November 6, 2025
ঢাকা : সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের সমান সুযোগের বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ‘১৯৭৩ সংশোধনের বিল পাসের জন্য বুধবার জাতীয় সংসদে তোলা হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সুত্র জানায়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি উত্থাপন করবেন।
আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব সোমবার মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সেদিন জানান, সংসদের এই অধিবেশনেই এটি পাস করা হবে।
সংশোধিত আইনটিতে আপিলের ক্ষেত্রে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের সমান সুযোগ ছাড়াও সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষ বা দ-প্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারলেও আসামি যে অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন, কেবল ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধেই সরকার আপিল করতে পারবে। আইনটি সংশোধন হলে পুরো রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করা যাবে।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, বাদী-বিবাদী ও সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল করতে পারবেন। এছাড়া বিদ্যমান আইনে আপিল নিষ্পত্তির কোনো সময়সীমা ছিল না। সংশোধনীতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৪৫ দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে উপযুক্ত কোনো কারণ থাকলে এ সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবে আইনের ২১(২) ধারায় ‘সরকার’ শব্দের পর ‘অথবা যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ ও খালাস শব্দের সঙ্গে ‘অপর্যাপ্ত দ-’ এবং ২১(৩) ধারায় দ-ের সঙ্গেও ‘অপর্যাপ্ত দ-’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, বিধানটি কার্যকর হলে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ের বিরুদ্ধেও এ বিধান প্রয়োগ করে আপিল করা সম্ভব হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ের পর এ বিধানটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঢাকার আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষকে হত্যার অভিযোগসহ পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
রায়ের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানা যায়, বর্তমান আইনে শুধু যে অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লা খালাস পেয়েছেন, একমাত্র তার বিরুদ্ধেই আপিল করতে পারবে সরকার। এরপরই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। কাদের মোল্লাকে দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। কিন্তু এমন রায় মানতে রাজি নয় দেশবাসী।
কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রায়ের দিন গত মঙ্গলবার বিকাল থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। টানা ৮ দিন ধরে চলা গণআন্দোলনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করছে দেশবাসী। মূলত এসব দাবির পরই সরকার ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্তমান সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন’১৯৭৩-এর দুই দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আনা সংশোধনীতে কেবল খালাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ সংযোজন করা হয়। মূল আইনে শুধু আসামিপক্ষের আপিলের বিধান ছিল।
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা সংশোধনীতে আপিলের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধানও সংযুক্ত করা হয়। এক ট্রাইব্যুনাল থেকে আরেক ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া যে দিন রায় হবে, সে দিনই রায়ের সত্যায়িত কপি উভয় পক্ষকে বিনামূল্যে দেওয়ার বিধান করা হয়।