April 26, 2024
ঢাকা: শিশুদের ওপর নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় আমার দেখলে। অনেক সময় অনেক শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় কাজের জন্য। সেই শিশুদেরও লেখাপড়ার অধিকার রয়েছে। অমনি তাদের মারা, অত্যাচার করা। মানুষ এইভাবে এত নির্দয় হয় কীভাবে, আমি এটা ভেবে পাই না। কোনোভাবেই শিশুদের ওপর নির্যাতন মেনে নেওয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে হবে। শিশুদের দিয়ে কোনো ঝুঁকি পূর্ণ কাজ করানো যাবে না। শিশুদের কাজ পড়াশোনা করা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেক হিসেব এসেছে। ৩৪ লাখ শিশু নাকি ঢাকার রাস্তায় ঘোরে। এখানে আমাদের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আছে। এই দুই মন্ত্রণালয়কে আমি নির্দেশ দিচ্ছি একটি শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। একটা শিশুও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে না।’
পরীক্ষা ছাড়া প্রথম শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তি করানোর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ছাপানো প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করতে হবে, তা নয়। যে এলাকায় যে বসবাস করে, সে এলাকায় ভর্তি হওয়া তাদের অধিকার। সরাসরি তাদের আগে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটা যেন সমন্বয় করা হয়। তারা যেন লক্ষ্য রাখেন, কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কি না। তারা যদি লেখাপড়া শিখে ছাপানো প্রশ্নপত্র পড়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তর দিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে, তাহলে আর স্কুল কি শেখাবে? প্রাক-প্রাইমারি বা প্রাইমারি তাদের কি শেখাবে? পড়াশোনা মানে একগাদা বই চাপিয়ে দেওয়া নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য আজকাল আমাদের দেশে, যেমন এই ঢাকা শহরে দেখি এত ফ্ল্যাট বাড়ি হয়েছে তাদের খেলাধুলার জায়গা রাখা হয় না। এই ফ্ল্যাট বাড়িতে থেকে বাচ্চারা ওই ফার্মের মুরগির বাচ্চার মতো মানুষ হচ্ছে। আমি সব সময় বলতাম, আপনারা অন্তত বাচ্চাদের জন্য খেলার জায়গাটা রাখবেন। বাচ্চারা যাতে খেলাধুলা করতে পারে, তাদের হাত-পা ছড়াতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে পাঠানো মানে এক গাদা বইয়ের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে তাদের সারাক্ষণ পড় পড় এর ওপরে রাখা। এটা কিন্তু কখনো গ্রহণযোগ্য না। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলব, কাউকে সারাক্ষণ পড় পড় বললে, তাহলে পড়া থেকে তার মনটা উঠে যায়। আমি আমার ছোট বেলার কথা বলতে পারি, যখনই বলত—এই পড়তে বস, তখনই আর পড়তে ইচ্ছে করত না। কিন্তু মানুষ যদি উৎসাহিত করে এই পড়াটা তোমার দায়িত্ব পড়তে হবে। এই পড়াটা শেষ করতে পারলেই তুমি খেলতে পারবে। তখন কিন্তু সময় লাগে না। খুব তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে খেলা যায়।’
শিশুদের জন্য প্রতিটি স্কুলে খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টা ছিল খালের ওপারে। পুল পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। আমার আব্বা জেলখানায় বছরের পর বছর। আমার দাদি সব সময় আমাদের ব্যাপারে চিন্তা করতেন। সোজা বলে দিলেন, পুল পার হয়ে স্কুলে যাওয়া লাগবে না। ঘরে বসে পড়বি। ঘরে মাস্টার, পণ্ডিত, আরবি পড়ার শিক্ষক ছিল। কাজেই আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। দাদিদের মনে তো এই দুশ্চিন্তাটা থাকে। আমি তো এখন দাদি হয়েছি, নানি হয়েছি কাজেই আমার এই দুশ্চিন্তা শিশুদের নিয়ে আছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্ম থেকে হয়তো অনেকের শারীরিক সমস্যা থাকে। এটা তাদের অপরাধ না। এই ধরনের শিশুদের সঙ্গে তোমরা আদর, যত্ন, বন্ধু সুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করবে। তাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা কখনো করবে না। বাবা-মায়েদের বলব, তারা যেন শিশুদের সেভাবে শিক্ষা দেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম প্রমুখ।