পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

রামপাল: শর্ত পূরণে বাংলাদেশকে দেড় বছর সময় ইউনেস্কোর

Posted on July 8, 2017 | in সারা দেশ, স্বাস্থ্য | by

ডেস্ক রিপোর্ট : রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আগে কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন (এসইএ) করে প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকো, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার সময় পাচ্ছে দেড় বছর।

পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে সুন্দরবনের পাশে নির্মাণাধীন এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শুনানির পর ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তবে বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলোর তালিকায় যুক্ত করার যে প্রস্তাব শুনানিতে উঠেছিল, শেষ পর্যন্ত তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশন ২০১৬ সালে সুন্দরবন এলাকা ঘুরে যাওয়ার পর তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করেছিল, তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবেদন দিতে বলেছে হেরিটেজ কমিটি।
সেই সঙ্গে সুন্দরবনের ওপর প্রস্তাবিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রভাব বুঝতে কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন (এসইএ) করে ওই প্রতিবেদনের অনুলিপি পর্যালোচনার জন্য হেরিটেজ সেন্টারে পাঠাতে বলা হয়েছে।  হেরিটেজ কমিটির ৪৩তম অধিবেশনে এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।

ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে যে স্থানে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, তা সুন্দরবনের প্রান্তসীমার চেয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বনের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে।

পরিবেশবাদীদের একটি অংশের আশঙ্কা, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের যাতে ক্ষতি না হয়, তার সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।
পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানের মধ্যে ইউনেসকো গতবছর বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কাছে ওই বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পশুর নদ পানি উত্তোলন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সুন্দরবনের প্রতিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে রামপাল প্রকল্প বাতিলের সুপারিশ করা হয় সেখানে।
বুধবার শুনানির পর ইউনেসকো রামপাল নিয়ে আপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে ইউনেসকো পাস হওয়া প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশ করেনি।
ইউনেসকোর ইউটিউব চ্যানেলে শুনানির যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে হেরিটেজ কমিটির দশ দফা প্রস্তাবের খসড়ায় কিছু সংশোধনী এনে মোট ১১টি দফায় চূড়ান্ত প্রস্তাবটি পাস হতে দেখা যায়।  
রামপালের বিষয়ে ইউনেসকোর সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওদের এজেন্ডায় যে নিষেধাজ্ঞাটা ছিল সেটা এখন আর নেই। আমরা কাজ করতে পারব। অফকোর্স দেয়ার আর সাম কনসার্ন; একটা এনভায়রনমেন্টাল এসেসমেন্ট রিপোর্ট দিতে হবে আমাদের। দ্যাটস অল।”

হেরিটেজ কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

তিনি বলেন, কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) যে সুপারিশ এসেছে তার সঙ্গে বাংলাদেশও একমত। তিনি আশ্বস্ত করেন, সুন্দরবনের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বাংলাদেশ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং ঝুঁকি কমানোর সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। 
বাংলাদেশ সরকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, ইউনেসকো তাকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রকল্প এলাকার  বাস্তুসংস্থান ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণে সরকার যেসব উদ্যোগের কথা জানিয়েছে, সেগুলোরও প্রশংসা করেছে।

কিন্তু সেই সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও সুন্দরবন এলাকার লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং মিঠা পানির সরবরাহ কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে হেরিটেজ কমিটির প্রস্তাবে।

হেরিটেজ কমিটি বলেছে, রামপালে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পানি ও বায়ু দূষণ বাড়বে। সেই সঙ্গে নৌচলাচল ও ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনও বাড়বে; প্রচুর মিঠা পানি তোলার প্রয়োজন হবে। এর বিরূপ প্রভাব সামাল দিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। কীভাবে তা করা হবে তা থাকতে হবে ওই ইআইএ প্রতিবেদনে।  

রামপাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল খসড়া প্রস্তাবের নবম দফায়। তুরস্কের প্রতিনিধি ওই অংশটি সংশোধনের প্রস্তাব করেন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে ঢাকাকে পর্যাপ্ত কারিগরি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানের কথা যুক্ত করতে বলেন। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি ওই দফা অবিকৃত রেখে কারিগরি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি যোগ করার প্রস্তাব রাখেন।  
পরে শুনানিতে ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি জানান, তুরস্কের প্রস্তাবে তাদের আপত্তি নেই। তবে গুরুত্ব বোঝানোর জন্য পানি ও বায়ু দূষণ এবং জাহাজ চলাচল ও ড্রেজিংয়ের ঝুঁকির বিষয়গুলো যেন থাকে। সে অনুযায়ীই প্রস্তাবের ওই দফাটি গৃহীত হয়। 
খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার (ইআইএ) আগে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাওয়া পশুর নদ খনন বন্ধ রাখতে হবে। শুনানির পর ওই অংশ সংশোধন করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভবিষ্যতে ড্রেজিং করলে কী প্রভাব পড়বে তা যেন ইআইএতে থাকে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল অয়েল স্পিল অ্যান্ড কেমিকেল কনটিনজেন্সি প্ল্যান নামে যে পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে সুন্দরবনের নৌপথে সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় দূষণ এড়াতে সেখানে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে পাস হওয়া প্রস্তাবে। 

সুন্দরবন নিয়ে আলোচনার শুরুতে তুরস্কের প্রতিনিধি স্বাদু পানির প্রবাহ নিয়ে পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশের প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য ঘুচিয়ে আনার আহ্বান জানান। যেহেতু বাংলাদেশকে পানির জন্য নদীর উজানের প্রবাহের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সেহেতু এই জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।   

খসড়া প্রস্তাবের শেষ দফায় ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশকে সুন্দরবনের সংরক্ষণের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা লেখা ছিল। শুনানি শেষে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশকে ওই প্রতিবেদন দিতে হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।

সূত্র : বিডিনিউজ২৪।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud