পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

দুই ছেলের পর বাবারও চলে গেলেন, মা’র অবস্থা সঙ্কটাপন্ন

Posted on February 27, 2016 | in জাতীয় | by

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় বাড়ির রান্নাঘরের আগুনে দুই শিশুর মৃত্যুর পর তাদের বাবাও মারা গেছেন; অগ্নিদগ্ধ মাও সঙ্কটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। শুক্রবারের এই অগ্নিকাণ্ডে এই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়েছিলেন। তিন ছেলের অন্যজন দগ্ধ হলেও চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গৃহকর্তা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ (৫০), তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (৪০), তিন ছেলে শাহালিন বিন শাহনেওয়াজ (১৫), জারিফ বিন শাহনেওয়াজ (১১) ও জায়ান বিন শাহনেওয়াজকে (দেড় বছর) দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছিল।1456485828

শরীরের ৯৫ শতাংশ পোড়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শাহনেওয়াজের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে শনিবার দুপুরেও চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, শাহনেওয়াজেরও মৃত্যু হয়েছে। শরীরের ৯০ ভাগ পোড়া নিয়ে সুমাইয়া হাসপাতালে রয়েছেন। তার অবস্থাও ক্রিটিকাল বলে জানান ডা. পার্থ শঙ্কর পাল। দেড় বছরের জায়ান এবং ১৫ বছরের শাহালিন শুক্রবার বিকালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান।

সকালে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের একটি সাততলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে রান্নাঘরের আগুনে এই পরিবারের সবাই দগ্ধ হন। মেজ ছেলে জারিফকে শুক্রবারই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই ভাইয়ের মৃত্যু এবং মা-বাবার খবর তাকে জানানো হয়নি বলে তার চাচা কামরুল হাসান দুপুরেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান। পরিবারের অন্য সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে থাকা কামরুল বলেন, “সে বারবার বলছে, বাবার কাছে যাব, মায়ের কাছে যাব।”

এক আগুনে বাবা-দুই ভাইকে হারানো জারিফ এখন মুগদায় তার মামার বাসায় রয়েছেন বলে জানান তার চাচা। শাহনেওয়াজ তার দুই সন্তানের মৃত্যুর খবর জানার পর নিজের মৃত্যুর আঁচও পেয়েছিলেন বলে তার ভাগ্নে (ফুফাত বোনের ছেলে) সাকিব জানিয়েছিলেন।

দুই ভাতিজার মৃত্যু স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন তিনি। “ওদের সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল। আহ, ওরা মরে গিয়েও শান্তি পাইল না।” সাকিব বলেন, “মামা (শাহনেওয়াজ) বুঝতে পেরেছেন, তার ছেলেরা মারা গেছেন। মামা বলেছেন, মামি বরিশালের তার মায়ের কাছে কবর চান। তাকেও যেন সেখানে কবর দেওয়া হয়।”

দুপুরে সাকিব এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহনেওয়াজের মৃত্যুর খবর আসে। শাহনেওয়াজের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রকৌশল বিভাগে মেইনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। শাহনেওয়াজের সপরিবারে আগামী বছরই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর কথা ছিল বলে তার ভাই কামরুল জানান।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ওই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন শাহনেওয়াজ। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, ওই বাসার গ্যাসের চুলা বা লাইনে সমস্যা ছিল। এর ফলে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘর থেকে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে যায় এবং সকালে চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।কামরুল দুপুরে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, চুলার গ্যাসের লাইন লিক থাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বাড়িওয়ালাসহ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভাই আগে সুস্থ হোক, পরে সংবাদ সম্মেলন করে সব কথা জানাব।” কামরুল শুক্রবার রাতে থানায় অভিযোগ করলে একটি অপমৃত্যুর মামলা নেওয়া হয় বলে জানান উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চুলার গ্যাসের লাইন লিক করে সারা বাড়িতে তা ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ বাড়ির দরজা-জানালা ছিল বন্ধ। সকালে সুমাইয়া নাস্তা তৈরি করতে গিয়ে চুলায় আগুন দিতে গেলেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বিস্ফোরণে বাড়ির দরজাও পুলিশ গিয়ে ভাঙা পায়।

নগরবাসীর প্রতি এই পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ, “নতুন বাসায় উঠার সময় ওই বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করে দেখে নিন। বাড়ির মালিকরা যেন তাদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় হাসপাতালের নাম ও ঠিকানা লিখে রাখে।”

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud