পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

পালিত হলো শবে বরাত

Posted on June 3, 2015 | in ইসলাম, জাতীয় | by

52320_1‘আল্লাহুম্মা আমিন…আমাদের শান্তি দাও’
সিলেট: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শবে বরাত। মঙ্গলবার সারারাত ইবাদত বন্দেগির মধ্যে কাটিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মসজিদে মসজিদে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থনায় কাটিয়েছেন অনেকেই। ‘আল্লাহুম্মা আমিন…আমাদের শান্তি দাও। আল্লাহুম্মা আমিন… আমরা শান্তি চাই। এ দেশের মানুষ শান্তি চায়। আমাদের শান্তি দাও হে আল্লাহ…’ এমনই কথা উচ্চারিত হয় সবার প্রার্থনায়।
ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতিবছরই দিনটি পালন করে। নানা আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতাও থাকে দিনটি ঘিরে।

নিরাপত্তা বলয়: পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সিলেট নগরীর মাজারগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ রাতে মাজারগুলোতে বিপুল লোকের সমাগম হওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি মাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছিল।

বাহারি রুটি-হালুয়া: শবে বরাতে নগরীর হোটেলগুলোতে সুজি, ছোলা-বুট, গাজর, ময়দা, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার হালুয়াসহ অনেক পদের হালুয়া তৈরি করা হয়। সঙ্গে ছিল বড় বড় রুটি।

শাহজালাল মাজার রোডের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আল-কবির বলেন, ‘শবে বরাত উপলক্ষে নগরে রুটি-হালুয়া খাওয়া এবং তা বিলি করার প্রচলন আছে, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।’

আরেক ব্যবসায়ী সোহেল ইসলাম বলেন, ‘শবে বরাতের দিন বিকেল থেকেই ভিক্ষুকদের খাবার বিতরণ করা হয়। সামর্থ্য অনুযায়ী আটা বা ময়দার রুটি বিলি করা হয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।’

টুপি আতরের দোকানে ভিড়: শবে বরাত উপলক্ষে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল নগরীর টুপি-আতর বিক্রেতাদের দোকানে। এ দিনটি যাতে ভালোভাবে আদায় করতে পারে তাই টুপি কিনতে ব্যস্ত নগরবাসীর অনেকেই ছুটে আসে নগরীর দোকানগুলোতে। এমনকি রাত ১১টার পর হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের আশপাশের এলাকায় রাস্তায় বসে ভ্রাম্যমান টুপি, আতর, মমবাতি ও আগরবাতির দোকান।

টুপি বিক্রেতা আবুল কাশেম জানান, শবে বরাতের দিন যত টুপি বিক্রি করেন, একমাসেও অনেকসময় ততো বিক্রি করা সম্ভব হয় না। টুপির পাশাপাশি আতর আর তসবির বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এছাড়ও নগরীর মাজার ও মসজিদগুলোর সামনের রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমান চটপটি ও ফুচকার দোকানগুলোতেও ভিড় ছিল লক্ষণীয়। বাসায় হরেক রকম খাবার খাওয়ার পরও অনেকেই ফুচকা চটপটির লোভ সামলাতে পারেননি।
ঝলমলে আলোর নগরী: সন্ধ্যার পর থেকেই নজর কাড়ে ঝলমলে আলোর উজ্জ্বলতা। নগরীর বিভিন্ন দোকান সাজানো হয় রঙিন আলোর বাতি দিয়ে। নজরকাড়া এসব আলোর ছোঁয়া দেখা গেছে নগরীর বিভিন্ন মাজারগুলোতেও। শবে বরাত উপলক্ষে এমন বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

মাজার- মসজিদে উপচেপড়া ভিড়: সিলেট নগরীর রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও উল্টো চিত্র দেখা গেল মাজার ও মসজিদগুলোতে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটে এসেছেন মাজারভক্তরা। তারা ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজালাল (রহ.), তার ভাগ্নে হযরত শাহ পরান (রহ.), সিলেটের প্রথম মুসলমান হযরত বোরহানউদ্দিন (রহ.) সহ অন্যান্য ওলি-আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করছেন।
জানা গেছে, শবে বরাতে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা লাভের উদ্দেশে মাজার ও কবরস্থানে মানুষের ভিড় শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকেই। কাছের মানুষটির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার মুক্তির জন্য দোয়া করেন স্বজনরা। সিলেট নগরীর মাজার ও কবরস্থানগুলোতে বিভিন্ন বয়েসী স্বজনদের যেতে দেখা গেছে সারাদিনই। এমনকি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে আসেন অনেকেই।

শবে বরাতের রাতে নগরীর হযরত শাহাজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.), হযরত শাহ তৈয়ব সয়লা (রহ.), হযরত হাফিজ বুলবুল (রহ.), হযরত মানিক পীর (রহ.), হযরত শাহ সুন্দর (রহ.) ও হযরত বোরহান উদ্দিনের মাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) এর মাজারে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইবাদত করতে দলে দলে মাজারে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা।

হযরত শাহজালাল মাজার জিয়ারত করতে কুমিল্লা থেকে আসেন আজমত আলী। তিনি বলেন, ‘মাজার জিয়ারত করতে সিলেটে এসেছি। শাহজালাল-শাহপরান (রহ.) এর উসিলায় আল্লাহ যাদি আমাকে মাফ করে দেন তা হলে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাব। তাই বাবার মাজারে এসেছি।’
নগরীর কাজিটুলার বাসিন্দা সোহেল হোসেন তার ভাই ও ভাতিজাকে নিয়ে শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করতে আসেন রাত ১০টায়। এ সময় মাজারের পাশে দাঁড়িয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সোহেলের ভাতিজা রাকিব বলেন, ‘আমরা পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করতে প্রতিবছর শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারত করি।’

ভিক্ষুকদের উপস্থিতি: দিনটিকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরীতে বেড়েছিল ভিক্ষুকদের উপস্থিতি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভিক্ষুকরা বেশি ভিক্ষা পাওয়ার আশায় এখানে এসে ভিড় জমায়। নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাজারের পাশে তাদের ভিক্ষার ঝুলি বিছিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।

বিশেষ এ দিন উপলক্ষে অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ভিক্ষুক আজগর আলী। তিনি বলেন, ‘সিলেটি মানুষের মন নরম। চাইলেই টাকা দেয়।’

ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে ভিক্ষা করতে এসেছেন মো. সুজন মিয়া। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, অধিক ভিক্ষা পাওয়ার আশায় তিনি গত বুধবার সিলেটে এসেছেন। তিনি ৩ দিনে প্রায় ৫ হাজার টাকা ভিক্ষা করেছেন। তবে আজ বুধবার তিনি আবার ঢাকা ফিরে যাবেন বলে জানান।

কেন ঢাকা ছেড়ে সিলেটে ভিক্ষা করতে আসেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিলেটের রাস্তা-ঘাট বড় বড়। কিন্তু ঢাকার রাস্তাগুলো অনেক ছোট। ভিক্ষা করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আর সিলেটের মানুষের টাকা বেশি এবং তাদের মন নরম। চাইলে ফেরায় না।’

আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শবে বরাত: ‘আল্লাহুম্মা আমিন…আমাদের শান্তি দাও। আল্লাহুম্মা আমিন… আমরা শান্তি চাই। এ দেশের মানুষ শান্তি চায়। আমাদের শান্তি দাও হে আল্লাহ…’ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিলেট শাহজালাল (রহ.) এর মাজার মসজিদে আখেরি মুনাজাতে এমনই প্রার্থনা উচ্চারিত হয় সবার মুখে। সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের। মুসুল্লিরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ যেন প্রভুর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার অনন্য দৃশ্য। জীবনের সব অন্যায় ও মন্দ কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে মুসুল্লিরা ভালো পথে চলার অঙ্গীকার করেন আল্লাহর কাছে।

মুনাজাতে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মসজিদের খতিব হাফিজ মাওলানা আসশাদ আহমদ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, ‘আমাদের এই দেশটাকে কবুল করে নাও খোদা। দেশের মানুষের মাঝে শান্তি এনে দাও। সকল প্রকার বিপদ থেকে আমাদের মুক্ত রাখো।’
একই রকম কান্নার দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের প্রতিটি মসজিদ ও মাজারেও।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud