পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

কলেরা ও আগ্রাসনে ১০ লাখ ইয়েমেনি শিশু মৃত্যু ঝুঁকিতে

Posted on August 5, 2017 | in আন্তর্জাতিক | by

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইয়েমেনে সৌদি আরবের পছন্দসই সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে দেশটির বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চলছে তাতে কলেরায় আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে কোনো রোগে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার দিক থেকে এটি রেকর্ড। সেভ দি চিলড্রেন চ্যারিটি গ্রুপ বলছে, ৩ মাস আগে কলেরা ছড়িয়ে যাওয়ার পর কলেরায় মারা গেছে ১৯’শ জন। ২০১১ সালে হাইতিতে কলেরায় ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড ইয়েমেন ভেঙ্গেছে।

ইয়েমেনে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। অক্সফাম ইয়েমেনে কলেরায় আরো ব্যাপক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করে বলছে, ৬ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ বলছে ইয়েমেনের ২৩টি প্রদেশের ২১টিতে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে। খাদ্য ও পুষ্টির তীব্র অভাব থেকে কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।

এক প্রতিবেদনে সেভ দি চিলড্রেন বলছে, অপুষ্টিতে ইয়েমেনের শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কলেরায় আক্রান্ত হলে তারা সহজেই মারা যাচ্ছে যা সাধারণের চেয়ে ৩গুণ আশঙ্কাজনকহারে ঘটছে। দিনে মারা যাচ্ছে ২৮ জন শিশু কারণ এরা কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্যালাইন কিংবা কোনো খাবার পাচ্ছে না।

গত ২৮ মাস ধরে ইয়েমেনের সরকার পতনে সৌদি আগ্রাসন চলছে। নির্বিচারে সৌদি যুদ্ধ বিমানের বোমা বর্ষণের আগে জাতিসংঘের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। গরিব এই দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। সেভ দি চিলড্রেন জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ইয়েমেনে গত এক বছর ধরে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। অক্সফাম বলছে, কলেরা প্রতিরোধে ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থার মত কিছু ব্যবস্থা কলেরা থেকে ইয়েমেনে হাজার হাজার মানুষকে বাঁচাতে পারে।

আগ্রাসনের পাশাপাশি সৌদি অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞায় ইয়েমেনের সার্বিক পরিস্থিতি আরো গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে ইয়েমেনের বন্দরগুলোতে রাজধানী সানা থেকে কোনো জরুরি ওষুধ ও খাদ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারছে না। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর আউক লুতসমা বলেছেন, ত্রাণ পাঠাতে বিমান চলাচলে যে জালানি প্রয়োজন তার অনুমতি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ মুহূর্তে ২৭ মিলিয়ন মানুষের জন্যে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দরকার। দেশটির দুই তৃতীয়াংশ মানুষ জরুরি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। সাড়ে ৪ মিলিয়ন শিশু ও গর্ভবর্তী নারী ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা নারী যাদের পক্ষে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসা পাচ্ছে না ১৪ মিলিয়ন মানুষ।

২০১৫ সালে মার্চ থেকে সৌদি জোট ইয়েমেনে এধরনের অবরোধ ও আগ্রাসন শুরু করে। পদত্যাগ করে রিয়াদে পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আবুদুল রাব্বু মানসুর হাদিকে পুনরায় ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসাতে সৌদি জোট ইয়েমেনে আগ্রাসন ও অবরোধ চালিয়ে আসছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে আনসারুল্লাহ আন্দোলন। রাজধানী সানা সহ ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকা আসসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এক দ্বৈতব্যবস্থায় খুবই সীমিত পর্যায়ে জাতিসংঘ জরুরি ত্রাণ সাহায্য চালু রাখছে যা চাহিদা ও প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। ফলে সৌদি আরব ইয়েমেনে সফল না হলেও আগ্রাসনে যেমন বোমাবর্ষণে মানুষ মরছে তেমনি নীরব দুর্ভিক্ষ ও কলেরায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইয়েমেনে ১৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেড ক্রস বলছে, ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে ইয়েমেনে। এখন ২০ মিলিয়ন মানুষের জন্যে মানবিক সহায়তা দরকার।

তাবৎ মুসলিমের অভিভাবক ও পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালামান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌউদ কোনো আলোচনা নয়, জাতিসংঘের মধ্যস্ততা নয়, ইয়েমেনে পছন্দের সরকার বসাতে দেশটির একাংশের নিয়ন্ত্রণকারী ও পলাতক প্রেসিডেন্ট আবুদুল রাব্বু মানসুর হাদিকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে এহেন আগ্রাসন ও অবরোধকেই বেছে নিয়েছেন।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud