পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

জননী, শুনতে পাচ্ছেন শাহবাগ আপনার লাখো সন্তানের গর্জন

Posted on February 23, 2013 | in নির্বাচিত কলাম | by

Rbbx, ïb‡Z cv‡”Qb kvnevM Avcbvi jv‡Lv mš—v‡bi MR©bশহীদ জননী জাহানারা ইমাম তার মেধাবী সন্তান রুমীকে উৎসর্গ করলেন ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে। তারকাচিহ্নিত সন্তান রুমীর পড়তে যাওয়ার কথা স্বপ্নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ‘৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে লাখো জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ‘৪৭-এ ব্রিটিশ শাসকরা চলে যাওয়ার সময় আমাদের বুকে চাপিয়ে দিয়ে গেলো পাকিস্তান নামক উদ্ভট রাষ্ট্রের পাঞ্জাবি সিভিল-মিলিটারি শাসকদের। এদিকে যে বাঙালি নেতা যেমন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নক্ষত্র হয়ে জ্বলছিলেন। তারা কেন যেন নিষ্প্রভ হয়ে অবাঙালি ধূর্ত নেতা জিন্নাহর হাতে বাঙালির ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। ১৯৪০ সালে ২৩ মার্চ লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাবের জন্য যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, সেখানে একশত ভাগ বাঙালি শেরেবাংলা উর্দুতে বক্তৃতা করলেন। এর ফলে জিন্নাহর ধারণা হলো যে মুসলমান বাঙালিদের প্রিয় ভাষা উর্দু। এরই ফলশ্র“তিতে জিন্নাহ সাহেব ‘৪৮ সালে ঢাকায় এসে বললেন, ‘উর্দু, উর্দু এবং উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। গর্জে উঠলো বাংলার দামাল ছেলেরা। এলো ভাষা আন্দোলন। ‘৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকার রাজপথে চললো গুলি। রক্ত ঝরলো। সেখানে উপ্ত হলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। ১৯৬২-তে শিক্ষা আন্দোলন, ‘৪৬-তে সমাবর্তন বর্জনের আন্দোলন, ‘৬৬-তে ছয়দফা ঘোষিত যা কিনা বাঙালির মুক্তি সনদ বা ম্যাগনা কার্টা, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং পাকিস্তানের স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল এবং রাষ্ট্রপতি আইয়ুবের পতন। আরেক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে ঘোষণা দিলেন যে, সাধারণ নির্বাচন হবে। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ১৯৭০-এর ডিসেম্বর। জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের ভেতর বাংলাদেশের জন্য (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছিল ১৬২টি আসন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন। অর্থাৎ জনগণ ছয়দফার ম্যান্ডেট দিলেন বঙ্গবন্ধুকে। পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ৪টি প্রদেশের ভেতর পশ্চিম পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো। তারপরও ভুট্টো দাবি করলেন তনি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। অথচ তখন পশ্চিম পাকিস্তান নামে কোনো প্রদেশ ছিল না। ইতোমধ্যে ভুট্টো এবং পাকিস্তানি জেনারেলদের অশুভ আঁতাত গড়ে উঠলো। নানা চক্রান্ত হলো। পরিশেষে ২৫ মার্চ ‘৭১-এ পাকবাহিনী নিরস্ত্র ঢাকা শহরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। পাকবাহিনী ধানম-ি, গুলশান, বনানী, বেইলি রোডের মতো অভিজাত এলাকায় কোনো আক্রমণ চালায়নি। তারা হামলা করেছে বস্তি আর হিন্দু এলাকা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। নয় মাস যুদ্ধ চললো। ৩০ লাখ লোক শহীদ হলেন। ৩ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারালেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করলেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী। তাজউদ্দিন আহমেদের বলিষ্ঠ এবং দক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চললো এবং ১৬ ডিসেম্বর ‘৭১-এ চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলো। ২৬ মার্চ ‘৭১-এর প্রথম প্রহরে পাকবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে সবাই আত্মনিয়োগ করেন। পাকিস্তানের অত্যাচারে ১ কোটি মানুষ দেশ ত্যাগ করেছিল। অসংখ্য রেল ও সড়ক সেতু ভেঙে দেয়া হয়। অতএব বিরাট এক প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব।

তবে সেই সঙ্গে যেটা হওয়া উচিত ছিল, তাহলো শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দেয়া এবং পাকবাহিনীর সহযোগীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। অবশ্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ৮ অর্থাৎ কোলাবরেটর আইন জারি করে এদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু যেটি ক্ষতির কারণ, তাহলো মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের আত্মীয়করণ না হয়ে উল্টো হলো। অর্থাৎ হানাদার বাহিনীর সময় যারা চাকরি করেছিলেন তাদের সবাইকে কাজ করতে দেয়া হলো। কোনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। শুধু সরকারের দেয়া একটা আনুগত্য পত্রে তারা স্বাক্ষর করেন। অবশ্য মুজিবনগরে সিভিল সার্ভিস সদস্যদের সংখ্যা খুব কম ছিল। মুজিবনগর থেকে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনের দুমাসের মাথায় এদের প্রত্যাহার করা হয়। এরা একটি কাজ খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করছিলেন, তাহলো গণকবর খুঁজে বের করা। এদের প্রস্থানের পর কাজটিতে ভাটা পড়ে এবং এক পর্যায়ে স্তিমিত হয়ে যায়। পাকিস্তানি মানসিকতার প্রশাসকরা দালাল আইনের প্রয়োগেও শিথিলতা দেখান। তারপরও বিপুলসংখ্যক দালালদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং দেশব্যাপী ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে বিচার কাজ শুরু হয় এবং অনেকের শাস্তি হয়। কিন্তু চাকা ঘুরে যায় ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর। বস্তুত পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ ‘৭১-এ দিয়ে রেখেছিল। তাদের দালাল যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কথিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছিলেন তারা ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট পাকিস্তানি আদেশ কার্যকর করেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির বলেছিলেন যে শেষ রাতে তার বাবা তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার খবর দেয়। তার মানে খুনিদের সঙ্গে ভুট্টোর হটলাইন ছিল এবং বিষয়টা মনিটর করা হচ্ছিল। পাকিস্তানি স্পন্সরড হত্যাকা-, সে জন্য জয় বাংলা সøগানের পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এলো এবং বাংলাদেশ বেতার হলো রেডিও বাংলাদেশ। এরপর ডিসেম্বর সায়েম-জিয়া প্রশাসন দালাল আইন বাতিল করলো এবং যাদের শাস্তি হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেয়া হলো। সেখানেই শেষ নয়, যুদ্ধাপরাধীদের জিয়ার দল বিএনপিতে নেয়া হলো। যেমন- শাহ আজিজুর রহমান। তিনি ‘৭১ সালে পাকিস্তানের হয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন। তাকে প্রধানমন্ত্রী এবং জয়পুরহাটের নরহন্তা আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী করা হয়। শর্ষিনার পীর সাহেব বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন, তাই তাকে জিয়া স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। এভাবে জিয়া, এরশাদ আমল কেটে গেলো। ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন জামাতের সমর্থন নিয়ে। শহীদদের নাম বিস্মৃত হতে লাগলো। তখন সেই কথা মনে হলো, ‘বীরের রক্তস্রোত, মাতার অশ্র“ধারা/সবই কি ধরার ধুলায় হবে হারা’ তবে ইতিহাস বড় কঠিন। কোন বাঁকে কে এসে হাজির হন। এখন সময় আবির্ভাব হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের। তিনি তো একশত ভাগ অরাজনৈতিক। যুদ্ধে পুত্র হারিয়েছেন, স্বামীও অমানুষিক নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বেশকিছু প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব তথা কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিক, আইনজীবী এদের সমন্বয়ে গঠন করলেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক তিনি। তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন আরেক মহীয়ষী নারী এবং আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় কবি সুফিয়া কামাল। সম্মানিত পাঠক, স্মরণ করুন যখন রাজাকার দৌরাত্ম্য প্রশাসন দেশের শাসনকার্য চালাচ্ছিল, তখন একজন নারী যিনি ক্যান্সার আক্রান্ত, তিনি কি বিরাট এক দায়িত্ব নিলেন। এরপর সমমনা অন্যান্য সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের শত বাধাকে অতিক্রম করে গণআদালত গঠন করে সেখানে গোলাম আযমকে বিচার করে প্রতীকী ফাঁসি দেয়া হয়। সরকার তাকেসহ ২৪ জনকে আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে। তিনি এই অভিযোগ মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার প্রতিষ্ঠিত ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি নিরলসভাবে তার আদর্শকে অনুসরণ করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। অনেক সম্মানীত ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী স্যারের নাম। যিনি ‘৯০-এর কাছাকাছি বয়সে অসুস্থ শরীরেও নির্মূল কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতেন। বর্তমানে দেশব্যাপী এমন কি উপজেলা পর্যায়ে অনেক কমিটি গঠিত হয়েছে। বর্তমানে নির্মূল কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম রাব্বানি। বিশেষ কারণে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। নির্বাহী চেয়ারম্যান শাহরিয়ার কবির, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং সেক্রেটারি মুকুল অত্যন্ত দক্ষতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আন্দোলনটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জননী, আজ একটি কথা মনে পড়লো শেরাটন হোটেলে একটি সেমিনারে বড় ব্যবসায়ীদের সেমিনার চলছিল। আমি উপস্থিত ছিলাম। তখন আপনার নেতৃত্বে আন্দোলন তুঙ্গে। বিএনপির এক ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক ব্যঙ্গ করে বলছিলেন বাংলাদেশে দুজন গুরুত্বপূর্ণ ইমাম- একজন বায়তুল মোকাররমের অপরজন জাহানারা ইমাম। অনেকে হো হো করে হেসেছিল। সেই ভদ্দরলোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন চোরের মতো। এরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততোদিন আপনার নাম জ্বলজ্বল করে জ্বলবে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে গুরুতর অপরাধে লঘুদ- দেয়ার ফলে শাহবাগে কতিপয় দেশপ্রেমিক ব্লগার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত একই আওয়াজ তাহলো যুদ্ধাপরাধী নিপাত যাক। শহীদ জননী ১৯৯২ সালে যে আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন তা আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকারের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে অঙ্গীকার ছিল যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। বিচার শুরু হয়েছে তবে কিছু সময় নষ্ট হয়েছে। এটি অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি কিংবা অদক্ষতার জন্য। অথবা তাদের ভেতর জামাতি সমর্থক আমলা ছিল, যাদের অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রমের জন্য মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও সেই পুরোনো কথা, একেবারে না হওয়ার চেয়ে বিলম্বে হওয়া ভালো। জননীর প্রতিষ্ঠিত নির্মূল কমিটি বিভিন্ন গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তবে সরকারের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে সময় লাগছে। দুসপ্তাহ ধরে অষ্টপ্রহর শাহবাগে আন্দোলন চলছে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আসছেন। এখন অবশ্য উপজেলা পর্যন্ত এই গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠছে। জননী, গোটা শাহবাগ এলাকায় একটি মাত্র ছবি, যা অঙ্কিত, সেটি আপনার। বিশালকায় এটি। কিন্তু যেটি কেউ লক্ষ করেনি, তাহলো এটি সকলের অলক্ষে বিস্তৃত হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছেয়ে ফেলেছে। ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে এই ছবি। কবি রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছো যে ঠাঁই।’ আমরা সবাই বড়ই তৃপ্ত এবং আনন্দিত যে অনেকে ভেবেছিলেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বোধহয় ভুলে গেছে, তা নয়। আর আমরা যারা আপনার সরাসরি সৈনিক, তারা মনে মনে বেশি গর্ববোধ করি। তবে আমরা বাইরে বিনয়ী। আর আমাদের গর্ব তো আপনাকে নিয়ে। শাহবাগ গিয়ে আপনার ছবি দর্শনে হৃদয়ে আসে প্রশান্তি। নতুনভাবে জেগে ওঠে প্রেরণা, উদ্যম। তবে এতো বড় গণজাগরণেও কিন্তু ঘাতকরা দমেনি। ক’দিন আগে অসাধারণ এক দেশপ্রেমিক ব্লগার রাজীবকে ওরা তার বাড়ির সামনে হত্যা করে। হত্যার পদ্ধতি প্রমাণ করে যে ওরা ‘৭১-এর ঘাতকদের উত্তরসূরি। তাছাড়া সেই ইসলামবিরোধী হওয়ার অভিযোগ রাজীবের হত্যাকা- ঘটার পর পাকিস্তানে নাকি একদল উল্লাস করেছিল। অবশ্য পাকিস্তানে এটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ‘৭১ সালে পাকিস্তানিরা যখন বাঙালি নিধন করেছিল তখন হাতেগোনা ২/১ জন পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী কোনো প্রতিবাদ করেনি। এখনো বেশিরভাগ পাকিস্তানি শিক্ষিতরা বাঙালিদের ঘৃণার চোখে দেখে। আমি নিজের একটি অভিজ্ঞতা বলতে চাই। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে চেকআউটের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। জার্মানির হামবুর্গ যাওয়ার জন্য বিমান ধরবো। সারারাত প্লেনে ছিলাম। মাথাটা ভার ভার, সিগন্যাল খেয়াল না করে কাউন্টারে হাজির হয়ে খেয়াল হলো যে, ভুল করছি। সঙ্গে সঙ্গে একাধিকবার সরি বললাম। দুর্ভাগ্যক্রমে সে কাউন্টারে ছিল এক পাকিস্তানি কুকুর (ব্যক্তি)। বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখার পর আমাকে এতো অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে লাগলো। ক্ষোভে, দুঃখে মন বিষণ্ন হয়ে উঠলো। কিছু বলতে পারছিলাম না পাছে আরো বিলম্ব ঘটায়। হ্যামবুর্গ বিমানবন্দরে একজন নিতে আসবে, আর আমি আদৌ জার্মান ভাষা জানি না। আমার এই অবস্থা দেখে পাশের কাউন্টারের ইংরেজ ভদ্দরলোক বললেন, ‘ফরগেট ইট’ তারপর সেই কুকুরের (ব্যক্তি) হাত থেকে রেহাই পাই। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কোনোদিন পছন্দ করতো না। তবে প্রভুভক্ত কুকুরের মতো যেসব বাঙালি পাকিস্তানিদের পদলেহন করতো, তারা অবশ্য পাকিস্তানি প্রভুদের অনুকম্পা পেয়েছে বা এখনো পায়।
আমি নাম মনে করতে পারছি না। মুনতাসীর মামুনও হতে পারে। যিনি হোন, তার লেখায় পড়েছিলাম। ঘটনাটা বেশ আগের। তিনি লিখেছেন যে বেশকিছু ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছেন, তাদের অনেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। তারা সবাই আহা উহু করেছেন। তারা বলেছেন যে, আমরা ভাই ভাই ছিলাম, পৃথক হয়ে গেলাম। কিন্তু কেউ এ কথা বলেননি যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা যা করেছে তা অন্যায় হয়েছে। কি ভ্রাতৃত্বের দাবি। নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে তারপরও আবার ভাই ভাই হওয়ার কথা বলে। কতোটা অহমিকা এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করলে এরকম বেয়াকুবের মতো কথা বলতে পারে। ফেব্র“য়ারি মাস, ভাষার মাস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলা শেষ হলো। খোদার অশেষ রহমত যে কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটার খেলেনি এই লিগে। আবার ফিরে আসি আজকের বিষয়ে। আমাদের অনেক আশা, অনেক প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে বাধাও অনেক। ইতোমধ্যে আমরা এক অমূল্য রতন রাজীবকে হারিয়েছি। আমরা জানি যে ঘুমানোর আগে আমাদের অনেক পথ হাঁটতে হবে। তবে নতুন প্রজন্ম যেভাবে জেগেছে, তাতে আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করি। শেষ করার আগে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি শহীদ জননীকে।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud