September 16, 2025
ঢাকা: শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতিতে শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের অভ্যন্তরে শিল্প স্থাপনে ব্যয় কমবে। নতুন শিল্প স্থাপনে ‘প্রণোদনার’ পদেক্ষেপ থাকছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নে উৎসাহিত করতে ‘মূলধনী যন্ত্রপাতি’র শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব থাকছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটিয়ে অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আমদানি করা ৭০৬টি মূলধনী যন্ত্রপাতির শুল্কহার কমানোর ঘোষণা থাকছে আসন্ন ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে। বর্তমানে শিল্পে ব্যবহৃত আমদানি পর্যায়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের শুল্কহার শতকরা ৩ ভাগ। আগামী বাজেটে ওই সব পণ্যের আমদানি শুল্কহার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
সূত্র জানায়, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতিতে শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের অভ্যন্তরে শিল্প স্থাপনে ব্যয় কমবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে এ খাতের। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন নতুন শিল্প স্থাপনে। বাড়বে বিনিয়োগ। সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।
এনবি আর সূত্রে জানা গেছে, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নতুন বাজেটে সর্বোচ্চ শুল্কহার (২৫ শতাংশ) অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক বা রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে অন্যান্য শুল্ক স্তরও আগের মতো বহাল থাকছে। শুধু শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রাংশের শুল্কহারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পে ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামালের ‘সম্পূরক শুল্কহার’ কমানোর প্রস্তাব থাকছে।
দেশে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক কমে গেছে। এর আমদানি চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অন্তত ৫০ ভাগ কমে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ অন্যান্য অবকাঠামো সমস্যার কারণে এসব পণ্যের আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগ স্থবির হওয়ার এটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কহার ৩ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করেছে।
সূত্র জানায়, যে কোনো শিল্প স্থাপনে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ অপরিহার্য। এসব পণ্যের বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের জন্য এটা প্রাথমিক বিনিয়োগ। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই মূলধনের স্বল্পতা থাকে। তাই প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে শিল্প স্থাপনে খরচ কমাতে আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতির শুল্কহার কমাতে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, অধিক কর্মসংস্থান ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। তার মতে, মূলধনী যন্ত্রাংশে ব্যয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ। তাই এসব পণ্যের শুল্কহার কমালে শিল্প স্থাপনে ব্যয় কমবে। এতে নতুন শিল্প স্থাপনে দেশীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।
শুল্কহার হ্রাস করার পদেক্ষেপ এক ধরনের প্রণোদনা দেওয়া- এ মন্তব্য করে সাবেক এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এতে সরকারের রাজস্ব আহরণে কিছুটা ক্ষতি হবে। কিন্তু এই ক্ষতি বিবেচনা করেই শুল্ক ছাড় দিতে হবে উদ্যোক্তাদের। কারণ, এর সঙ্গে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান জড়িত। তবে এটা ঠিক, অবকাঠামো উন্নয়ন না করলে, ব্যাংক ঋণের সুদহার না কমালে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে কোনো সুবিধাই কাজে আসবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান বলেন, দেশের স্বার্থে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন শিল্প খাতে শুল্ক ছাড় দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় এ সুবিধা দেওয়া হলে একদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে; পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিল্প বেশি দিন বাঁচবে না। কাজেই এ বিষয়ে এনবি আরকে পরীক্ষা করে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।