November 6, 2025
ষাট দশকের মরমি শিল্পী আবদুল লতিফের কণ্ঠে যখনই শুনতাম, ‘ওরে ও বাঙালি ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি’ শরীর নাড়া দিয়ে উঠত। বিষয়টি ছিল ভাষা আন্দোলন নিয়ে। একুশে ফেব্র“য়ারি পাকিস্তান সরকারের ভাষার প্রশ্নে বাঙালির বুকের রক্ত নেওয়া নিয়ে। এ ছাড়াও গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে শুনতাম ‘হায় হায় করে কাঁদছেরে ভাই সারা পাকিস্তানথ কোথায় গেলেন কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খান।’ সেটাও ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যার মর্মান্তিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের ধ্বংসলীলা, ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম হত্যা, কষ্টের পর কষ্ট হৃদয় ভেঙে খানখান হতো।
এমন নিদারুণ মর্মান্তিক ঘটনা বার বার ঘটেছে। গত ৫ মে শাপলা চত্বরে আবার এক নিদারুণ কারবালার অবতারণা হয়েছে। সরকার রাত-দিন বলে চলেছে, ওটা ছিল হেফাজতিদের তাণ্ডব, তারা হত্যা করেছে, তারা দোকান পুড়িয়েছে, তারা আগুন জ্বালিয়েছে। কিন্তু কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি, কোনো বিচার-আচার হয়নি, দণ্ড দেওয়া ছাড়া। বন্দুক সরকারের, গুলি সরকারের। গুলি চালিয়েছে সরকারি বাহিনী, কিন্তু হত্যা করেছে হেফাজতিরা। এটা কোন ধরনের যুক্তি। মন্ত্রী সাহেবরা নীরব থাকতেন, সরকার মুখ বন্ধ রাখত, বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত হতো, তাতে হেফাজতিরা দায়ী হলে সারা দেশ তাদের নিন্দা করত। ওই সব অপরাধের জন্য যে শাস্তি আছে তা হলে দেশবাসী মেনে নিত। কিন্তু কৌশলে একতরফা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপালে মানুষ মানবে কেন? বর্তমান সরকার মারাৎদক আস্থার সংকটে ভুগছে। সরকারের কথা কেন যেন কেউ বিশ্বাস করে না। সেই পর্বতের পাদদেশে দুষ্ট রাখাল বালকের মতো। ঘটনাটি ছিল এরকমথ দুষ্ট রাখাল বালক পর্বতের পাদদেশে পশু চরাত। মাঝে মাঝেই মানুষকে বোকা বানাতে বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে বলে চিৎকার জুড়ে দিত। গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটে গেলে খিলখিল করে হাসত। সবাইকে বোকা বানিয়েছে বলে মজা পেত। এভাবে পরপর তিন-চারবার গ্রামবাসীকে বোকা বানায়। তারপর সত্যিই যেদিন বাঘ আসে তার মরণ চিৎকারেও কেউ সাড়া দেয়নি। ওভাবেই জীবন যায়। বর্তমান সরকারেরও প্রায় তেমন হয়েছে। কেউ সরকারের কথা বিশ্বাস করে না।
তালেবান নেতা লাদেনকে যেমন আমেরিকা সৃষ্টি করেছিল রাশিয়াকে আফগানিস্তান থেকে সরাতে। আমাদের দেশেও সরকার অনেক খেলা খেলেছে। মাত্র কয়েক বছর আগে জামায়াতের সঙ্গে মিলেমিশে বিএনপি সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। তারও আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলনের নামে জামায়াতের সঙ্গে পথ চলেছে। এবার জামায়াতিরা যদি বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে আওয়ামী সঙ্গ নিত তাহলে তাদের নিয়ে আওয়ামীরা আজ যে ধরনের চেঁচামেচি করছে তার কিছুই করত না।
দুজন রাজনৈতিক রাজাকারকে বিএনপি মন্ত্রী বানানোয় আওয়ামী লীগ সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। তাদের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাভোগী পাকিস্তানি সিএসপি রাজাকারকে মন্ত্রী বানিয়ে গাড়িতে আমার রক্তের পতাকা তুলে তেমন কোনো সমালোচনার সম্মুখীন তাকে হতে হয়নি। কারণ বিএনপি এমন একটি দল যার রাজনৈতিক দৃঢ় ভিত্তি নেই। সুবিধার সংমিশ্রণে তারা দাঁড়িয়ে আছে। কোনো সুচিন্তিত গঠনমূলক পরিকল্পনা নেই। আর এটাও সত্য, বর্তমান সরকারের কার্যকলাপ মোকাবিলায় গঠনমূলক কোনো পদক্ষেপই তেমন কার্যকর হচ্ছে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে সভা-সমাবেশ করতে পারছে না। মিছিল-মিটিংয়ে পদে পদে বাধা, অতি সাধারণ ঠুনকো অভিযোগে সম্মানিত নেতাদের অসম্মানিত করা, জেলে ভরাথ এ যেন বর্তমান সরকারের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারণে বিষয়গুলো আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত ৫ মে হেফাজতে ইসলাম নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে। নানা উসকানির মুখেও সাংগঠনিকভাবে তারা অত্যন্ত শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে সারা দিনের বিশৃঙ্খলা, ধ্বংস বাদে অন্য দিকগুলোতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ওয়ান-ইলেভেনের আগেও বায়তুল মোকাররমের উত্তর এবং বিজয়নগরে লগি-বৈঠার যে ধ্বংসলীলা চলেছিল এবারও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এটা কারা করেছে, কীভাবে করেছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। তা না হলে পরবর্তীতে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যাবে। কেউ কেউ মনে করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু রাস্তাঘাটে সন্দেহের বিষবৃক্ষ বর্তমানেই সবচেয়ে বেশি গজিয়েছে। রক্তাক্ত শাপলা চত্বর তার ব্যতিক্রম নয়। কত জায়গায় কত কথা লোকজন বলছে, শাপলা চত্বরের রক্ত ধুতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটানো হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটাতে হবে কেন? আমাদের যেসব হেলিকপ্টারথ তাতে কয় বোতল পানি নিয়ে আকাশে উড়া যাবে? সেনাবাহিনীর যে হেলিকপ্টার আছে তাতেও পাঁচ-সাতশ কেজির বেশি বহন করা সম্ভব নয়। হেলিকপ্টারগুলোতে আমরা দু-চারবার এদিক-ওদিক যাতায়াত করেছি। প্রায় সব হেলিকপ্টারে ৭-৮ জনের বেশি বহন করার ক্ষমতা নেই। তাই হেলিকপ্টারে পানি ছিটাতে হবে কেন? কিন্তু তবুও লোকজন বলছে, প্রথম প্রথম একেবারে বিশ্বাসই করিনি, এখনো করি না। ভারতের ট্রেনিং দেওয়া লোক শাপলা চত্বরে হাঙ্গামা করেছে এমনকি কেউ কেউ বলছে, তার সামনে লোকজনকে জবেহ করেছে, কারও মাথা কেটে ফেলেছে। এসব কথা যে কত ভয়াবহ কেউ তলিয়ে দেখছে না। ভারতের লোকের আমাদের দেশে আসতে হবে কেন? অমন হলে আমাদের লোক ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হতে পারে। কিন্তু তাইবা বিশ্বাস করি কীভাবে। কিন্তু কথা বসে থাকে না। রাস্তাঘাটে পেট্রোল পাম্পে, দোকানে কোথাও গেলে এমন সব আজব কথা শুনতে হয়।
আমার কলিজার টুকরা কুশি মামণির চাপাচাপিতে সেদিন বাধ্য হয়ে দোকানে গিয়েছিলাম। তার কালার পেন্সিল বক্স কিনতে হবে। তার ফোরটি এইট আছে। কিন্তু কোনো বান্ধবীর ফিফটি ফাইভ দেখেছে। বাসায় এসে প্রথম মাকে বলেছে, ‘আম্মু, আমার বন্ধুরা ভাড়াবাড়িতে থাকে, তারা মধ্যবিত্ত, আমাদের নিজেদের বাড়িথ তাদের ফিফটি ফাইভ কালার পেন্সিল আছে, আমার নেই। আমার ফিফটি ফাইভ কালার পেন্সিল চাই।’ প্রথম আমি বুঝিনি। না বুঝেই বলেছিলাম, চিন্তা কর না কালই এনে দেব। কি কারণে যেন পরদিন এনে দিতে পারিনি। খুব মন খারাপ করেছিল। ঘুম থেকে উঠেই বলছিল, ‘তুমি ভালো না’। এখন মারাৎদক অসুবিধায় পড়েছি। দুনিয়ার কোনো কিছু না হলেও এখন আমার চলবে। কিন্তু কুশিমণি আমার সঙ্গে কথা না বললে চলে না। ওর খলবলে হাসি, শাসন-ত্রাসন জগৎসংসারের সব যাতনা থেকে আমাকে মুক্ত রাখে। তাই ওর প্রিয় দোকান অনুরাগে গিয়েছিলাম। প্রয়োজন ছিল কালার পেন্সিল বক্স। গিয়ে এটা-ওটা কিনে একাকার করে ফেলছিল। কিন্তু ফিফটি ফাইভ কালার বক্স পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর যে ফোরটি এইট আগে থেকেই ছিল আমার জানা ছিল না। আরেকটা ফোরটি এইট নিয়েই ফেরার কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো ও তো ফিফটি ফাইভের বায়না ধরেছে। ফোরটি এইট নিচ্ছি কেন? আবার তো ফিফটি ফাইভ চাবে। তাই আরেক দোকানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম অনুরাগে খুব বেশি দাম নেয়। যেখানে ফোরটি এইটই চাচ্ছিল ৬০০ কয়েক টাকা, সেদিন অন্য দোকান থেকে ফিফটি ফাইভ নিয়েছিলাম ৫৩০ টাকায়। সে যাক এসব বলা উদ্দেশ্য নয়, এই দুই দোকানের কোনোটায় ক্রেতারা বলছিল, ‘শাপলা চত্বরের দুই ট্রাক লাশ সীমান্তে ধরা পড়েছে। লাশ কোথায় নিচ্ছিলথ লুকিয়ে ফেলার জন্য ভারতে। আমি ভারতে বহু বছর থেকে এসেছি। ভারতের প্রতি এখনো আমার ভীষণ মায়া আছে। তাই না-হক কথা শুনলে আপনাআপনি প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করে। তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাংলাদেশের লাশ ভারতে লুকালে, ভারতে কোনো ঘটনা ঘটলে তা তারা লুকাতে পারে না কেন? পশ্চিমবঙ্গে তো কংগ্রেসবিরোধী সরকার। সেখানে লুকাবে কি করে? তারাও জবাব দিতে পারেননি। কিন্তু তাদের বিশ্বাস শাপলা চত্বরের লাশ ভারতে লুকাতে নেওয়া হচ্ছিল। এই অপ্রিয় সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে ভারতের এই পরিমাণ লাভ হয়েছে। সব ক্ষেত্রে সব কিছুতে এখন ভারতের নাম। কোনো ভালো কাজে নয়, সব কুকর্মে। আরও মজার ব্যাপার সিটি করপোরেশনের পেলোডার দিয়ে শাপলা চত্বরের জঞ্জাল সাফ করা হয়েছে। লোকজন বলছে পেলোডার দিয়ে জঞ্জালসহ লাশ গাড়িতে তুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিসব বিচিত্র কথা! এর একটাও সত্য হলে সরকারকে কিয়ামত পর্যন্ত নয়, তার অনেক আগেই জনতার আদালতে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সাভারে লাশ তোলা হলো কত যতœ করে। একজন ব্রিগেডিয়ার বললেন, তারা সম্মান করে, আদর করে লাশ তুলছেন। আর শাপলা চত্বরে যদি ময়লা ফেলার পেলোডার দিয়ে ময়লার গাড়িতে ভুলেও লাশ তোলা হয়ে থাকে তাহলে যারা এ কাজ করেছে তারা হবে সীমার-এজিদের চেয়েও নিকৃষ্ট। সরকার প্রেসনোটে বলেছে কোনো হতাহত হয়নি। তাহলে সূর্য ওঠার আগেই ফায়ার সার্ভিসের পানি দিয়ে শাপলা চত্বর ভাসিয়ে দেওয়া হলো কেন? ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট তো এখন পানি দিয়ে খুব একটা ধোয়া-মোছা হয় না। ধোয়ার যদি অত প্রয়োজনই হতো, সূর্য উঠলে বেলা ফুটলে লোকচক্ষুর সামনে ওই পয়পরিষ্কার করলে তখন তেমন প্রশ্নের অবতারণা হতো না। কেমন যেন সবই এক ধরনের গোঁজামিল। শুধু আমার দেশ ব্লগারদের সম্পর্কে দুই কথা ছাপার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে বলে সম্পাদক গ্রেফতার ও পত্রিকা বন্ধ করা হয়। তাহলে এখন যে পোড়া কোরআনের ছবি দিয়ে পোস্টার করা হচ্ছে, টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের নামে প্রচার করা হচ্ছেথ এটা কি ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো নয়? এসবের কোনো বিচার হবে না? আসলে সবই কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। সরকারের জন্য এক আইন, বিরোধীদের জন্য আরেক আইন। এ তো আইনের কথা হতে পারে না, এসব জবরদস্তি। যতক্ষণ শক্তি থাকবে ততক্ষণ এসব চলে। এজিদ, ফেরাউন টিকেনি। এরাও কেউ টিকবে না এটাই সৃষ্টির নিয়ম।
কতবার কতভাবে বললাম, ভদ্রলোককে সরান। কেউ কথা শুনছে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের তাঁবেদারি করে পাকিস্তানকে ডুবিয়েছে। তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করে আজ বাংলাদেশ এবং গণতান্ত্রিক সভ্যতা-ভব্যতার কবর রচনা করা হচ্ছে। যেখানে ছোটখাটো চেংরা রাজাকারদের বিচার নিয়ে সবাই এত তৎপর, সেখানে ২৪ ঘণ্টা পাকিস্তানের সেবাদাসকে কেন মাথায় তুলে রাখা হয়েছে কিছুই বুঝতে পারি না। হঠাৎই গত পরশু চট্টগ্রামে বলে বসলেন, সারা দেশে এক মাস রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ। এও কি সম্ভব! একটা গণতান্ত্রিক দেশে শাসনতন্ত্র বহাল থাকতে কারও মর্জিমাফিক এসব হতে পারে! মখা আলমগীর কি? কিছুই না। যেভাবেই হোক সাংবিধানিকভাবে গঠিত একটি সরকার তাকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে সেই জন্য এত লাফালাফি! তা না হলে প্রকৃত অর্থে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে এতদিন তার স্থান হতো। বারো আনা বিচার হয়েও যেত। দুপুরের দিকে বললেন, এক মাসের জন্য সারা দেশে রাজনীতি বন্ধ। এটা তার পিতামহের জমিদারি হলেও সম্ভব ছিল না। যে যত ক্ষমতাধরই হোন, দেশটা কারও জমিদারি নয়। জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া কোনোভাবেই সারা দেশে এক ঘণ্টার জন্যও সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল বন্ধ রাখার ক্ষমতা কোনো সরকারের নেই। সরকার কোনোভাবেই দেশের মালিক নয়, তারা সেবক, কর্মচারী। তাই ইচ্ছাস্বাধীন তাদের যা কিছু করার কোনো সুযোগ নেই। ইংরেজিতে অফিসার মানে পাবলিক সার্ভেন্ট, বাংলায় জনগণের চাকর। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইংরেজিতে পাবলিক সার্ভেন্ট পর্যন্ত সহজেই স্বীকার করেন। কিন্তু বাংলায় জনগণের চাকর এটা শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার মা প্রায় ৬০-৬৫ বছর আরবিতে কোরআন পড়েছেন। কোরআনের প্রতিটি আয়াতের অর্থ বুঝে যদি পড়তেন, তাহলে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হতেন। আরবি ভাষার অনেক অর্থই মা জানতেন না। তাই অত দীর্ঘ সময় কোরআন পাঠ করেও আল্লাহ, রাসূল, স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে যা জানতে ও বুঝতে পারতেন, তা তিনি পারেননি। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত পরশু যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন তার আর এক মুহূর্তও মন্ত্রিসভায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। তিনি সুস্থ, স্বাভাবিক এবং সংবিধান সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকলে সারা দেশে এক মুহূর্তের জন্যও রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধের কথা চিন্তাও করতে পারেন না। আগে জরুরি অবস্থা জারি, তারপর সভা-সমাবেশ বা অন্যান্য নাগরিক অধিকার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার চিন্তা করতে পারে। সেটিও তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার নয়। বিষয়টা মন্ত্রিসভার এখতিয়ার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করলেই জরুরি অবস্থা হয়ে যায় না। গ্রাম-গঞ্জে ঘোরাফেরা করি, সব সময় খবরও পাই না। তাই ১৯ মে পূর্ব নির্ধারিত রামপুরের সভায় গিয়েছিলাম। এক বিশাল সভা হয়েছে। বিশাল অর্থেই সেটি ছিল বিশাল। সন্ধ্যার দিকে ঢাকা থেকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘সরকার সারা দেশে এক মাসের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও আপনি সভা করলেন কি করে? আইন অমান্য হলো না?’ তাকে বলেছিলাম, ‘কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি নিবন্ধিত দল। বাতাসে ভেসে আসা কোনো কথায় কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি না। দল হিসেবে সরকারের অথবা নির্বাচন কমিশনের সরাসরি চিঠির দরকার। যতক্ষণ সেটা না পাব ততক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাব। আমরা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক তৎপরতা সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব অশুভ কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
লেখক : রাজনীতিক