May 11, 2024
ফারুক আহমেদ: শেষ পর্যন্ত আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংকটাপন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসবে সচলতা। সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটতে পারে এমন ধারণা বুদ্ধিজীবিদেরও। প্রথমে বলা দরকার, মেয়র নির্বাচন, রাজনৈতিক জটিলতা থেকে দলগুলোর বের হয়ে আসার এক মোক্ষম সুযোগ। কিন্তু সরকারের দক্ষ হাতে ফের একপাক্ষিক নির্বাচন, দেশজুড়ে ব্যক্তিমালিকানা ও সরকারি সম্পত্তি পুড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বৃহত্তর দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের ইতিবাচক সাড়া ও প্রস্তুতি সরকারের অস্থিরতা বাড়িয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের সময়সূচি সরকারকে নতুন রাজনৈতিক চাল তৈরি করতে বাধ্য করছে। সরকার নতুন নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি করে অবরোধ, হরতাল থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফিরাতে চেয়েছিলেন। আশা করেছিলেন বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নগরীর ক্ষমতাও সরকারের দলীয় সমর্থকদের হাতে অর্পন করবেন। কিন্তু না, দৃশ্যপট সরকারের স্বপ্নের বিপরীত। বিএনপি মেয়র নির্বাচনে আসতে চাইলে সরকার দলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দেখা দিল চরম দ্বন্দ্ব, এমনকি বিদ্রোহী সমর্থকরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোথাও কোথাও অনুমোদন নিয়ে বাগবিন্ডাও লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরাপত্তা নিয়ে এখনো চিন্তার রেখা দূর হয়নি বিএনপির নেতাদের মুখ থেকে।
উল্লেখ্য যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ পুলিশের প্রধান পরিদর্শক (আইজিপি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান আসাদুজ্জামান মিয়ার সাথে ১৮ মার্চ আলোচনা মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন। আলোচনা শেষে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি নির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়েছি। মে মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানি ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারে তাই আগে নির্বাচন হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সুবিধা হবে। তাছাড়া এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখনো পর্যন্ত বিরোধী দলকে তাদের অবস্থা এবং প্রস্তুতি জানার জন্য যোগাযোগ করেনি। অন্যদিকে পুলিশ প্রধান বলছেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূলে আছে, নিরাপত্তার কোন সমস্যা হবে না।’ কিন্তু বিরোধী দল তাদের প্রার্থীদের নিয়ে কী ভাবছেন? তাদের অনেক নেতা এখনো পর্যন্ত কারাবাস করছেন এবং কতিপয় সম্ভাব্য প্রার্থী সরাসরি নির্বাচনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কিন্তু সত্য কথা হলো সিটি নির্বাচন কোন দলীয় নির্বাচন নয় তবুও গত তিন সিটি নির্বাচনে সরকার দলকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তাই এবারও জয়ের জন্য প্রার্থী নির্বাচনে থাকতে হবে নৈপুণ্য। সময়সমূচি নির্ধারণের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিলো বিরোধী দলের সাথে আলেচনা করা। বিরোধী দলের সাথে সরকার দলের বিরোধ, বৈষম্য কিংবা অনেক কিছুই থাকতে পারে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সাথে নয়। তাই প্রশ্ন হলো নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ না নিলে বিরোধী দলের প্রার্থীরা কিভাবে নির্বাচনে আসবে? সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কেউই সাড়া না দিলে আবারও গণতান্ত্রিক অধিকার হারাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। যদি প্রকাশ্য কোন ঘাটতি থাকে তবে এটিই প্রকাশ্য ঘাটতি। যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তবে এখান থেকে যত সমস্যার শুরু হবে। সাধারণ মানুষ জানে এবং বিশ্বাস করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের। গ্রেফতার ও অন্য সকল ধরণের হয়রানি থেকে নিরাপত্তা না দিতে পারলে বিরোধী দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা একই অর্থ হবে।
উইকলি হলিডে থেকে অনুবাদ করেছেন সারোয়ার আলম।
সৌজন্য….আমাদের সময়.কম
ঢাকা: কমলাপুরে ট্রেন-কাভার্ড ভ্যান সংঘর্ষে কাভার্ড ভ্যান চালককে আসামি করে মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেল চারটায় মামলা দায়ের করা হয়।মামলা নম্বর ১৯। রেলওয়ের সিনিয়র উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন মণ্ডল বাদী হয়ে কমলাপুর জিআরপি থানায় কাভার্ড ভ্যানের চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রাণহানি ও সরকারী সম্পদের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ।
ঢাকা: রাজধানী ও গাজীপুরের রেললাইনে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পাওয়া গেছে পাঁচটি লাশ। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী। হতভাগ্যদের নাম-পরিচয় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রেল পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার বেলা দুইটা থেকে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এসব লাশ পাওয়া যায়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ বলেন, গতকাল বেলা দুইটার দিকে গাজীপুর মৌচাকে রেললাইনে অজ্ঞাত পুরুষের লাশ পাওয়া যায়। এর পর রাত আটটার দিকে মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে জোয়ারসাহারা রেলক্রসিংয়ে এক পুরুষের লাশ পাওয়া যায়। আজ সকাল নয়টার দিকে দয়াগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে আরেক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা চারজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষ মারা যান। লাশটি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে বলে জানান ওসি আবদুল মজিদ। তিনি আরও জানান, শীতের কারণে মাথায় টুপি ও অনেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটার কারণে এ ধরনের ঘটনা হয়তো ঘটে থাকতে পারে।
ঢাকা: রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বি আই এস ডি টি ফ্যাশন টেকনোলোজির রিয়াজ হোসেন বাবু (২৪) নামের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছে ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক শিক্ষিকা (৩২)। শিক্ষিকা শনিবার রাতে মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদ শীর্ষ নিউজকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষিকা এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাবু বিভিন্নভাবে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেসে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর বাবুকে বিয়ের কথা বললে সে অস্বীকার করে। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মাঈনুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত রিয়াজ হোসেন বাবু বি আই এস ডি টি’র মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের ছাত্র। তারই শিক্ষিকার সাথে প্রেম করার নাম করে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় তার ম্যাচে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করতো। তিনি জানান, বর্তমানে ওই শিক্ষিকাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, অভিযুক্ত রিয়াজ হোসেন বাবু পলাতক রয়েছেন।
বিনোদন ডেস্ক: বলিউডে অভিষেকটা বেশ ভালোই হতে চলেছে পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাহিরা খানের। প্রথম সিনেমাতেই তার বিপরীতে নায়কের ভূমিকায় তিনি পাচ্ছেন বলিউড কিং শাহরুখ খানকে। কিং খানের পরবর্তী সিনেমা রাইস এ নায়িকা হিসেবে অভিনয় করছেন এ অভিনেত্রী। বলিউডে সিনেমার শুরুতেই যেন বাজিমাত এ তারকার। মাহিরার ভাগ্য নিয়ে হিংসা করতেই পারেন বলিউডের উঠতি নায়িকারা। একদিকে শুরুতেই যেমন তার হিরো বলিউড বাদশা, অন্যদিকে, মাহিরা অভিনীত এ সিনেমাটি প্রযোজনা করছে ফারহান আখতার-রীতেশ সিধওয়ানির এক্সেল এন্টারটেনমেন্ট। পরিচালনায় `পারজানিয়া` খ্যাত রাহুল ঢোলকিয়া। করাচির বাসিন্দা এই পাক অভিনেত্রীকে শেষবার বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল ২০১১ সালে। শোয়েব মানসুরের বহুল প্রশংসিত সিনেমা বোল-এ। সেখানে প্রধান চরিত্রেই ছিলেন তিনি। অবশ্য ভারতীয় টিভি ধারাবাহিক `হামসফর`-এর কারণে মাহিরার মুখও বেশ চেনা ভারতীয়দের কাছে। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,শাহরুখ এখন ব্যস্ত যশরাজের ব্যানারে তার নতুন ছবি ফ্যান-এর শুটিং নিয়ে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি রাইস-এর কাজ শুরু করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। মুম্বাই ও গুজরাটের প্রত্যন্ত গ্রামে সিনেমাটির শুটিং করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদক: রাজধানীর শান্তিনগর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির ৪ তলার ছাদ থেকে বুধবার রাতে চম্পা (৩৫) নামের এক গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করেছে রমনা থানা পুলিশ। চম্পা ওই ভবনের ২০ তলায় মিজানুর রহমানের বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালানোর সময় জানালা থেকে পড়ে গিয়ে চম্পার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। রমনা থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে চম্পাকে বাসায় রেখে মিজানুর রহমান তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হন। এ সময় বাইরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছিলেন তারা। রাত ১২টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখেন, জানালা ভাঙা এবং চম্পা বাসায় নেই। তারা খোঁজাখুঁজি করে দেখেন, চম্পা ওই ভবনেরই চারতলার ওপর পড়ে আছে। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। বাসা থেকে কিছু টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে জানালা দিয়ে পালানোর সময় সে ৪ তলায় পড়ে মারা যায়। নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর চম্পার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। চম্পার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। তার স্বামীর নাম হযরত আলী।
ঢাকা: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নির্বাচনের খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় অর্থ সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, নারী বিষয়ক সম্পাদক, আপ্যায়ন সম্পাদক, সংস্কৃতি সম্পাদক, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক পদে একজন করে প্রার্থী (৬টি পদে ৬ জন) এবং কার্যনির্বাহী সদস্যের সাতটি পদে সাতজন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। শেষ সময় ২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে এই ১৩ জন প্রার্থীই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন। ২০১৫ কার্যবর্ষে ডিআরইউর এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন- দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি জামাল উদ্দীন, ৭১ টিভির চিফ এ্যাসাইনমেন্ট এডিটর মনির হোসেন লিটন ও দৈনিক সকালের খবরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আজমল হক হেলাল। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন- দৈনিক যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সফিউল আলম রাজা, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন, বিবিসি বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাকিব হাসনাত সুমন ও দেশ টিভির এ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নজরুল কবীর।
এ ছাড়া সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন- দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের রফিকুল ইসলাম আজাদ ও বাংলার চোখের সাব্বীর মাহমুদ। যুগ্ম-সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন- ডেইলি স্টারের ফেরদৌস মুবারক, জিটিভির সালাম ফারুক ও দৈনিক বর্তমানের রেজাউর রহিম। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন- আলোকিত বাংলাদেশের রিয়াজ চৌধুরী ও ডেইলি সানের শওকত আলী খান। দফতর সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ জন- বাংলাদেশ প্রতিদিনের মোস্তফা কাজল ও প্রাইম নিউজের মেহেদী আজাদ মাসুম। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন- দৈনিক নয়া দিগন্তের মঈনুদ্দীন খান ও দৈনিক অর্থনীতি প্রতিদিনের কামরুজ্জামান কাজল ও সৈয়দ সোহরাব।
একজন করে প্রার্থী থাকায় অর্থ সম্পাদক পদে দৈনিক নয়া দিগন্তের আশরাফুল ইসলাম, নারীবিষয়ক সম্পাদক পদে আইরীন নিয়াজী মান্না, আপ্যায়ন সম্পাদক পদে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির আমিনুল হক ভূঁইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে দৈনিক কালের কণ্ঠের আজিজুল পারভেজ ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বদরুল আলম খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিজয়ী হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সাতটি পদের বিপরীতে আট জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে দৈনিক আমার দেশের মাহমুদা ডলির মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ায় বাকি সাতজন- দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাজিদা ইসলাম পারুল, এবিসি রেডিওর শাহনাজ শারমীন, ঢাকা টাইমসের হাবিবুর রহমান, দৈনিক মানবকণ্ঠের হরলাল রায় সাগর, আরটিভির ফারুক খান, ওসমান গনি বাবুল ও দৈনিক সংগ্রামের কামাল উদ্দীন সুমন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।
তবে কেউ মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় কল্যাণ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৪ নভেম্বর সকাল ১১টায়। আগামী ৩০ নভেম্বর ডিআরইউর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার এক আলোচনায় তিনি বলেন, “হ্যাঁ, যারা রাজাকার অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে, তারা যুদ্ধাপরাধী। তবে আমি প্রশ্ন করব- যারা তাদের সমর্থক, তারা কি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতে পারে?
করব, যে ব্যাক্তি এই যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত এনেছে সে কি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? কোনমতেই না।”
স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের রাজনীতি স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ থাকলেও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দলটিকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেন।
ছয় শীর্ষ নেতাকে ইতোমধ্যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আর বহু প্রত্যাশিত এই বিচার শুরু হয় আওয়ামী লীগের গত সরকারের সময়ে।
উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেনি পেশার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় প্রশ্ন রাখেন, “যারা রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? অবশ্যই। সত্যি কথা হচ্ছে বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল। তারা যদি প্রমাণ করতে চায় তারা রাজাকারের দল নয়; তাহলে এই রাজাকারের দলের সাথে জোট ছেড়ে আসুক।”
দেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, “তারপরও তো তারা কোনোদিন একটি বিষয় থেকে ফিরে আসতে পারে না। রাজাকারদের কে ফিরিয়ে এনেছে দেশে? স্বাধীন বাংলাদেশে তাদেরকে কে ফিরিয়ে এনেছে? জিয়াউর রহমান এনেছে। এটা তারা কোনোমতেই অস্বীকার করতে পারে না।”
চলাকালে যারা যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিল, দালাল আইনে তাদের বিচার চলাকালীন সময়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দালাল আইনে আটক ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী এরপর জিয়ার আমলে মুক্তি পেয়ে যান।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বলেন, “এতোবছর পরে হলেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যতোদিন ক্ষমতায় থাকবে তাদের বিচার সম্পন্ন হবে, বিচারের রায় সম্পন্ন হবে।”
এজন্য ‘যে দল বাংলাদেশে বিশ্বাস করে’ তাদেরকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন তরুণ এ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ।
দেশের ইতিহাসে অনেক কালো দিন গেছে, অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। একাত্তর সালে বিশ্বের মহান একটি দেশ সেই পাকিস্তানিদেরকে অস্ত্র দিয়ে, প্লেন দিয়ে, ট্যাংক দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে দাবানোর চেষ্টা করেছিল। আমাদেরকে ঠেকাতে পারেনি।”
এখন আর ‘কোনো দেশকেই’ ভয় পায় না বলেও মন্তব্য করেন জয়।
, “এখন আমাদের কোনো দেশকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছি, নিজেদের উন্নয়ন আমরা নিজেরা করছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। আমরা বাঙালি, আমাদেরকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আর অন্যান্য দেশ কি বলে না বলে তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না।”
নিরপেক্ষ বলে দাবি করেন, তাদের একটি অংশের অবস্থানেরও সমালোচনা করেন জয়।
“এখানে নিরপেক্ষতার নামে আমাদের এক শ্রেণির মানুষ যুদ্ধাপরাধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের যারা সমর্থন করে তাদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের দলের সঙ্গে এক পাল্লায় ফেলছে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুঃখের বিষয়।”
ঢাকার একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই আলোচনায় অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ ও শিল্পী হাশেম খানও বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
ঢাকা: ইট, কাঠের এই শহরে পশুপাখিরা অবহেলায় দিন কাটায়। পথে তাদের দেখলেই ঢিল ছোড়া হয়, খাবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে পিঠে পড়ে লাঠির বাড়ি। কখনো ছুড়ে মারা হয় গরম পানি। সেই শহরেই চলছে ব্যতিক্রমী এক বিড়াল প্রদর্শনী। সযত্নে লালিত বিড়ালদের মনের মতো করে সাজিয়ে সেখানে নিয়ে এসেছেন তাদের অভিভাবকেরা। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ক্যাট কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে পশু-পাখিপ্রেমী একটি সংগঠন ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওই ব্যতিক্রমধর্মী ‘বিড়াল প্রদর্শনী’-এর আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীতে ঢুকতেই খাঁচার মধ্যে দেখা গেল লম্বা গোঁফ, লোমোশ মোটাসোটা শরীরে গম্ভীর হয়ে বসে আছে একটি বিড়াল। খাঁচার সামনে যেতেই জাঁদরেল গলায় ডেকে উঠলো ‘ম্যাঁও’।
স্নো হোয়াইট পার্শিয়ান জাতের ওই বিড়ালটিকে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিন কয়েক বছর আগে লন্ডন কিনে এনেছেন। বিড়ালটির দাম নিয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। এত দাম দিয়ে বিড়াল কেনার কারণ জানতে চাইলে জাহিন বলেন, অনেকে বলে কুকুর সবচেয়ে প্রভুভক্ত। কিন্তু পার্শিয়ান জাতের এই বিড়ালগুলো কুকুরের মতোই প্রভুভক্ত। এরা একটু বেশি আদুরে স্বভাবের আর দেখতেও অসাধারণ। বাইরে থেকে বাসায় যখন এসে দেখি সদর দরজায় সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন মন ভালো হয়ে যায়।
জাহিন যখন নিজের পোষা বিড়ালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন অন্য বিড়ালের অভিভাবকেরা যত্ন নেওয়ায় ব্যস্ত। কেউ চিরুনি দিয়ে বিড়ালের পশম আঁচড়ে দিচ্ছেন, কেউ পানিকে আদর করে ‘মাম’ বলে বিড়ালের মুখে তুলে দিচ্ছেন। কেউ আবার বিড়াল কোলে বসিয়ে নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটে দিচ্ছেন। ঠিক যেন নিজের সন্তানকেই লালনপালন করছেন তাঁরা।
শুধু বিড়ালই নয়, প্রদর্শনীতে তাদের জন্য ছিল রং-বেরঙের নকশা করা জামা। সেই জামা আবার বিড়াল নিজেই পছন্দ করে নিচ্ছে। জামার টেবিলে ছেড়ে দিলে বিড়াল নিজেই তাঁর পছন্দ অনুযায়ী একটা জামা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। অভিভাবকরাও বুঝে নেন তাঁদের আদরের পোষা বিড়ালের সেটিই পছন্দ। এ ছাড়া বিড়াল পালনবিষয়ক বই ও বিড়ালের জন্য খাবারও প্রদর্শন করা হয় সেখানে।
অভিভাবক জেরিন আহমেদ তাঁর বিশাল আকৃতির আমেরিকান ট্যাবি জাতের বিড়ালকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিড়ালের নাম “কিং”। আমার বিড়াল খুব শান্ত, চকচক করে খায়, বাথরুমের কমোডে গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে।’ বিড়ালটিকে কিছু বলতে বলা হলে সে বলে উঠলো ‘মিউ’। এক শব্দ দিয়ে হয়তো অনেক কিছুই বলে দিল সে। হয়তো বলল, তার আনন্দ, সৌভাগ্য ও কৃতজ্ঞতার কথা। আরেক বিড়ালের অভিভাবক পুরান ঢাকার তৌহিদ জানান, তাঁর বিড়াল অনেক লক্ষ্মী, নিজে নিজে প্রাতঃকৃত্য সেরে নেয় টয়লেটে গিয়ে। চার বেলা খাবার দেন, কোনো ঝক্কিঝামেলা নেই।
রাজারবাগ থেকে বিড়াল নিয়ে আসা ফারজানা হোসেন বলেন, ‘আমার জন্মদিনে আমার স্বামী আমাকে এই বিড়ালটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে আমরা একে সন্তানের মতোই লালনপালন করছি।’ বিড়াল পালার কারণ সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিড়াল অনেক শান্ত প্রাণী, আর দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
প্রদর্শনীতে বিড়ালের পাশাপাশি পাখিও নিয়ে আসা হয়। খিলগাঁও থেকে প্রকৌশলী তাহসিন রহমান তাঁর পোষা কয়েক জাতের পাখি নিয়ে আসেন। এর মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়ান রেইনবো লরি, আফ্রিকান গ্রে প্যারোট, আম্ব্রেলা কাকাতুয়া এবং রেড লরি। এর মধ্যে আফ্রিকান গ্রে প্যারোটের বয়স আড়াই বছর, যার স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল সাধারণত ৬০ বছর । আর পাঁচ বছর বয়স হলেই ডিম দেওয়া শুরু করবে।
তাহসিন জানান, ‘আফ্রিকান গ্রে প্যারোটের ঠোঁট এত শক্ত যে চাইলে কামড় দিয়ে হাতের আঙুল কেটে নিতে পারবে। তবে পোষা হলে আপনার জিহ্বা থেকে খাবার নিয়ে নিজ মুখে খাবে। আর এই জাতের পাখি সবচেয়ে বেশি কথা বলতে পারে।’
প্রদর্শনীর আয়োজক ক্যাট কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন জানান, প্রদর্শনীটির উদ্দেশ্য হলো বিড়ালের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা। ইমরান আরও বলেন, আমরা পোষা প্রাণীকে ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি। রাস্তায় মানুষ অবহেলায় পড়ে থাকলে আমাদের যেমন কষ্ট হয়, বিড়াল পড়ে থাকলেও সমান কষ্ট হয়। বিড়ালসহ অন্য পশু-পাখিদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমাদের এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ। যেকোনো বিড়ালপ্রেমী আমাদের এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবে এক হাজার টাকার বিনিময়ে। আর এতে তিনি কয়েক মাস পর পর বিনা মূল্যে রোগ প্রতিরোধক ওষুধ পাবেন। এ ছাড়া চাইলে কিছু শর্ত পূরণ করে বিড়াল নিয়ে লালনপালনও করতে পারবেন।
ঢাকা: ‘ভেবেছিলাম একটু থিতু হয়ে জীবনটাকে উপভোগ করব। বিয়ের বয়স এক বছর পাঁচ মাস। হানিমুনে যাওয়া হয়নি। টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। কোথায় যাব, তা নিয়ে চলছিল আলাপ-আলোচনা। তবে দেশের বাইরে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। হানিমুনের সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করেছি।’ এ কথা বলার সময় গভীর হতাশা ফুটে ওঠে চিকিৎসক মুনতাহিদ আহসানের মধ্যে। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক সানজানা জেরিনের চিকিৎসার কথাই বলছিলেন তিনি। বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে হানিমুনে যাবেন বলে যে টাকা জমিয়েছিলেন, সবই খরচ হয়ে গেছে তাঁর চিকিৎসায়। জেরিন এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গত ২৪ আগস্টের ছিনতাইয়ের ঘটনা শুধু জেরিনের নয়, তাঁর স্বামীর জীবনটাকেও তছনছ করে দিয়েছে। হারিয়ে গেছে নববিবাহিত দম্পতির ঘরবাঁধার সুখ। সেদিন ভোর ছয়টার দিকে রিকশায় করে স্বামীর সঙ্গে জেরিন তাঁর কর্মস্থল ফেনীর পরশুরামে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। রাজধানীর কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে জেরিনের হাতব্যাগে হেঁচকা টান দেওয়া হয়। এতে জেরিন ১০-১৫ ফিট দূরে গিয়ে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।
মুনতাহিদের ভাষ্য, ‘আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা, আমার মাথার সিটিস্ক্যান করাও’—এ কথা বলেই জ্ঞান হারান জেরিন। এটাই ছিল জেরিনের মুখ থেকে শোনা শেষ কথা। এরপর থেকে তিনি নির্বাক, নিথর। জেরিনের মাথায় এর মধ্যে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। জেরিন এখনো চোখ মেলে তাঁর প্রিয়জনদের দেখেন বটে, কিন্তু সেই চোখের কোনো ভাষা নেই। এক মাস লাইফ সাপোর্টে ছিলেন জেরিন। এখন অবশ্য সে ব্যবস্থা খুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেরিনের যন্ত্রণা কমেনি। মাঝেমধ্যে তাঁর এতটাই জ্বর ওঠে, ছটফট শুরু করেন জেরিন। বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হাই বলেন, ‘মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পাওয়া এমন রোগীর সুস্থতার বিষয়ে কিছুই বলা যায় না। রোগীকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সুস্থ মনে হলেও ভালো বলার উপায় নেই। আবার অসুস্থ মনে হওয়ার পরও অনেকে সুস্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে এক রোগীর ৪২ বছর বেঁচে থাকার নজিরও আছে। আমরা চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কত দিন চিকিৎসা চালাতে হবে, তা বলাও সম্ভব নয়।’
৩৩তম বিসিএস উত্তীর্ণ এ এই দম্পতি চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ঘটনার দিনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জেরিনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ করা হয়। মুনতাহিদকে ফেনীতে নিয়োগ করা হয়। ঘটনার পর মুনতাহিদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্বামী ও স্ত্রীকে একই জায়গায় দিতে আবেদন করেন। ঘটনার পর জেরিনকে প্রথমে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় কাকরাইলের ইসলামিয়া ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তারপর বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। আবেদন করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় আইসিইউর ভাড়া নিচ্ছে না। এর পরও এ পর্যন্ত জেরিনের চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতিদিনই ওষুধসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
মুনতাহিদ ও জেরিনের দুজনের পরিবারই মধ্যবিত্ত। এই দম্পতি পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। তাঁরা ছিলেন একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। সেখানকার শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনরাই জেরিনের চিকিৎসার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরাই বা আর কত দেবেন? মুনতাহিদ বুঝতে পারছেন না স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ আর কত দিন চালাতে পারবেন। মুনতাহিদ বলেন, ‘জেরিন মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মাকে হারায়। ছেলেমেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বাবা আর বিয়ে করেননি। জেরিনের চাহিদা খুবই কম। সময়ের কাজ সময়ে করতে ভালোবাসে। গোছানো জীবনে অভ্যস্ত। আমার অগোছালো জীবনটাকেও গোছাতে চেয়েছিল। তবে সেই মেয়ের জীবনটাই এখন অগোছালো হয়ে গেল।’ জেরিনের বাবার স্বপ্ন ছিল একটাই—তা হলো জেরিন চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সেবা করবেন। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফল করা জেরিনের বাবার সেই আশা পূরণ করতে চলেছিলেন। কিন্তু শুধু একটি ঘটনায় সব শেষ হতে চলেছে। ঘটনার পর মুগদা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা করেছেন মুনতাহিদ। থানা থেকে সন্দেহভাজন ধরে মুনতাহিদকে ফোন দেওয়া হয়। মুনতাহিদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি শুধু একটি হাত দেখেছি। তা দেখে তো আর কাউকে দোষী বলা যায় না।’ মুনতাহিদ বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে রাজধানীতে আরেকজন নারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মারাই গেলেন। আমার স্ত্রী মারা যাননি তফাৎ শুধু এইটুকু। নগরীর কোন কোন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তা পুলিশ প্রশাসন জানে। তারা একটু তৎপর হলেই আমাদের আর এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয় না। এখন ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা তো দূরের কথা, স্ত্রী বাঁচবে কি না, এটাই তো অনিশ্চিত।’ ছিনতাইকারীদের উদ্দেশে মুনতাহিদ বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা কী মানুষ না?’