পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

তাপদাহে পুড়ছে দেশ

Posted on April 12, 2016 | in জাতীয় | by

নিজস্ব প্রতিবেদক: চৈত্রের তাপদাহে মানুষের মতো প্রাণিকুলের জীবনও অতিষ্ঠ। একটু স্বস্তি পেতে তাই পানিতে নেমেছে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানার রয়েল বেঙ্গল টাইগার :এফএনএসচৈত্রের তাপদাহে মানুষের মতো প্রাণিকুলের জীবনও অতিষ্ঠ।
খরতাপে পুড়ছে দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় চলছে তাপপ্রবাহ। এসব এলাকায় ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা উঠেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গা শহরে ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ভ্যাপসা গরম ও ঘামে সর্বত্র বিরাজ করছে অসহনীয় অবস্থা। বেড়েছে পানির ব্যবহার। তৃষ্ণার্ত মানুষ যেখানে পানি পাচ্ছে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে। শহর এলাকায় বেড়েছে বরফ দেয়া ঠাণ্ডা শরবতের কদর। লেবু মেশানো পানি দিয়ে বানানো শরবত দেদার বিক্রি হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধ কি না তা ভেবে দেখার ফুরসত কারো নেই যেন। এর আগের সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে বিল-ঝিল, নদী-নালা এবং নিচু এলাকায় পানি রয়েছে। তীব্র গরমে পানি বাষ্প হয়ে বাতাসে বেড়ে চলেছে আর্দ্রতা। ফলে মানুষ ঘামে নেয়ে ওঠার অবস্থা।

আবহাওয়া অফিস বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। পশ্চিম দিকে থেকে আসা এ লঘুচাপের কারণে লু হাওয়ার মতো অবস্থা বিরাজ করছে এর আশপাশে। ওই হাওয়ার একটি বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় তীব্র তাপদাহের সৃষ্টি করছে। আবহাওয়ার এ অবস্থা চলতে পারে আরো দুই থেকে তিন দিন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধীরে ধীরে বৃষ্টি হতে শুরু করবে বলে জানা গেছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, পাবনা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও রংপুর বিভাগ এবং রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সোমবার ঈশ্বরদীতে ৪০, রাজশাহীতে ৩৯.৭, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩৯.৫, সাতীরায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে। রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু বেশি উঠলেও এখানে তাপের অনুভূতি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। গতকাল ভরদুপুরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় লু হাওয়ার মতো বাতাস বইতে লক্ষ করা গেছে। তপ্ত হাওয়া মুখে লাগলে নাক-মুখ জ্বলে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া আরো বেশি উগ্র। এ অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী গতকাল দেশের কোথাও ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ব্যারোমিটারের পারদ উঠেনি। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে অনেকের মোবাইল ফোন সেটে রয়েছে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা। এ ছাড়া তাপমাত্রা জানায় এমন অনেক ওয়েবসাইট থেকে মুহূর্তে তাপমাত্রা পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এ ধরনের একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মহিবুল ইসলাম যশোর থেকে ফোনে জানান, যশোরে দুপুরের দিকে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছে। তবে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের তাপমাপন যন্ত্রে দেশের কোথাও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেনি।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে পানির চাহিদা। গরমে ঘামে শরীর থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, কারো দেহ থেকে বেশি পরিমাণে লবণ ও ঘাম বের হয়ে গেলে হঠাৎ অবসাদগ্রস্ততায় ভুগতে পারেন। এ সময় একটু বেশি পরিমাণে পানি পান করলে এ অবস্থাটা হবে না। যারা বেশি মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম করেন তারা একটু লবণ খেলে হঠাৎ অবসাদগ্রস্ততায় ভুগবেন না।images-101010

বিশুদ্ধ পানি পান করলে ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এই গরমে জন্ডিসের আশঙ্কাও আছে। এসব থেকে মুক্ত থাকা যাবে বিশুদ্ধ পানি পানে। কোনো অবস্থাতে অন্তত ঢাকা শহরের ওয়াসার পাইপের পানি পান করা যাবে না। বাসায় পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি গরম হতে হতে হঠাৎ টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করার কিছুক্ষণ পর তা ব্যবহারের উপযোগী হবে এবং জীবাণুমুক্ত হবে। পানি ফুটাতে না পারলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট অথবা ফিটকিরি দিয়ে পানি পান করা উচিত।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম। এই পরিমাণ আর্দ্রতায় মেঘ তৈরি হয় না। এ ছাড়া উপরের তাপমাত্রা এত বেশি যে, বাতাসে বিরাজমান আর্দ্রতাকে ঠাণ্ডা করে মেঘ জমতে পারছে না।
২০০৯ সালে যশোরের তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের মে মাসে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। ঢাকায় ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি।
গত বছরের মে মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬০ সালের পর ঢাকায় তাপমাত্রার এটা ছিল নতুন রেকর্ড।

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud