March 28, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক: টঙ্গীর প্যাকেজিং কারখানা ট্যাম্পাকো ফয়েলসেরধ্বংসস্তূপ থেকে আরও চারজনের লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম জানান, কারখানার ছাদের ধসে পড়া অংশ সরানোর পর লাশগুলো পাওয়া যায়। টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর ওই কারখানার নয়জন শ্রমিক-কর্মচারী নিখোঁজ বলে এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। যে চারজনের লাশ পাওয়া গেছে, তাদের নাম ওই তালিকায় ছিল কি না সে বিষয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ নিয়ে টঙ্গীর কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯ জনে। এর আগে উদ্ধার ও হাসপাতালে মারা যাওয়া যে ২৫ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে, তাদের অর্ধেকই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। ছাদ ভেঙে পড়ায় আঘাতের কারণেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন। শনিবার ভোরের দিকে বয়লার বিস্ফোরিত হলে পাঁচ তলা ওই কারখানা ভবনে আগুন ধরে যায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ২৫ ইউনিট শনিবার গভীর রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু রোববার সন্ধ্যার দিকেও ধোঁয়ার কারণে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না অগ্নি নির্বাপণ কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মোশাররফ হোসেন জানান, ভবনের যে অংশ ধসে পূর্ব পাশে রাস্তার উপর পড়েছে, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেন তারা। জেলা প্রশাসক এসএম আলম, গাজীপুর সদরের ইউএনও মো. আশরাফ উদ্দিন এবং ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) আনিস মাহমুদ সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
নিখোঁজদের তালিকা
সিলেটের বিএনপির সাবেক সাংসদ সৈয়দ মো. মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ওই কারখানায় সাড়ে চারশর মতো শ্রমিক থাকলেও শুক্রবার রাতের পালায় ৭৫ জনের মতো কাজ করছিলেন। শনিবার ঈদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
অগ্নিকাণ্ডের পর শনিবার ওই কারখানা থেকে ১৭ জনের লাশ স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় সাতজনের লাশ। সর্বশেষ রোববার ভোরে রিপন দাস নামে ত্রিশ বছর বয়সী এক যুবক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসকরা জানান, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নয়জন ভর্তি ছিলেন। তারা মূলত আঘাতজনিত বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বোরবার দুপুরে তাদের স্বজনদের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভারের পাশে বসানো কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম জানান, কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের খোঁজ এখনও মেলেনি, তাদের স্বজনরা এসে পরিচয়পত্র, ছবি ও নাম দিয়ে গেছেন। তার ভিত্তিতে নয় জনের একটি তালিকা করেছেন তারা।
এরা হলেন- মাগুরা সদরের চনপুর ইডারন গ্রামের আ. মালেক মোল্লার ছেলে আজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকুলকি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), গাজীপুরের হিমারদিঘী আমতলী বস্তি হরিজন কলোনির দিলীপ ডোমের ছেলে শ্রী রাজেশ বাবু (২২), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ (৩২), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (৪৫), একই এলাকার সুলতান গাজীর ছেলে মো. আনিছুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মেছেরা গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), চাঁদপুরের কচুয়ার তেগরিয়া গ্রামের ইউনুস পাটোয়ারীর ছেলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫) ও কুমিল্লার মুরাদনগরের টনকী গ্রামের মো. তোফায়েল হোসেনের ছেলে মাসুম আহমেদ (৩০)।