পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

বাংলাদেশের মেধা কি ক্ষয়ের পথে?

Posted on February 21, 2014 | in জাতীয় | by

front-DU-Admissionএতোদিন জানা ছিল বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজিতে দূর্বল কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা গেছে, এদেশের ছাত্রছাত্রীরা মাতৃভাষা বাংলাতেও দূর্বল। গত বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবছরে বি-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় ৩৬ হাজার ৮শ’ ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩১ হাজার ৬শ’ ২৪ জন ছাত্রছাত্রীই নূন্যতম নাম্বার তুলতে ব্যর্থ হয়। এর ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায় নূন্যতম নাম্বার তুলতে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে ইংরেজিতে এই অবস্থা ৫৬ শতাংশ। ইংরেজি এবং বাংলা উভয় বিষয়ে যৌথভাবে ব্যর্থতার হার ৩৮ শতাংশ। কলা অনুষদের অধীনে ১২০ নাম্বারের ওপর অনুষ্ঠিত এই ভর্তি পরীক্ষায় ছিল তিনটা বিভাগ- বাংলা (৩০ নাম্বার), ইংরেজি (৩০ নাম্বার) এবং সাধারণ জ্ঞান (৬০ নাম্বার)। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে অবশ্যই মোট ৪৮ পেতে হবে, এছাড়া বাংলা ও ইংরেজিতে ৮ নাম্বার করে এবং সাধারণ জ্ঞানে ১৭ নাম্বার পেতে হবে অবশ্যই। বাংলায় এমন ধ্বসের কারণে এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এমিরেটাস অধ্যাপক ডক্টর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা, এক্ষেত্রে অবশ্যই অকৃতকার্যের কিছু কারণ থাকতে পারে। কিন্তু মাতুভাষায় অকৃতকার্যতার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাহলে তারা কি শিখছে? আমাদের অব্যশই এ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।’

পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী বাংলা এবং ইংরেজিতেই ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম নাম্বার তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই ফলাফল পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়। ৬২ হাজার ৯শ’ ১৭ ভর্তিচ্ছুর মধ্যে ৫৭ শতাংশ ইংরেজিতে, ৪২ শতাংশ বাংলায় এবং ৩২ শতাংশ উভয় বিষয়ে নূন্যতম নাম্বার তুলতে ব্যর্থ হয়। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে একই অবস্থা লক্ষ্য করছি। আশির দশকের প্রথম দিকের তূলনায় বর্তমান সময়ের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এবং দিনদিন এই অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।’ তিনি বর্তমানে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজি শিক্ষা পদ্ধতিকেই দুষলেন এর কারণ হিসেবে।

বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদেরকে ইংরেজি ভাষায় শক্ত ভীত গড়ে দিতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে পদ্ধতি চলমান, তাতে ইংরেজি সাহিত্য চর্চা হুমকির মুখে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের কল্পনাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে ‘
ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে সি-ইউনিটে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের ৭৬ শতাংশ ইংরেজিতে নূন্যতম ১২ নাম্বার তুলতে ব্যর্থ হয়। তবে অন্য দুই অনুষদ- ‘এ’ এবং ‘চ’ ইউনিটে অবশ্য কৃতকার্য হতে বাংলা এবং ইংরেজির কোনো নূন্যতম নাম্বার ঠিক করা নেই বলে, এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের কী অবস্থা বোঝার উপায় নেই। এবছর ভর্তি পরীক্ষায় বি-ইউনিটে অংশগ্রহণকারী মুসামা মেহেরীন জানান, বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। ভর্তির আগে কোচিংগুলোও সঠিক ধারণা দিতে ব্যর্থ। স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণও ইংরেজিতে শক্ত ভীত গড়ে দিতে ব্যর্থ।

রেসিডেন্টসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজের ইংরেজি শিক্ষক জসিম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমান সিলেবাসই এই ধ্বসের মূল কারণে বলে আমি মনে করি। ছাত্রছাত্রীরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিখতে গিয়ে শর্টকাট খুঁজে বের করছে বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করতে। তারা নির্দিষ্ট কিছু পেসেজ, প্যারাগ্রাফ এবং শূন্যস্থান অনুশীলন করছে ব্যাকরণ ছাড়াই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে দেখা যায়, পরীক্ষায় প্রতিবছরই প্রশ্নের ধরণ থাকে একই রকম। কাজেই সহজ পথে তারা ভালো ফলাফর অর্জন করে নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু শিখছে না কিছুই।’ বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রব পাবলিক কলেজের বাংলা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি, ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য বিষয়ে যে মনযোগ দেয়, বাংলায় তেমন মনযোগী হয় না। এই এড়িয়ে যাওয়াটাই মূলত এমন অবস্থার জণ্য দায়ী। বাবামারাও এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনো উৎসাহ দেন না। মাতৃভাষা বাংলা হওয়ার সুবাদে ছাত্রছাত্রীরা মনে করে, কঠোর অুনশীলন ছাড়াই তারা ভালো ফলাফল পাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এ থেকে উত্তরণে জাতীয়ভাবে ভাষার জন্য নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জানান, প্রতিটা স্কুলে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আবার পাঠাভ্যাস গড়ে ওঠে।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud