পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

পৃথিবীর বিস্ময় কংক্রিটের জঙ্গল

Posted on December 22, 2014 | in নির্বাচিত কলাম | by

36180_0ছোট কালে সেখানে লম্বা সময় থেকেছিলাম। এর পর অনেক বারই যাওয়া আসা। এখনো যাচ্ছি আবার চলে আসছি। আমার মতো অনেকেই। জীবন তাগিদে কারো স্থায়ী বাস। আমি বলছি, ঢাকা শহরের কথা। যাত্রাবাড়ি অচেনা হয়ে গেছে। এখন সেখানে মাথা ঝিম ঝিম করে। কোনদিকে যাই কোথায় যাই। ওভার ব্রিজে দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। সঠিক কার্যকর নির্দেশনা না থাকায় অনেকেরই হয়। লজ্জ্বায় প্রকাশ করে না।

যাত্রাবাড়ি থেকে রওনা দিয়েছি বিকেল ৩ টায়, সন্ধ্যায় পৌঁছতে হবে সাতরাস্তার মোড়ে একটি জাতীয় দৈনিকের অফিসে। তখন ৭ টা এখনো শাহবাগ পার হতে পারিনি। বসে আছি গাড়িতে ধম বন্ধ করা পরিবেশে ৮ টায় শাহবাগ ছাড়লাম। ফোনে কথা বললাম চিপ রিপোর্টারের সাথে। সন্ধ্যার আসার কথা এখন সময় দিতে পারবেন না। অনুরোধে রাত ৯ টার পর সময় নিলাম। পৌঁছলাম রাত ১০ টার আগে। পরের দিনও যেতে হলো একই অবস্থা। কারো কাছে স্বপ্ন হলেও আমার কাছে এখন ঢাকার আকাশে এখন ফ্লাইওভার গুলোর কোন মূল্য নেই।

এর পর দিন ঢাকার কলেজ পড়–য়া কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার ক্ষোভ শুনে জানতে চাইলেন ঢাকা শহর নিয়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন আইনের ছাত্রও ছিলেন। সেই দিন তারা আমার বক্তব্য রেকর্ড করলেন। আজও ফোন করে বলে ঢাকায় আসলে অন্তত একটি দিন তাদের সাথে কাটানো জন্য। আমাকে চমকে দিয়ে আসার সময় রেকর্ড কপি আমাকেও দিলেন। বাড়িতে এসে রেকর্ড শুনে তা লিপিবদ্ধ করলাম তাই তুলে ধরছি-

‘‘হাজার কোটি টাকা খরচ করে ওভারব্রিজ করা হলো কিন্তু যানজট কমেনি তার স্বাক্ষী আমি নিজেই। ব্রিজগুলো কার্যকর যদি হতো তাহলে আমার যাত্রাবাড়ি থেকে তেজগাঁও ৬ ঘন্টা লাগার কথা নয় যেখানে নোয়াখালী আসতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা। ঢাকা শহর যদি কয়েক তলা ব্রিজ করে দেওয়া হয় তাহলেও যানজট কমবে না। ধরেন, ঢাকায় এখন প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস আগামী ১০/২০ বছর পর কত মানুসের বাস হবে তখন তো নিচের সড়কের মতো ওভারব্রিজ গুলোও মানুষ আর গাড়ীতে ভরে যাবে তখন কি করবো। ব্রিজের উপর আরেকটি ব্রিজ করবো! এরপর আরেকটি! তারপর এক সময় ব্রিজ ভেঙ্গে কয়েক লাখ লোকের সমাধি হবে।

ওভারব্রিজ গুলো দেখতেও আমার কাছে বিকট মনে হয়। পুরো দুনিয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন শহরেও ওভারব্রিজ আছে সেগুলো দেখতে স্লীম অনেক দূর গিয়ে বাঁক নিয়েছে। আর এগুলো তার উল্টো। এই ব্রিজেই কি সমাধান হয়ে যাবে। আবার দ্রুত কাজ শেষ করা হয়েছে তড়িৎ উদ্বোধনের জন্য অন্যদিকে নির্মাতা কোম্পানীর দুর্নীতিতো আছেই সব মিলিয়ে আমি সন্দিহান। ভারতের মুম্বাই, থাইল্যান্ড এর ব্যাংকক, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহর, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, কেনিয়ার নাইরোবি, উগান্ডার কামপালা শহর এবং যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটন সবচেয়ে বেশী যানজট হয়। তাদের পরিকল্পনার সাথে আমাদের যোজন যোজন দুরতœ। ঢাকায় কেন সচিবালয় রাখতে হবে, সব মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীদের ঢাকায় কেন থাকতে হবে। মন্ত্রী সমগ্র দেশের কিন্তু তারা ঘুমায় ঢাকায়। ৬০ মন্ত্রনালয় ৬০ জেলায় নিয়ে যান। ঢাকা বিমানবন্দর শুধু ভিআইপিদের জন্য রাখুন। আমরা দেশবাসী এবং প্রবাসীদের জন্য অন্য জেলায় বিমানবন্দর করা যায় না কেন? পার্সপোর্ট অফিস ঢাকায় কেন রাখতে হবে। শাহবাগেই সব রাখতে হবে? জাতীয় যাদুঘর, শিশু পার্ক, বঙ্গবন্ধু হাসাপাতাল, বারডেম সবই শাহবাগে রাখতে হবে। এটা গোড়ামি নয়কি। নন্দন পার্ক, ফ্যান্টাসী কিংডম দেখতে যদি আশুলিয়ায় যাওয়া যায় তাহলে যাদুঘর অথবা চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় নেত্রকোনায় যাওয়া যাবে। মন্ত্রী হওয়ার জন্য রক্ত নিতে পারে তবে পাবনা জেলায় গিয়ে মন্ত্রীত্ব করা যাবে না কেন। এতো হাসপাতাল ঢাকায় কেন? ল্যাবএইড, স্কয়ার, ঢাকা মেডিকেল, ইবনেসিনা, শিকদার, সব ঢাকায়, সব রোগি কি ঢাকায়। কেন এমন একটি হাসপাতাল রংপুরে হতে পারে না। এবার আসি তাদের প্রসাদের কথায়।

বিশ্বের যে ১০টি শহর বসবাসের অযোগ্য শহর বলে চিহ্নিত হয়েছে, ঢাকা সেই তালিকায় একদম নিচের দিকে ৯ নম্বরে। তার নিচে রয়েছে রবার্ট মুগাবের দেশ জিম্বাবুয়ের রাজধানী, হারারে। এখন এই ওভারব্রিজের মূল্য কি? আবার কোটি টাকা খরচ করে টাইম মেশিন লাগানো হয়েছে কিন্তু এর কাজ কি? সেই সম্পর্কে চালকদের কোন ধারনা দেওয়া হয়নি। ঢাকার রাস্তাগুলো প্রশস্ত হলেও দুই ধারে অফিস আর নিত্যনতুন বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন তৈরি হচ্ছে। নির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত পার্কিং-ব্যবস্থা নেই। রাজধানী ঢাকা মহানগরীর রাস্তাগুলো এখন নগরবাসীর দুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ রাস্তা এবড়ো-খেবড়ো। অলিগলি তো বটেই, এমনকি বড় রাস্তাগুলোতে চলাচল করাও এখন আর স্বস্তিদায়ক নয়। এসব সড়কে যানবাহনে চলাচল করতে গিয়ে পদ্মার ঢেউ অনুভব করেন বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা! এবার দেখলাম ঢাকাতে নতুন নতুন দালান তৈরী করা হচ্ছে। কারা এর মালিক। সাংবাদিক বন্ধু ফারজানা লাবনীর ভাষায়, ‘ভরা পূর্ণিমায় ধবল জ্যোৎস্নায় যখন ভেসে যায় চরাচর তখনো অন্ধকারে ছেয়ে থাকে রাজধানীর অলিগলি। কারণ গায়ে গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলো জ্যোৎস্নার পথ আটকে দাঁড়ায়। কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হওয়া রাজধানীর সব এলাকায়ই চোখে পড়ে এমন অসংখ্য অট্টালিকা। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানমণ্ডি, বারিধারা, গুলশান ও বনানী এলাকায় এমন আবাসিক অট্টালিকাগুলোয় ফ্ল্যাট আছে লক্ষাধিক। একেকটি ফ্ল্যাটের দাম কয়েক কোটি টাকা। রিহ্যাব সূত্র অনুযায়ী, ধানমণ্ডিতে এখন ফ্ল্যাটের মূল্য প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা, গুলশানে ২০ থেকে ২৮ হাজার, বারিধারায় ২০ থেকে ২৫ এবং বনানীতে প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ছে ১৫ থেকে ২২ হাজার টাকা করে। এই হিসাবে এসব এলাকায় মধ্যম মানের একেকটি ফ্ল্যাটের দামই কয়েক কোটি টাকা। এ তো গেল ফ্ল্যাটের কথা, রাজধানীর রাজপথগুলোও এখন দাপিয়ে বেড়ায় বিলাসবহুল সব গাড়ি। ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ Ÿেঞ্জ, বিএমডাব্লিউ, লেক্সাসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোটি কোটি টাকা দামের গাড়ি চোখে পড়ে হরহামেশাই।

এত এত দামি বাড়ি, গাড়ি- তার মানে দেশে কোটিপতির ছড়াছড়ি। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেওয়া বার্ষিক আয়কর বিবরণী দেখলে হোঁচট খেতে হবে। কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও আয়কর বিবরণীতে তার ছাপ পড়ছে না কারণ তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সম্পদের সঠিক তথ্য দেয় না। গত ২০ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি সংস্থা সুজন জানায়, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২২৬ জনই কোটিপতি। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪২ জন আয়কর দেন না। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ৪৯ হাজার বিলাসবহুল গাড়ির যে নিবন্ধন আছে তার মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জই বেশি, প্রায় ২৫ হাজার। আমদানি শুল্কসহ একেকটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ও লেক্সাস গাড়ি কিনতে খরচ পড়ে চার কোটি টাকা পর্যন্ত। আর বিএমডাব্লিউ ও ল্যান্ড রোভার কিনতে খরচ পড়ে সাত কোটি টাকা পর্যন্ত। এরা সবাই ঢাকার এই ছোট্র শহরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে, কানাডার টরেন্টো শহরে বানিয়েছে বেগম পাড়া! আমি আগাম বলে রাখি, ঢাকার উল্লেখিত স্থাপনা গুলো এখনিই অন্যত্র না সরালে একদিন দলে দলে ঢাকা ছেড়ে সব রেখে মানুষকে পালাতে হবে প্রান্তিক এলাকায়। কেন সেই পর্যন্ত যাবো। এর আগেই আমার আরো কিছু প্রস্তাবনা আছে সেগুলো বাস্তবায়নই ঢাকা থেকে মানুষ অটো ভাবেই ফেরত আসবে। সবশেষ বলি, আর কোন দেশের রাজধানীতেই আছে পার্লামেন্ট ভবন। আর কেনইবা ঢাকাকেই রাজধানী রাখতে হবে। কংক্রিটের এই জঙ্গল থেকে বের হয়ে রাজধানী অন্য কোন জেলা হতে পারে না। (লেখক-সাংবাদিক)

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud