পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

টার্গেট ছিল সরকার পতন

Posted on May 22, 2013 | in জাতীয় | by

* হেফাজতকে অর্থ দিয়েছে ১৮ দল 

* আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন বাবুনগরী *

নজমূল হক সরকার, কালাম আজাদ, মাহমুদুল আলম ও তাহমিনা আক্তার মিতু : ১৩ দফা নয়, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে অবস্থানের টার্গেট ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। একইসঙ্গে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থানে খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুর দায়-দায়িত্বও নিয়েছিলেন ১৮ দলের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি দাবি করেন, ওইদিনের নারকীয় ঘটনা বন্ধের জন্য হেফাজতের ১৪ নেতাকে বারবার বলেছিলেন। একইসঙ্গে বাবুনগরী ওই নারকীয় ঘটনার জন্য অনুতপ্ত বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গতকাল বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর মহানগর হাকিম মো. হারুন অর রশীদের খাস কামরায় বাবুনগরীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে মতিঝিল থানায় দায়ের করা ১৩ নম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ মফিজুর রহমান বাবুনগরীকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে তার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন জানান।

আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘৫ই মে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশস্থলে হেফাজতকর্মীরা প্ল্যাকার্ড ও কাপড়-চোপড় নিয়া আসছিল। জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রদল-যুবদলের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন করাত দিয়া গাছ কাটিয়া রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তাহারা অগ্নিসংযোগ করিয়া পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ায়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আমি সমাবেশস্থলের আশপাশে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখিয়া বিচলিত হইয়া পড়ি। জামায়াত-শিবির অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাইয়াছে বলিয়া আমার কাছে সংবাদ আসে। সমাবেশস্থলের ১৪ জন নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হইয়া উঠে।’

তিনি দাবি করেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর হইতে এ যাবৎ কোনো নারকীয় ঘটনা ঘটছে বলিয়া আমার জানা নাই।’ তবে না বুঝে হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী ওইদিনের তাণ্ডবে জড়ান বলে দাবি করেন তিনি।

জবানবন্দিতে বাবুনগরী বলেন, ‘ওইদিন দিবাগত রাত্র আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে অর্থাৎ গত ৬ মে রাত আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হ্যান্ডমাইকে সমাবেশস্থলে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের সভাস্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে তাহারা ফাঁকা আওয়াজ করিলে সবাই শাপলা চত্বর হইতে পালাইয়া যায়। আমি পড়ে গেছিলাম। আমার ছাত্ররা আমাকে ধরে লালবাগ মসজিদে নিয়া আসছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো প্রাণহানী ঘটায় নাই বা কেহ আহত হইয়াছে বলিয়াও আমি শুনি নাই। হেফাজতে ইসলামের লোকজন ও জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিহত হইয়াছে এবং তাহার অস্ত্র লুট হইয়াছে মর্মে আমি সকালবেলা লালবাগ মাদ্রাসায় আসিয়া জানতে পারি।’

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আমাদের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ছিল। রাজধানী ঢাকার ৬টি প্রবেশপথে ভোর হইতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। পরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে আমাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আমি লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থানকালীনই জানতে পারি যে, কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল জনতার সঙ্গে আমাদের কিছু ছেলে সকাল হইতে বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন ও বিজয় নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা, লুটতরাজসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এই খবর শোনার পর আমরা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফিকে অবহিত করি। তিনি আমাকে কারা ওইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তা জানার জন্য বলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উহা বন্ধ করার জন্য বলেন। আমি জানিতে পারি, আমাদের কিছু কর্মী ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং ছাত্রদল-যুবদলের কিছু প্যান্ট-শার্ট পরিহিত দাড়ি নাই এমন ছেলে এইরূপ সহিংসতা ও লুটতরাজ করিতেছে।

তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে খবর আসে যে ওই সকল উচ্ছৃঙ্খল লোকজন বইয়ের দোকানসহ কোরআন শরিফ পোড়াইতেছে। এমন সংবাদ শুনিয়া আমরা বিচলিত হইয়া যাই। তখন ১. মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, ২. মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, ৩. আবুল হাসনাত আমিনী, ৪. মোস্তফা আযাদ, ৫. মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন, ৬. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, ৭. মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ৮. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম, ৯. শেখ লোকমান হোসেন, ১০ মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, ১১. শামসুল আলম, ১২. আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ১৩. আমানুল ক্বারী ফজলুল ক্বারী জিহাদী, ১৪. মুফতি হারুন এজাহারদের সাথে যোগাযোগ করি এবং ওইসব বন্ধ করার জন্য বলি। ওই সকল নেতারা সহিংসতা বন্ধ না করে চুপ থাকার কথা বলেন এবং এমন কথাও বলে যে ‘আমাদের আন্দোলন এখন আর শুধু ১৩ দফার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটা হবে সরকার পতনের আন্দোলন। এখন আমাদেরকে ১৮ দলের লোকজন সব ধরনের সহায়তা করবে। অর্থ দেবে, খাবার ও পানি দেবে। ১৮ দলের নেতাদের সাথে আমাদের কথা হইয়াছে’।”

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “তাহারা (নাম উল্লেখ করা হেফাজতের ১৪ নেতা) আরও জানান, ‘আগামীকাল (৬ মে) আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে ১৮ দলীয় জোটের নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাহেব আমাদেরকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার সরবরাহ করিবেন। আপনি কোনো চিন্তা করিবেন না। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থান করব ইনশাআল্লাহ’।”

প্রসঙ্গত, ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ শেষে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় তারা মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় থেকে দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায় জঙ্গি কায়দায় বাঁশের লাঠি, কাঠের লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইট ও বোমা নিক্ষেপ করে যান চলাচলে বাধা ও বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা বিভিন্ন ভবন ও গাড়ি ভাঙচুর এবং গাড়ি ও ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুমতি থাকলেও তারা রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এর আগে সন্ধ্যায় তাদের মাইকে চলে যেতে বলা হলেও বারবার তারা পুলিশের বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে। ওইদিন দিবাগত রাত আড়াইটার সময় তাদের ওই স্থান থেকে উচ্ছেদের জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায় ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই সময় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসবি) মো. শাহজাহানের মাথায় ইট, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। এসআই শাহজাহানের নামে ইস্যুকৃত পিস্তল ও গুলি নিয়ে চলে যায় হত্যাকারীরা। এসময় সাংবাদিক ও হেফাজতের সমর্থকদের অনেকেই আহত হন। পরদিন ৬ মে রাত ৮টার দিকে লালবাগ এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে দুই দফা রিমান্ডে ছিলেন। এর আগে পৃথক তিনটি মামলায় আদালত তার ৩১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud