পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

বদলে যাবে পুরান ঢাকা!

Posted on July 29, 2017 | in জাতীয় | by

ডেস্ক রিপোর্ট : ভূমি পুনঃ উন্নয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে বদলে গেছে সিঙ্গাপুরের চিত্র। এই পদ্ধতি কিংবা এর কাছাকাছি মডেল অনুসরণ করে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। একই পদ্ধতির অনুসরণে পুরান ঢাকাকে বদলে দিতে চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ জন্য পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে পুরান ঢাকার বংশালের একটি জায়গাকে। এ জন্য ধারণাপত্র (কনসেপচুয়াল প্ল্যান) তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছে সংস্থাটি।

এই পদ্ধতিতে কোনো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার খণ্ড খণ্ড প্লটগুলোকে একত্র করে ভূমি পুনঃ উন্নয়নের (ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্ট) মাধ্যমে ব্লকভিত্তিক আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

রাজউক জানায়, ধারণাপত্রটি তৈরি করছে তাদের নগর পরিকল্পনা শাখা। এর অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার বংশালে ৩০ বিঘা ও ১০ বিঘা আয়তনের দুটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। কাল রোববার সেখানে জরিপ পরিচালনা করা হবে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর নতুন ড্যাপের (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভূমির পুনঃ উন্নয়ন বা ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্টের বিষয়টি নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অনেকখানি নতুন ধারণা। পুরান ঢাকার অধিকাংশ প্লটের আয়তন আধা কাঠা থেকে দেড় কাঠার মধ্যে। এত ছোট প্লটে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেওয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, এসব প্লটসংলগ্ন সড়কগুলোও অনেক সরু। এই অবস্থায় প্লটগুলোকে একত্র করে যদি তিন বিঘা, পাঁচ বিঘা আয়তনের একেকটি ব্লক তৈরি করা যায়, তাহলে সেখানে নতুন করে নির্মিত বহুতল ভবনে প্রত্যেকে একাধিক ফ্ল্যাট পেতে পারেন। জমির পরিমাণ ও সড়কের জন্য ছেড়ে দেওয়া জায়গার অনুপাত হিসাব করে কে কতটা ফ্ল্যাট পাবেন, সেটা নির্ধারণ করা হবে। সেই সঙ্গে ব্লকের মধ্যেই উন্মুক্ত স্থান, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যায়ামাগার, বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার সংস্থান করাটাও সহজ হবে। বিদ্যমান কাঠামো ঠিক রেখে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

নতুন ড্যাপ প্রণয়নের জন্য এলাকাভিত্তিক জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ভূমি পুনঃ উন্নয়নের বিষয়টি আলোচনায় আসে। গত ২ মে পুরান ঢাকার হরনাথ ঘোষ সড়কের বাচ্চু সরদার ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ড্যাপ প্রণয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রাজউক ও দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বকশীবাজার, চাঁদনীঘাট, চকবাজার, মৌলভীবাজার, পুরোনো জেলখানা এলাকা, ইসলামবাগ, রহমতগঞ্জ ও বাবুবাজার এলাকার পাঁচজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। সেখানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুরান ঢাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ভূমি পুনঃ উন্নয়নের সুপারিশ তুলে ধরা হলে জনপ্রতিনিধিসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা প্রথমে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা প্রমাণের তাগিদ দেন।

এ বিষয়ে নতুন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি পুনঃ উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয় না। আর পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ভূমির মালিক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের মতামতকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ভূমি পুনঃ উন্নয়নের মাধ্যমে ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকাকে যে আমূল বদলে দেওয়া যায়, তার উদাহরণ হিসেবে সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ টানেন নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। রাজউকের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব এবং এটার সম্ভাবনাও আছে। আজকে আমরা সিঙ্গাপুরের যে অবস্থা দেখি, তার শতভাগ ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে হয়েছে। চীনের বেইজিংসহ বেশ কিছু জায়গাতেও এটা হয়েছে। আজ হোক কাল হোক ক্রমান্বয়ে গোটা পুরান ঢাকাকে এভাবে নবায়ন করতে হবে।’

বংশালে ভূমি পুনঃ উন্নয়নের এই পাইলট প্রকল্পের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাফিজা খাতুন। পুরান ঢাকা বিষয়ে একজন গবেষক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তিনি এই প্রকল্পের বিষয়ে বলেন, সিঙ্গাপুরের বাইরে জাপান ও মালয়েশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাকে এই পদ্ধতি কিংবা এর কাছাকাছি মডেল অনুসরণ করে নতুন করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু এই পদ্ধতির সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে কমিউনিটির সবাইকে একসঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় অংশী করে তোলা। পুরান ঢাকার মতো একটা জায়গাকে ঢেলে সাজাতে এর থেকে কার্যকর কোনো পদ্ধতি নেই।

এই প্রকল্পের সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী। এটি সফল হলে বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনার পরিসরে তা এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

সূত্র : প্রথম অালো।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud