পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঈদ: সহি বানানের ইদ!

Posted on June 25, 2017 | in জতীয় সংসদ, জাতীয়, সারা দেশ | by

ঈদকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি। সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যাকাতের অর্থ-বস্ত্র, চাল, চিনি-সেমাই বিতরণের মাধ্যমে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী আমেজ।

মানুষের হাতে পয়সা আসছে। সেটার হাতবদল হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে পড়েছে তার ইতিবাচক প্রভাব। ঈদ উৎসবকে কাজে লাগিয়ে ‘গণসংযোগ’ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি-নেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আসন্ন নির্বাচনে তাদের দলীয় নমিনেশন নির্ভর করছে এলাকায় তাদের রাজনৈতিক অবস্থান, ইমেজ ও কর্মী-এলাকাবাসীর সমর্থনের ওপর। আগামী দিনের দলীয় রাজনীতি ও নির্বাচনে কার কি অবস্থান হবে সেটা ঈদ উপলক্ষে কর্মী সংযোগ, গণসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে যাচাই করে নিতে চায় বড় বড় দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সর্বত্রই গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বামধারা ও ইসলামী ধারার দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, ছাত্রলীগ-যুবলীগের আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-সিনিয়র নেতারা ঈদ করবেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। তাদের এই ঈদ উৎসব কার্যত নির্বাচনী মাঠ ঝালাই প্রস্তুতির নামান্তর। ঈদ উপলক্ষে তারা দলের নেতাকর্মী-এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ-সামাজিক-সাংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সংগঠকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং ভোটারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। কেউ কেউ ঈদের আগেই এলাকায় সেটা শুরু করে দিয়েছেন।

ইতোমধ্যেই পাড়ায়-মহল্লায় ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে এমনকি মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অধিকাংশ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে জেলা-উপজেলা ও গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলো বাড়িঘরের দেয়াল। এবার নেতারা ঈদের সবকিছুই করছেন কার্যত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা মাথায় রেখেই। বিদেশ ভূঁইয়ে থেকে যারা ঈদ করতে দেশে ফিরেছেন তাদের রেমিট্যান্সও গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিদেশে ও ঢাকায় থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে অনেক পরিবারে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের ঢেউ।
 
নির্বাচনী আসনের সীমানা নির্ধারণ না হলেও ঈদের উৎসবকে ইস্যু করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো পক্ষই পিছিয়ে নেই। জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের হাট-বাজারের চিত্র দেখলে বোঝা যায় নৌকা ও ধানের শীষ উভয় পক্ষ্যই সমান তালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। শুধু এমপি-মন্ত্রীরাই নন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই এবার ঈদ উদযাপন করবেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা গ্রামে।

এ উপলক্ষে গণসংযোগ কর্মসূচিও দিয়েছেন। নেতাদের অনেকেই ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। তাদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে গ্রামীণ ঈদ রাজনীতি। যারা এখনো কাজের চাপে ঢাকা ছাড়েননি তারাও ঈদের আগেই গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতানেত্রীদের পক্ষে যাকাতের অর্থ-বস্ত্র, চাল, চিনি-সেমাই বিতরণে এরই মধ্যে ঈদের আমেজ নির্বাচনী উৎসবে রূপ নিয়েছে। বলা যায় এবার ঈদ উপলক্ষে ‘নির্বাচনের বাতাস’ গ্রামগঞ্জের পুরো চিত্র পাল্টে দিয়েছে। বাজার-হাটে সর্বত্রই নির্বাচনী শোরগোল। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে এই শোরগোল সবচেয়ে বেশি। নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা নিয়ে গোয়েন্দারা কি রিপোর্ট দিয়েছে, কোন মিডিয়ায় কোন নেতা প্রার্থী হতে পারেন বলে আগাম বার্তা দিয়ে রিপোর্ট করেছে, কোন নেতার প্রতি কেন্দ্রীয় কোন নেতার আশীর্বাদ বা বিরোধ রয়েছে, কারা প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, কারা প্রার্থী হয়ে আসছেন, মনোনয়ন দৌড়ে কোন দলের কোন নেতা-নেত্রী বেশি এগিয়ে, কারা গ্রাম ও গ্রামের মানুষের প্রতি আন্তরিক, এমন নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে গ্রামের হাটবাজার ও পাবলিক প্লেসে।

ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্র লীগ, যুব লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগের নেতাদের মধ্যে দলীয় নমিনেশন প্রত্যাশায় বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চলছে তো অনেক আগ থেকেই। এতোদিন গর্তে লুকিয়ে থাকা বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই।
 
এতোদিন মনে হতো গ্রামের রাজনীতিতে শুধুই আওয়ামী লীগ আর নৌকা। বিএনপি ও ধানের শীষের লোকজন ছিল নীরব। পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। প্রতিকুল রাজনৈতিক আবহাওয়ার কারণে এতদিন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পিছুটান লক্ষ্য করা গেলেও স¤প্রতি তারা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। রমজানের শুরু থেকেই ইফতার ও বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। জেলা-বিভাগ-উপজেলা শহরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঈদ নিয়ে নির্বাচনী উৎসব উৎসব ভাব লক্ষ্যনীয়।

সংসদের এমপি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে সক্রিয়দের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যারা এলাকাবিমুখ ছিলেন; নেতাকর্মীর ভয়ে যে এমপিরা এলাকায় যেতে ভায় পেতেন; তারা নির্বাচন সামনে রেখে ঈদ উপলক্ষ্যে নিজ নিজ এলাকায় পা রাখছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও গ্রামগঞ্জের নিজ ভোটারদের খুশি করতে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কয়েকগুণ বেশি নগদ টাকা নিয়ে এলাকায় যাচ্ছেন ওই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ বকশিসের নামে অনেককেই দিচ্ছেন নগদ টাকা। এলাকায় প্রভাব রয়েছে এমন নেতাদের কাছে টানতে তাদের বকশিসের পরিমাণ একটু বেশি দিচ্ছেন।

সে টাকায় মফস্বল শহরের মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা হচ্ছে। সবমিলে নির্বাচনী আমেজে গ্রামীণ অর্থনীতিও এবার বেশ চাঙ্গা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে প্রথমপর্ব জাকাতের কাজ শেষ করেছেন। পাশাপাশি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে এমনকি মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি ও দলের নেতারা।

গ্রামগঞ্জে ঈদ উপলক্ষে চলছে এখন নির্বাচনী আমেজ। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের কর্মকাণ্ডের সবকিছুই হয়ে গেছে নির্বাচন কেন্দ্রীক।
রাজধানী ঢাকার মতোই জেলা-উপজেলা শহর ও গ্রামে রমজান মাসে যেমন একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজনের মাধ্যমে গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তারা যেমন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতাদের আশীর্বাদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের মতামত নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ঈদ উপলক্ষে মন্ত্রী-এমপিরা নেতাকর্মীদের পাঞ্জাবী-পায়জামা, ঈদ বকশিস, সেলামী ইত্যাদির দিচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরে যারা প্রতিপক্ষ তাদেরও কাউকে কাউকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।

হামলা মামলার কারণে দীর্ঘদিন দৌড়ের মধ্যে ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপি। দীর্ঘ ১০ বছরে বিপর্যস্ত ওই নেতারা নির্বাচন উপলক্ষে ঈদ ইস্যুতে হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। রাজধানী ঢাকার শুরু করে তৃণমূল সর্বত্রই এই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। কিছু দিন আগেও যেখানে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা দ্বিধাদ্বদ্ব ছিলেন সেখানে ঈদে বেশ দৃঢ় মনোবল নিয়ে হাজির হয়েছেন রাজনীতির মাঠে। নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।

এ জন্য অবশ্য বেগম খালেদা জিয়ার ‘দৃঢ় বক্তব্য’ ও ‘ভিশন-২০৩০’ ভূমিকা রেখেছে। রমজান মাসজুড়েই ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার অনুষ্ঠানের খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা বক্তৃতায় হতাশা কাটিয়ে নেতাকর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয় করেছেন। কয়েক বছর ধরে ঈদে হয় কারাগার নয়তো, পালাতক থাকায় স্বাভাবিকভাবে ঈদ উদযাপন বিএনপির অনেক নেতার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নির্বাচনী হাওয়ার কারণে এবারের ঈদ হবে তাদের একটু ভিন্ন আমেজের। অন্যান্য বছর রাজনীতিতে হানাহানি ও ধরপাকড় থাকলেও এবার তুলনামূলক কম। বলা যায় রাজনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল।

এতে অনে নেতাকর্মীই বাড়িঘরে ফিরেছে। এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢেউ লাগায় এবার ঈদ অনেকটা রূপ নিয়েছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজে।

ঈদ সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ গোছাতে দলের সংসদ সদস্যসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

ঢাকায় বসে না থেকে যার যার নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যেতে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এরশাদের নির্দেশনা পেয়ে দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটেছেন। সংসদ সদস্য নন, কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচন করতে চান, এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেক আগেই ছুটে গেছেন এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ করতে। এরশাদ নিজেও রমজানে নিজ নির্বাচনী এলাকা রংপুর সফল করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।
জিএম কাদের ও রওশন এরশাদও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এসেছেন রমজান মাসে। নির্বাচন ইস্যুর কারণেই এবারের ঈদ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উৎসঃ ইনকিলাব

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud