November 5, 2025
ঢাকা: তত্ত্ববাধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে বিএনপির সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু বলেছেন, ‘কেউ বলছেন- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন। আবার বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে- স্পিকারকে নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করা হবে। তো আমি আমার ফেনীর ভাষায় বলতে চাই ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার লইয়া কোনো ‘চুদুর-বুদুর’ চলতো না।’
রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিএনপির সাংসদ রেহানা আক্তার রানু এসব কথা বলেন। স্পিকারের উদ্দেশে রানু আরো বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষের একটাই জিজ্ঞাসা দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? আপনি এই সংসদের অভিভাবক। আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়, সেই নির্বাচনে যাতে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে এবং কেউ যেন গায়ের জোরে একদলীয় নির্বাচন করতে না পারে- সে ব্যাপারে আপনার কার্যকর ভূমিকা আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না।’ এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে না¯িত্মকদের উস্কানিদাতা বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখতে যায় নি। কিন্তু না¯িত্মক ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর পর তিনি তার বাসায় গিয়েছেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় প্রধানমন্ত্রী না¯িত্মকদের উস্কানিদাতা।’
রানু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ এ দেশের মানুষ। চারিদিকে এখন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ। দম বন্ধ করা মানুষের আর্তনাদ। রাত পোহাবার আর কত দেরি পাঞ্জেরি? যেদিন এই সরকারের পতন হবে সেদিন দেশের মানুষ স্ব¯িত্মর আকাশে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। বাজেটের সমালোচনা করে রানু বলেন, ‘কী বলিবো বাজেটের কথা? মনে আজ বড় ব্যথা। এই বাজেট একটি সুন্দর ছলনাময়ী নারীর মতো। এই বাজেটে সুন্দর সুন্দর কথা, সুন্দর সুন্দর ছলনা, সবই প্রতারণা, সবই ধোঁকাবাজি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটাল মন্ত্রীদের সর্বাঙ্গে ব্যথা। ওষুধ দিবো কোথা? কোনো সরকারকে চুরি এবং দুর্নীতে নোবেল দেয়ার নিয়ম থাকলে এই সরকারের মন্ত্রীরা তা পেতেন। মন্ত্রীদের দুর্নীতির কারণে বর্তমান অর্থমন্ত্রী একবার বলেছিলেন- আমি পালিয়ে যেতে চাই। রানু বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকা নেয়া হলো। চাঁদাবাজি করা হলো। সেই চাঁদাবাজির ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ মারামারি করে রাজশাহীতে একজন খুন হলো। সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগেই ১২ শতাংশ ঘুষ নেয়ার কথা ফাঁস হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংক তার ঋণচুক্তি ‘ঘ্যাচাং’ করেছে। এই ১২ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশের খবর পাওয়া গেছে। বাকি দুই শতাংশ গেল কোথায়?’
এসময় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বলেন, ‘কেবল নোবেল পুরস্কার পাওয়ার অপরাধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শত্রু বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা উনার (তথ্যমন্ত্রী) চাপার মধ্যে থাকলেও বা¯ত্মবে নেই। ইনি-ই সেই তথ্যমন্ত্রী যিনি ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালকে ‘ব্যাংক ডাকাত’ বলেছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার আগে উনি এই বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন কিনা তা জানতে চাই।’
রানু বলেন, ‘বন্দুকের নল আর পুলিশের ডান্ডা দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চলছে। দিগšত্ম টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশের ছাপাখানা বন্ধ করা হয়েছে। আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এই সরকারের আমলে ১৯ সাংবাদিক খুন হয়েছে তাদের কোনো বিচার হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী বলেছেন- আমার দেশ নাকি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এটি অসত্য। আসলে আমার দেশ না¯িত্মক ব্লগারদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। এটাই দোষ। রানু বলেন, ‘বর্তমানে পুলিশের বুটের তলায় পিষ্ট বাংলাদেশের গণতন্ত্র। গণতন্ত্র আজ ছাত্রলীগের চাপাতির আঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড। সরকার জামায়াত-আর হেফাজতের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাতে পিঠের চামড়া থাকবে না বলে দিলাম।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। উনার পিএইচডির বিষয় হচ্ছে খাল খনন। ম-তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুই রাজাকার, তুই রাজাকার- এটি আমার কথা নয়। এটি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কথা। কালো বিড়াল-তুই বেটা চোর, তুই বেটা চোর-এটিও আমার কথা নয়। এটি বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসার কথা।’
রানু বলেন, ‘এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ১/১১’র সরকার উনাকে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) গ্রেপ্তার করে গরম ডিম ঢুকিয়ে উনাকে নির্যাতন করেছিল। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই- যারা আপনাকে গরম ডিম ঢুকিয়ে নির্যাতন করলো তাদের বিচার না করে আপনি কেন বিএনপির নিরীহ নেতাদের নির্যাতন করছেন।’
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাংকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) যদি সরকারি চাকরি করতেন, তাহলে কী করে আপনি ৪০০ কোটি টাকার মালিক হলেন? বাংলাদেশের মানুষ এটি জানতে চায়। রানু বলেন, ‘প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে যতগুলো চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তিগুলো এই সংসদে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু বন্ধুত্ব মানে এই নয় যে, সবকিছু দিয়ে দিতে হবে। এটি বন্ধুত্ব নয়, এটি দাসত।’
তিনি বলেন, ‘সাভারের রানা প্লাজা বর্তমান সরকারের দুর্নীতির এক মর্মাšিত্মক নজির। আমরা দেখলাম- প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন- রানা যুবলীগের কেউ নয়। অথচ পরদিন পত্রিকায় সরকারি দলের এক এমপির সঙ্গে রানা রোমান্টিক ছবি প্রকাশ করা হলো। এই ছবি দেখে প্রধানমন্ত্রী লজ্জা পেয়েছেন কিনা জানি না, কিন্তু দেশের মানুষ লজ্জা পেয়েছে। রানু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিয়ামত পর্যšত্ম ক্ষমতায় থাকবে না। ইতিহাস সাক্ষী, অতীতে রক্ষী বাহিনী যেমন আপনাদের নেতাকে রক্ষা করতে পারে নি। তেমনি বর্তমান পুলিশও আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।’
তিনি বলেন,‘ গত ৫ মে শাপলা চত্বরে যা ঘটেছে, তা দেশের মানুষ জানে। আমি এখানে একটি ছবি নিয়ে এসেছি। এই ছবির পুলিশ নিরস্ত্র মুসলমানদের হত্যা করেছে। এই পুলিশ কী পুলিশ নাকি ছাত্রলীগের ক্যাডার? এই পুলিশ কী বাংলাদেশের পুলিশ নাকি ভারত থেকে এসেছে তা জানতে চাই। রানু বলেন, ‘সরকার এখন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চক্রাšত্ম করছে। এটা বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক শয়তানি। তিনি বলেন,‘যারা নিরস্ত্র-ঘুমšত্ম হেফাজত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, যারা বিডিআর’র ৫৭ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, যারা শেয়ার বাজারের টাকা লুট করেছে, যারা হলমার্কের মাধ্যমে সোনালি ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, এই সকল লুটেরাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই, হবে, হতেই হবে।