওই হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পার্শ্ববর্তী কলোফোতার মেয়র হামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করলেও তিনি বলছেন, মৃতের সংখ্যার বিষয়ে তার ধারণা নেই।
‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় থাকা বোকো হারামের কারণে গত ৮ বছরে প্রাণ গেছে ২০ হাজার মানুষের। এ ছাড়া ঘরছাড়া হয়েছেন ২৭ লাখের বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার নাইজেরিয়ার বর্নে এই জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলায় ৫ জন নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাবুলের এক শিয়া মসজিদে আইএসের আত্মঘাতী হামলায় ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে এ আত্মঘাতী হামলায় ঘটনা ঘটেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। খবর- বিবিসির।
খবরে বলা হয়, বিকালে নামাজের জন্য মুসল্লীরা জমায়েত হওয়া শুরু করলে মসজিদের গেটে এ সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। একইসাথে দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীও বন্দুক হামলা চালায় এ সময়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আফগান বিশেষ বাহিনীর সাথে চার ঘন্টাব্যাপী এক সম্মুখযুদ্ধে হামলাকারীরা নিহত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ হামলায় শিশু ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় কয়েকজন।
কথিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন আইএস এ হামলার জন্য দায় স্বীকার করে। নিজেদের সংবাদ মাধ্যম আমাকে এটিকে কমান্ডো হামলা বলে উল্লেখ করা হয়।
ডেস্ক রিপোর্ট : কুষ্টিয়ার পোড়াদাহ জংশনে যাত্রীবাহী সাগরদাড়ী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় খুলনার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ডাউন লাইনের মাধ্যমে একটি লাইন দিয়ে আবার ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়।
প্রায় ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে যোগাযোগ পুরোপুরি সচল হতে দুপুর হবে বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী সাগরদাড়ি এক্সপ্রেসটি পোড়াদাহ স্টেশনে ঢোকার আগে ইঞ্জিনসহ পিছনের পাওয়ার বগি লাইনচ্যুত হয়।
পোড়াদহ স্টেশন মাস্টার শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে রাজশাহীগামী সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের প্রধান গেইটের সামনে হঠাৎ করে ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধারে ঈশ্বরদী থেকে রিলিফ ট্রেন খবর পেয়ে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বগিটি পুনঃস্থাপন করে ডাউন লাইনের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন : বন্যার্তদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বন্যার্তদের মনোবল না ভাঙারও আহ্বান জানান।
আজ শনিবার সকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এবং দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে সকালে গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টায় দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার গোবিন্দগঞ্জের বোয়ালিয়ায় অবতরণ করে। সেখানে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ গোবিগঞ্জে জড়ো হয়।
সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে যান। সেখানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে চারা বিতরণ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রতিটি মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া হবে। বন্যা দুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট শিগগির মেরামত করে দেওয়া হবে। সরকারের কৃষি ঋণ অব্যাহত থাকবে। বন্যার পানি নেমে গেলে সাধারণত রোগ, অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা আমরা করে দেব।’
‘আপনাদের জন্য সরকারের যা যা করার দরকার আমরা করব। আপনারা মনোবল ভাঙবেন না। আওয়ামী লীগ আপনাদের পাশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এই সাহস দেওয়ার জন্য আমি আজকে আপনাদের এখানে এসেছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শুধু মানুষের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই না। আমরা তাদের পুষ্টির নিশ্চয়তাও নিশ্চিত করতে চাই।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে এসে নিজেদের বিত্তবৈভব গড়ে তুলতে চাই না। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ করাই আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ। আর যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তাঁরা মানুষের কল্যাণ চায় না। তাঁরা মানুষকে ধ্বংস করতে চায়। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্ত থেকে মানুষকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বন্যা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বিকেলে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যাবেন এবং সেখানে সারিয়াকান্দি হাই স্কুলমাঠে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ হলরুমে রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বন্যা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তিনি বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
এর আগে শেখ হাসিনা গত ২০ আগস্ট দেশের উত্তরাঞ্চলীয় বন্যাদুর্গত দুটি জেলার বন্যার্তদের অবস্থা দেখতে দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম সফর করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ সংলাপ শুরু হয়।
ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (মুক্তিজোট) সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েস মুন্নার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
এ সংলাপের মাধ্যমে দেশের ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপ শুরু হলো। তবে এদিন সকালে বিএনএফ’র সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার্তদের ত্রাণ দেয়ার কারণ দেখিয়ে সংলাপে অংশ নেয়নি দলটি।
এম সাখাওয়াত হোসেন : প্রথমে সুশীল সমাজ ও পরে দুই পর্বে দেশের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংলাপ সম্পন্ন করেছে। এরপরেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মোটাদাগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম দুই আলোচনায় যা দেখলাম সেই একই কায়দায় আলোচনা করলে এটি ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না। তবে অতীতেও বলেছি এখনো বলেছি উদ্যোগটি যথেষ্ট প্রশংসনীয়, এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও অত্যন্ত জরুরি। এসব আলোচনার একটি লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো না হয়। আগামী নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে এই দেশের আপামর জনসাধারণও একমত পোষণ করেন। এটাই নির্বাচন কমিশনের প্রয়াস এবং এ বিষয়ই নির্বাচন কমিশনের করণীয় নির্ধারণে সহযোগীদের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন।
এ পর্যন্ত কয়েকটি আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরাও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা করতে গিয়ে কার্যত দুটি বিষয়ের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছেন। বিষয় দুটি এর আগেও চর্চিত হয়েছে এবং এর ওপর সংক্ষিপ্তভাবে লিখেছিলামও। এর একটি নির্বাচনকালে সেনা নিয়োগ এবং অপরটি ‘না-ভোট’-এর বিধান রাখা। মনে হয় যেন এই দুটিই আগামী নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতার একমাত্র অন্তরায়! তেমনটা মোটেও নয়। এগুলো আনুষঙ্গিক মাত্র। যাঁরা এই দুটি ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন, তাঁরা কোনো জোরালো বা যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।
যেমনটা আগেও বলেছি, সামরিক বাহিনীর সাহায্য এ পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োজন হয়েছে। এ নির্বাচন সহযোগিতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে বা হতে পারবে, তা মনে হয় না। এবং বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে যে ওই সময়ে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন এবং তাদের কার্যক্রম রিটার্নিং অফিসার তথা নির্বাচন আইনের আওতায় হবে, নাকি সিআরপিসির আওতায় হবে? এখানে প্রয়োজন মতামতের। যদিও আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কারও মতামত খুব জরুরি, তেমনটা মনে করি না।
এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে ভোটারদের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের পরিবেশ আয়ত্তে রাখার জন্য। নির্বাচন কমিশন যদি শুধু অস্ত্রবিহীন আনসার-ভিডিপি দিয়েও অথবা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাতে পারে, সেটাই হবে কাম্য। তবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতির পরিবেশে তা শুধু সুখস্বপ্নই মাত্র। আদৌ এ স্বপ্ন বাংলাদেশে কোনো দিন বাস্তব হবে কি না জানি না, তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তেমন থাকেনি।
আগামী নির্বাচনের পরিবেশ বা নির্বাচন কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। কারণ, বিগত দিনগুলোতে সাধারণ মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি, যার দায়দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। তবে বর্তমান কমিশন সব সময়েই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে বলে তাদের আশাবাদ জানিয়ে আসছে। হালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বর্তমান সংবিধানের আওতায় দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব যদি সে পরিবেশ তৈরিতে সবার প্রচেষ্টা এবং সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আমাদের দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অধিকাংশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত আধুনিক তাত্ত্বিক কাঠামোর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনায় একটি অত্যন্ত কার্যকর শক্তিশালী নির্বাচনী আইন রয়েছে। রয়েছে সহজে আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের ব্যবস্থা, একটি স্বাধীন এবং আইন দ্বারা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী নিষ্পত্তি আইনের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে এবং মনোনয়ন নির্ধারণে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনি ক্ষমতা এবং নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আইনের বিধান ও আদালতে আবেদন করার এবং ত্বরিত মীমাংসার ব্যবস্থা।
তদুপরি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশাল বহরের মাঠপর্যায়ের এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহের (লজিস্টিকস) ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। এত কিছুর পরও প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক যে, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেন গ্রহণযোগ্য হবে না? তাত্ত্বিকভাবে হওয়ার কথা, তবে বাস্তবটা কি তেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে অন্তর্নিহিত রয়েছে তাত্ত্বিক ব্যবহারিক বা বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে তফাত। আমাদের দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুখকর হয়নি, এর উদাহরণ টানার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। দু-চারটি ভালো স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সার্বিক বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। স্মরণ থাকার কথা যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো কেমন হয়েছিল, তা নিয়ে কথা বলারও তেমন কিছু নেই।
যেমনটা বলেছি তাত্ত্বিক দিক হতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব কাঠামোই বিদ্যমান, তবু দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে এত বিতর্কের কারণ প্রধানত তত্ত্বকে প্রয়োগে পরিণত করার মতো পরিবেশ তৈরি করা। বিদ্যমান পরিবেশে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অন্তরায়;সেগুলো আমার গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লব্ধ, উল্লেখ্য১. রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা সুবিধাভোগী (প্যাট্রন ক্লায়েন্ট) রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। দুটি সামরিক ও আধা সামরিক শাসনের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। ২. প্রশাসন–ব্যবস্থা ব্যাপক দলীয়করণ, যা ১৯৭৫-এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত। ৩. নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা, বিশেষ করে স্থায়ী গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় দলীয় সরকারকর্তৃক নিয়োগ; ৪. নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনার সমস্যা।
এ পর্যায়ে আমি সংক্ষিপ্তভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আমাদের মতো দেশে, যেখানে ভালো নির্বাচনের অন্তরায়গুলো দারুণভাবে নির্বাচনের মুখ্য নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়, তার অন্যতম নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের মতো দেশে যেকোনো নির্বাচনে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে নিরাপত্তাই নির্বাচন কমিশনের প্রধান মাথাব্যথার কারণ এবং সবচেয়ে দুরূহ কাজ হিসেবে বিবেচিত।
একটি নির্বাচনে নিরাপত্তার পরিকল্পনা করতে হয় তিন ধাপে, ১. প্রাক্-নির্বাচন (ভোট গ্রহণ): ২. নির্বাচনের দিন এবং ৩. নির্বাচনের পর। এই তিন ধাপের প্রতিটিতে চার স্তরের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেবিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো এর প্রশিক্ষণ, বাহিনীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের মতো দেশে জনগণের আস্থার বিষয়টি বিবেচনায় এনে স্তরগুলো বিন্যাস করতে হয়। এই স্তরগুলো হলো ১. কাঠামোগুলোর নিরাপত্তা: নির্বাচনী অফিস, রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস, ভোটকেন্দ্রসহ গণনাকেন্দ্র এবং অংশগ্রহণকারী দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অফিসগুলো, ২. নির্বাচনে ব্যবহার্য দ্রব্যাদির নিরাপত্তা, ৩. তথ্যের নিরাপত্তা,ভোটার তালিকা, বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং নির্বাচনের ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট আইনানুগ তথ্যাদি এবং ৪. ভোটার, জনসাধারণ এবং নির্বাচনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা। চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরের নিরাপত্তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি না হলে ভোটাররা, বিশেষ করে নারী ভোটার ও পক্ষান্তরে সংখ্যালঘু ভোটাররা, নির্বাচন থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিরত থাকেন।
ওপরে আলোচিত ধাপ এবং স্তর বিবেচনা না করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা কার্যকর হয় না। একই সঙ্গে প্রতি ধাপ এবং স্তরের জন্য কী ধরনের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের, প্রশিক্ষণ এবং নির্ভরযোগ্য বাহিনীর প্রয়োজন, সেটা বিবেচনা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
পরিকল্পনাকালে আরও মনে রাখতে হবে বর্তমান পরিবেশে জঙ্গি হামলার বিষয়টিকেও। আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি কত গুরুত্বপূর্ণ, তার সামান্য উদাহরণ নির্বাচনী বাজেটে নিরাপত্তার খরচ। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে, শুধু নিরাপত্তা বাবদই খরচ হয়েছে ১৯৯ কোটি ৯২ লাখ ৯ হাজার ৬১ টাকা। নির্বাচনী বাজেটের ৭০ শতাংশ। স্মরণযোগ্য যে মাত্র ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অপরদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ব্যয় ছিল ৯৪ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ৫৩ টাকা। ১৯৯১ সালে খরচ হয়েছিল ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ১৭৩ টাকা। (সূত্র: নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিসংখ্যান)।
ওপরের পরিসংখ্যান থেকেই প্রতীয়মান হয় যে আমাদের দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় যজ্ঞ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। এত ব্যাপক আয়োজন ইঙ্গিত দেয় যে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতেনিরাপত্তার বিধানই নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। এত বড় যজ্ঞের পরও সুষ্ঠু নির্বাচন করা দুষ্কর, যখন রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে এবং জনমনে বিশ্বাসযোগ্যতা, সংগত কারণে ঘাটতি থাকে। তবে আমার মতে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক প্রশাসনের নিরপেক্ষতা। প্রশাসনের সংস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক বিভাজন এবং সংস্কৃতির কারণ নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কাজেই ওপরের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণের আঙ্গিকে আগামী নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা, যা এখন থেকেই শুরু করা উচিত। কী ধরনের বাহিনী কোন ধাপ এবং স্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে, তা যেমন আইনি কাঠামো ও নিরাপত্তা পরিকল্পনায় রাখতে হবে, তেমনি রি-অ্যাকটিভ নয় প্রো-অ্যাকটিভ নিরাপত্তার পরিকল্পনায় সামরিক বাহিনী ব্যবহারের প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ও সামর্থ্য থেকে। আমি মনে করি, ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে রাখতে নির্বাচনী আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করাই শ্রেয়। কাঠামোতে রাখা মানেই এই নয় যে সামরিক বাহিনী অথবা আইনে উল্লেখিত সব বাহিনীকেই নিয়োগ দিতেই হবে। কোন কোন বাহিনী কোন কোন স্তরের জন্য প্রয়োজন, সে নির্ণয় নির্বাচন কমিশনের। কাজেই এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক অবান্তর।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এ কাজ করতেনির্বাচন কমিশনকে যা যা করার প্রয়োজন, তেমন ক্ষমতাই সংবিধানের ১১৯ ধারার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখেই নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন ও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন, তা নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক।
অফিসে বসে রিপোর্ট লিখছি। হঠাৎ সংবাদ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অনেক হতাহত হয়েছে। দ্রুত সেখানে যাওয়ার নির্দেশ। অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি গাড়ির সংখ্যা কম। মানুষ ছুটছে সব উত্তর দিকে। গুলিস্তানের দিকে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যাবে। আমি দৌড়াতে লাগলাম। গুলিস্তানে গিয়ে দেখি মানুষের হাহাকার। ইতিমধ্যে অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। কান্নার রোল চারদিকে। শুনলাম আইভি রহমান মারা গেছেন। সরজমিন দেখে অফিসে এসে রিপোর্ট লিখলাম। ২১শে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার খবর। অফিসে এসে খবর পাই আইভি রহমানকে নেয়া হয়েছে সিএমএইচ-এ। তার অবস্থা গুরুতর। প্রতিদিনই আইভি রহমানের খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি তার অবস্থার অবনতি। সংজ্ঞাহীন।
দু’টি পা কেটে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থায়ই ২৪শে আগস্ট রাতে খবর পাই আইভি রহমান আর নেই। ২৫শে আগস্ট সকালে অফিস থেকে ফোন- গুলশানে আইভি টাওয়ারে যেতে হবে। আইভি রহমানের লাশ সেখানে নেয়া হবে। যথারীতি সেখানে পৌঁছলাম। আইভি কনকর্ড টাওয়ারের পঞ্চম তলা। পূর্ব-উত্তর কোণের রুমে শোকে মুহ্যমান জিল্লুর রহমান বিছানায় শোয়া। স্ত্রী বেগম আইভি রহমানের লাশের অপেক্ষায় তিনি। ছেলে পাপন আর ২ কন্যা তানিয়া ও ময়নার গগনবিদারী আহাজারি। এ বাড়ি ঘিরে শোকার্ত মানুষের ঢল। সবার চোখে পানি। কাঁদছে গোটা দেশ। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে লাশ আসবে। মিডিয়া কর্মীদের ভিড়। এ সময়ে জিল্লুর রহমান কি বলবেন? সাংবাদিকরা তার মুখ থেকে কিছু শুনতে চাইছেন। লাশ তখনও আসেনি। সুযোগ হলো জিল্লুর রহমানের সামনে যাওয়ার। রুমে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম অঝোরে কাঁদছেন তিনি। দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। আনমনা হয়ে বিড়বিড় করছেন।
কখনও চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন। কিছুই বলতে পারছিলাম না। প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ বুঝতে পারছিলেন তার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। তাই নিজ থেকেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বললেন, একা হয়ে গেলাম। বড় একা। যতদিন বেঁচে থাকবো আইভির স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফিরবে। ৪৬ বছরের সাংসারিক জীবনে আমাদের মাঝে কখনও ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। এ সময়ে কখনও একজন আরেকজন থেকে দূরে থাকিনি। ক্লাস নাইনে থাকতেই বিয়ে হয়। বিয়ের আগেই আইভিকে চিনতাম, তবে প্রেম ছিল না। সুদর্শনা আইভির সংগীত ও নৃত্যে মুগ্ধ হয়েই আকৃষ্ট হয়েছিলাম। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে থাকেন, যে বিশ্বাস নিয়ে আইভিকে ঘরে এনেছিলাম সে বিশ্বাস দীর্ঘ ৪৬ বছরে একবারের জন্যও নষ্ট হতে দেয়নি। বরং তার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতার জন্যই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বৃদ্ধ বয়সে এসেও রাজনীতি করতে পারছি। মাত্র তিনদিন আগে ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জনসভায় একসঙ্গে গিয়েছিলেন জিল্লুর রহমান ও আইভি রহমান। কে জানতো এ যাওয়াই তাদের শেষ যাওয়া। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান মারাত্মক আহত হন। তার দু’টি পা-ই কেটে ফেলতে হয়। ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ২৪শে আগস্ট রাত ৩টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আইভি রহমান। শোকাহত গোটা দেশ। গুলশান আইভি কনকর্ড টাওয়ারে শোকাহত মানুষের ভিড়। জিল্লুর রহমানের কথা- ২১শে আগস্ট জনসভায় যাওয়ার সময় আইভি নিজ হাতে পায়জামা-পাঞ্জাবি বের করে দেয়। পাঞ্জাবি পরার পর বলে, এটি খুলে ফেলো। লালচে লাগছে। ভালো সাদা পাঞ্জাবি পরে যাও। নিজ হাতেই অন্য একটি পাঞ্জাবি বের করে দেয়।
এটি পরার পর বলে, দেখ কত সুন্দর লাগছে। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন জিল্লুর রহমান। একটু পর আবার বলতে থাকেন, ও ছিল সুন্দরের পূজারী। সুন্দরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতো। জিল্লুর রহমানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বাইরে বেরুতেই খবর আসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা আসছেন আইভিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শেষবারের মতো দেখতে। জিল্লুর রহমানের শোকাহত পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে। এবার অপেক্ষা তাদের জন্য। হঠাৎ পিনপতন নীরবতা। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি এসে থেমেছে আইভি টাওয়ারের সামনে। নেমে এলেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। সোজা উপরে চলে গেলেন তারা। যেখানে একটু আগে আনা হয়েছে আইভি রহমানের লাশ। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যাওয়ার পর ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। কান্নার রোল সর্বত্র।
এরপর শেখ হাসিনা যান জিল্লুর রহমানের রুমে। মিডিয়া কর্মীদের বিষয়টি তদারকি করছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। তার কাছে সাংবাদিকদের দাবি শেখ হাসিনা আজ অন্তত কিছু বলুক। অপেক্ষার পর আসাদুজ্জামান নূর খবর নিয়ে এলেন এখনই শেখ হাসিনা কথা বলবেন মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে। জিল্লুর রহমানের রুমের ঠিক পশ্চিম পাশের রুমে প্রবেশ করলেন শেখ হাসিনা।
একটি সোফায় গিয়ে বসলেন। এরপর সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে দাঁড়ান। শেখ হাসিনার চোখে জল। কাঁদছেন তিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, কি বলবো আমি। কি বলার আছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমার নেতারা, কর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে, কেউ জীবন দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই। কান্নায় বেশি কথা বলতে পারেননি শেখ হাসিনা। আইভি কনকর্ড টাওয়ারের ওইদিনের চিত্র আজো ভুলতে পারি না। জিল্লুর রহমান ও আইভি রহমানের বিয়েও এক ইতিহাস। ১৯৫৮ সালের ২৭শে জুন জেবুন নাহার আইভি’র বিয়ে হয় জিল্লুর রহমানের সঙ্গে। তাদের এ বিয়ের এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান। বিয়ের উকিল ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট গাড়িতে বসেই বর সেজে যান জিল্লুর রহমান। মানবজমিন
মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ১৬-১৭ মাস বাকি। নির্বাচনের অব্যবহিত প্রাক্কালে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনোত্তর সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে সেটা এত আগে বলার এবং মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, নির্বাচনি শিডিউল ঘোষণার পর বা তিন-চার মাস আগে একটা বিশেষ পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখানে যেমন আনন্দ, উল্লাস ও উৎসবের একটা অবস্থা বিরাজ করে, তেমনি এলাকাভেদে কম-বেশি নিরাপত্তার শঙ্কাও সৃষ্টি হয়। সবসময় যেমন, ঠিক তেমনি নির্বাচনের সময়েও শান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীসহ বেসামরিক প্রশাসনের। সময়মতো পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নে যদি মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো যথেষ্ট নয়, তাহলে অতিরিক্ত হিসেবে ওহ অরফ ড়ভ ঈরারষ ঢ়ড়বিৎ, এই বিধানের আওতায় সেনা মোতায়েন করা যেতে পারে। তখন পরিস্থিতির বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনীর দায়িত্বের কাঠমো ও পরিধি নির্ধারণ করলে সেটাই হবে যথার্থ। তার আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা এবং সঙ্গতকারণেই সেটা হবে বিপজ্জনক। সুতরাং সেনা মোতায়েন নিয়ে এখনই যারা শোরগোল করছেন, তাদের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ বোঝা কষ্ট হয়ে যায়।
১৯৭৫ সালের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাজনীতিতে যে প্রলয়কা- ঘটে গেছে এবং যেভাবে ঘটেছে তাতে কার মনে কি আছে তা সহজে বুঝে ওঠা মুশকিল। প্রথম ও মৌলিক কথা হলোÑ দেড় বছর আগে পরিস্থিতির সঠিক উপলব্ধি ব্যতিরেকে ফোর্সসমূহের দায়িত্বের পরিধি নিরূপণ করলে নির্ঘাত সেটি ভুল হবে এবং তা নিয়ে অবধারিতভাবে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের ভেতরে অনাকাক্সিক্ষত রাজনীতি চলে আসবে। আর সেই রাজনীতির মাঝখানে পড়বে সেনাবাহিনী। তখন সেনাবাহিনীকে নিয়ে রাজনীতি করার পূর্ব অভ্যাস যাদের আছে তারা ইচ্ছামতো একতরফা বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে পার্টিশন অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা করবে, যেমনটি আগে আমরা দেখেছি। তাতে সেনাবাহিনীর পেশাগত বিশেষত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাহিনীর মনোবল ও শৃঙ্খলার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব দেশের সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে ও ঊর্ধ্বে দেখতে চায়। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, ১৯৭৫ সালের পরে পরপর দুজন সামরিক শাসক সেনাবাহিনীকে রাজনীতির মধ্যে টেনে এনে অশেষ ক্ষতি করেছেন। ওই খারাপ দৃষ্টান্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা সবাইকে অব্যাহত রাখতে হবে।
সময় পরিপক্ক হওয়ার আগে এখনই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে যারা অযাচিত বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তারা সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে টেনে আনার অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে আমার কাছে মনে হয়। সময়মতো পরিস্থিতির বিবেচনায় এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখনই কেন? একটি মৌলিক কথা আমাদের স্মরণে রাখা দরকার। আর তা হলোÑ যার যে কাজ সেটি তাকে দিয়ে না করিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে করাতে গেলে ত্রুটি-বিচ্যুতি অবশ্যম্ভাবী।
আর সে ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি রাজনৈতিক জয়-পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তো কথাই নেই, সেনাবাহিনীদের পার্টিশন ব্লেইম গেমের মধ্যে ফেলা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বড় অন্তরায় হচ্ছে প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার এবং ভোট কেনাবেচায় টাকার ব্যবহার। অথচ এটা রোধ করার উপায় নিয়ে তেমন জোরালো ও বাস্তবসম্মত সুপারিশ কারও পক্ষ থেকে আসছে না। এটা নিয়ে বরং এখন সবচাইতে বেশি আলোচনার দরকার, যাতে সময় থাকতে প্রয়োজন হলে যেন বিধি-বিধান পরিবর্তন করা যায়। আগের নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন প্রাক ও উত্তর সময়ে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার বড় শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর মানুষ। তারপর সব বড় দল নির্বাচনে অংশ নিলে এক রকম পরিবেশের সৃষ্টি হবে, আবার কোনো বড় দল অংশ না নিলে অন্য রকম হবে। অন্যদিকে বর্জনকারী দল নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
