পৃথিবীকে জেনে নিন আপনার ভাষায়….24 Hrs Online Newspaper

সাপ নিয়ে রাজবাড়ীর কয়েক তরুণের স্বপ্ন

Posted on May 29, 2014 | in ব্যবসা-অর্থনীতি | by

RAJBARI1রাজবাড়ী : কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের কাঁসাদহ গ্রামের কয়েকজন তরুণকে এলাকাবাসীরা কিছুদিন আগেও স্রেফ পাগল বলত। কিন্তু এখন উল্টো তারাই উৎসাহ দিচ্ছেন। বিষাক্ত গোখরা সাপ নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন তারা। সে স্বপ্ন পূরণে পরীক্ষামূলকভাবে ৮৩ শতাংশ জমির উপরে গড়ে তুলেছেন ‘রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম অ্যান্ড সরীসৃপ পার্ক’। এ খামারে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ৩৫টি গোখরা। সম্প্রতি ১টি সাপ দিয়েছে ১৪টি ডিম। এতে খামারে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি সাপের থাকার জন্য বরাদ্দ রয়েছে একটি করে প্লাস্টিকের খাঁচা। এখানে ঠাঁই পেয়েছে দাড়াস, খোয়া গোখরা, তেলে কালো গোখরা, কাল গোখরা, পঙ্খীরাজসহ আরও চার প্রজাতির গোখরা। সাপগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে। এখন অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, কেউ সাপ দেখলেই খামারে খবর দিয়ে যায়।

খামারের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. রবিউল ইসলাম রঞ্জু (৩১) জানান, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে জৈবসার ও সাপের খামারের কিছু তথ্য পাই। পরে যোগাযোগ করি ঝিনাইদহের জৈবসার খামারি হেলাল উদ্দিন ও পটুয়াখালীর সাপের খামারি আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। হেলাল উদ্দিনের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের খ্যাতিমান কৃষিবিজ্ঞানী এম গুল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে গত বছরের প্রথম দিকে গড়ে তুলি সাপের খামার। এলাকাবাসী প্রথমে পাগল বলে আখ্যায়িত করলেও এখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এলাকায় এখন আর কেউ সাপ মারে না। কারও বাড়িতে সাপ ধরা পড়লে আমাদের খবর দেয়।

সাপের পরিচর্যার বিষয়ে জানান, খামারের সাপগুলোকে সপ্তাহে ১ দিন বয়লারের বাচ্চা (১ দিন বয়সের) খাওয়ানো হয়, ২ বার গোসল করাতে হয় ও ১ দিন খাঁচা পরিস্কার করা হয়। সাপ ধরা ও লালন-পালনে ব্যবহৃত হয় লাঠি, টং, গ্লাভস ও গাম বুট। কাজটিতে বেশ আনন্দ পেলেও জীবন নিয়ে খেলাই মনে করেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষধর সাপ নিয়ে খেলা জীবনের সঙ্গে বড় বাজি। যখন তখন ঘটতে পারে মৃত্যুর মত দুর্ঘটনা। তাই জেলার হাসপাতালে দরকার সাপের কামড়ের প্রতিষেধক অ্যান্টি ভেনাম।

খামারের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় অনান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সাপের খামারে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অনেক সহজ। খরচও অনেক কম। সরকারের সহযোগিতা ও নিবন্ধন পেলে খামারে সংগৃহিত বিষ দেশের ওষুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারবে। অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। খামারের কর্মী প্রদীপ শীল জানান, এলাকার ভাই ও বন্ধুদের গড়ে তোলা এ খামারে কাজ করছেন। খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। সাপ লালন-পালনের পাশাপাশি খামারে হাঁস-মুরগী, কবুতর ও মাছসহ অন্যান্য উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরি করা হবে। এ পর্যন্ত খামারে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।

এ কাজের ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোক্তাদের পরিবারও খুব শঙ্কিত। রঞ্জুর মা মোছা. আনোয়ারা বেগম (৬০) জানান, ছেলের জন্য সব সময় আাল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করেন। সরকারের কাছে খামারের জন্য সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন। রাজবাড়ী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. নূরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের কয়েকজন উদ্যোগী ছাত্র খামারটি গড়ে তুলেছে। প্রকৃতিতে বিলুপ্তপ্রায় বিষাক্ত প্রাণীদের নিয়ে যে খামারটি গড়ে তুলেছে, সেটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীরা রক্ষা পাবে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে।

প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খামার উন্মুক্ত রাখা হয়।

সর্বশেষ খবর

আজকের ছবি

www.facebook.com

Tag Cloud