November 5, 2025
সাইফ নাসির : সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ রাজন নামের একজনকে আটক করলেও তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে কলেজের পার্শ্ববর্তী টিলাগড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত রোববারের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রধারীদের আটক করতে গতকাল রাতে অভিযানে নামে শাহপরাণ থানার সহকারী কমিশনার মো. আইয়ূবের নেতৃত্বে সাদা পোশাকধারী পুলিশের একটি দল। রাত পৌনে ৯টার দিকে টিলাগড়ের একটি রেস্তোরাঁয় বসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব করার সময় পুলিশ রাজন নামের একজনকে আটক করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রথমে তা বুঝতে না পারলেও পরে টের পান। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে রাজনকে ছিনিয়ে পালিয়ে যান।
জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ না করে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, সাদা পোশাকের পুলিশ একটি রেঁস্তোরা থেকে অস্ত্রধারী একজনকে আটক করে। ওই সময় তাঁর সহযোগীরা পুলিশের হাত থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ওসি জানান, ওই ঘটনার পর রাজনসহ অন্য অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে রাত থেকে অভিযান চলছে।
এর আগে রোববার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের সাবেক নেতারা এ ‘নির্দেশনা’ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেখে এমন একজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তিনি হলেন জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। গত ৮ জুলাই কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার পর ছাত্রলীগের আলোচিত সেই বিক্ষোভ মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।
আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ গতকাল সোমবার থেকে অস্ত্রধারী ও তাঁদের ‘নির্দেশনা’ দেওয়া নেতাদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে। মহানগর পুলিশের কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন উপকমিশনারসহ পুলিশের কয়েকটি দপ্তর তদন্তে নেমেছে। অস্ত্রধারী শনাক্ত ও অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ গতকাল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছবি ছাপা হয়, যাতে দেখা যায় যে গত রোববার সংঘর্ষের আগে কালো হেলমেট পরা অস্ত্রধারী এবং তাঁর সঙ্গে অস্ত্রের ব্যাগ বহনকারী দুজনকে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকছেন জাহাঙ্গীর আলমসহ ছাত্রলীগের সাবেক পাঁচজন নেতা। গত বছরের ৮ জুলাই এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার পর ছাত্রলীগের আলোচিত মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন জাহাঙ্গীর। ছাত্রাবাসের ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রদের দায়ের করা দুটি মামলায় তিনি আসামি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কলেজের ক্যাম্পাস থেকে জেলা ছাত্রলীগের বরখাস্ত হওয়া সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ ও তাঁর সমর্থকদের বিতাড়িত করতে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন মাহমুদের পক্ষে একজন বহিরাগত অস্ত্রধারী ও তাঁকে সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নিয়ে জাহাঙ্গীর ক্যাম্পাসে ঢোকেন। অস্ত্রধারী যুবক নগরের মেজরটিলা এলাকার আবদুল হান্নান। আর ছাত্রলীগের কর্মী হলেন মিঠু তালুকদার। এই দুজনকে নিয়ে জাহাঙ্গীর অনেকটা পথ দেখানোর ভূমিকায় ক্যাম্পাসে ঢোকেন।
জাহাঙ্গীর জানান, ওই দুজন হলেন হান্নান ও মিঠু। দুজনের সশস্ত্র অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে তো কিছু ছিল না, পেছনে কারা ছিল জানি না।’
জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, ‘বরখাস্ত হওয়া সভাপতি সশস্ত্র ডাকাত ও হেরোইন ব্যবসায়ীদের নিয়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকেছিলেন। আমরা সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষায় ও সংগঠনের স্বার্থে প্রতিরোধ করেছি মাত্র।’ সশস্ত্র মোকাবিলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো এক দিকের ছবি দেখেছেন। অন্য দিকের অবস্থা দেখলে আমাদের নিয়ে কথা বলার অবকাশ থাকত না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোববার অস্ত্রধারীকে নিয়ে জাহাঙ্গীরসহ ছাত্রলীগের সাবেক যেসব নেতা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই একসময় একই পক্ষের ছিলেন। ছাত্রলীগের জেলা সভাপতির পদ থেকে পংকজকে কেন্দ্র থেকে বরখাস্ত করার পর তাঁদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।
এমসি কলেজে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্পের কাজ চলাকালে গত ২০ জানুয়ারি পংকজ আগাম বিলের টাকা দাবি করে একজন প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় কেন্দ্র থেকে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করে জেলার সহসভাপতি হিরন মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। রোববারের সশস্ত্র সংঘর্ষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, ছাত্রলীগের কেউ অস্ত্র ধরেনি। বহিরাগত কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়াতে পারে।’ তবে এ বিষয়ে জানতে পংকজের মুঠোফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।