October 3, 2025
ঢাকা: শেয়ারবাজারে ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা মার্জিন লোনে আটকে রয়েছে। এরপর গত তিন বছরেরও বেশি সময় সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাজারের মূল সমস্যা মার্জিন ঋণের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ অবস্থায় যখনই বাজার ধীরে ধীরে গতিশীল হয়ে ওঠে, তখনই ওই সব ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ সমন্বয়ের গ্যাঁড়াকলে পড়ে বারবার পতনের বৃত্তে বাজার হোঁচট খাচ্ছে- এমনটাই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারে দীর্ঘ মন্দা ও মার্জিন লোনে আটকে থাকা পোর্টফোলিও সক্রিয় করতে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো না গেলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট দেখা দেবে।
এ বিষয়ে একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাজারে মূল সমস্যা মার্জিন ঋণ। কারণ ২০১০ সালে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছিল। পরে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ ঘোষণা দিয়ে বাজার থেকে বের করে নিলে বাজার তার ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সব বিনিয়োগকারী বড় ধরনের ঋণের জালে আটকে যায়। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ আইসিবিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের জালে আটকে পড়েছে। এ অবস্থা উত্তরণে বিকল্প কৌশল নির্ধারণ করে সরকার, প্রাইভেট কোম্পানি বা ব্যক্তি পর্যায়ের বড় উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ পর্যন্ত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার তারল্য সরবরাহ করার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেয়ারে সুবিধাজনক প্রভিশনিং রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বাজার ধীরে ধীরে ঋণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘসময় ধরে শেয়ারবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এর মূল কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, আইসিবির প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা মার্জিন লোনের জালে আটকে রয়েছে। এসব পোর্টফোলিও সক্রিয় না হওয়ায় বাজার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসা খুবই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিতে হলে তারল্য প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। এটি করতে হলে মার্জিন লোনে আটকে থাকা শেয়ারের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য প্রভিশনিং সুবিধা দিতে হবে। এজন্য সরকার, প্রাইভেট কোম্পানি বা বড় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। শেয়ারবাজার থেকে যেহেতু সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে, সেহেতু বাজারের চলমান ক্রান্তিকালে সরকারকেই বাজারে সার্বিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি জানান, বাজারের মূল সমস্যা মার্জিন লোন। এ লোনের বেড়াজাল থেকে বাজার বের করতে হবে। যে পরিমাণ মার্জিন লোন রয়েছে এর বিপরীতে বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানো জরুরি হয়ে উঠেছে। মার্জিন লোনে আটকে থাকা শেয়ারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তিন বছর বা আরো কিছুটা সময়ের জন্য বিশেষ ফান্ড প্রভিশনিংয়ের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা গেলে, তবে তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠবে। এরপর সরকার বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও উদ্যোক্তা যারাই ফান্ড সরবরাহে সহায়তা করবে, তাদের ফান্ড তারা ফিরে পাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক এক চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে শেয়ারবাজার যে অবস্থানের মধ্যে রয়েছে এখান থেকে টেনে তুলতে সরকার বা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে অন্তত ২-৩ বছরের জন্য বিশেষ ফান্ড সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
তিনি আরো জানান, ২০১০ সালে ব্যাংকগুলো বাজারের ঝড়ের বেগে বিনিয়োগ করেছিল। আর এর পেছনে ছুটেছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ বাজার থেকে বের করে নিলে নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখে পড়ে।
এ বিষয়ে কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্জিন ঋণের সমস্যাটা বাজারে রয়েই গেছে। তাদের এ ঋণের টাকা সমন্বয় করতে হয়। আবার বিনিয়োগকারীরা যারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাদের টাকার ওপরও চক্রাকারে সুদ বাড়ছে। এ অবস্থায় বাজার যখনই স্থিতিশীলতার দিকে যেতে শুরু করে, তখনই এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ সমন্বয় ও মুনাফা তোলায় বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা নেমে আসে। তাই বাজার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।…..শেয়ারনিউজ