পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রায় কাল

Posted on December 22, 2014 | in জাতীয় | by

36193_0স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর)।
সোমবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে এজলাসে উঠে এ ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বিচারক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া।
গত ২০ আগস্ট সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় যেকোনো দিন রায় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
জামিনে থাকা কায়সারের জামিন বাতিল করে সেদিন তাকে কারাগারেও পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ও ২০ আগস্ট মোট ৬ কার্যদিবসে কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, রানা দাশগুপ্ত ও তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে গত ৭ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ৭ কার্যদিবসে কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আব্দুস সোবহান তরফদার।
গত ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগমসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষী।
তাদের মধ্যে কায়সারের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের ওপর সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৮ জন সাক্ষী। এসব সাক্ষীরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধা কাজী কবির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী টিপু, কায়সার বাহিনীর সদস্য হাজী মো. তাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাঠান, কায়সারের অপরাধের শিকার একজন বৃদ্ধা নারী (ক্যামেরা ট্রায়াল), মো. ইয়াকুব আলী, শাহ হাসান আলী ফুলু মিয়া, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শাহ হোসেন আলী সাবু, শহীদপুত্র মো. মোস্তফা আলী, কায়সারের অপরাধের শিকার একজন সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), শহীদপুত্র মো. নওশাদ আলী, মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায়, মো. গোলাম নুর, মুক্তিযোদ্ধা মো. নায়েব আলী, আলহাজ নিশামন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন জামাল, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ফুলু মিয়া, বাসু সাওতাল, নায়েব আলী, মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্স আব্দুল মোতালেব, মো. ওমর আলী, মো. লোকমান হোসেন, শহীদ কন্যা আম্বিয়া খাতুন, সাক্ষী শহীদ জায়া আনোয়ারা বেগম, মো. আমাই উল্লাহ, শহীদ কন্যা মাজেদা খাতুন ওরফে জমিলা খাতুন, শহীদপুত্র রেনু মিয়া এবং মো. আজহারুল হক।
আর জব্দ তালিকার ৩ সাক্ষী হচ্ছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কের ব্যক্তিগত সহকারী মো. নুরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ডকুমেন্টেশন অফিসার আমেনা খাতুন ও তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান মো. আনিসুর রহমান। তাদেরকে জেরা করেছেন আসামিপক্ষ।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করতে পারেননি।
গত ৪ মার্চ কায়সারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
গত ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে এবং ২৬ ডিসেম্বর ও গত ১৩ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন না করার পক্ষে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আবদুস সোবহান তরফদার।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর কায়সারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১০ নভেম্বর রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ পৃষ্ঠার এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, রানা দাশগুপ্ত, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্য থেকে ১৬টি অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
কায়সারের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ তদন্ত শুরু করে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শেষ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম। ২২ সেপ্টেম্বর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা।
তদন্তের স্বার্থে তদন্ত সংস্থা ১ সেপ্টেম্বর সৈয়দ কায়সারের ঢাকার বাসায় গিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে বর্তমানে রাজধানীতে ছেলের বাসায় ছিলেন কায়সার। কায়সার হচ্ছেন দ্বিতীয় কোনো আসামি যাকে জামিনে রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ পরিচালিত হয়েছে।
গত বছরের ২১ মে বিকাল পৌনে চারটায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরদিন ২২ মে কায়সারের জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে ১৫ মে প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
কায়সারের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহাকুমা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০/৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করার জন্য একটি সহযোগী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফরমও ছিল।
কায়সার এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালান।
কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার একটি, মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটি অভিযোগ রয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (তৎকালীন কুমিল্লা মহকুমা) সদরের পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামপুর গ্রামের কাজীবাড়িতে হামলা চালিয়ে শাহজাহান চেয়ারম্যানকে হত্যা, নায়েব আলীকে জখম এবং বাড়িতে লুটপাট করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আনুমানিক বিকেল ৫/৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর বাজারের পশ্চিমাংশ ও পাশ্ববর্তী কাটিয়ারায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এতে কামিনী রায়, বিনোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের দোকানসহ প্রায় ১৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা থেকে সোয়া ৭টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অহিদ হোসেন পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী ও মধু সুইপারকে হত্যা এবং তাদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট করার পর অগ্নিসংযোগ করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১০টা থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার মাধবপুর বাজারের উত্তর পূর্ব অংশে, উত্তর মাধবপুর, সাদত বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা পূর্ব মাধবপুরের আব্দুস সাত্তার, লালু মিয়া ও বরকত আলীকে হত্যা এবং কদর আলীকে জখম করে।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা এবং সন্ধ্যার পর যেকোনো সময় হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) সদর থানার পুনারবাজার পয়েন্ট, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি এম মহিউদ্দিনের বাড়ি ও লস্করপুর রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে আটকের পর নির্যাতন করে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার এবং তার বাহিনী।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১০টা সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা সাড়ে চারটার মধ্যে হবিগঞ্জ জেলা (তৎকালীন মহকুমা) সদরের এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১১ মে সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) চুনারুঘাট থানার চাঁদপুর চা বাগানে হীরামনি নামের এক সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণ করে সৈয়দ কায়সারের বাহিনী। সৈয়দ কায়সার এ সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণে সহায়তা করেছিলেন।
অষ্টম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৫ মে সকাল আনুমানিক ১০টা/সোয়া ১০টা থেকে বেলা একটা/দেড়টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুরের লোহাইদ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল গফুর, জমির উদ্দিন, আজিম উদ্দিন, এতিমুনেছা, নূর আলী চৌধুরী, আলম চাঁনবিবি ও আব্দুল আলীকে হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এদিন আকরাম আলী চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) নামে একজনকে জখমও করেন সৈয়দ কায়সার।
নবম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৯ মে আনুমানিক বেলা একটা/দেড়টা থেকে বিকেল তিনটা সাড়ে তিনটার মধ্যে হবিগঞ্জ জেলা (তৎকালীন মহকুমা) সদরের শায়েস্তাগঞ্জ খাদ্যগুদাম এবং শায়েস্তাগঞ্জ পুরানা বাজারের রেলব্রিজ এলাকার আব্দুল আজিজ, আব্দুল খালেক, রেজাউল করিম, আব্দুর রহমান, বড়বহুলা এলাকার আব্দুল আলী ওরফে গ্যাদা উল্লাহ, লেঞ্জাপাড়া এলাকার মাজত আলী ও তারা মিয়া চৌধুরীকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
দশম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ জুন বেলা আনুমানিক দুইটা/আড়াইটার দিকে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) সদর, মোকাম বাড়ি, শায়েস্তাগঞ্জ থানার আরঅ্যান্ডএইচ ডাকবাংলো এবং মাধবপুর থানার শাহাজীবাজার এলাকার শাহ ফিরোজ আলীকে অপহরণের পর আটক করে নির্যাতন করে হত্যা করে এবং সাবু মিয়াকে অপহরণের পর আটক করে নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী।
১১নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৩ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার (তৎকালীন মহকুমা) হরিপুর থানার নাসিরনগরের গোলাম রউফ মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজনদের ওপর নির্যাতন চালায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এছাড়া গোলাম রউফ মাস্টারকে অপহরণ ও আটকের পর তার ওপর নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ আদায় করলেও তাকে হত্যা, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লোকজনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করেন।
১২নং অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট দুপুর বেলা হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার বেলাঘর, জগদীশপুর হাইস্কুলে আতাব মিয়া, আইয়ুব মিয়া ও মাজেদা বেগমকে অপহরণ করে আটক করে এবং তাদের বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য করানো হয়। এক পর্যায়ে মাজেদাকে ধর্ষণ করা হয়।
১৩নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৯টা/সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৩টা/সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) চুনারুঘাট চা বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা মহিবুল্লাহ, আবদুস শহিদ, আকবর আলী, জাহির হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদেরকে নরপতিতে আব্দুস শহিদের বাড়ি, রাজেন্দ্র দত্তের বাড়িতে স্থাপিত স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয়, কালাপুরের পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্প এবং নলুয়া চা বাগানে ধর্মনাথের বদ্ধভূমি এলাকায় আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করে মরদেহ কুয়ার ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়।
১৪নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা/সাড়ে ৫টা থেকে বেলা ২টা/আড়াইটা পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার মৌজপুরের সিরাজ আলীর বাড়ি, জদীশপুর হাইস্কুলের আর্মি ক্যাম্প এবং সোনাই নদীর ব্রিজ এলাকার সিরাজ আলী, ওয়াহেদ আলী, আক্কাস আলী, আব্দুল ছাত্তারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
১৫নং অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি যেকোনো একদিন বিকেল ৫টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার শাহাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে নাজিম উদ্দিনকে অপহরণের পর সৈয়দ কায়সারের গ্রাম নোয়াপাড়ার বাড়ি, শাহাজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতন কেন্দ্র এবং শালবন রঘুনন্দ পাহাড় এলাকায় আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
১৬নং অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর সকাল ৭টা/সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৩টা/সাড়ে ৩টার মধ্যে ব্রাহ্মণবড়িয়া জেলার (তৎকালীন মহকুমা) ভাটপাড়া (বর্তমান নাসিরনগর) থানার দাউরা, নিশ্চিন্তপুর, গুটমা, বুরুঙ্গা, চিতনা, নূরপুর, ফুলপুর, জেঠাগ্রাম, পাঠানিশা, কুলিতুণ্ডা, আন্দ্রাবহ, তিলপাড়া, কমলপুর, গঙ্গানগর, বাঘি, শ্যামপুর, কুয়ারপুর, নোয়াগাঁও, কুণ্ডা, লক্ষীপুর, করগ্রাম গ্রামের ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এছাড়া এসব গ্রামের আলোকচান বিবি (বর্তমানে মৃত), বাসনা চক্রবর্তী ও ক্ষীরদা চক্রবর্তী তাদের হামলায় আহত হন।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud