September 16, 2025
ঢাকা: ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল তফসিল ঘোষণার পরও ভোটার তালিকা হালনাগাদ আর সীমানা পুননির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনের পর আটকে যায় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন। আদালত সেই আবেদন খারিজ করে নির্বাচনে বাধা নেই জানালেও নির্বাচনের উদ্যোগ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নতুন ব্যাখ্যা হচ্ছে, সুলতানগঞ্জকে করপোরেশনভুক্ত করা হলেও ওয়ার্ডভুক্ত করা হয়নি। এই অবস্থায় তফসিল ঘোষণা করা হলে আবারও আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
কমিশন বলছে, সুলতানগঞ্জ সংক্রান্ত জটিলতার অবসান করেই তারা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই জটিলতার অবসান কত কঠিন। স্থানীয় সরকার কমিশনের সাবেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সাত দিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মেয়াদের শেষ দিকে এসে ঢাকায় নির্বাচন করতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। কারণ, ঢাকায় নির্বাচনের ফলাফল বিপক্ষে গেলে আগামী নির্বাচনে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়তে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সংগঠনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, সুলতানগঞ্জ সংক্রান্ত জটিলতা ইচ্ছা করেই জিইয়ে রাখা হয়েছে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ এটা স্পষ্ট যে, সরকার নতুন কৌশল হিসেবে ডিসিসি নির্বাচন দিচ্ছে না। ডিসিসি নির্বাচন না দিয়ে সরকার জনগণকে তাদের প্রতিনিধি বাঁছাই থেকে বিরত রাখছে’।
সুলতানগঞ্জ জটিলতার আদ্যোপান্ত: চলতি বছর ২ জানুয়ারি সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের চরওয়াশাপুর এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকা ডিসিসি দক্ষিণের অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু এলাকাটি ডিসিসি দক্ষিণের কোন ওয়ার্ডে ফেলা হয়েছে তা বলা হয়নি এতে।
ডিসিসি দক্ষিণের বর্তমানে মোট ওয়ার্ড ৫৬টি। সুলতানগঞ্জকে (চরওয়াশাপুর ছাড়া) ৫৭ নং ওয়ার্ড করার প্রক্রিয়া চলছে। এ পরিস্থিতিতে গত ২৫ এপ্রিল ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আনসার আলী খান স্থানীয় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক ওয়ার্ড ১, ২ ও ৩ এর সমন্বয়ে ৫৫ নং, সাবেক ৪,৫ ও ৬ ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ৫৬ নং ওয়ার্ড এবং সাবেক ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ৫৭ নং ওয়ার্ড হিসাবে সীমানা পুনঃনির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
কিন্তু মন্ত্রণালয় তারা সুলতানগঞ্জকে ডিসিসি’র আওতা থেকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসি পর্যালোচনা করে দেখেছে সুলতানগঞ্জ বাদ দিলে সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এর ৪/২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হয়। আইন অনুযায়ী ডিসিসি নির্বাচন করতে হলে সুলতানগঞ্জকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ মত: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, যে সুলতানগঞ্জ নাটকে ডিসিসি নির্বাচন বন্ধ করছে তা ঠিক করতে মাত্র সাত দিন সময় লাগবে। কিন্তু একবছরেও তা ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত করেনি সরকার। এটা সরকারের একটা কৌশল।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব না। এটা করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাত নয়, তারা যদি দুই দিনে এর সমাধান করতে পারে, তাহলেও আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ বলেন, সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নকে এখনো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। তবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখনো কোনো ওয়ার্ড করা হয়নি। সুলতানগঞ্জকে এখন ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করতে হলে দাবি-আপত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই সুলতানগঞ্জকে ডিসিসির সঙ্গে যুক্ত করা ছাড়াই এ নির্বাচন করা যেতে পারে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া চলছে ঢাকা সিটি করপোরেশন: সব শেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয় ২০০২ সালে। এরপর সেবা দেয়ার সুবিধার কথা বলে ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করে আইন পাস করা হয় সংসদে। এতে ডিসিসি ভাগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারার পর আইন সংশোধন করে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১২ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। কিন্তু ভোটার তালিকা হালনাগাদ আর সীমানা পুননির্ধারণ না হওয়ার অভিযোগে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এক আইনজীবী। কিন্তু গত ১৩ মে আদালত জানায়, নির্বাচন হতে আইনগত কোনো বাধা নেই। এরপর ঢাকাবাসী যখন নির্বাচনের অপেক্ষায় তখন শোনা গেলো সুলতানগঞ্জ সমস্যার কথা।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় ২০০২ নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলররা অতিরিক্ত প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ডিসিসি দুই ভাগ হওয়ার পর দায়িত্ব পালন করছেন প্রশাসক এবং সরকারি কর্মকর্তারা। কিন্তু জনপ্রতিনিধি না থাকায় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়েছেন নগরবাসী।