March 28, 2024
ডেস্ক রিপোর্ট : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বন্যায় আক্রান্ত লোকজনের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
তিনি বলেন, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। এবার আকস্মিক বন্যার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে আমরা অচিরেই তা কাটিয়ে উঠব।
তিনি গতকাল ফরিদপুরের সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তুহিনুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, দেশের এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের সকল দপ্তর ও সংস্থাসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আপনাদের পাশে থাকবে। ভয়ের কিছু নেই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়ে কেউ না খেয়ে থাকবেন না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়।এজন্যই আমাদের উচিৎ তাঁকে বারবার ক্ষমতায় আনা।
তিনি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ২হাজার ৩৯৫ জনকে ১০ কেজি করে চাউল দেয়া হয়। এছাড়া সামাজিক মৎস্য প্রকল্পের ২০ জন সদস্যদের প্রত্যেককে নগদ ২ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। বাসস।
ডেস্ক রিপোর্ট : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে হবে এবং উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হবে।
সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় গবেষণার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল টাওয়ারে দুই দিনব্যাপী ‘ইনোভ্যাটিভ টিচিং এন্ড লার্নিং এক্সপো-২০১৭’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ড্যাফোডিল এডুকেশন নেটওয়ার্ক ও ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নুর, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইউসুফ এম ইসলাম, এনসিসি এডুকেশন ইউকে’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলাননরটন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কালচারাল সেন্টারের প্রধান সারওয়াত রেজা বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য উচ্চশিক্ষা নয়। এখানে একটি বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষা শুধু শ্রেনি কক্ষে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে। নতুন জ্ঞান অনুসন্ধান করতে হবে। এজন্য ইনোভেটিভ টিচিং ও লার্নিং গুরুত্বপূর্ণ।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা চিরকাল শুধু জ্ঞান ও প্রযুক্তি আমদানিকারক থাকব না। আমাদের নতুন প্রজন্ম বিশ্বমানের মেধার অধিকারী। তারা একদিন জ্ঞান ও প্রযুক্তি রপ্তানি করবে’। তিনি বলেন, মানবসম্পদ গড়ার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। সেজন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইনোভেটিভ টিচিং-এর জন্য দু’জন প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করা হয়। মোট ৫৮টি ইনোভেটিভ টিচিং প্রকল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। আগামীকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে ইনোভেটিভ লার্নিং প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হবে। বাসস।
নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, শিশুদের চিত্রাঙ্কনে তাদের অনুভূতি ও বৃহৎ পরিসরে অনুসন্ধিৎসুর প্রতিফলন ঘটেছে।
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চারু ও কারু শিল্প ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী ও স্মৃতিস্মারক উদ্বোধনকালে তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন শিশুকে দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি শিশুদের আঁকা বঙ্গবন্ধুর অনেক চিত্র তুলে ধরে বলেন, যখন তারা বঙ্গবন্ধুর চিত্রাঙ্কন করে, তখন তারা দেশের চিত্রই তুলে ধরে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা।
এ সময় মন্ত্রী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে বেগম মুজিবের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি ও উপস্থিতিতে তাঁর পরামর্শ ও জাতীয়তাবাদী সংগ্রামী জনতাকে পরিচালনায় তিনি অনন্য প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রেখেছেন।
তিনি শেখ কামালের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মী বা সংগঠকই ছিলেন না, দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্ত মনে শিশুদের আঁকা ছবি হতে পারে ফসলের মাঠ, নদী বা বিশেষ ব্যক্তির প্রতিকৃতি।
এর মধ্যদিয়ে তারা দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের মনের বা চিন্তার জগতেরও প্রতিফলন ঘটে। মন্ত্রী শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য চারুকলা ও সাহিত্য চর্চার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ বা ছুটিতে প্রেরণের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বাসস।
স্পোর্টস ডেস্ক : গোল পাননি নেইমার, তাতে অবশ্য থামেনি প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ের জয়রথ। এদিনসন কাভানির জোড়া লক্ষ্যভেদে ঘরের মাঠে তারা সেন্ত-এতিয়েনেকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপা পুনরুদ্ধারে তাই সঠিক পথেই থাকল পিএসজি। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে খেলা ৪ ম্যাচের সবক’টিতে জিতেছে উনাই এমেরির দল। তাতে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে ধরে রেখেছে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানটাও।
পিএসজির জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর গোলোৎসব করেছেন নেইমার আগের দুই ম্যাচে। সেন্ত-এতিয়েনের বিপক্ষে নিজে গোল উদযাপন না করলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আরেকবার অবদান রেখেছেন পিএসজির জয়ে। পার্ক দে প্রিন্সেসে ১৯ মিনিটে কাভানির পেনাল্টি থেকে করা যে গোলে এগিয়ে যায় প্যারিসের ক্লাবটি, তাতে অনেকটা ভূমিকা তার। ব্রাজিলিয়ান তারকার হাওয়ায় ভাসানো বুদ্ধিদীপ্ত পাস কাভানি বক্সের ভেতর ধরতে যাওয়ার সময়েই প্রতিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড় তাকে বাধা দিলে পেনাল্টি পায় পিএসজি। স্পট কিক থেকে পাওয়া ওই গোলেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
প্রথমার্ধ ওই গোলের লিড নিয়ে শেষ করা পিএসজি ৫০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে থিয়াগো মোত্তার লক্ষ্যভেদে। এখানেও অবদান রেখেছেন নেইমার। তার নেওয়া ফ্রি কিক থেকে তৈরি হওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল হয়নি মোত্তার।
খেলায় ফিরতে চেষ্টা কম করেনি সেন্ত-এতিয়েনে, কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। তবু যতটুকু আশা টিকে ছিল, ৮৮ মিনিটে সেটাও শেষ হয়ে যায় কাভানির দ্বিতীয় লক্ষ্যভেদে। থোমাস মোনিয়ের ক্রস থেকে চমৎকার এক গোল করেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। গোল ডটকম
স্পোর্টস ডেস্ক : ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সময়ের পালা বদলে বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে গেছে অনেকট। বদলে গেছে ক্রিকেটারদের মানসিকতাও। ২০০৬ সালের সিরিজে খেলা সেই মুখগুলোও নেই। হাবিবুল বাশাল খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে এখন নির্বাচকের ভূমিকায়। শাহরিয়ার নাফীসের মতো অনেকেই ছিটকে গেছেন দল থেকে। এবারের সিরিজে যে দলটি খেলতে নামছে, সেখানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তারও নেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। তার মতো প্রথমবার স্টিভেন স্টিথদের বিপক্ষে নামতে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব হাসান।
সেই হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রবিবার মিরপুর টেস্টে দিয়ে শুরু হওয়া দুই ম্যাচের সিরিজে যে ‘অনভিজ্ঞ’ বাংলাদেশ নামতে যাচ্ছে, সেটা বলাই যায়। মূল লড়াইয়ে নামার আগে শনিবার কঠোর অনুশীলন করে কাটিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যেন ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’- এমন মানসিকতাই ফুটে উঠেছে মুশফিকদের অনুশীলনে।
কোচিং স্টাফরা মিরপুরের ইনডোরে ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেছেন আলাদা আলাদা ভাবে। এমনকি বাদ পড়েননি এইচপির কোচ মাহবুবুল আলম জাকি ও হাই পারফরম্যান্সে সদ্য যোগ দেওয়া চম্পাকা রামানায়েকেও।
মিরপুরের ইনডোরে অনুশীলনের জন্য আছে তিনটি উইকেট, যার একটিতে ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসেল ও মিজানুর রহমান বাবুল। দ্বিতীয়টিতে ব্যস্ত স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশি। তিনি তার স্পিন ত্রয়ী-মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাসিরকে নিয়ে করেছেন টানা অনুশীলন। যেখানে দুই বল পরপরই যোশি তার শিষ্যদের দিচ্ছিলেন দিক নির্দেশনা। স্কোয়াডের এই স্পিনার ছাড়াও নেটে বোলিং অনুশীলন করেছেন সাকলাইন সজীব ও সানজামুল ইসলাম।
আর তিন নম্বর উইকেটে পেসারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। তাসকিন আহমেদে, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলামের পাশাপাশি নেটে ছিলেন শুভাশিষ রায়, আল আমিন ও কামরুল ইসলাম। রিভার্স সুইং নিয়ে পেসারদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছেন ওয়ালশ। সেই কাজগুলো ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা, সেসব তদারকি করলেন তিনি। তাসকিন ও শফিউলকে ডেকে খানিকটা সময় কী যেন আলাপ করে নিলেন জীবন্ত এই কিংবদন্তী। মোস্তাফিজকে নিয়ে বেশি কাজ করেছেন হাই পারফরম্যান্সের কোচ মাহবুবুল আলম জাকি। দুই-তিন বল পরপরই মোস্তাফিজের সমস্যাগুলো শুনছিলেন এবং পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি পেছনে থেকে। ‘কাটার মাস্টার’ও বেশ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিলেন এবং পরামর্শ মেনে করে যাচ্ছিলেন বোলিং। স্কোয়াডের এই তিন পেসারকে নিয়ে যখন কাজ করছিলেন ওয়ালশ ও জাকি, তখন বসে থাকেননি সদ্যই নিয়োগ পাওয়া শ্রীলঙ্কান পেস বোলিং কোচ রামানায়েক।
নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন তামিম-ইমরুল-মুশফিকরা তাদের ব্যাটিং ইনডোরের উইকেটের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে দেখছিলেন ব্যাটিং পরামর্শক মাক ও’নিল। একই সঙ্গে ধরিয়ে দিচ্ছিলেন সমস্যাগুলো। এই যেমন ইমরুল যখন নেট শেষে ফিরছিলেন, তখন তার সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বললেন অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটিং পরামর্শক। এরই মাঝে আবার প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে পরামর্শ সেরে নিচ্ছিলেন তিনি। হয়তো একাদশ ঠিক কেমন হবে, সেইসব নিয়েই আলোচনা করছিলেন এই দুই কোচ। হাথুরুসিংহেকে মাঝে আবার কথা বলতে দেখা গেছে ওয়ালশ ও যোশির সঙ্গেও।
সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু মুশফিকরা এক ঘণ্টা আগেই মিরপুরে চলে আসেন। শুরুতে ওয়ার্মআপ সারেন খেলোয়াড়রা। এরপর হাথুরুসিংহের নেতৃত্বে মুশফিক-তামিম চলে যান উইকেটে। সেখানে বেশ খানিকক্ষণ সময় পিচ পর্যবেক্ষণ করে উইকেটের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেন তারা। পরের ধাপে শুরু হয় মিরপুরের ইনডোরে নেট অনুশীলন। প্রায় দুই ঘণ্টা নেট অনুশীলন করে মূল মাঠে ফিল্ডিং অনুশীলন করেন ক্রিকেটাররা।
১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা বলেই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রজি নয় বাংলাদেশ। একে অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘ দিন আসেনি বাংলাদেশ সফরে, এর ওপর আবার এবারের সিরিজ ঘিরে ছিল তৈরি হয়েছিল নানা নাটক। সবকিছুর জবাব দিতে ২২ গজে বাংলাদেশের ভালো পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। শনিবার মুশফিকদের কঠোর অনুশীলনই জানান দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে কোনও ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। মুশফিক-তামিমদের ভাণ্ডারে যত গোলা-বারুদ আছে, সব কিছু নিয়েই রণকৌশল সাজাচ্ছেন কোচিং স্টাফরা।
গত বছরের অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঢাকায় যে আনন্দ মিছিল হয়েছিল, ঈদের ঠিক আগে এবারও হতে পারে আরেকটি উৎসব। তার প্রস্তুতিই চললো শনিবার মিরপুরে।
ডেস্ক রিপোর্ট : ইজারাদারদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাট। দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও সরকার নির্ধারিত কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবছর দর কম পড়েছে পাঁচটি হাটের। যাতে সিটি করপোরেশন বাধ্য হয়েই কম দরে হাট ইজারা দেয়। সেজন্য সিন্ডিকেটটি এ কাজ করছে। ওই হাটগুলোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। ফলে দুই সিটি করপোরেশনের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এ বছর দুই সিটি করপোরেশন ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১৩টি এবং উত্তর সিটিতে ৯টি। দক্ষিণের হাটগুলো হচ্ছে-মেরাদিয়া বাজার,উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ,কমলাপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ,কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা,জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ,কামরাঙ্গী চর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা,আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা,ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা,দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা,শ্যামপুর বালুর মাঠ ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা।
এই হাটগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় ২৬ জুলাই ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের বিপরীতে কোনও দরপত্রই জমা পড়েনি। এছাড়া গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাট এবং আরমানিটোলা হাটের বিপরীতে সরকারি মূল্যের (হাটের গত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড়) চেয়ে কম মূল্য দেওয়া হয়। পরে এ পাঁচটি হাটের দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।
দ্বিতীয় দফায়ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের জন্য একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। তৃতীয় দফায় হারুন-অর রশীদ নামে একজন সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ৬৮ লাখ টাকা। যা সরকারি মূল্য এক কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৯১৬ টাকা থেকে ৪৪ লাখ ১২ হাজার টাকা কম।
গরুর হাট (ছবি: সংগৃহীত)
বাকি চারটির মধ্যে শুধু ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে মাত্র ২১ হাজার ২৫০ টাকা বেশি মূল দিয়ে হাজী মো.শামসুজ্জোহা নামে এক ব্যক্তি ইজারা পান। বাকি তিনটি হাটের বিপরীতে বাধ্য হয়েই তৃতীয় দফার জন্যও দরপত্র আহ্বান করে সিটি করপোরেশন। এতেও সরকারি মূল্য থেকে কম মূল্য দিয়েছে ইজারায় অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়া প্রতিটি হাটেই মাত্র দুজন করে দরপত্র জমা দিয়েছে।
আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা নিয়ে গঠিত হাটের বিপরীতে দ্বিতীয় দফার টেন্ডারে ইংলিশ রোডের আশিকুর রহমান সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলেন এক কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা সরকারি মূল্যে থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা কম। তৃতীয় দফায় তিনি দরপত্রেই অংশই নেননি। এ হাটের বিপরীতে তৃতীয় দফায় অংশ নেন দুজন। এতে সর্বোচ্চ দর এক কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়েছেন এরফান এন্টারপ্রাইজের জাহাঙ্গীর আলম। ফলে এ হাটে সরকারি মূল্য চার কোটি ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭০ টাকার মধ্যে তিন কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা দর কম উঠেছে।
একইভাবে কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটের সরকারি মূল্য ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা। কিন্তু আমির খান নামে এক ইজারা প্রত্যাশী দর দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা সরকারি মূল্যের চেয়ে ৩২ লাখ ১৬ হাজার ১৭৩ টাকা কম।
একই অবস্থা গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠের হাটের। এ হাটটির সরকারি মূল্য এক কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার ৪২৭ টাকা। দ্বিতীয় দফায় সৈয়দ মাসুম আলী সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলেন ৬২ লাখ টাকা। তৃতীয় দফা দরপত্রেও তিনি ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন। ফলে এ হাটে ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা কম দর উঠেছে।
কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ হাটগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে হাট ইজারার সিদ্ধান্ত।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও হাটবাজার ইজারা কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চারটি হাটের কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী তিনটি হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর আরমানিটোলা খেলার মাঠের হাটটি বাতিল করা হয়েছে।’
সিন্ডিকেটের বিষয়ে জনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। ব্যবসায়ীরা তাদের পলিসি অনুযায়ী কাজ করে থাকেন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এ বছর ৯টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি হাটের ইজারাদার চূড়ান্ত হয়েছে। বনরূপা ও আশিয়ান সিটির পশুহাটের ইজারা চূড়ান্ত হয়নি। বনরূপার হাটে ৫১ লাখ এবং আশিয়ান সিটির হাটে ৫৩ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে। কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ দুটি হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে হাট দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’বাংলাট্রিবিউন।
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সাফল্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ পুলিশের পদচারণা বাড়ছে। বাংলাদেশি পুলিশের জঙ্গি দমনের অভিজ্ঞতাও জানতে আগ্রহী অনেক দেশ।গত মার্চে ঢাকায় চিফ অব পুলিশ কনফারেন্সের পর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলও তাদের আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। বৃহত্তম উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) পুলিশের উন্নয়নে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে। ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম তথা সাইবার ক্রাইম, হিউম্যান ট্রাফিকিং, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে বর্তমানে ৮টি দেশে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। ভারত ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করার কাজ এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাবিশ্বের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ও পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গাললপ পুল’। সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ল’ অ্যান্ড অর্ডার রিপোর্ট-২০১৫’ অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর ৮৯ পয়েন্ট নিয়ে সারাবিশ্বে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। শ্রীলঙ্কা ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ও বাংলাদেশ ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এরপর যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৭, অস্ট্রেলিয়া ৭৭, ফ্রান্স ৭৫ এবং ভারত ৬৭ পয়েন্ট রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের থেকে এগিয়ে আছে।
পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও জনপদ নয়। কাজেই বৈশ্বিক নিরাপত্তার সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। জঙ্গিবাদ এখন সারাবিশ্বের সমস্যা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একটি ক্ষুদ্র অংশ দেশে ইসলামের নামে নাশকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বিচ্ছিন্নভাবে দেশি-বিদেশি ও ভিন্ন মতালম্বীদের হত্যা ও মসজিদেও হামলা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। সেদিক থেকে পুলিশ জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পেরেছে। বাংলাদেশের সেই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিতে চায় অনেক দেশ।
বর্তমানে জাতিসংঘ সদর দফতরসহ দারফুর,হাইতি,কঙ্গো,মালি,দক্ষিণ সুদান, লাইবেরিয়া,থাইল্যান্ড ও শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ৯৬৫ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৭ হাজার ৮৮২ জন সদস্য মিশন সম্পন্ন করেছেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করেছেন ২০ জন পুলিশ সদস্য।
বাহিনীর দক্ষতা উন্নয়নে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (জাইকা)কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। তারা পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডা রোধ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় গত ১২-১৪ মার্চে ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রথমবারের মতো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে দক্ষিণ এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর পুলিশ প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ আঞ্চলিক যেকোনও বিষয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়।ওই সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামসহ ১৪টি দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা ছাড়াও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ইন্টারপোল, ফেসবুক, ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন (আইজিসিআই), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), আসিয়ানাপোল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং অ্যাসিসট্যান্স প্রোগামসহ (আইসিআইটিএপি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), সিআইডি, এসবি, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ ও পিবিআই’র কর্মকর্তাদের ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ স্টাফ কলেজকে সম্পৃক্ত করার বিষয়েও কাজ চলছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল)মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুলিশের অর্জন এখন অনেক। দিন দিন এর পরিধি বাড়ছে। মালেয়েশিয়ার সঙ্গে অ্যান্টি-টেরোরিজম ও মানবপাচার, প্রবাসী শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা প্রদান,মিয়ানমারের সঙ্গে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালান ও রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বর্ডার এলাকায় পেট্রোল ডিউটি আরও বাড়নোর বিষয়েও দ্বিপাক্ষীয় আলোচনা চলছে।অক্টোবরের মধ্যে তাদের সঙ্গে এমওইউ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে শ্রীলঙ্কা, চীন ও ভিয়েতনামসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। বিদ্রোহী দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা পুলিশের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে আলোচনাকালে গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার ক্রাইম, অর্থনৈতিক ক্রাইম, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন এবং বিশেষায়িত অপরাধ সম্পর্কে বাংলাদেশের পুলিশ অফিসারদের আরও অধিকতর প্রশিক্ষণ ও কর্মশলার আয়োজন সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্ব পায়। খুব শিগগিরই চীনে একটি আন্তর্জাতিক পুলিশ কনফারেন্সে যোগদান করবো। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সাইবার ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের লিডারশিপ কোর্সসহ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কারিগরি সহোযোগিতা প্রদানের বিষয়েও আলোচনা চলছে। তাদের সঙ্গেও এমওইউ করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমসের (ডিসি) সঙ্গে কাজ চলছে। পুলিশের দক্ষতাসহ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বাড়াতে জাইকার সঙ্গে কথা হচ্ছে।’
সাইবার অপরাধীরা অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া তরুণদের ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হয়েছে বলেও জানান মনিরুজ্জামান।
দিল মনোয়ারা মনু : ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাস। বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি দুস্থ শিশুদের মধ্যে দুধ বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে দুধ বিতরণ করছেন আইভি রহমান। আমার সুযোগ হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে থাকার। মাত্র সাংবাদিকতায় ঢুকেছি। সবকিছু দেখার ও জানার প্রবল আগ্রহ তখন। চোখের সামনে সেই দৃশ্য আজও অমলিন। আইভি রহমান পরেছেন অফ হোয়াইট রঙের লাল-পাড় শাড়ি, চোখে সানগ্লাস। লাবণ্য-ঢলঢল স্নিগ্ধ চেহারা। অপূর্ব লাগছিল তাঁকে। বাচ্চারাও দুধ নিতে যেয়ে অবাক হয়ে যেন তাঁকেই দেখছিল।
আজ মনে পড়ছে কত স্মৃতি, কত টুকরো টুকরো কথা। রাজনীতি সবসময় পরিচ্ছন্ন নয় বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু আইভি রহমান আমার সামনে এক অন্য রকম দৃষ্টান্ত ছিলেন। তাঁর মতো নির্লোভ মানুষ এদেশের রাজনীতিতে মেয়েদের সচেতন করে তোলার ব্রত নিয়েছিলেন বলেই আজ এ ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে এসেছে। নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন তিনি একজন নির্ভীক সৈনিক। তাঁর এই মহান আত্মত্যাগ বাংলাদেশের নার আন্দোলনের মশাল হয়ে জ্বলবে চিরকাল।
আইভি রহমান সারাজীবন মাঠের রাজনীতি করেছেন। রাজনৈতিক সভার মঞ্চে উঠে ভাষণ খুব কম দিয়েছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে মঞ্চের নিচে বসে শুনতে এবং শ্লোগান দিতেই পছন্দ করতেন বেশি। কিন্তু পোশাকে-আশাকে ছিলেন অত্যন্ত রুচিশীল, গোছানো। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই রাজনীতি করতেন সক্রিয়ভাবে। কিন্তু আইভি আপার কারণে সেই সংসারও ছিল অত্যন্ত ছিমছাম এবং রুচিকরভাবে সাজানো।
নারী আসন নিয়ে যখন তুমুল বিতর্ক, পঁয়তাল্লিশ আসন নারীদের জন্য নির্ধারিত করা হল। প্রতিবাদে ফেটে পড়ল নারীসমাজ। জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করা হল। বক্তৃতা চলছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে এল মহিলা আওয়ামী লীগ, আইভি রহমানের নেতৃত্বে। মুহূর্তেই প্রকম্পিত হল জনপদ মুহুর্মূহু শ্লোগানে। তখন আমার পাশেই বসে থাকা জনৈক নেত্রী বললেন, “নাও, এখন সমস্ত ক্রেডিট যাবে আওয়ামী লীগের ঘরে।”
আমি মনে মনে ভাবলাম, ক্রেডিট নিতে জানতে হয়। আসর গরম করার কৌশলটি রপ্ত করাও একটি বড় শিল্প।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছাত্রলীগের কর্মীরা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত তখন আইভি রহমান সেখানে যেয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, “তোমাদের এই আচরণের ফলে আমি যে ছাত্রলীগ করেছি সে কথা ভাবতেও আমার লজ্জা হচ্ছে।”
অকপটে সহজ সত্য বলতে তাঁর কখনও দ্বিধা ছিল না।
২০০০ সালে নারী-শিশুনির্যাতনবিরোধী আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিয়ে কাজ করেছিলেন। এই আইন প্রণয়নের দীর্ঘসূত্রতাও তাঁকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত দশককে নারী দশক এবং ১৯৭৫ সালকে নারীবর্ষ ঘোষণা করা হলে আইভি রহমান এই ঘোষণায় স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, রাজনৈতিক দিক থেকে অবহেলিত, অর্থনৈতিক দিক থেকে বঞ্চনার শিকার এবং সামাজিক দিক থেকে প্রতিনিয়ত অমর্যাদাহীন নারীসমাজের জন্য এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ এই ঘোষণা এদেশের নারীআন্দোলনকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যুগিয়েছে অদম্য প্রেরণা।
তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা সেদিন আমাদের মুগ্ধ করেছিল। পাক্ষিক ‘অনন্যা’ র এক গোলটেবিল বৈঠকে নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এসব ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট, কণ্ঠ থাকত দৃঢ়।
এই আসর জমজমাট করে রাখা প্রাণবন্ত মানুষটি গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের খোলা ট্রাকের পাশে পড়েছিলেন একা কিছুক্ষণ। ব্যাপক হতাহত ও আতংকের কারণে সবাই চারদিকে প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করছিল। স্থির হয়ে ছিল তাঁর দুচোখ। কালো-পাড়ের সাদা শাড়িটির বেশিরভাগ অংশই ছিল রক্তে ভেজা। কাপড়ের নিচের অংশ পুড়ে ছাই। ডান পায়ের মাংসপিণ্ড দলা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের জন্য ৫২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু কিছুতেই রক্তক্ষরণ ঠেকানো যায়নি। প্রায় তিনদিন অচেতন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। প্রয়াত সভানেত্রী ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর তিনি গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিমের সুযোগ্য অনুসারী হিসেবে এদেশের মঞ্চনাটককে গণমানুষের জন্য শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যাদের নেপথ্যের অবদান উল্লেখযোগ্য, আইভি রহমান তাদেরই একজন। মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব তিনি উনসত্তরের গণআন্দোলনের পর থেকেই দক্ষতার সঙ্গে পালন করে এসেছেন। দুই দফায় ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
অন্ধ কল্যাণ সমিতিরও তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদিকা এবং গত আওয়ামী লীগ শাসনামলে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সংস্থার বিশাল কার্যালয় ও অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। উনসত্তরের গণআন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যাসন্তানের জননী। সবাই বিবাহিত। ছাত্রী হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেছেন।
ভৈরবের ‘বড় বাড়ি’ হিসেবে খ্যাত বাড়িটিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তখনকার জাঁদরেল শিক্ষাবিদ প্রয়াত জালালউদ্দিন আহমেদ, মা হাসিনা বেগম এখনও বেঁচে আছেন। আইভি রহমানকে স্কুলের ফাংশনে নাচতে দেখে জিল্লুর রহমান তাঁকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ করেন এবং একা যেয়ে আইভি রহমানের বাবার কাছে ভয়ে ভয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। দুদিন পর তিনি সম্মতি দিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গাড়িতে মুজিব ও খান আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিয়ে করতে যান। এই দুজনই ছিলেন আইভি রহমান ও জিল্লুর রহমানের বিয়ের সাক্ষী। আট বোনের মধ্যে আইভি রহমান চতুর্থ। বড় বোন শামসুন্নাহার সিদ্দিকী।
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা জিল্লুর রহমান পত্নীবিয়োগে যখন হতবিহ্বল তখন বারবার তিনি বলেছিলেন, “একা আমি বাঁচব কীভাবে! তিনি বিনীতভাবে সকলকে অনুরোধ করেছেন, আপনারা এ দেশকে বাঁচান– মৌলবাদীদের হাতে এ দেশকে তুলে দেবেন না।”
আইভি রহমান একজন আলোকিত মানুষ। তিনি ভালোবাসতেন দেশ ও দেশের মানুষকে। মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর সখ্যতা। ঘাতকের গ্রেনেড সেই মাটিতেই তাঁকে লুটিয়ে দিল, মিশিয়ে দিল মাটির সঙ্গে। কিন্তু বেঁচে থাকবে তাঁর কর্ম ও প্রেরণা, যা এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের সূর্যসম্ভাবনার দিকে। বিডিনিউজ২৪।
তুরিন আফরোজ : ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থায় ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক বিশাল পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। রায়ের ২২৬ পৃষ্ঠা থেকে ২২৯ পৃষ্ঠায় তাঁর এই পর্যবেক্ষণ বিধৃত হয়েছে। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যেমন, দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ, দুর্নীতি পরিস্থিতি, অকার্যকর সংসদ, স্বাস্থ্যখাতের অবনতি, জনপ্রতিষ্ঠানসমূহকে মেধাশূন্যকরণ, প্রশাশনিক অব্যবস্থাপনা, অপরাধের পরিবর্তিত ধরন, নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যর্থতা, নিয়ন্ত্রণবিহীন আমলাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগের ঔদ্ধত্য ও অদক্ষতা ইত্যাদি।
তাহলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর মতে, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো কিছুই আশাব্যঞ্জক নয়। তবে হ্যাঁ, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে ২২৯ পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি লিখেছেন:
Even in this endless challenge , the judiciary is the only relatively independent organ of the State which is striving to keep its nose above the water through sinking.
অর্থাৎ তিনি লিখেছেন:
“সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝেও রাষ্ট্রের একমাত্র অপেক্ষাকৃত স্বাধীন অঙ্গ, বিচার বিভাগ, ডুবন্ত অবস্থায়ও নিজের নাক পানির ওপর ভাসিয়ে রাখবার লড়াই করে যাচ্ছে।”
এই যে পানির ওপর নাক ভাসিয়ে আমাদের বিচার বিভাগ নিরন্তর লড়াই করে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান সবার ওপরে রাখছেন, দুর্নীতি নিয়ে তার একটা সাম্প্রতিক প্রতিচ্ছবি দেখে আসা যাক।
মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে, ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তিনি অবসরে যান। আলোচিত এই বিচারপতি ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত’ বলে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয় দুদক। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।
দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। যে কারও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।দুদকের কাছে কোনো অভিযোগ এলে প্রথমে অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এর জবাবে ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এই চিঠিতে বলা হয়, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেছেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেওয়া রায় সকলের উপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেওয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করেছে দুদক। চিঠিটি কমিশনের সভায় উপস্থাপন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির সঠিকতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিঠির সঠিকতা যাচাই করে তা আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীরই বলে নিশ্চিত হয় দুদক। এ বিষয়ে দুদকের একটি নথিতে বলা হয়েছে:
“পত্রটি স্বাক্ষরকারী অরুণাভ চক্রবর্তী মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির অনুমোদন ও নির্দেশক্রমে প্রেরিত পত্রটিতে তার স্বাক্ষর সঠিক।”
ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের ২২৮ পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে বর্তমানে ‘অবাধ দুর্নীতি’ চলছে। তাঁর এই দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি আমরা অবশই সাধুবাদ জানাই। কিন্তু মাননীয় প্রধান বিচারপতি যখন বিচার বিভাগের দুর্নীতির তদন্ত বন্ধের বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্বৈত অবস্থান গ্রহণ করেন তখন আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
বিচার বিভাগের দুর্নীতি কি তাহলে দুর্নীতি নয়? বিচারকগণ কি তাহলে আইনের ঊর্ধ্বে? আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ তাহলে আমার প্রশ্ন, আমার দেশের বিচারপতিগণ কি ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো মহামানব যে, আমাদের জনগণ তাদেরকে দুর্নীতি করার অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক রাতে ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনার পর উত্তেজনা আর শঙ্কার মধ্যে কক্সবাজার সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে।
উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার বাংলাদেশে প্রবেশের পর নাফ নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে সহায় সম্বলহীন কয়েক হাজার মানুষ।
তারা যাতে কক্সবাজারের ভেতের ঢুকতে না পারে সেজন্য দূরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। আগের রাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় আটক ১৪৬ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহেই সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে রাখাইনের ঘটনার পর সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হলে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটে, যার দায় স্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামে একটি সংগঠন।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য সহ অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরণার্থী মোহাম্মদ শফি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারে তার খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে যে খবর তারা পাচ্ছেন, তাতে পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
“চারদিকে কেবল সেনাবাহিনী। অনেক মানুষ মারা গেছে, লোকজন কাঁদছে। খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে সব।” বিডিনিউজ২৪।