একটি বিষয়ের ওপর অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজে সেনাবাহিনীকে যেন জড়ানো না হয়। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জড়িয়ে গেলে নির্ঘাত ব্লেইম গেমের শিকার হবে, যেটি কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়। দুই সামরিক শাসন রাজনীতিতে জড়িত করায় এক সময় সেনাবাহিনী ও জনগণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেছিল এবং দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল যেটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য চরম ক্ষতিকর। সেনাবাহিনী সব দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস যতটা গৌরবোজ্জ্বল সে রকম উদাহরণ খুব কম দেশের সেনাবাহিনীর রয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীর জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে। ফলে তার জন্ম বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হলো জনগণ এবং সেনাবাহিনী এক ও অভিন্ন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণ ও সেনাবাহিনীর রক্ত ঝরেছে বাংলাদেশের মাটিতে একসঙ্গে। জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য এ বন্ধনের মূল্য অপরিসীম। তাই সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে এবং সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও কাজ বা রাজনৈতিক দলের সালিশি ও ঝগড়া মেটাতে সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা ঠিক হবে না। তাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে পার্টিশন চিন্তা-চেতনা চলে আসতে পারে। পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের পেশাই হলো জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। তারা জানে কিভাবে সমদূরত্ব বজায় রাখতে হয়। সবাইকে এক করে ফেলা বা এক জায়গায় নিয়ে আসা দূরদর্শী কাজ হবে না। তাই নির্বাচন ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতির বিবেচনায় সেনা মোতায়েন করতে হলে তা অবশ্যই হতে হবে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এবং নিয়োজিত থাকবে স্ট্রাইকিং ও স্ট্যান্ডবাই ফোর্স হিসেবে।
লেখক: কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
বিনোদন ডেস্ক : বুধবার (২৩ অগাস্ট) বনানী কবরস্থানে দাফন করা হলো নায়ক রাজ্জাকের মরদেহ। দাফন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। পিতৃতুল্য নায়করাজকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাকিব।
নায়করাজের দাফন শেষে শাকিব খান বলেন, “আজকে আমরা যাকে শায়িত করলাম তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের কে সেটা বাংলাদেশের সবাই জানে। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের যত জায়গায় বাঙালি আছে তারা সবাই জানে। আপনারা লক্ষ্য করবেন বিশ্বের যত বাঙালি আছে তারা সকলেই শোক প্রকাশ করেছে। নায়করাজ সব বাঙালির সম্পদ ছিলেন।”
নায়করাজকে নিয়ে তিনি কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি তার সন্তানের মতো ছিলাম। সব সময় তার প্রেরণাকে সামনে রেখে এগিয়ে গেছি। সুখে হোক, দুঃখে হোক তার কাছে গিয়েছি। শেষবার তার সঙ্গে দেখা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। কীভাবে সামনে এগিয়ে যাব সে বিষয়ে তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি কখনোই কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। তার দরজা সব সময় সবার জন্য খোলা থাকত।”
নায়করাজ বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ উল্লেখ করে তিনি বললেন, “নায়করাজের পরে যত স্টার-সুপারস্টার-অভিনেতা-অভিনেত্রী আসবে, তার আদর্শকে সামনে নিয়েই এগোবে।”
বুধবার সকালে বৃষ্টির মধ্যেই বনানী কবরস্থানে রাজ্জাকের মরদেহ নিয়ে আসেন তার তিন ছেলে। তাদের সঙ্গে আসেন চিত্রনায়ক উজ্জ্বল, শাকিব খান, ফেরদৌস, চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়াকিল আহমেদ ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু।
পরে সমবেতদের উদ্দেশে নায়কপুত্র সম্রাট বলেন, “আমার বাবা জানা অজানায় যদি কারও মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে ক্ষমা করবেন। সকলে দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তার কবরের আজাব ক্ষমা করে দেন।”
এর আগে এফডিসি ও গুলশানের আজাম মসজিতে দুই দফায় জানাজা হয় নায়করাজের।