পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

প্রস্তাবিত বাজেট ‘বিগ বিউটিফুল বেলুন’: বিএনপি

Posted on June 7, 2013 | in জাতীয় | by

1365835575bangladesh_nationalist_party

ডেস্ক রিপোর্ট : ২০১৩-২০১৪ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে ‘বিগ বিউটিফুল বেলুন’ বলে আখ্যায়িত করেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাব পেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ আখ্যা দেয় বিএনপি। নতুন বার্তা

বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট উচ্চাকাঙ্খী নয়। কিন্তু প্রশাসনিক সামর্থহীনতার কারণে অর্থ সংগ্রহ করে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে ভোটের বাজেট হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। প্রস্তাবিত বাজেটের কারণে করের আওতা বাড়বে।

বিএনপির দুই সিনিয়র এমপি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও এমকে আনোয়ার বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান।

এমকে আনোয়ার বলেন, ‘বাজেট কি শুধুই হিসাবের খাতা? কেবলই আয়-ব্যয়ের হিসাব? নাকি জাতীয় সঙ্কট নিরসন ও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকনির্দেশনা। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর পাঁচ ঘণ্টার বাজেট বক্তব্যে আত্মতুষ্টি ছাড়া জনগণের জন্য কিছুই বলা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট অর্থায়নের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ বাজেটে যথারীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে। কিন্তু জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোকে চ্যালেঞ্জ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ উন্নয়ন সমন্বয়, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক পর্য্বেক্ষক প্রতিষ্ঠান বলেছে প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৬ এর বেশি হবে না।’

এমকে আনোয়ার বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের আকার গতবারের চেয়ে ১৬ভাগ বেশি। এতে অর্থায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব থেকে ২১ ভাগ উৎস দেখানো হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়বে। অনেক মানুষ করের আওতায় আসবে। অথচ গত চার বছরে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ৫৮ভাগ। কিন্তু সরকার গুণগান গাইছে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে বলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ২৫ভাগ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটকে বড় করার জন্য অতীতের রীতি ভেঙে সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বাজেটকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

বৈদেশিক ঋণ কোথা থেকে আসবে তার কোনো উৎস দেখানো হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ ২১ভাগ বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ খাতে সরকার বাজেটে বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার আশ্রয় নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ কমিয়ে দেখানো হয়েছে। গত বাজেটে যেখানে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেড়েছিল, সেখানে এবার কমিয়ে দেখানো হয়েছে। এটা মুলত অনেক বেড়ে যাবে। যার ফলে বেসরকারি শিল্পকলকারখানা নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে। চাঁদাবাজি বাড়বে।’

আনোয়ার বলেন, ‘বাজেটে ব্যাংক বহির্ভুত ঋণ ধরা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। যা গত বাজেটে ছিল তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ হিসাব কোনোভাবেই মিলবে না। এছাড়া সরকার নিজের হাতে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পকে মেরে ফেলেছে। এর ওপর কর বসানো হয়েছে, সুদ কমানো হয়েছে। সেটা উৎস কর হিসাবে কাটা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট উচ্চাভিলাষী নয়। তবে সরকারের যে প্রশাসনিক অবস্থা, তাতে অর্থ সংগ্রহ করে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একজন অর্থনীতিবিদ তো বলেছেন, দেশের অথনীতির অবস্থা নাকি ‘রানা প্লাজার’ মতো হয়ে গেছে।’

সাবেক এই কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। নইলে জনগণের ওপর অধিকতর করারোপ করতে হবে। অন্যথায় অর্থায়নের কোনো সুযোগ নেই।’

সাবেক এ কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়ে অনেক কথা বলছে। কিন্তু কৃষিখাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়নখাতে বরাদ্দ ১৮ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হলেও তা জনগণের কাছ থেকে আদায় করে নেয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে ভর্তুকি ৮ ভাগ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ টাকা জনগণের কাছ থেকে তুলে নেয়া হবে।’

পদ্মা সেতুতে সরকারের দুর্নীতি চিত্র ও বিশ্বব্যাংকের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ সেতু করার নামে অর্থনীতিতে একটি বিঙ্খলল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘদিন ভোগাবে।” রাজনৈতিক জেদ হিসেবে এ সেতু নিয়ে অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতায় ফিরতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মতো একটি দেশের শুধু অর্থ হলেই সবকিছু সম্ভব নয়।’

আনোযার বলেন, ‘বাজেটে ভ্যাটের বিস্তৃতি ঘটবে। যা পরোক্ষভাবে গরিবের বোঝা বোড়াবে। এটা বড়ধরনের সমস্যা হিসাবে দেখা দেবে। করের বোঝা বাড়বে। এমনকি পদ্মা সেতুতে যে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে, তাও জনগণের কাছ থেকে তোলা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ খাতে থোক বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এসব কোথায় যাবে তার উল্লেখ নেই। এসব তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্পে গড়ে ২৬ শতাংশ অপচয় ও দুনীতি হয়।’

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে প্রতি বাজেটেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এটা অনৈতিক। এটা সৎ মানুষকে কর দিতে নিরুৎসাহিত করে। এবার মাত্র ১৪০০ কোটি টাকা কর পেয়েছে এ খাতে। কিন্তু এতে শাস্তি দেয়া হয়েছে সাধারণ কর দাতাদের। সরকার অনৈতিকতার দিকেই ধাবিত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি শাসনামলে ২০০১-০৫ পযন্ত কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ ছিল না। আগে কালোটাকা নির্দিষ্টখাতে বিনিয়োগ করার শর্তে সাদা করার সুযোগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন কোনো শর্ত ছাড়াই এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা ও এমপিদের সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা দেয়নি। এবার কালোটাকা সাদা করতে ব্যবসায়ীদের চেয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের চাপ ছিল বেশি। আসলে তারা কালো টাকা সাদা করে ভবিষ্যতে হিসাব থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে।”

প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য বেশি ছিল। আসলে প্রস্তাবিত বাজেট- ‘বিগ বিউটিফুল বেলুন।’

তিনি বলেন, ‘বুধবার জাতীয় সংষদে একজন মন্ত্রীর অশ্লিল বক্তব্য ও একজন এমপিকে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলার সুযোগ না দেয়ায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। ইচ্ছা থাকার পরও আজ আমরা সংসদে যোগ দিতে পারিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিরোধীদলীয় ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি দলীয় এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন ভিপি, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মোস্তাফা আলী মুকুল, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও রেহেনা আক্তার রানু।

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud