পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

কার দেয়াল, কার কথা?

Posted on July 22, 2017 | in নির্বাচিত কলাম | by

তুষার আবদুল্লাহ : ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সময় নেই চুপ করে বসে থাকার। বলছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাগরিকদের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে চা-কফি-ঝালমুড়ির আড্ডাতেও বেশ তাড়া। কোনও কথা নিয়ে তর্ক করতে গিয়ে আবার কোনও বিষয় বাদ পড়ে যায়। বিষয়ের ফলন বেশ ভালো। বারোমাসি আবাদে নিত্য নতুন ফসল ফলে যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে ফরহাদ মজহার, চিকুনগুনিয়া, গৃহকর্মী নির্যাতন, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অপরাধে শিক্ষক বহিস্কার, জন্মদিনের নিমন্ত্রণে ডেকে তরুণী ধর্ষণ, বরিশাল সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের ইয়াবা ব্যবসা, সংসদ সদস্যদের মাটিকাটা-মেডিক্যালের মেঝে পরিষ্কার, সংসদ সদস্যের প্রতিপক্ষকে ক্রসফায়ারে দেওয়া, একই বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপর শিক্ষকের ৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া। উল্টোপথে বাস চলায় বাধা দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের হামলা। স্কুল ছাত্রীর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আমন্ত্রণ পত্র বানানোর অভিযোগে ইউএনও’কে কারাগারে পাঠানো, টেলিভিশনের দুই তারকার বিবাহ বিচ্ছেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর আশঙ্কা। এতসব ঘটনার সঙ্গে ভোটের গন্ধ, মন্ত্রী পরিষদে রদবদলের গুঞ্জনতো আছেই।

শহরের রাস্তাগুলোতে এখন আর দেয়ালে লিখন বা ‘চিকা’ মারাতে চোখ আটকায় না। এক সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে উদ্দীপক লিখন চোখে পড়তো। দেয়াল লিখন পাঠ করেই অনেকে বিপ্লবে উদ্দীপিত হয়েছেন। এখন দেয়াল লিখন কমে এসেছে। যতোটুকু আছে সেটা দল ও নেতার প্রশস্তিতে তৈলাক্ত। এর বাইরে শহরের নানা প্রান্তে চলছে ‘সুবোধ’ সিরিজ। কেউ বলছে সুবোধ তুই পালিয়ে যা। এই শহর তোর না। আবার কেউ সুবোধকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য, সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার তাগাদা দিচ্ছে।এই দেয়াল লিখনের বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ প্রতিদিনই এখানকার নাগরিকেরা নিজ নিজ দেয়ালে ‘চিকা’ মেরে যাচ্ছেন। শহরের বাড়ির দেয়ালে পোস্টার-দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ হলেও, ফেসবুকে লিখে যাচ্ছেন সবাই। যে প্রতিবাদ, ঘৃণা ছিল কংক্রিটের দেয়ালে, সেটাই এখন ব্যক্তির দেয়ালে প্রদর্শিত হচ্ছে। একে অপরের দেয়াল লিখনের বিষয়ের সঙ্গে যেমন সহমত পোষণ করছেন। পাশাপাশি ভিন্নমতও দিচ্ছেন। পারস্পরিক বিদ্বেষে যে কুলষিত হচ্ছে না দেয়াল তা কিন্তু নয়, বেশ ভালো ভাবেই হচ্ছে। কেউ কেউ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিব্রত বা হেয় করার জন্যই কেবল লিখে যাচ্ছে। যা দুষিত করছে সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে ব্যক্তি বা সমষ্টির মতপ্রকাশের দেয়ালটিকে।

কংক্রিটের দেয়াল লিখন স্থায়ী হতো। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সয়ে যেতো কোনও কোনও লাল বা কাল লিখন। নিয়মিত যাতায়াতে পড়া হতো। ভাবনায় নতুন রূপে একেক দিন কথাগুলো ধরা দিতো। শুরুর দিকে মনকে হয়তো কোনও কোনও বাক্য আন্দোলিত করতে পারেনি। কিন্তু সময়ের বাস্তবতায় প্রায় ঝাপসা হতে যাওয়া বাক্যটি কোনও ব্যক্তি কিংবা সমাজকেই নাড়া দিয়ে বসেছিল। ফেসবুকের দেয়াল যে নাড়া দিতে পারে না, দেয় না সেই কথাও বলা যাবে না। শাহবাগের গণজাগরণ ফেসবুক দেয়ালের ফসল। তবে এরপর আর ফেসবুক দেয়ালের সামষ্টিক জাগরণ দেখা যায়নি। কারণ শাহবাগের ফসলে চিটে ধরে গেছিল বলে অনেকের ধারণা। সেই ধারণা থেকেই সামষ্টিক জাগরণের স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে ফেসবুকের নাগরিকেরা। আছে নানা রকম ও নীতিমালার জুজুর ভয়। আছে হুমকি-ধমক।

তাই যতোটা রক্ষণাত্বক ভঙ্গিতে দেয়ালে লিখন, চিকা মেরে যাওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দেয়ালে লেখার বিষয়ের এতো সরবরাহ যে, কোনও লিখনই স্থায়ী হচ্ছে না। সকালের দেয়ালের লিখন সূর্য মধ্যগগণে আসার আগেই অন্য বিষয় এসে দখল নেয়। পরদিন ভোর হতে বিষয় বদলাতে থাকে। তাই মুহূর্তের লিখন হৃদয়কে বিপ্লবে প্লাবিত করার ফুরসত পায় না। ফেসবুক দেয়ালে লেখা স্লোগান গুলোর অপমৃত্যুর সঙ্গে মৃত্যু ঘটে আমাদের শুভ বুদ্ধিরও।

কিন্তু তারুণ্য বা এই সময় যখন সামাজিক যোগাযোগের নাগরিকত্বের পরিচয়কেই বড় করে দেখছে। গোলককে নিয়ে এসেছে এক উঠোনে। তখন শুভবুদ্ধি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে নিবেদিত জাগরণের উৎকৃষ্ট স্লোগান গুলোর ক্যানভাস হতে হবে ফেসবুক দেয়ালকেই। এই দেয়ালকে দুষিত হতে দেওয়া যাবে না। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং গোলকের স্বার্থে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud