May 16, 2024
ঢাকা: নব বধূ বাড়িতে বসে স্বামীর দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। অপরদিকে প্রবাসী বাংলদেশি শ্রমিক আলম সিঙ্গাপুরে ক্যান্সার নিয়ে মৃত্যু আতঙ্কে সময় পার করছে। দুজনের সময়ই পার হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। চিকিৎসার টাকা যোগাড় না হলে আলম সর্বোচ্চ এক বছর বাঁচতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে চিকিৎসকরা। এত টকার যোগাড় হবে কিভাবে সে চিন্তার কুল কিনারা করতে পারছে না আলমের পরিবার। সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক আলম শাহর মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রয়োজন প্রায় ৬০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। টাকার এ অঙ্ক বৃদ্ধ অসহায় বাবা মা’র পক্ষে সংগ্রহ করা অসম্ভব বলে জানিয়েছে আলম। সিঙ্গাপুরের একটি ইন্টেরিয়ার ডিজাইন কোম্পানির নির্মাণ কাজের সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করে বাংলাদেশি ছেলে আলম শাহ। নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছে দুই মাস হলো। এখানে তার বেতন ঠিক করা হয়েছিল এক হাজার দুইশত সিঙ্গাপুরি ডলার। হঠাৎ করেই তার মস্তিস্কে তিনটি ক্যান্সারের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছে চিকিৎসকরা। আলমের চিকিৎসা খরচ, চিকিৎসা পরবর্তী বিশ্রাম এবং তার কর্ম জীবনে পূর্ণবাসনের জন্য সিঙ্গাপুরের স্থানীয় একটি সংস্থা আর্কিটাইপ একলাখ সিঙ্গাপুরি ডলারের সাহায্য তহবিল গঠনের উদ্যেগ নিয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ লাখ টাকার বেশি। তবে চিকিৎসকরা বলেছে তার চিকিৎসা করা না হলে সবোর্চ্চ এক বছর বাঁচতে পারে আলম।
ইতিমধ্যে তার ৪০ শতাংশ ক্যান্সার সারাতে সক্ষম হয়েছে ডাক্তাররা। রেডিও এবং কেমো থেরাপি দিলে সে অন্তত আরো ১০ বছর বাঁচতে পারবে বলে মনে করছে তার চিকিৎসকরা। আইসিইউ খরচসহ পুরো চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৬০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। আর্কি টাইপের ম্যানেজার মেলিসা ট্যান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, আলমের জন্য তার প্রতিষ্ঠানটি এক লাখ ডলার যোগাড় করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির কাছে সাহায্যর আবদেন করেছে। প্রচারণার জন্য নিয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে সিঙ্গাপুরেই তার চিকিৎসা করা হোক। বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিলে তার চিকিৎসা আর হবে না। যদিও এ প্রতিষ্ঠানটি এযাবৎ মাত্র দুই হাজার দুইশত ডলার যোগাড় করতে পেরেছে। সিঙ্গাপুর সরকার বিদেশিদের জন্য চিকৎসা ভর্তুকি দেয় না। কোনো শ্রমিকের দীর্ঘ মেয়াদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু দেখা হয় দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার মত শারীরিক সুস্থতা আছে কিনা। সিঙ্গাপুরের অভিবাসী মানুষের পূর্ণবাসনের কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানারে নাম হোম। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জুলোভান ওয়াম বলেন, চিকিৎসা বীমা অনুযায়ী আলম মাত্র ১৫০০ ডলার পাবে। যা তার তিন দিনের থেরাপির খরচ মাত্র। এ বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা হল সিঙ্গপুরে ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্ত শ্রমিকদের জন্য বর্তমান চিকিৎসা বীমা যথেষ্ট নয়। এই বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বর্তমানে সিঙ্গাপুরে কাজের অনুমতি নিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা হল নয় লাখ আশি হাজারের মত। যা সিঙ্গাপুরের মোট জনশক্তির ১৭.৯ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি। আলমের চিকিৎসা খরচ যোগাতে সিঙ্গাপুরের চ্যানেল নিউজ এশিয়া নামের একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনও প্রচার করেছে। তার চিকিৎসা খরচ মেটাতে এবং তাকে সহযোগিতা করার জন্য বা তার সম্পর্কে কোনো তথ্য জানত হলে ই মেইলের মাধ্যমে যোগযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইমেইল: [email protected] or [email protected].