November 5, 2025
কক্সবাজার: কাছে চলে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’। সোমবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল (১১.৮০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.৫০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ)।
এর আগে শনিবার রাত থেকে রোববার সকালে ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে মহাসেন প্রায় ২শ কিলোমিটার কাছে চলে আসে। প্রথম দিকে কক্সবাজার থেকে ১৫শ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। রোববার দুপুর ১২টায় ছিল ১ হাজার ৩৬০ কিলোমিটার দূরে। এরপর সন্ধ্যায় তা কমে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটারে চলে আসে।
ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একই সঙ্গে উত্তাল সাগরে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ‘মহাসেন’ ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে।
শনিবার কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৮১৫ দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করা নিম্নচাপ ১১০ কিলোমিটার এগিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ রূপ নেয়, যা উৎপত্তিস্থল থেকে বর্তমানে চারশ’ কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে। মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ ‘মহাসেন’ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে বা বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হযেছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘মহাসেন’ যে মাত্রায় অবস্থান করছে, সংঘটিত ৯১’র প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়কে ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে মসজিদে মসজিদে দোয়া ও অন্যান্য উপসানলয়ে প্রাথর্নার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কায় জেলার উপকূলীয় এলাকার মানুষের আতঙ্কে সৃষ্টি হয়েছে।
মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু জানান, ‘মহাসেন’র খবর জানার পর থেকে এখানকার মানুষ অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। ধলঘাটা ছাড়াও উপজেলার মাতারবাড়ি, সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গা, কুতুবদিয়া, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও পেকুয়ার কিছু এলাকায়ও এ অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে মাছ ধরার নৌকা কূলে ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’র ঝুঁকি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সর্বোত্তম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। প্রস্তুতির আওতায় স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি জানান, জেলার উপকূলের বসবাসরত মানুষ, সাগরে মাছধরারত জেলেদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সব উপজেলায় মাইকিং, রেডিও বার্তার মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। দুর্যোগকালে সঙ্কটময় মুহূর্তসহ সব ধরনের জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের ৬৪২৫৪ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য তিনি সবার কাছে আহ্বান জানান। এছাড়া জেলার প্রতি উপজেলায়ও জরুরি সভা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দায়িত্বশীল সব বিভাগের কর্মকর্তাদের যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
ওই সভায় দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তীকালে করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। তারমধ্যে যোগাযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর আওতায় রয়েছে মোবাইল, টেলিফোন ও রেডিও নেটওয়ার্ক। এছাড়া দুর্যোগকালে জেলার ৪৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কাজল কান্তি বড়ুয়া বাংলামেইলকে জানান, দুর্যোগকালে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারির ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ১১৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন সব লোকজনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দুর্যোগের বিষয়ে কোনোভাবে অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর সবাইকে সমন্বিত প্রস্তুতিই নিতে হবে। সমন্বিত প্রস্তুতি ঝুঁকি মোকাবেলায় অবদান রাখবে।’