পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

‘আমাকে আর একটিবার যদি মা ডাকতো’

Posted on February 25, 2016 | in জাতীয় | by

ঢাকা: ‘আমাকে আর একবার মা ডাকল না। আর একটিবার যদি মা ডাকতো। বাবা আমার, সকালে কথা বলে অফিসে চলে গেল, আর ফিরল না। আমি অনেক ধৈর্য ধরেছি। আর বাঁচতে চাই না।’ ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত মেজর মিজানুর রহমানের বৃদ্ধা মা কহিনূর বেগম ছেলের কবরের পাশে এভাবে স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে বড় ছেলে লে. কর্নেল ফেরদৌসের কাঁধে ভর দিয়ে মিজানুরের ছোট ছেলে ফারজিন রহমান সামিকে (১০) সঙ্গে নিয়ে বনানী করবস্থানে ছেলের কবর জিয়ারত করতে আসেন এই মা। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নাতি সামিকে বুকে জড়িয়ে বারবার ছেলেকে মিজান মিজান বলে ডাকছিলেন আর বলছিলেন, ‘দেখো তোমার সামি কত বড় হয়েছে। সে এখন স্কুলে যায়। তুমি থাকলে কত খুশি হতে। তুমি কিছুই দেখতে পারলে না। আমি এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না।’

কহিনূর বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বলে, মা তুমি সামিকে দেখ। এরপর আমার বাবা আমাকে আর মা ডাকল না। আর কথা বলল না। সামির বয়স তখন তিন। এখন সামি স্কুলে যায়। কিন্তু মিজান কিছুই দেখতে পেল না।’ এরপর তিনি আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেজর মিজানুরের বড়ভাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত লে. কর্নেল ফেরদৌস।25-02-16-Pilkhana Tragedy_Banani-10
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদরে। দেশপ্রেম থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি। মিজান আমার ছোট। ঘটনার আটমাস আগে ওর স্ত্রী রেবেকা ফারহানা রোজী মারা যায়। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে তাহসিন রহমান রামি (১৫) ও ছেটে ছেলে ফারজিন রহমান সামি (১০)। বড়ছেলে এবার মির্জাপুর ক্যাটেড কলেজ থেকে এসএসসি দিচ্ছে। ছোট ছেলে সামি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমিই এখন দুই ছেলের দেখাশোনা করি। ছোট ছেলেটা মায়ের কাছে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে দুটির মুখের দিকে তাকালে পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। ওদেরতো কেউ নেই। বাবা-মা সব আল্লাহ নিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধা মা এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করবেন?’

এক স্বজনের বিলাপতাদের পাশেই শহীদ মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের বাবা ও বোন বিলাপ করছিলেন। মেয়েদের নিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন বাবা মফিজুল ইসলাম সরকার। ছেলের মেধা, বুদ্ধি ও চাকরির সফলতা তাকে গর্বিত করেছিল। অক্সফোর্ড ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলায় সেনাবাহিনীতে তিনি ডিকশনারি মমিনুল নামে পরিচিত ছিলেন বলে এই বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান।
মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেটা এতো মেধাবী ছিল, আমি নিজেও অবাক হতাম। তাকে আমি কম পড়তে বলতাম। কিন্তু সে বলত সমস্যা নেই বাবা।’
বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা বিচারে তাদের ফাঁসি হবে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিচার আমার কাছে মূল বিষয় না। আমার প্রশ্ন হলো, এটা কার উসকানিতে, কে বলল এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে? আমি তা জানতে চাই। ছেলে হত্যার বিচার পাবো, এটা আমার আশা।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হওয়ার ১২ দিন পর তার একটি ছেলে হয়। তার নাম সাদবাত ইবনে মমিন (৭)। সে এখন তার মায়ের সঙ্গেই থাকে। আমি বৃদ্ধ মানুষ এখনও বেঁচে আছি অথচ আমার ছেলেটা নেই। আমার নাতিটা এতিম হয়েই জন্ম নিয়েছে।’

শহীদ কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদের বড়বোন দিলরুবা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিচারের রায় হয়েছে। তা দ্রুত এখন কার্যিকর করা দরকার। আমরা বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।’
অশ্রুভেজা প্রার্থনাবিদ্রোহের পর পিলখানার গণকবর থেকে তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৩৮ সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই গণকবরে পাওয়া যায় মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার বনানী কবরস্থানে আসেন তার মা রাজিয়া জামান ও বড়বোন হোসনে আরা পারভীন। মোস্তফার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মা-বোনের কান্নায় কবরস্থানের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
বোন পারভিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ভাইটা মিশনে ছিল। মিশন থেকে ফিরে বিডিআরের খাগড়াছড়িতে পোস্টিং পায়। ঘটনার আগের দিন তাকে মেইল করে বিডিআরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়। এরপর সে আসে। আমাকে একটি বাসা ঠিক করে দিয়েছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার সঙ্গে কথা হয়। এরপর ঘটনার দিন মা ফোন করে জানায় পিলখানায় ঝামেলা হয়েছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে ভাইয়ের মোবাইলে ফোন বন্ধ পাই। ২৭ ফেব্রুয়ারি গণকবর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কবে বিচার পাবো তা জানি না। তবে এর বিচার হওয়া দরকার। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা দরাকার।’
শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছোট বোন রুবিনা নেসা নিনি কবর জিয়ারত করে বলেন, ‘এর নেপথ্যে কারা তা জানা দরকার। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়বনানী কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় যারা সাজা পেয়েছেন, তারাই মূলত এর সঙ্গে জড়িত। একটু ধীরগতিতে চললেও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে যথেষ্ঠ চেষ্টা করা হয়েছে এর নেপথ্যে আর কেউ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করার। যতটুকু উদঘাটন হয়েছে তার বাইরে আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।’
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। বিদ্রোহী সদস্যদের হাতে বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও নিহত হন। বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পাননি ডিজির স্ত্রী, বাসার কাজের মেয়ে ও বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনও।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন

Comments are closed.

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud