পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

সন্ত্রাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গুয়ানতানামো নির্যাতন

Posted on December 19, 2014 | in নির্বাচিত কলাম | by

image_15049_0বদরুদ্দীন উমর: বর্তমান দুনিয়ায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকারী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যে কত বড় সন্ত্রাসী তার পরিচয় এখন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন সিক্রেট ইনটেলিজেন্স কমিটি গুয়ানতানামো সামরিক কারাগারে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কর্তৃক আটক রাজনৈতিক লোকদের ওপর বছরের পর বছর ধরে যে নির্যাতন করে এসেছে, তার ওপর কয়েক দিন আগে এক ভয়াবহ রিপোর্ট প্রদান করেছে। দুনিয়াজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেশে দেশে যেভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে সচেতন লোকদের পরিচয় থাকলেও তাদের কারাগারে আটক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর যে নিষ্ঠুর নির্যাতন তারা করে থাকে, তার ওপর তাদের নিজেদের এই রিপোর্ট থেকেই বোঝা যায়, তারা একটি ফ্যাসিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে সারাবিশ্বের জনগণের কত বিপজ্জনক শত্রু। কিন্তু শুধু গুয়ানতানামো সামরিক কারাগারেই নয়, ইরাক দখল করার পর সেখানে তাদের সামরিক কারাগারে বন্দিদের ওপর যে নির্যাতন করেছিল তার অনেক রিপোর্টও তখন প্রকাশিত হয়েছিল। দুনিয়াজুড়ে তারা বিভিন্ন স্বাধীন দেশের জনগণের ওপর যেভাবে সরাসরি সামরিক হামলা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে, তার থেকে গুয়ানতানামো এবং ইরাকে তাদের সামরিক কারাগারে আটক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনকে আলাদাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। নারীর স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে তাদের উচ্চকণ্ঠ প্রচার সত্ত্বেও তারা যে কত বড় মারাত্মক সন্ত্রাসী এবং শান্তি, স্বাধীনতা ও মানবিকতার শত্রু, এই সত্য এখন তাদের নিজেদের উপরোক্ত রিপোর্টের মাধ্যমেই নতুন করে প্রমাণিত হলো।

৫০০ পৃষ্ঠার উপরোক্ত রিপোর্টে নির্যাতনের যে বিস্তারিত বিবরণ আছে, তা এখানে দেওয়া সম্ভব নয়, তার প্রয়োজনও নেই। তবে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন মলদ্বারে এক ধরনের বিষাক্ত যন্ত্রণাদায়ক তরল পদার্থ ঢুকিয়ে দেওয়া, ভাঙা পায়ের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা, সপ্তাহে ১৮০ ঘণ্টা ঘুমুতে না দেওয়া, চোখ কানা করে দেওয়া, কোনো জিজ্ঞাসাবাদের আগেই নির্যাতন শুরু করা, পানি নির্যাতন করা ইত্যাদি। পানি নির্যাতন একমাত্র চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে ব্যবহারের কথা শোনা যায়নি। প্রাচীন ও মধ্য যুগে চীনারা মাথার চাঁদির চুল কামিয়ে দাঁড় করিয়ে বেঁধে রেখে ওপর থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি চাঁদিতে ফেলত। এর ফলে সমস্ত নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে চরম যন্ত্রণার ব্যাপার ঘটত। এটা গুয়ানতানামোতে নিয়মিত করা হতো। এখানে বলা দরকার যে, সেখানে আটক ১১৯ জনের মধ্যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ বিন্দুমাত্র প্রমাণ করা যায়নি।
সিনেট কমিটির এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকা ও অন্যত্র যথেষ্ট চাঞ্চল্য সৃষ্টি এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে উঠিয়ে দেওয়ার কথাও হয় কোনো কোনো মার্কিন মহলে। কিন্তু সে রকম কোনো চিন্তা মার্কিন সরকারের নেই। উপরন্তু এই গোয়েন্দা সংস্থাকে অটুট রাখার কথাই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়ে গুয়ানতানামোর সামরিক কারাগারে সিআইএর এই বিশেষ নির্যাতন শুরু হওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত নির্যাতনের ফলে মার্কিন সরকারের ‘নৈতিক ভাবমূর্তি’ ক্ষুণœ হওয়ার কথা স্বীকার করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সিআইএকে মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে বহাল রাখার সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরাপত্তা স্বার্থ’ দ্বারা আসলে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থই বোঝায়। এই স্বার্থে এমন কোনো মানবতাবিরোধী কাজ নেই, যা তারা করে না।
কয়েক দিন আগে মার্কিন সিনেট একটি প্রতিরক্ষা বিল পাস করে তাদের বাজেটে সামরিক খাতে ব্যয় বিপুলভাবে বৃদ্ধি করেছে। এই বাজেটে পেন্টাগনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৯৬ বিলিয়ন ডলার! এছাড়া আরও ৬৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে মার্কিন সরকারের বৈদেশিক যুদ্ধ ব্যয়ের খাতে। ‘বৈদেশিক যুদ্ধ ব্যয়’কে একটি মাত্র হিসেবে এভাবে পৃথক্করণের থেকেই বোঝা যায়, যুদ্ধ তাদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে কতখানি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত! এই যুদ্ধ তারা দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রেখেছে এবং এই মুহূর্তে চালাচ্ছে ইরাক ও সিরিয়ায়। ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ নামে কথিত যে মারাত্মক সন্ত্রাসী শক্তির আবির্ভাব সম্প্রতি হয়েছে, তাকে বিশেষভাবে সামনে রেখেই এই ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন কথা তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এখানে বলা দরকার যে, এই ইসলামী রাষ্ট্রটির আসল জন্মদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেই। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের তাঁবেদার সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইত্যাদি দেশের মাধ্যমে তাদেরকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করা সম্পর্কে নানা রিপোর্ট আগেই প্রকাশ হয়েছে। এভাবে তাদেরকে শক্তিশালী করে আবার তাদের বিরুদ্ধেই মার্কিন সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধজোট গঠন করে মার্কিন, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান ইত্যাদি একত্রে সামরিক অভিযান শুরু করেছে! ইতিমধ্যেই এই জোট ইসলামিক স্টেট অধিকৃত ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ৬০০ বিমান হামলা চালিয়েছে! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের চক্রান্তমূলক ভেলকিবাজি কোনো নতুন ব্যাপার নয়।
চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যেভাবে সহজে সে দেশটি দখল করে তার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে, সিরিয়ায় তা সম্ভব না হওয়ায় তারা এখনও পর্যন্ত সেখানে কোনো সরাসরি সামরিক হামলা করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু এখন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে সিরিয়ায় সরাসরি সামরিক হামলার চক্রান্ত তারা কার্যকর করতে নিযুক্ত হয়েছে। মার্কিন সরকারের এসব সামরিক চক্রান্ত ও হামলার জন্য সিআইএ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে অপরিহার্য। কাজেই গুয়ানতানামো সামরিক কারাগারে সিআইএ যতই অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাক, তাকে উঠিয়ে দেওয়ার কোনো চিন্তা মার্কিন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই এই গোয়েন্দা সংস্থা যতই মানবতাবিরোধী হোক, মানবতার ধ্বজাধারী মার্কিন সরকারের পক্ষে তাকে বহাল রাখা তাদের পররাষ্ট্রনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud