পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

ভোটের সমীকরণে রাজনীতি এখন তৃণমূলমুখী ও ঈদমুখী

Posted on June 26, 2017 | in রাজনীতি, সারা দেশ | by

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের হিসাব মেলাতে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছে রাজনৈতিক দলগুলো। সে অনুযায়ী দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের নেতাদের কাছে বার্তাও পাঠিয়েছে।

পাশাপাশি মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে দুদলের নেতারাই এখন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। ফলে কেন্দ্রমুখী রাজনীতি ক্রমশ তৃণমূলমুখী হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছাকাছি যেতে রমজান মাসকে বেছে নেন অনেক নেতা। ইফতারসহ নানা কর্মসূচিতে এলাকায় এলাকায় সরব থেকেছেন তারা। আবার অনেকে এবারের ঈদকে নিজেদের প্রচারণার কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলের অনেকেরই জনগণ ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে, যা নিয়ে কেন্দ্রেও উদ্বেগ রয়েছে। এজন্যই প্রকাশ্যে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর তাগিদ আসছে কেন্দ্র থেকে।

আর এজন্য হাইকমান্ডের নজর কেড়ে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকতে ‘বিচিত্র’ কর্মসূচি নিয়ে নেতাদের মাঠে নামতে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে জানান ওই নেতা। ইতোমধ্যে অবশ্য কয়েকজন সংসদ সদস্যের মাটিকাটার খবর গণমাধ্যমেও এসেছে।

গত মে মাসে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন। এমপিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব, অসন্তোষ, অনৈক্য এবং এমপিদের সৃষ্ট সুবিধাভোগী শ্রেণীর জন্য ত্যাগীদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি ওই সভায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য মরিয়া আওয়ামী লীগের জন্য এসব বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে।
পরে দলের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এমপিদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জনপ্রিয়তা না থাকলে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

এরপর আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নানাভাবে জনসম্পৃক্ত হতে নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুবলীগের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিভিন্ন সংস্থার জরিপে যারা জনপ্রিয়তা হারাবেন, যারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট হবেন না, তারা মনোনয়ন পাবেন না। যারা জনপ্রিয়, যারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট, তারাই মনোনয়ন পাবেন।

দলের এমন অবস্থানের পর সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় এমপিদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। প্রভাবশালী নেতাদেরও এলাকায় নানা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। দল ও জনবিচ্ছিন্ন নেতারা মনোনয়ন হারানোর আশঙ্কা থেকে এলাকামুখী হচ্ছেন, নেতাকর্মীদের খোঁজ নিচ্ছেন।

এমপিদের তৃণমূলমুখী হওয়ার এই তৎপরতাকে ইতিবাচক বলছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে নেত্রীর বক্তব্য যদি দেখেন, দেখবেন তিনি একইভাবে নেতকর্মীদের নির্দেশ দেন। আমরা সেটি করার চেষ্টা করি যথাসম্ভব।’

সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি সঠিক নির্দেশনা। আমি মনে করি, নেত্রীর নির্দেশনাকে সবাইকে মেনে চলা উচিত।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘কারা জনগণের কাছে বেশি যাচ্ছে, বেশি যোগাযোগ রাখছে সেটি আমরা দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। কারণ, সরকার গঠন করতে হলে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সে কারণে যারা জনপ্রিয়, যারা ভোটে জিতবে, তাদেরই মনোনয়নের জন্য বেছে নেওয়া হবে। আর কারা বেশি জনপ্রিয় সে তথ্য দলের কাছে, নেত্রীর কাছে আগেই চলে আসবে।’

একই এলাকায় একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নেতাদের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ প্রতিযোগিতা তত তীব্র হবে।’
এক্ষেত্রে দলীয় নির্দেশনার বিষয়টি এর আগে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সভাপতি তিনটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচনের জন্য। তা হল- তৃণমূলের জনগণের কাছে গিয়ে তাদের উন্নয়নে যা দরকার তা জেনে বাস্তবায়ন করা, সংগঠনকে আরো জোরদার করা এবং গরীব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা অবস্থার উন্নয়ন করা।’

নির্বাচনের জন্য এ কাজগুলো ‘সুনির্দিষ্টভাবে’ করা হচ্ছে জানিয়ে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি আসনেই নেতাদের পজিটিভ-নেগিটিভ দিক, বর্তমান এমপির অবস্থান দেখা হচ্ছে। যে নেতাদের সাংগঠনিক অবস্থান, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা, গণসম্পৃক্ততা, দলে অবদান ও ইমেজ ভালো থাকবে তারা মনোনয়ন পাবেন, না হলে বাদ পড়বেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগের এমপিদের বিরুদ্ধে যেখানে সুবিধাভোগীদের জন্য তৃণমুলবিমুখী হওয়ার অভিযোগ, সেখানে বিএনপির বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির অনেক নেতা মামলাসহ নানা কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছেন না। অনেকে আবার গা-বাঁচাতে এড়িয়ে চলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায়ের অভিযোগও রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে।
গত নির্বাচন বর্জন করা দলটি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত ইতিমধ্যে দিয়েছে। তবে সরকারবিরোধী অবস্থান জিইয়ে রেখে এখন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে এতোদিন আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়া দলটি এখন নতুন করে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া নেতাদের এলাকায় গিয়ে সরকারের ‘নেতিবাচক’ কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নিজেদের দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নির্দেশ দিয়েছেন।

জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে গণসংযোগের মত নির্দেশনা পাওয়ার পর বিএনপির নেতারাও এলাকায় সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দলটির ইফতার মাহফিল ও ত্রাণ বিতরণের মত কর্মসূচি গণমাধ্যমে এসেছে।

এর আগে বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ‘বিএনপি ঘনিষ্ঠ’ অনেকেই দলটির চেয়ারপারনসহ শীর্ষ নেতাদের তৃণমূলমুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ঈদে যার যার এলাকায় এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে ম্যাডাম নির্দেশ দিয়েছেন। ঈদের আগে-
পরে এলাকায় অবস্থান নিয়ে মানুষকে সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত করতে বলেছেন তিনি।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি আদায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতেই এই তৎপরতা জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে জানাতে হবে- আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের অধিকার রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে তৈরি হতে হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদ করা, জনগণের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশনা রয়েছে নেতাদের প্রতি। ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যেভাবে হামলা, মারামারি করছে তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

উৎসঃ পরিবর্তন।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud