December 13, 2025
মেজর জেনারেল (অব,) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ৪ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্ভুক্ত এবং হালদা নদীর তীরে অবস্থিত ‘উত্তর বুড়িশ্চর’ গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম।
দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বা সংক্ষেপে সেকেন্ড বেঙ্গল-এর সঙ্গে এবং ৩ নম্বর সেক্টরের ভৌগলিক এলাকায় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পূর্ণ ৯ মাস অংশগ্রহণ করেন। সফিউল্লাহ ‘এস ফোর্স’ নামের ব্রিগেড সমতুল্য সংগঠনের কমান্ডার হন। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট যুদ্ধকালে সাহসিকতাপূর্ণ কর্ম ও নেতৃত্বের জন্য তিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনি কোম্পানি কমান্ডার, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, ব্রিগেড কমান্ডার এবং ডিভিশন কমান্ডার তথা ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বা জিওসি-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজন জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) দেশের চলমান রাজনীতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ, হেফাজতে ইসলাম, মতিঝিলের কথিত অভিযান নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন পরিবর্তন ডটকমের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন? নতুন শক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এ রকম কোনো শক্তির কি আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গতকাল বিকেল (২ সেপ্টেম্বর) থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মোড় নিয়েছে। অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে দেশ। অসমঝোতার পক্ষে চলে গেছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির কথা সবাই মুখে বলাবলি করছিলো। সেই ইঙ্গিতটাই এখন প্রকটভাবে বাস্তবরূপে দেখা দিয়েছে। যদি বলেন কেনো? যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তবে সেটা আমি বলতে পারি। আর অন্য কোন শক্তির যে ব্যাপারটি বলছেন সে সম্পর্কে আমি বলবো সেই শক্তি কি রাজনৈতিক বা রাজপথের শক্তি হবে, সেই শক্তি কি কূটনৈতিক শক্তি হবে, সেই শক্তি কি আন্তর্জাতিক শক্তি হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমার পক্ষে শতভাগ সঠিক উত্তর দেওয়া মুশকিল। যে কারো পক্ষেই দেওয়া মুশকিল।
কারণটা হলো- এটি আমি একটি উপমা দিয়ে বলতে চাই। আপনারা উত্তরে আমার উপমাটি তুলে ধরবেন। যে কোনো সমস্যার একটি নির্যাস থাকে। ইংরেজিতে এটিকে বলে cracks of the problem, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল হয়েছিলো। সেই পদ্ধতি মোতাবেক সদ্য সাবেক হওয়া প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন। মানুষ রচিত যে কোনো আইনেই ভুল থাকা স্বাভাবিক। মানুষ ভুলভ্রান্তির উর্ধ্বের কোনো যন্ত্র নয়। এটা আমরা মেনে নিয়েই দুনিয়াতে বাস করছি, করতে হবে। ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে অক্টোবরের কথা যদি ধরি, সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার কথা। কিন্তু বিচারপতি কেএম হাসানকে আওয়ামী লীগ মানতে রাজি হলো না। অভিযোগ আওয়ামী লীগ দিলো- ওনার গায়ে বিএনপির গন্ধ আছে। আপনি তরুণ হলেও এইটুকু অন্তত মনে আছে যে, এই অভিযোগটাই একমাত্র অভিযোগ ছিলো। আর কী রকম সেই গন্ধ? তারা বলল যে, ২৫-৩০ বছর আগে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরের সম্পাদক ছিলেন। অথচ ২৫-৩০ বছর পরে সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে গেছেন। অ্যাডভোকেট হয়েছেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হয়েছেন। অতপর আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়েছেন। উনার কাপড়-চোপড় কতোবার লন্ড্রিতে গিয়েছে। উনি কতোবার গোসল করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতে উনার গায়ে থেকে বিএনপির ‘গন্ধ’ নাকি যায়নি।
সেই গন্ধের কারণে তারা উনাকে মানতে রাজি হল না। এখন দেশবাসির সামনে আপনাদের অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে আমার আবেদন, এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন- আমার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন। আমার গায়ে কোনো গন্ধ নেই। আমি লীগের প্রধান।
আমার গায়ে কোন গন্ধ নাই। কারণ আমি লীগের উৎস। সকল গন্ধের উৎসই আমি। আমার গায়ের গন্ধকে সুঘ্রাণ বলতে হবে। এটি কি বাংলাদেশে প্রযোজ্য? সমগ্র বিশ্ববাসীকে আমি এর বিচার করার ভার ছেড়ে দিচ্ছি মিডিয়ার মাধ্যমে। তারপরেও আমি বলবো। মাননীয় দেশনেত্রী, জোট ১৮ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মিটিং করে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেটি কোনদিকে যায় তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। যেহেতু আমরা শান্তি কামনা করি। তবে এই প্রতিক্রিয়া একান্তই ব্যক্তিগত মূল্যায়ন।
স্বাধীনতার এতো বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে কথা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেই দাবি করা হয় তারাই স্বাধীনতার পক্ষের একমাত্র শক্তি। এভাবে দুই পক্ষে তুমুল বিতর্ক-বিতণ্ডা চলছে আজো। বিতর্কের কি কোনো অবসান নেই? এ বিষয়ে কিছু বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : আমি নিজে কিছু বলার আগে আপনাকে দিয়েই শুরু করি। আপনি হচ্ছেন যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ। আপনার জন্ম বাংলাদেশ জন্মের ২০ বছর পর। আপনাকে এখন স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের বলা কতোটুকু যুক্তিসঙ্গত! নিজেই উত্তর দেবেন। আপনি কী আজকে বলবেন, বাংলাদেশের বিপক্ষের লোক? নাকি বলবেন পক্ষের লোক? আপনার জন্মলগ্নে মায়ের পেট থেকে বের হয়ে আপনি জানেন আপনি বাংলাদেশি। আপনি বাঙালি। আপনি মুসলমান। আমি বলবো এটি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অত্যন্ত একটি অকাম্য গর্হিত কাজ। দেশ জাতিকে এবং বিভক্ত করার কাজ। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ স্বাধীন থাকুক এমন কামনা যাদের মধ্যে নেই তারা ১৯৪৭ সালের বাংলাদেশকে- পূর্ব পাকিস্তানকে বাঙালী জাতি স্বাধীন হোক এটা মেনে নিতে পারে নাই। তারাই অখণ্ড ভারতকে এখন পর্যন্ত মনে প্রাণে কামনা করে বলেই এই ধরণের একটি বক্তব্য দেয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। আমার জীবনটা বাজি রেখেছিলাম। মুখের ফুলঝুড়ি দিয়ে যুদ্ধ করি নাই। আমার মতো লক্ষ লক্ষ যুবক অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলো। সেই সময় আনুমানিক ২ থেকে তিন ভাগ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। আমরা যদি তাদেরকে তখন পেতাম- হত্যা করতাম। আর তারা যদি আমাদের পেতো-হত্যা করতো। এটাই নিরেট বাস্তবতা। এর মধ্যে এক ফোটা সন্দেহের কোনো কারণ নাই। কিন্তু আজ ২০১৩ সালে তাদের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার। আমাদের সংখ্যা এক থেকে দেড় লাখ। বাকি সমগ্র বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হয়েছে- ওই খোড়া অজুহাতে; আমি এটা কোনোমতেই কামনা করি না।
আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ‘স্বপক্ষের শক্তি’ দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলো। আপনার দৃষ্টিতে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার ব্যাপারে কিছু বলুন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : একটি সরকার যেমন অনেক ভালো কাজ করে তেমনি অনেক মন্দ কাজও করে। আওয়ামী লীগ সরকারও এর উর্দ্ধে নয়। কিন্তু আজ তাদের প্রচার প্রচারণায় সর্বকিছুতেই ভালো কাজ গুলোর কথাই বলতে চেষ্টা করে, মন্দগুলো এড়িয়ে যায়। এমন কি গতকাল (২ সেপ্টেম্বর রাত ১০.৩০ মিনিটি) টিভিতে আলোচনায় ছিলাম। একজন সম্মানিত আওয়ামী লীগের এমপি সাহেব আমার সাথে আলোচক ছিলেন। আমি শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারির কথা তুলতেই তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন এবং বললেন জনগণ ওগুলো জুয়া খেলেছে, জুয়ায় তারা হেরে গেছে। এতে সরকারের কী করার আছে? আমি বলেছি- ঠিক আছে আপনি যেহেতু জনগণকে জুয়াড়ি বলেছেন, তারা জুয়া খেলেছে, আওয়ামী লীগের কি সেখানে কোনো কিছু করার নাই? দেশতো তারা পরিচালনা করছে। তবে হলফ করে বলতে পারি, নির্বাচনে তার উত্তর তারা পাবেন। আমার বক্তব্য এটাই, সরকার যদি নিজেদের ভুলগুলো মানতে চেষ্টা না করে, তাহলে তার উত্তর জনগণ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবে। এই সরকারের অনেকগুলো বড় বড় ভুল হয়েছে। সরকারের যোগ সাজশে অনেক অনেক বড় দূর্নীতি হয়েছে। সরকার ভারতকে অনেক বেশি ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে আজ পর্যন্ত কিছুই আনতে পারে নাই। এতে বাংলাদেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভারতের প্রতি যারপর নাই কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার দেশের জন্য কিছু যদি আমি আনতে না পরি, তাহলে সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বাতুলতা।
হেফাজতে ইসলাম নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। হেফাজত দাবি করছে, তাদের কর্মসূচীতে প্রায় দুই হাজারের উপর লোক মারা গেছেন। আর সরকার বলছে যে, দশ-বারো জন মারা গেছেন। কখনো বলা হচ্ছে সেখানে গুলিই চালানো হয়নি। কখনো বলা হচ্ছে, একজনও মারা যায়নি। এ ব্যাপারটা নিয়ে সরকার কার্যকর কোনো তদন্তও করল না। আসলে আমরা দ্বন্দের মধ্যে আছি…।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যার ফলে তাদের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : দেশবাসীর সামনে আপনাদের পাঠকপ্রিয় অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে রেকর্ড করে রেখে বলতে চাই, আমার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারি থানায়। কেউ যেনো ভুল না বুঝেন। আমার জন্ম হাটহাজারিতে। হেফাজতের জন্মের ষাট বছর আগে আমার জন্ম। তা না হলে আবার বর্তমান সরকারের আমলে একটা আতঙ্ক থেকে যাবে যে, আমি বুঝি হেফাজত কানেকশনেই বড় হয়েছি। দাঁড়ি এবং টুপি থাকলেই এরা কাউকে না কাউকে রাজাকার বানিয়ে দেয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকিকে রাজাকার বানাতে এই সরকারের মন্ত্রীদের কোনো সংশয়-সন্দেহ জাগে না। এটা বলার পেছনের কারণ হেফাজত ইসলামির কর্মীরা যখন মতিঝিলে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত, নামাজে ব্যস্ত ছিলো, কেউ ঘুমাচ্ছিলো তখন তাদের উপর গরম পানি ঢালা হয়েছে। তাদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে। তাদের উপরে গুলি বর্ষণ করেছে। সেটা রাবার গুলি হোক বা মারণাত্মক গুলি হোক। মানুষ মারা গেছে এটাই সত্য। কতো জন মারা গেছে? আমি যেহেতু নিজের চোখে দেখি নাই, সেজন্য বলতে পরছি না। হেফাজতের নেতাদের সাথে কথা বলে একটা আনুমানিক ফিগার আমি পেয়েছি। আগামী নির্বাচনের সময় যখনই এই সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিবে। তখন হেফাজতে ইসলাম তাদের স্বপক্ষের তথ্যগুলো নিয়ে আসবে। আর সংখ্যাটা এগারো-বারো না, এতোটুকু আপনাকে বললাম। সংখ্যাটা রিজনেবল এবং আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এই জন্য বলছি যে, প্রচুর সংখ্যক লোক গায়েবি অবস্থায় আছে, এখনো তারা যদি আসলেই লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে থাকে, তাহলে মারা যায় নাই। আর যদি চূড়ান্তভাবে দুনিয়া থেকে লুকিয়ে থাকে, তাহলে নিহত হয়েছে। নিহত হলে কারণটা একমাত্র পুলিশি অ্যাকশন।
হেফাজতে সমাবেশে যদি বিপুল সংখ্যক মানুষ মারাই যায় তাহলে তাদের আত্মীয় স্বজনরা গেলো কোথায়? তারা তো কোনো অভিযোগ বা দাবি দাওয়া করছে না?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : বাংলাদেশের লোকজনের দু তিনটি অভ্যাস আছে। আমি আপনাকে একটা কথাই বলবো, পুলিশের ফ্যামিলিকে ঘরে ধরে মেরে ফেলতেছে। কোনো বিচার পাচ্ছে না তারা। দুজন পুলিশ তো আমাদের সামনেই মারা গেলো, কে কার জন্য মায়া কান্না করে? আর গ্রামের ফ্যামিলি একটা হুজুর, আমি গিয়েছি তাদের একজনের বাড়িতে কবর জিয়ারত করতে। তারা বলে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখছি। আল্লাহ দেখবে। কার কাছে কে কার বিচারের জন্য দৌঁড়াবে। অধিকার সম্মাদককে ধরে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমার দেশের সম্পাদককে মেরে দাঁত ভাঙা হচ্ছে, নখ তুলে ফেলা হচ্ছে। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা এ পৃথিবীতে আছে, এইটা নিয়ে হইচই করবেন?
বিগত কয়েক বছরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বিরোধী দল হিসেবে কি মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে? কঠোর আন্দোলন করার মতো অনেক ইস্যু এসেছে, বিরোধীদল কী সেগুলোতে আন্দোলন করে সফল করতে পেরেছে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: এই মুহুর্তে বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট যে কৌশল নিয়েছে আমি মনে করি তা অত্যন্ত সময় উপযোগী। অর্থাৎ বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের সামনে একটি যুগসন্ধিক্ষণ। হরতাল দিলে তার অবশ্যম্ভাবী কম্পেনিয়ন বা সঙ্গী হচ্ছে জ্বালাও পোড়াও। সময় বদলে গেছে, মহাত্মা গান্ধীর হরতাল আর এখন নাই। সত্তর বছর আগেকার ধর্মঘট, সত্যাগ্রহ, শান্তিপূর্ণ অবস্থান এখন নাই। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের সময় এখন আর নাই। সুতরাং আপনি এখন হরতাল দিলে জ্বালাও পোড়াও হবে, গাড়ি পোড়ানো হবে, মানুষ মারা যাবে। পুলিশ মানুষের গলা টিপে ধরবে। মানুষ পুলিশের গলা টিপে ধরবে। তখন আপনি বলবেন, এ হরতাল আমরা চাই না। তাহলে আপনারা কোন হরতাল চান? এর থেকে বেঁচে থাকার, এই আক্রমণাত্মক পরিবেশ থেকে বেঁচে থাকার একটাই রাস্তা- শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটা হলো, আবেদনের পর আবেদন করে জনমত সৃষ্টি। ১৮ দল এই রাস্তাই বেছে নিয়েছে এবং এর মাধ্যমেই দেখা যাচ্ছে অন্তত পক্ষে রমজানের ঈদের পর থেকে মানুষের জনমত প্রবলভাবে তাদের দিকে ছুটে আসছে। ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া যে জনসংযোগে নামছেন, তার পূর্বে ১৮ দলীয় নেতৃবৃন্দ যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই প্রচুর জনসমর্থন পাচ্ছেন। আমি তো চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন জায়গায় যাই, খাগড়াছড়ি জেলায় যাই। আমার থানায় যাই। সেখানে মানুষ চাচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে জনমত সংগ্রহ করা হোক। আর আপনি একটি কথা বলেছেন- ১৮ দল সফল হয় নাই। কথাটা ঠিক না। সফল না হলে পাঁচটা সিটি কর্পোরেশনে এরকম একতরফাভাবে জয়ী হতো না। জনগণ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করছে না, তার সঙ্গে আবার ১৮ দলকে পছন্দ করছে। এভাবেই দুই দুই যোগে চার হয়। শুধু অপছন্দের কারণেও না, শুধু পছন্দের কারণেও না।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম : যাদের বয়স ৫৫ বা এর বেশি এবং যারা শাহবাগ আন্দোলনের সাথে জড়িত তাদের নিকট প্রশ্ন, আগামীতে ১৮ দল ক্ষমতায় এলে এটা অফিসিয়ালি জিজ্ঞেস করবো, ১৯৭১ সালে আপনারা কে কোথায় ছিলেন? চানপুরে ছিলেন, নকলায় ছিলেন, হালুয়াঘাটে ছিলেন, কিশোরগঞ্জে ছিলেন, জীবন নগরে ছিলেন, কারো পেট ব্যথা ছিলো, কেউ বোনের বিয়ে খেতে গিয়েছিলো, কারো মাথা ব্যথা ছিলো, কারো হাঁটু ভাঙা ছিলো, মুক্তিযুদ্ধে কেন যান নাই? এখন আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বড় বড় নেতা হয়ে গেছেন। এই সমস্ত চাপাবাজি ধমকা-ধমকি বন্ধ করতে হবে। আমাদের আমলে আমরা যা করার করেছি। বঙ্গবীর যা করেছেন। আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠি তা করতে পারে নাই। বঙ্গবীরকে যারা অপমান করবে, তাদেরকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। সময়ের অপেক্ষায় আছি। সাক্ষাতকর – পরিবর্তন.কম থেকে সংগৃহীত