November 5, 2025
ঢাকা: বড় কলেবরের কয়েকটি দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপের কারণে গতবছর আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও চলতি বছরে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের অনেক তদন্ত কার্যক্রম এখন ফাইলবন্দি হয়ে টেবিলে পড়ে আছে। ভাটা পড়েছে অনুসন্ধানেও।
প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ পর্যায়ের এক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক কারণে কিছু অনুসন্ধান ও মামলা পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম থেমে আছে। এসব অনুসন্ধান ও তদন্ত কবে আলোর মুখ দেখবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারাও তা জানেন না।
তবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ মানতে নারাজ দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপে কাজ করছে না। কেউ হস্তক্ষেপ করছেও না।’’
দুদকের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, ‘‘কারো প্রতি রাগ-অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে দুদক কাজ করে না। দুদক চলে তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায়। নিজস্ব ধারায়। আইনুনাগ পন্থায়।’’
দুদকের কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত কাজ থেমে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
দুদকের কয়েকটি তদন্ত কার্যক্রম অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত অনেক বিষয়ের কার্যক্রমই কার্যত থেমে আছে। পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলায় দুদকের তদন্ত কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে। মামলা পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্ধারিত সময়সীমা দু’মাস পেরিয়ে গেলেও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি তদন্ত দল।
দুদক সূত্র জানায়, মামলাটির বাদী ও তদারকি কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদকে বদলি করা হয়েছে প্রধান কার্যালয় থেকে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে। তদন্ত চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের তদন্ত কর্মকর্তার বদলি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে পদ্মাসেতু দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম আগের মতো উদ্যম না থাকায় অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়েছে।
শুধু পদ্মা দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম নয়; অন্যান্য দুর্নীতির তদন্তও ফাইলবন্দি হয়ে আছে।
হলমার্ক, ডেসটিনির তদন্ত, অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরও বিটিসিএলের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা না করা, এনবিআর, রাজউক, স্বাস্থ্যখাত, ডিসিসির দুর্নীতির তদন্ত, এলজিইডির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জান্নাত আরা হেনরির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান, রাজউকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির তদন্ত, ট্রুথ কমিশনের আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে প্রায় অচলাবস্থা চলছে।
অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ হাঁকডাক দিয়ে শুরুর পর সেগুলো কেন হিমাগারে পড়ে গেল তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি তদারকি কর্মকর্তারা।
পুরনো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির ঘটনার অনুসন্ধান ও তদন্ত মাঝপথে এসে থমকে আছে। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলার সুপারিশ ঝুলে আছে এক বছর ধরে। একইভাবে জাতীয় হ্রদরোগ ইনস্টিটিউটের শত শত কোটি টাকা লোপাট, ঢাকা মেডিকেলে কেনাকাটার নামে কয়েক শত কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্ত ধীরগতিতে চলছে।
চলতি বছরে মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে দুদক।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতির প্রসার ঘটছে লাগামহীনভাবে। দুদক চেয়ারম্যানই একাধিকবার বলেছেন, ‘‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও প্রতিদিন ঘুষ, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, লুটপাট, প্রতারণা, জালিয়াতি চলছেই।’’
দেশব্যাপী দুর্নীতির মাত্রা বাড়লেও দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান কেবল নামেমাত্র। মাঠ পর্যায়ে দুদকের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমও দেখা যাচ্ছে না।