November 6, 2025
ডেস্ক রিপোর্ট : জঙ্গি দমনের পাশাপাশি জঙ্গিদের পুনর্বাসনেও নজর দিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে জঙ্গিদের সুপথে ফিরে আসারও আহ্বান জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদ ছেড়ে সুপথে ফিরে আসার সংকল্প নিয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব জঙ্গি কোনও হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত হয়নি, তারা যদি ফিরে আসে, তাহলে তাদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করা হবে। ১৪ থেকে ১৫ জনকে পুনর্বাসন করলেও তা গোপন রাখতে চায় পুলিশ। তবে সুপথে ফিরে আসার অঙ্গীকার নিয়ে যে সাত জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছিল, তাদের প্রত্যেককে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। এর বাইরে আর কোনও জঙ্গিকে পুনর্বাসন করার কথা জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও ফিরে আসার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে সঠিক পথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে আত্মসমর্পণ করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেওয়া হচ্ছে। যশোরে হিযবুত তাহরীরের সাত সদস্য পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। কয়েকদিন পর বগুড়ায় র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে নব্য জেএমবির সাত সদস্য। আত্মসমর্পণের পর তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে, কথিত ধর্মগুরুরা কোরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছিল।
জঙ্গি দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে যদি কেউ ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হবে। তাকে কোনও মামলায় হয়রানি বা গ্রেফতার দেখানো হবে না। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের আইনি সহায়তাও দেওয়া হবে। তবে তাদের সবসময় গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।
পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ সদর দফতরের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জঙ্গিরা ঘরে ফিরে এলে তাদের পুলিশ কোনও ডিস্টার্ব করবে না। যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে কিন্তু বড় ধরনের কোনও অপরাধে জড়ায়নি, তারা ফিরে এলে পুলিশ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’
এছাড়া অন্য এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, ‘যারা জঙ্গি হয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, সঠিক পথে ফিরে আসুন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে পরিবারের অশান্তি দূর করুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে সহযোগিতা দেবে। সরকারও তাদের সাধারণ ক্ষমা করবে।’
জঙ্গিবাদ মনিটরিংয়ে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষায়িত সেল এলআইসি শাখার প্রধান ও এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান জঙ্গিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বলেন, ‘যারা সুপথে ফিরে আসতে চাইবে, তাদের অবশ্যই স্বাগত জানাব। তবে এখন পর্যন্ত ওইভাবে পুনর্বাসন করা হয়ে ওঠেনি।’ কত জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা গোপনই থাক। তবে ১৪-১৫ জন সদস্যকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর পর অনেকেই সেই সুযোগ নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেছে। তারা নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চায় না, আমরাও চাই না। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভুল শোধরানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের জনসম্মুখে আনা হচ্ছে না। কারণ জঙ্গিরা ইতোমধ্যে তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে লিফলেট বিলি করেছে।’
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ‘এখন পর্যন্ত সাত জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে।’
র্যাবের কাছে যারা আত্মসমর্পণ করে তারা হচ্ছে, ‘যশোরের কদমতলার আবদুল আজিজের ছেলে তানজিব ওরফে আশরাফুল, তার ভাই তানজির আহমেদ ও বোন মাছুমা আক্তার, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফখরুল আলম তুষার, যশোরের খোলাডাঙ্গা কদমতলা এলাকার মৃত শফিয়ার রহমানের ছেলে সাদ্দাম ইয়াসির সজল, ধর্মতলা মোড় এলাকার আবদুস সালামের ছেলে রায়হান আহমেদ ও কদমতলা এলাকার এ কে এম শারাফত মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান পলাশ। তারা প্রত্যেকেই হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য ছিল।