April 27, 2025
ডেস্ক রিপোর্ট : দুই দফা বন্যায় খাদ্য সঙ্কট এড়াতে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশে।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৫১ দিনে (১ জুলাই থেকে ২১ অগাস্ট) মোট ৩ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস) প্রায় তিন গুণ।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের ৫১ দিনের আমদানির তথ্য হিসাব করে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হচ্ছে।
সরকারি গুদামের মজুদ তলানীতে নেমে আসায় এবং দুই দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল আমদানিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে সরকার নিজে যেমন চাল আমদানি করছে, তেমনি দুই দফায় শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অবাধ সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পাশের দেশ ভারত থেকে স্থলপথে প্রচুর চাল আসছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এপ্রিল-জুনের বন্যায় বোরোর পর চলতি অগাস্টের বন্যায় আউশ ও আমনের উৎপাদন বড় ধাক্কা খেয়েছে।
“এ পরিস্থিতিতে আমরা আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য মজুদ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে সরকারি পর্যায়ে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দেশে কোনো রকম খাদ্য সঙ্কট নাই। আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে, বাজারেও পর্যান্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে।… আমরা কেবলমাত্র সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য, কোনো রকম সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় সেজন্য বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছি।”
এপ্রিলের শুরুতে হাওরে আগাম বন্যার কারণে এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ লাখ টন কম হওয়ায় এবং বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় গত ২০ জুন আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। সেই সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়।
কিন্তু তাতে মজুদ পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় এবং অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় চালের আমদানি শুল্ক দ্বিতীয় দফায় কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্য মজুদ পরিস্থিতির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১ অগাস্ট পর্যন্ত সরকারের গুদামগুলোতে ৩ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। গত বছরের এই দিনে চালের মজুদ ছিল ৭ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
গত ২১ অগাস্ট পর্যন্ত যে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৩৯ টন চাল আমদানি হয়েছে, তার মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে এসেছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮১ মেট্রিক টন। আর সরকারি পর্যায়ে ৮৩ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
আমদানির পর ভর করে সরকারি গুদামের খাদ্য মজুদ জুলাইয়ের ১ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে তিন লাখের উপরে উঠলেও বাজারে চালের দাম কমেনি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বুধবারও ঢাকার বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায়। আর ভালো মানের চাল চাইলে কেজিতে ৫৮ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকার বেশি বেড়েছে। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৮ টাকা।
অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মনে করছেন, চালের দাম এখনও মানুষের নাগালের মধ্যেই রয়েছে এবং দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনাও তিনি দেখছেন না।
গত ১৮ অগাস্ট তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ট্যাক্স কমানোর ফলে বাজারে চালের দাম অবশ্যই আরও কমবে। বাজারে চালের দাম খুব একটা বেশি নাই, এখন একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। সবার কাছে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে, এখন বাজারে দাম বেশি না।”
তবে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করছেন, সরকার শুল্ক কমানোর উদ্যোগ আরও আগে নিলে বাজারে চালের দাম এতটা বাড়ত না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারের চাল আমদানির শুল্ক অনেক আগেই কমানো উচিৎ ছিল। তাহলে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বাড়ত। আর সরবরাহ বাড়লে দামও সহনীয় থাকত।”
তিনি বলেন, “এখন যে করেই হোক সরকারি মজুদ বাড়াতে হবে। একবার যে ভুল হয়ে গেছে সেটা যেন আর না হয়। বর্তমানের আড়াই-তিন লাখ টন মজুদ একেবারেই নগন্য। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গরীব মানুষকে এই মজুদ থেকেই খাদ্য দিতে হবে।বিবেচনায় রাখতে হবে, একজন মানুষও যেন খাদ্যের অভাবে মারা না যায়।” বিডিনিউজ২৪
ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আশপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।
ওই ১০ কিলোমিটার ব্যসের মধ্যে কতগুলো শিল্প-কারখানা বর্তমানে রয়েছে তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
আইনজীবী জাকির পরে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর সম্প্রতি সুন্দরবনের পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায়, অর্থাৎ ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কমবেশি ১৫০টি ছোটোবড় শিল্প কারখানা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প করার অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
এসব শিল্পকারাখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ‘সেইভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের’ সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম গত ১২ এপ্রিল হাই কোর্টে একটি রিট করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়েই আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছে বলে জানান জাকির।
সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমোদন কেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনের লঙ্ঘন হবে না এবং নতুন শিল্প কারখানা কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
পরিবেশ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সুন্দরবনের আশে-পাশের জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৯ সাল এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সুন্দরবনের চারদিকে ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর ৫ ধারার (১) ও (৪) উপধারার ধারার ক্ষমতাবলে সংরক্ষিত এ এলাকাকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।
“এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে সুন্দরবনের এ ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভূমি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু গণমাধ্যমে খবর এসেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প করার জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে। যার মধ্যে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পসহ পরিবেশ দূষণকারী প্রকল্প রয়েছে।”
এসব শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদ ও পরিবেশ আইন ১৯৯৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি করা হয় রিট আবেদনে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ষোড়শ সংশোধনীর রায় যুক্তিনির্ভর নয়, তাই এটি অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, রায় নিয়ে যেহেতু প্রধান বিচারপতি বিতর্কের সূচনা করেছেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তিনি এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্য বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি একটি বিদ্বেষমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়।
ডেস্ক রিপোর্ট : এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ বন্যা প্লাবন ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোনের সঙ্গে পরিচিত। তবে এবার সবগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগই মহামারী হয়ে দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে বৈচিত্র্যহীন শীত ঋতু দিয়ে যার শুরু। এরপর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করেই চলেছে। ভারি বৃষ্টিপাত, হাওড়ে আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ধসের মতো ঘটনা এবং ঘূর্ণিঝড় মোরার ভয়াবহ আঘাত ইতোমধ্যে সহ্য করতে হয়েছে। প্রথম দফায় বন্যার শেষে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পুরো উত্তরাঞ্চল বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে বর্তমানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ দেশের ভূপ্রাকৃতিক গঠন এবং অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এবার সবগুলোই যেন একসঙ্গে দেখা দিয়েছে। অতীতে যা লক্ষ করা যায়নি।
তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এবারের শীত ঋতু ছিল একেবারে বৈচিত্র্যহীন। ভরা মৌসুমে শীতের দেখা না পেলেও পুরো মার্চ মাসজুড়ে শীতের আবহ ছিল। শীত চলে যেতেই দেশের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের আধিক্য বছরের শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু গত এপ্রিল, জুন, জুলাই এবং চলতি আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাতের যে হিসাব তা অতীতের যে কোন বছরের তুলনায় বেশি। এপ্রিল মাসের বৃষ্টিপাত প্রায় চার দশকের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। জুন, জুলাই, আগস্টের কয়েক দফা ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট জেলা কয়েকবার পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাওড়ের অকাল বন্যায় ১১ লাখ ৩৪ হাজার পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ৭৫ ভাগ ফসল। পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা রেকর্ড অতিক্রম করে ১৬০ জনে দাঁড়ায়। ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূলীয় এলাকা ল-ভ- করে দেয়। গত ২ আগস্ট ৩ ঘণ্টায় রেকর্ড ২১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। যার আঘাতে সরকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান তার ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ বইয়ে উল্লেখ করেন ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও অবস্থানের কারণেই বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে এখানে। আবহমানকাল থেকেই প্রাকৃতিক বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। প্রতিবছর যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় তা বিশ্বের কোথাও হয় না। তিন প্রধান নদী নিম্ন অববাহিকায় অবস্থানের ফলে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্য উঁচুতে অবস্থানের কারণেই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। বন্যা প্লাবন, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বহুকাল থেকেই মানুষ পরিচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় নদীভাঙ্গনের শিকার বেশি হচ্ছে।
পাহাড়ধসে রেকর্ড মৃত্যু
অতীতে একাধিকবার পাহাড়ধসের রেকর্ড থাকলেও এবারের পাহাড়ধসের কারণে মানুষের মৃত্যু মিছিলে পরিণত হয়। গত জুন মাসের ১২ এবং ১৩ তারিখ পরবর্তী আরও কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতে একাধিকবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে পাহাড়ধসে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম তার গবেষণায় দেখান বিগত চার দশকের মধ্যে এবারের পাহাড়ধস ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। তিনি বলেন, এর আগে ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যু ঘটে। এবারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধস ছিল বিধংসী। তবে এটাকে বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
হাওড়ে অকাল বন্যা
হাওড়ের অকাল বন্যা এবার ভয়াল রূপ ধারণ করে। গত এপ্রিল মাসে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে হাওড়ের ৭ জেলার মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এখন পর্যন্ত এর রেশ কাটেনি। বেসরকারী সংগঠন পরিবেশ এবং হাওড় উন্নয়ন সংস্থার তথ্য মতে, হাওড়ে বন্যায় ৭৫ ভাগ ফসল তলিয়ে যায়। মানুষ যখন ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনি এই অকাল বন্যা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়ে হাওড়ের জনগণ। বেসরকারী ওই সংস্থার হিসাব মতে, ২২ লাখ টন ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ পরিবারের এই বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। কারও ঘরববাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি সবকিছুই পানিতে মরে পচে এলাকার পরিবেশ ভারি করে তোলে। হাওড়ের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর হাওড়ে অকাল বন্যা দেখা দিলেও এবারের মতো ভয়াবহতা আগে কখনও দেখা যায়নি।
ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত
ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানগত কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। ল-ভ- করে দেয় উপকূলের জীবনযাত্রা। গত ৩০ মে দেশের উপকূলে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। যদিও আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের জীবনহানি হয়নি। তবু এবারের ঘূর্ণিঝড় ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। ফলে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ নম্বর সিগন্যাল টানিয়ে দেয়া হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মানে হলো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার অপেক্ষায় রয়েছে। তারা জানায়, বন্দর প্রচ- বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। যেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ থাকে ৮৯ কিলোমিটার বা তার উর্ধে। ঘূর্ণিঝড় এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলে যে সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয় তার মানে হলো সঙ্কেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, এবার ঘূর্ণিঝড় মোরা ছিল অনেকটা সেই ধরনের। সরকারের পক্ষ থেকে উপকূলীয় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলেও শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি উপকূলীয় জীবনযাত্রা ল-ভ- হয়ে যায়।
রেকর্ড বৃষ্টিপাত
আবহাওয়া অফিস জানায়, এবারে শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের আধিক্য অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। মার্চেই কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হলেও এপ্রিলে এসে শুরু হয় রেকর্ড বৃষ্টিপাত। তারা জানায়, এ বছর এপ্রিলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১ সালের পর এই মাসে এত বৃষ্টিপাত আর হয়নি। তারা জানায়, একদিনের বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের পাশাপাশি ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতেও রেকর্ড হয়েছে এ বছর। গত ২ আগস্ট রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের যে রেকর্ড করা হয়েছে তা অতীতে কখনও হয়নি। তারা জানায়, ২০০৩ সাল থেকে আবহাওয়া অফিস ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আসছে। কিন্তু এর আগে এত কম সময়ে অধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড তারা পায়নি।
শুধু রেকর্ড বৃষ্টিপাত নয়। বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট রাজশাহী শহর একাধিবার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে প্রশ্ন ওঠে নগরের ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিúাতের এমন ধরন বদলাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণেই এ ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোস্তফা আলীর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনগুলোতে অল্প সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হবে, আবার খরার সময়কালও বেড়ে যাবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ করতে হবে এখন থেকেই।
উত্তরে দুই দফা বন্যা
এদিকে দুই দফার বন্যায় এলোমেলো হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর- পূর্বাঞ্চলের জনজীবন। সরকারী হিসেবেই বলা হয়েছে, এবারের বন্যায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ক্ষতি হয়েছে ৬ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলের। বন্যায় সাধারণ জনগণের বসতভিটা, কাঁচাপাকা রাস্তা, প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবি এ বছর যে বন্যা হয়েছে তা অতীতে কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এবারের বন্যায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার যে লেবেল অতিক্রম করেছে তা অতীতের যে কোন সময়ে বন্যার চেয়ে বেশি ছিল। এখন বন্যার কবলে রয়েছে উত্তরের জীবন। নদী এবং পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকের মতে, তিস্তা এবং যমুনা নদীর পানি একসঙ্গে ধাক্কা খাওয়ায় পানি বেশি পরিমাণ ফুলে উঠেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় দেশের বাইরের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, অসম, অরুনাচল বিহারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের পানি একসঙ্গে নেমে আসার কারণে দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। যদিও ভারত এ বন্যার জন্য চীনকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ বন্যার আগাম কোন তথ্য চীন ভারতকে দেয়নি। ফলে জনগণ প্রচ- ভোগান্তিতে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হয়ে পড়ছে জলবায়ুর পরিবর্তন। আর এর প্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা কমলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে দেখা গেছে, আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পর পর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে ২ থেকে ৩ বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফটের তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদন (২০১০) অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে বড় ধরনের ২৫৪টি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রতিবছরই দেশের ওপর আঘাত হানে। তবে বন্যা একদিকে যেমন আশীর্বাদ অন্যদিকে অভিশাপও। কারণ, প্রতিটি বন্যার পর মাটির উর্বরতা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ে। প্রতিবছর গড়ে দেশে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১৮ শতাংশ ভূখ- বন্যায় ডুবে যায়। ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখ- বন্যার প্রকোপে পড়ে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে তিন প্রধান নদী দিয়ে প্রতিবছর ৮ লাখ ৪৪ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এটি বার্ষিক মোট প্রবাহের ৯৫ শতাংশ। বৃষ্টির কারণে দেশে অভ্যন্তরে ১ লাখ ৮৭ হাজার কিউবিক মিটার নদী প্রবাহ সৃষ্টি হয়। দেশে মূলত তিন ধরনের বন্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মৌসুমি বন্যা, আকস্মিক বন্যা, জোয়ার-ভাটার বন্যা। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে অনিয়মিত ও আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের শিকার হচ্ছে।
অতীতে ১৮৭০ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বন্যার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি দুই বছরের একবার এবং ভয়াবহ বন্যা গড়ে ছয়, সাত বছরে একবার সংঘটিত হয়। ১৯২৭ সালের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা প্রতি সাত বছরে একবার এবং মহাপ্রলয়ঙ্করী বন্যা প্রতি ৩৩ বছর থেকে ৫০ বছরে একবার সংঘটিত হয়। ১৯৫৪ সালের আগস্টের বন্যায় ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। পরের বছর ঢাকায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ৫৪ সালে বুড়িগঙ্গা তার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে প্রবাহিত হয়। ১৯৮৭ সলে দেশের ৪০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। পরের বছরই দেশে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দেশে প্রায় ৮২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বন্যা মূলত ৫০ থেকে ১০০ বছরে একবার করে দেখা দেয়। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্থায়ী বন্যা।
সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় দেশের ৬০ শতাংশ জমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ৬ মিটার উঁচু। ফলে বর্ষায় ২০ শতাংশ জমি প্লাবিত হয়। এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙ্গনের পরেই বন্যার স্থান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বন্যাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা য়েছে। অনেকের কাছে এটা একটা হেরে যাওয়া যুদ্ধের মতোই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র এই তিন বড় নদী অববাহিকার সর্বনিম্নে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ার কারণে এবং দেশে বিশাল অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্য ওপরে অবস্থিত হওয়ার কারণে অন্যান্য দুর্যোগের মতো বন্যার প্রকোপ অনেক বেশি।
স্পোর্টস ডেস্ক : ঈদের আগাম ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের দ্বিতীয় দিনেও কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে ২৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিট কমলাপুর স্টেশনের ২৩টি কাউন্টারে বিক্রি শুরু হয়। এটি চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগে ৭টার দিকেই কাউন্টার ঘিরে প্রতিটি সারি রাস্তায় পর্যন্ত পৌঁছায়। সংকুলান না হওয়ায় পরে সাপের মতো আঁকা-বাঁকা হয়ে দাঁড়ায় টিকিট প্রত্যাশীরা।
রাতভর থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় জমান যাত্রীরা। এদিকে সকাল হতে না হতেই রেলস্টেশনে টিকিটের-প্রত্যাশীয় লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও কিশোর। এসময় টিকিট কালবাজারি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবিও জানান যাত্রীরা।
জানা যায়, ক্রমান্বয়ে ১৯, ২০, ২১, ২২ আগস্ট যাত্রীরা যথাক্রমে ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ আগস্টের টিকিট কাটতে পারবেন। ২৫ আগস্ট ৩ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে। ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ আগস্ট যাত্রীরা যথাক্রমে ৪, ৫, ৬, ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট কিনতে পারবেন। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন।
জনকন্ঠ
নিজস্ব প্রতিবেদক : নওগাঁর মান্দায় বাঁশবোঝাই একটি ট্রাক খাদে পড়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৪ জন। সকালে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের হাজী গোবিন্দপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, সকালে নওগাঁ থেকে বাঁশ বোঝাই একটি ট্রাক রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিলো। এটি হাজী গোবিন্দপুর এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের ওপরে থাকা ৫ শ্রমিক নিহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আরো একজনের মৃত্যু হয়।
আহত ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহত শ্রমিকদের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায় বলে জানিয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ।
প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের শাররীক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র বাসস’কে জানান।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদের বাসস’কে বলেন, ‘তিনি এখনও হাসপাতালে আইসিইউতে আছেন।’
তিনি জানান, ডাক্তাররা আজ সন্ধ্যার পরে আনিসুল হকের চিকিৎসার পর্যালোচনা করবেন।
এর আগে, ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোয়ার হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বাসস’কে জানান, মেয়রের শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটা উন্নতির দিকে।
মেয়র আনিসুল হক সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেয়রের পারিবারিক সূত্র জানায়, মেয়র আনিসুল হক আগে থেকেই কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। তবে চিকিৎসকরা তার সমস্যাটা ঠিক ধরতে পারেননি।
গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে তিনি লন্ডন যান।
সুত্র : বাসস
ডেস্ক রিপোর্ট : বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি সরাসরি দেখতে আগামী রোববার দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার প্রধানের এই সফরের কথা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ পর্যন্ত ২২ জেলার ৩৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য।
কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর ও রাঙামাটি জেলার ১২২টি উপজেলা ও ৩৮টি পৌরসভা এখন বন্যায় প্লাবিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যাজনিত কারণে গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯২ জনেরই মুত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে।
দুর্গত জেলাগুলোতে কয়েক লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সঙ্কটের পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
গত এপ্রিলে দেশের সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে হাওর এলাকার ছয় জেলা প্লাবিত হলে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সময়ও প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জে গিয়ে দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢল থেকে পানি নেমে আসায় যমুনা নদীসহ স্থানীয় নদীর পানি বেড়েছে। এখনও যমুনা নদীর পানি টাঙ্গাইল অংশে ১৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে।টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নওগা এলাকায় ঝিনাই নদীর একটি বাঁধ ভেঙ্গে বাসাইল ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এখনও ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, নাগরপুর, কালিহাতী ও বাসাইল উপজেলার অন্তত ১ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। বন্যার পানি বিদ্যালয়ে ঢুকে পরায় জেলার ১৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর জানান, বন্যায় জেলার অন্তত ১৪০ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি নেমে গেলে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ৬ সে.মি.। যমুনার উজানে পানি স্থিতিশীল থাকায় টাঙ্গাইল বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।এদিকে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ১ মিটার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশার কথা, পানি আর বাড়ছে না।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় ৩৫০টি গ্রাম।অভ্যন্তরীণ নদীগুলোয় পানি এখনো বাড়ছে। উল্লাপাড়ায় বাখুয়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ফাইম হোসেন (২) নামের এক শিশু মারা গেছে।গতকাল বুধবার রাত নয়টা থেকে পানি বিপৎসীমার ওপরেই স্থিতিশীল রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রানীগ্রাম থেকে খোকসাবাড়ি আনসার মোড় পর্যন্ত বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি চুঁইয়ে পড়ছে।
জেলার ৫০টি ইউনিয়নের ৩৫০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এলাকার প্রায় চার লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৬ হাজার ৬০০ মানুষ।বন্যায় তলিয়ে গেছে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, পাট ও সবজি।
প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের সদর ও বোদা উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন মারা গেছে। এছাড়া নারী-ও শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ার সময় বাড়ির পাশে আমন খেতে কাজ করছিলেন ইউনিয়নের ফুলতলা নতুনবন্দর এলাকার আবদুল কাদেরের ছেলে নাসিরুল ইসলাম (৪২)। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন নাসিরুল। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল হক জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউনিয়নের ভূষিভিটা এলাকায় গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সোহেল রানা (১৯) নামের এক তরুণ।
এ ছাড়া সদর উপজেলার বীরপাড়া ও চানপাড়া এলাকায় বজ্রপাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন ফয়জান বেগম (৬০), রাবেয়া খাতুন (৪০), মর্জিনা খাতুন (১৪), মোস্তাফিজুর রহমান (১২) ও আমিনা খাতুন (২৬)। তাঁদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুর রহমান জানান, বজ্রপাতে আহত মোট ছয়জন হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে একজন মারা যান। বাকি পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।