October 2, 2025
ঢাকা: ‘পুলিশের গাড়িতে এখনো ইংরেজি লেখা প্রতীয়মান হয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়ও নিত্য নতুন ইংরেজি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে’। সর্বত্র বাংলার প্রচলন নিয়ে করা রিটের আদেশে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ বিভাগকে তাদের অধীনস্থ সব বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে ইংরেজিতে লেখা সব নেমপ্লেট, নাম্বারপ্লেট ও সাইনবোর্ড বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া সব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সব ধরনের ইংরেজি বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব ও তথ্য সচিবকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড ও সব ধরনের নাম্বার ও নেমপ্লেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করার জন্য সরকারকে ১৫ মে পর্যন্ত সময় দেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এ আদেশ অনুযায়ী প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত ওই আদেশ দেন। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড ও সব ধরনের নাম্বার ও নেমপ্লেটে এক মাসের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সর্বত্র বাংলা প্রচলন নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলও জারি করেন। রুলে অনতিবিলম্বে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’১৯৮৭ (১৯৮৭ সালের ২নং আইন) বাস্তবায়নে সরকারেরর নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ওই বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’১৯৮৭ বাংলাদেশের সর্বত্র অনুসরণ করার জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং ওই আইনের ৪ ধারামতে প্রয়োজনীয় বিধি/সার্কুলার জারি/প্রকাশ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন মো. ইউনুছ আলী আকন্দ। আবেদনে বলা হয়, বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ (১৯৮৭ সনের ২ নম্বর আইন) পাস হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, দীর্ঘ ২৬ বছরেও ওই আইনটি ঢালাওভাবে প্রচার হয়নি বা আইনটি সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে না। ওই আইনের ধারা ৩ এর উপ-ধারা (৩) মতে, উল্লেখ আছে যে, ‘৩(৩) যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন তাহা হইলে উক্ত কার্যের জন্য
তিনি সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ আইন ঢালাওভাবে অমান্য করলেও এ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সরকারি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ওই আইন বাস্তবায়নে সরকার নিষ্ক্রিয় এবং সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরকারের কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম, চিঠিপত্র আদান প্রদান, আইন-আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগগ কার্যাবলী বাংলায় লিখিত হচেছ না। সরকারি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কার্যক্রমও বাংলা ভাষায় প্রচলন করা হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি শব্দ দিয়ে আইনও করে। উদাহরণ স্বরূপ “বাংলাদেশ রাইফেলস” যেটি বাংলা শব্দ এটাকে পরিবর্তন করে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) নামে ইংরেজি শব্দ দিয়ে আইনও পাস করে। যা সংবিধানের ৩/৭/২৬ অনুচ্ছেদের সহিত সাংঘর্ষিক। দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশনসহ অন্যান্য মিডিয়ার বিজ্ঞাপনেও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ব্যবহার করা হয়।
অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে লেখা দেখা যায়, টেলিভিশন মিডিয়ার নাম বাংলায় নেই। যেমন- Channel-9, BTV World, ATN Banla, ATN News, Bangla vision, Channel-I, Channel-24, ETV, RTV, NTV, ¸ TV, GTV, etc. তাদের লাইসেন্সও সরকার ওই নামেই দিয়েছে। তাদের প্রচার প্রচারণায়, বিজ্ঞাপনে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি দেখা যায়।
সরকার লাখ লাখ গাড়ির নাম্বারপ্লেট অনেকে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে দেয়। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’১৯৮৭ অনুসরণ করা হচ্ছে না, যা ওই আইনের ৩(৩) ধারা অনুসারে অসদাচরণ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার/তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আইনের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘সরকার সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি দ্বারা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবেন’। কিন্তু এ বিষয় সরকার এতো নিষ্ক্রিয় যে, আইনটি সর্বত্র প্রচার এবং বাস্তবায়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বিধিমালা বা সার্কুলার জারি করে নাই।