May 16, 2024
প্রতিবেদক : বিনা অনুমতিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং ভুয়া চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর কদমতলীর রায়েরবাগে ‘সালেমা হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব’ নামে একটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ভুয়া চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের সিজারসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে হাসপাতালটিতে। র্যাব-১০ এর একটি দল রবিবার দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ‘সালেমা হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব’ নামের ওই হাসপাতালে অভিযান চালায়। অভিযানে ভুয়া স্বামী-স্ত্রী দুই চিকিৎসক ও দুই নার্সকে জেল ও জরিমানা করা হয়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা জানান, হাসপাতালের মালিক ও ভুয়া চিকিৎসক এস এম রবিউল আউয়াল (৪৩) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগমকে (৩৬) দুই বছর কারাদণ্ড এবং তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া নার্স সোনিয়া আক্তার (২২) ও তার সহযোগী লুৎফুন নাহারকেও (২৮) এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
আনোয়ার পাশা জানান, হাসপাতালটির কোনো লাইসেন্স নেই। এর মালিক রবিউল আউয়াল ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ালেখা না করেই চিকিৎসক সেজে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। হাসপাতালের সকল নার্স ও টেকনিশিয়ানও ভুয়া। এমনকি ল্যাবে বিভিন্ন পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টও দেওয়া হতো। অভিযানের সময় দেখা গেছে, ভুয়া চিকিৎসক রবিউল তার চেম্বারে সিজারের রোগী হোসনেয়ারার পেটের ড্রেসিং করছিলেন। হোসনেয়ারার স্বামী খোরশেদ জানান, ৬ ডিসেম্বর এখানে সিজার করে আজ সেলাই কাটতে এসেছেন। হোসনেয়ারার পেটে বর্তমানে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে বলেও স্বামী অভিযোগ করেন। তিনি আরও জানান, মাতোয়াইলের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে কয়েক দালাল এ হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসে।
অভিযানের সময় পারভেজ হোসেন দিপু (১৬) নামে এক রোগী হাতে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। ভুয়া চিকিৎসক রবিউল তার হাতে ব্যান্ডেজ ও প্লাস্টার করে দেন। এ সময় সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা আকলিমা বেগম, নূর নাহার রুপা, জেসমিন আক্তার ও ফাতেমা বেগমসহ আরও ১০ রোগীকে দেখা যায়। যাদের অধিকাংশই সন্তান সম্ভাবনা। র্যাব জানায়, সালেমা নামের হাসপাতালটিতে ২৭টি শয্যা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি সিফটে তিন চিকিৎসক এবং ছয় নার্স সার্বক্ষণিক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে নিয়ম লঙ্ঘন করে রবিউল ও তার স্ত্রী মমতাজ সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের কাজ করেন। তারা এ বিষয়ে কখনোই পড়াশোনা করেননি। রবিউলের স্ত্রী মমতাজ অন্য হাসপাতালে নার্স হিসেবে কিছু দিন কাজ করেছেন। পরে তিনি চিকিৎসক সেজে বসেন। র্যাব আরও জানায়, অভিযানের সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় পাওয়া যায় নার্স সোনিয়া আক্তার ও লুৎফুন নাহারকে। জিজ্ঞাসাবাদ তারা জানায়, তাদেরও কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই।