November 6, 2025
নারায়ণগঞ্জ: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়, শিমরাইলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পুলিশ ও তিন বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় প্রায় অর্ধশত গুলিবিদ্ধ, সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
কাঁচপুর পুলিশ ফাঁড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ অফিস, চ্যানেল আইয়ের গাড়ি, পুলিশের বেশ কয়েকটি পিকআপ, মোটরসাইকেল, ও কয়েকটি পরিবহণে অগ্নিসংযোগ করে হেফাজতের লোকজন।
সংঘর্ষ সাইনবোর্ড হতে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক হাজার রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
নিহতরা হলেন- বিজিবির সদস্য শাহ আলম ও লাভলু, আমর্ড পুলিশের নায়েক ফিরোজ এবং কনসটেবল জাকারিয়াকে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথা থেতলে হত্যা করা হয়।
নিহত অন্যরা হলেন-সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লার আলী আহম্মেদের ছেলে জসিমউদ্দিন(৩২), ইদ্রিস আলীর ছেলে হান্নান (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের সুগন্ধা হাসপাতালে মারা যায়, একই হাসপাতালে মুসলিম (৩০) নামে আরো একজন মারা যায়। এছাড়া মাদানী নগরেরর আবদুল খালেকের ছেলে পলাশ (২৫), নিমাইকাশারী এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে সুতা ব্যবসায়ী নাজির আহম্মেদ (৩০), নিমাইকাশারী এলাকার কায়কোবাদ এর ছেলে দনিয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওসমান গনি বাঁধন (১৮), ডেমরার দক্ষিণ বক্সনগরেরর বাচ্চু বাবুর্চির ছেলে গার্মেন্টকর্মী রুবেল (২৫), একই এলাকার ভ্যান চালক সাদেক (৩২), সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব নিমাইকাশারীর আবু মুন্সীর ছেলে রিকশা চালক হাবিবুল্লাহ (৩৪), পূর্ববাগমারা এনামুল হকের ছেলে (এসএসসি ফল প্রার্থী) মাজহারুল ইসলাম সৌরভ (১৬), পাইনাদি নতুন মহল্লার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের সমবায় মার্কেটের ফাহিম ফ্যাশনের কর্মচারী সাইফুল (৩৬), শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার উপসি গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে বাবু গাজী (৩৬), সিদ্ধিরগঞ্জের রসুলবাগের আলী আকবর স্কুলের শিক্ষক নাজমুলের ছোট ভাই (এসএসসি ফল প্রার্থী) খালেদ (১৬), ডেমরার ধলেশ্বরের মোকাররম মিয়ার ছেলে সাইদুল (২৮), জুয়েল (২৫), চাঁদপুরের তাহের ক্বারীর ছেলে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারীর বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আবদুল গফুর (৩৫) এবং কভার্ড ভ্যানের হেলপার মিজানুর রহমান (২০)।
আহতদের স্থানীয় কিনিক ও নগরের খানপুর ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়ায় হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা সোমবার ভোররাতে যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়, শিমরাইল, কাঁচপুর এলাকার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। পরে সকাল পাঁচটার দিকে হেফাজতের কর্মীরা মাদ্রাসার ভেতরে সংগঠিত হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় হেফাজতের কর্মীরা মাদ্রাসার মাইকে ঘোষণা দিয়ে অন্যান্য মাদ্রাসা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালে হেফাজতের কর্মীরা সংগঠিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। ভোর পাঁচটায় প্রথমে কাঁচপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এবং সাতটায় শিমরাইল পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। এ সময় বিজিবি একটি গাড়ি পুলিশের দুটি ভ্যান ও একটি তেলবাহী ট্যাংক লরিতে অগ্নিসংযোগ করে হেফাজতের কর্মীরা।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে হেফাজত ইসলামের কর্মীরা ঢাকা-চট্রগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কয়েক পয়েন্টে অবরোধ সৃষ্টি করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কয়েক শ’ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছোড়ে।
সংঘর্ষের সময় বিজিবি সদস্য সুবেদার শাজাহান, পুলিশের নায়েক ফিরোজ, কনস্টেবল জাকারিয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং গাড়ি চালক বাবু গাজী, গার্মেন্টস কর্মী জুয়েল,সাইফুল ইসলাম মাসুম, হান্নান ও পরিবহণকর্মী জসিম উদ্দিন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যায়