পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

ভারতে যাচ্ছে সোনা, ট্রানজিট বাংলাদেশ

Posted on April 2, 2014 | in জাতীয় | by

gold_bullionঢাকা: বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার চোরাচালান ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন ভারতে সোনা আমদানিতে কর বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করায় সোনার চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতে সোনা আমদানিতে ১০ ভাগ কর বৃদ্ধি করায় চোরাকারবারীরা ভারতে অবৈধভাবে সোনা পাচারের জন্য বাংলাদেশকে তাদের পছন্দের রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বিগত বছরে ৫২০ কেজি সোনা উদ্ধার কার হয়। এছাড়া ২০১২ সালে ২৫ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। কিন্ত চলতি বছরে সোনা চোরাচালানোর ঘটনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত তিন মাসে ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিমান বন্দর থেকে ২২০ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। গত ২৫ মার্চ চট্রগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইট থেকে ১০৭ কেজি উদ্ধার করা হয়।

২০১৩ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রঃ) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ১২৪ কেজি ওজনের মোট ১ হাজার ৬৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের আটক করা সোনার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় চালান।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে ঢাকা ও চট্রগ্রাম বিমান বন্দর থেকে ১/২ কেজি সোনা উদ্ধার করাটা এখন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মইনুল খান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সোনা চোরাচালানের ঘটনায় বিমান বন্দরগুলোতে কাস্টমসের কার্যক্রম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কাস্টমস ও জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের মতে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাংলাদেশ, ভারতের সোনার দামের পার্থক্য থাকার কারণে চোরাকারবারীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে সোনা পাচারের বিষয়ে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। দুবাইতে ১০ গ্রাম সোনার দাম ৩৮ হাজার টাকা, যেখানে ভারত ও বাংলাদেশে সেই পরিমান সোনার দাম যথাক্রমে ৪০ ও ৪৬ হাজার টাকা। যার কারণে চোরাচালানের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার বহিঃপ্রবাহ বন্ধ ও চলতি মুদ্রার ঘাটতি কমানোর জন্য ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ভারত সোনা আমদানিতে করের পরিমান ২ ভাগ থেকে ৪ ভাগে বৃদ্ধি করে। এছাড়া বিগত বছরের জুন মাসে আমদানি কর ৬ ভাগে এবং আগস্ট মাসে ১০ ভাগে উন্নতি করা হয়। সোনা আমদানিতে কর বৃদ্ধি করায় ভারতে সোনা আমদানিতে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ভারতে প্রতিবছরে প্রায় ১ দশমিক ৬২ লাখ কেজি সোনা আমদানি করা হয়ে থাকে, কিন্ত আমদানিতে কর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত নভেম্বর মাসে সেই আমদানির পরিমাণ কমে গিয়ে দাড়ায় মাত্র ১৯ হাজার ৩শ’ কেজিতে। তাই লাভের আশায় চোরাকারবারীরা সোনা চোরাচালান করতে অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ভারতের চেম্বার অফ কমার্সের তথ্য অনুযায়ী চোরাই পথে এক কেজি সোনা সংগ্রহ করতে পারলে দেড় লাখ টাকা সাশ্রয় ঘটে।

বিশ্ব সোনা কাউন্সিলের হিসাব মতে, প্রতিবছর ভারতে ১৫০-২০০ টন সোনা চোরাচালান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুষ্টিয়ার দর্শনা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের সোনার চালান উদ্ধার করে। বিএসএফ ও ভারত কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী ভারতে সোনা চোরাচালানের মোট ৫ ভাগ আসে বাংলাদেশ থেকে। সাধারণত বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলো থেকে ভারতে সোনার চালান পাঠানো হয়ে থাকে।

সোনা চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে যশোর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লে.কর্নেল মতিউর রহমান বলেন, ‘স্থল বন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণের অভাবে সোনার চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্থল বন্দরগুলোতে যদি পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল থাকত তবে সোনা চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হত।’

বিজিবির এই অফিসারের তথ্য মতে বিগত তিন মাসে বিজিবি ও পুলিশ যশোরের বেনাপোল বন্দর থেকে সাড়ে নয় কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী সোনা ও গরুর চোরাচালান একে অপরের সাথে সংযুক্ত। গরু চোরাচালানের জন্য ভারতে অনেক সময় পয়সার পরিবর্তে সোনার বার দিয়ে লেনদেন করা হয়। তাই সোনার চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দীলিপ রায় বলেন, বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। চোরাকারবারীদের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন। কারণ চোরাকারবারীরা বাজারে সল্পমূল্যে সোনা বিক্রি করছেন। চট্রগ্রামে যে ১০৭ কেজির চালানটি উদ্ধার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের তিনমাসের সোনার চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

তবে বাংলাদেশে গড় সোনা ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোন হিসাব নেই। তবে ভারত কিন্ত চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সোনা ব্যবহারকারী দেশ। বিশ্ব বাজারে হরহমেশাই সোনার দাম উঠা নামা করার কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সোনা আমদানি কম করে থাকেন। এছাড়া বাংলাদেশের সোনার বাজার খুব বড় নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিদেশি যাত্রীদের বহন করা জনপ্রতি ২শ’ গ্রাম সোনা বহনকারীদের উপর নির্ভর করে থাকে। প্রতিগ্রাম সোনার উপর ১৫০ টাকা করে কর দিতে হয়।

বাংলাদেশ রতœ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার আগারওয়াল বলেন, দুটি বিমান বন্দর থেকে প্রতি দিন প্রায় ১২ থেকে ১৭ হাজার যাত্রী বাংলাদেশে আসেন। তারা যদি অনুমোদিত সোনা ও অথবা ১শ’ গ্রাম করেও সোনা নিয়ে আসেন তবে প্রতিদিন সোনার পরিমান দাড়ায় ৪০ কেজিতে। তাই সোনা আমদানি করার প্রয়োজন হয় না।’

স্থানীয় বাজারে সোনার পূনঃব্যবহার সোনার যোগানের আরও একটি রা¯ত্মা। সূত্র অনুযায়ী ঢাকার তাতী বাজারে দৈনিক প্রায় ৫০ কেজি সোনা পূনঃব্যবহার ও বিনিময় করা হয়ে থাকে। সোনার চালান আটক হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে নিলাম করে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্ত ২০১১ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি সোনা নিলাম স্থগিত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud