May 7, 2024
নিউজ ডেস্ক: বিনামূল্যের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ নিতে এসে সময় ও অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের অসতর্কতায় তাদের পকেটের টাকা গচ্চা যাচ্ছে অযথা।
এ মাসেই বিনামূল্যে পরিচয়পত্র সংশোধন ও ডুপ্লিকেট কার্ড নেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। আর এ সময়ের মধ্যেই সেবা দিতে হবে লাখো নাগরিককে, যার দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
নাগরিকদের ভোগান্তির কথা একরকম স্বীকার করেই নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা তাগিদ দিলেন প্রকল্প বিকেন্দ্রিকরণের বিষয়ে।
আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভোটার তালিকা প্রকল্প কার্যালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মানুষ নিজেদের পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধন ও ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্রের জন্য অপেক্ষমান, যাদের বেশিরভাগই কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষুব্ধ।
গাজীপুর থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর যেমন বললেন, “আমার নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ভোটার তালিকা ও পরিচয়পত্রে নাম রয়েছে শুধু জাহাঙ্গীর। আমার জন্মতারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ৮৩ সাল, আইডি কার্ডে রয়েছে৭৩ সাল। এ দোষ কি আমার? কমিশনের দোষ এখন আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। দুই দিন ধরে ঘুরছি, কিছু করতে পারছি না।”
এই ভুক্তভোগী জানান, ডাটা এন্ট্রি কে করেছে, কেন ভুল হলো- তা জানা নেই তার।
“তবে বিদেশে ভিসা নিতে গিয়ে এক শব্দের নাম ও পাসপোর্ট করতে গিয়ে জন্মতারিখ নিয়ে বেঁধেছে বিপত্তি। এখন প্রতিদিন টাকা-পয়সা খরচ করে এসেও কূলকিনারা নেই।”
জাহাঙ্গীর জানান, ভোটার হতে ঝামেলা না হলেও সংশোধন করতে এসে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়েছেন।
গত বছর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এমন দুজন জানালেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ তারা আইডি পাবেন-এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যও তাদের জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, “লেমিনেটেড কার্ড দেবে? শুনছি স্মার্টকার্ড দেবে- কিছুই জানি না। দেড় বছর ধরে আইডি কার্ড ছাড়া ঘুরছি, এ দায় কার? এখানে এসেছি অনেক টাকা খরচ করে, বললো জরুরি প্রয়োজনে কার্ড লাগবে- এমন আবেদন করতে। এ ধরনের লাখ লাখ লোক কার্ড পায়নি।”
একজন তরুণী জানান, নিজের পরিচয়পত্রে পিতার নামের ঘরে রয়েছে মাতার নাম, মাতার নামের ঘরে রয়েছে স্বামীর নাম।
“নিজেই ফরম পূরণ করার পরও এ ধরনের ভুল কেন হল? ডাটা এন্ট্রিতে ভুল করায় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হচ্ছে।”
বুধবার সকালেও আগারগাঁওয়ের ওই ভবনের নিচে কয়েকশ’ নাগরিককে লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে দেখা যায়। বিকালে দেখা মিলল আরও কয়েকশ জন আছেন ডুপ্লিকেট কার্ড হাতে পাওয়ার অপেক্ষায়।
তথ্য সংশোধন ও নতুন পরিচয়পত্র নিতে আসা এই নাগরিকদের আবেদন নিয়েও চলছে এক ধরনের ব্যবসা।
বুধবার ভবনের সামনে অন্তত ডজনখানেক টেবিল বসিয়ে ফরম বিক্রি হতে দেখা গেল, যা কিনতে কাউকে খরচ করতে হচ্ছে ১০ টাকা, কাউকে ২০ টাকা। ফরম পূরণেও ব্যয় করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একজন জানান, এক কর্মকর্তার সুপারিশে এসেছেন, তাই লাইনে না দাঁড়িয়ে ভোটার হওয়ার কাজটি করতে পারছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের এমন সুপারিশ প্রতিদিন আসে এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকজন জানান, প্রকল্পের পরিচালক অপারেশন থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত সবার কাছে প্রতিদিন তদবির আসে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য চার জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
“এখানে অব্যবস্থাপনা রয়েছেও বেশ। ভবনের ভেতরে-বাইরে মারামারি ঘটনাও ঘটেছে। প্রকল্পের লোকজন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রায়ই বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। দালালদের চিহ্নিত করে শাস্তির পাশাপাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিলে দুর্ভোগও কমবে,” বলেন এক কর্মকর্তা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইডি কার্ডের সেবা নিতে দরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। বিভাগ, জেলা ও উপজেলাওয়ারি ডেস্ক রাখতে হবে। অনিয়ম রোধে প্রকল্পের লোকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিনামূল্যে সেবা নিতেই ভিড়
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কমিউনিকেশন্স অফিসার আশিকুর রহমান জানান, নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আইডি কার্ডের সংশোধন ও অন্যান্য সেবার জন্যে ফি কার্যকর হচ্ছে।
“এসব বিবেচনায় নিয়ে ভোটাররা তাদের পরিচয়পত্র সংশোধনের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনের আবেদনকারীর সংখ্যা গত কয়েকমাসের তুলনায় বেশ। অন্তত দু’হাজার নাগরিককে সেবা দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।”
এ কর্মকর্তা জানান, সেবার কাজ চলমান থাকবে। তবে বিনামূল্যে সেবা নিতে পারবে এ মাস পর্যন্ত।
জানতে চাইলে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, সারাদেশে সার্ভার স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পথে। কেন্দ্রের সঙ্গে সব স্টেশনের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। তা করতে পারলেই সেবার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটার নিবন্ধিত রয়েছে। এরমধ্যে ৪৭ লাখেরও বেশি ভোটারের হাতে কোনো পরিচয়পত্র নেই।
সুত্র…বিডিনিউজ