April 27, 2025
ইসলাম ডেস্ক: সামনে পবিত্র ঈদুল আযহা। এদিন মুসলমানেরা পবিত্র ঈদের নামাজ শেষ করে কোরবানি করে থাকেন। তাই মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি জায়েজ কিনা কিংবা কাদের নামে কোরবানি করা জায়েজ-এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা খুবই জুরুরী। তাই নিচের বর্ণনাটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়েন। মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েয। তবে মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তাহলে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। [মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২]
প্রশ্ন : আমার পিতা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার নামে কোরবানি করার নিয়ত করেছি। প্রশ্ন হল, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কোরবানির গোশত কী করতে হবে? তার অংশের পুরো গোশতই কি সদকা করতে হবে, নাকি নিজেরাও তা খেতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: মৃত ব্যক্তি যদি কোরবানির জন্য ওসিয়ত না করে থাকে তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কোরবানির গোশতের হুকুম সাধারণ কোরবানির মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কোরবানি করা হয়ে থাকে তাহলে এ কোরবানির পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না।
[ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫]
প্রশ্ন: প্রতি বছর আমরা ছয় ভাই একটি গরু কোরবানি করি। একটি গরুতে যেহেতু সাতজন শরিক হতে পারে তাই এবার আমরা পশুর ৭ম ভাগটি ইছালে ছওয়াবের উদ্দেশে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে চাচ্ছি। এভাবে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে কি এবং ঐ অংশের গোশত কি আমরা খেতে পারব?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ৬ জন মিলে ৭ম অংশ পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে এবং আপনারা ঐ অংশের গোশত খেতে পারবেন। তবে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। এক্ষেত্রে উত্তম হল, সবাই মিলে এক অংশের টাকা এক ভাইকে মালিক বানিয়ে দিবে। আর ঐ ভাই পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করবে। এতে কাজটি নিয়মসম্মত হবে এবং সকলে সওয়াবও পেয়ে যাবে। আর এ অবস্থায়ও মৃত পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া অংশের গোশত কোরবানিদাতার হবে। সে তা নিজেও খেতে পারবে, সদকাও করবে পারবে এবং অন্য শরিককে হাদিয়াও দিতে পারবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮]
ইসলাম ডেস্ক: কোন কোন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। এদের ধরণ ও বয়স কেমন হবে। আর কি ধরণের পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়। কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে এ সকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। ইসলামি নির্দেশ অনুযায়ী ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট এই ছয় ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েয। এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়।
কোরবানির পশুর বয়স
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে পূর্ণ এক বছর বয়সের হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সের ছাগল, ভেড়া, দুম্বা যদি এমন মোটাতাজা হয় যে, এক বছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলে তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে এর দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে।
গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে।
উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে।
কোরবানির পশু হƒষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।
যে পশু লেংড়া অর্থাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এধরনের পশু দ্বারা কোরবানি হবে না।
যে পশুর একটিও দাঁত নেই, এর কোরবানি হবে না।
যে পশুর কান জš§ থেকেই নেই, এর দ্বারা কোরবানি হবে না।
যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙে যায়, এর দ্বারা কোরবানি হবে না।
যে পশু দুই চোখের কোনো চোখেই দেখে না বা একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নষ্ট তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়।
যে পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা এর চেয়ে বেশি কেটে গেছে এমন পশু কোরবানি হবে না।
যে পশু জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না এমন কৃশকায় ও দুর্বল পশু কোরবানি হবে না।
পছন্দসই ভাল পশু কেনার পর এমন দোষত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কোরবানি বিশুদ্ধ হয় না, এমনটি হলে সেটি দিয়েই কোরবানি চলবে।
গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী পশু কোরবানি দেয়া মাকরুহ।
বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে।
নিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে দেশটিতে পবিত্র হজব্রত পালনে যাওয়া হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ১ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার হজ শুরু হবে। সৌদি আরব সমস্ত প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-আরাবিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল মানসুর আল-তুর্কি বলেছেন, হজের সময় বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লির নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত সেনাদের মধ্যে রয়েছেন সন্ত্রাসবাদবিরোধী এলিট ইউনিটের সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ ও জরুরি বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ডের অতিরিক্ত সেনারা তাদের সহায়তা করছেন।
বিশ্বের শীর্ষ কট্টরপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) কয়েকটি হামলায় এ বছর সৌদি আরবে বেশ কয়েক ডজন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। হজের সময় জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। গতকাল বার্তা সংস্থা এপি’কে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে আল-তুর্কি তার সঙ্কল্পের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবের কোন স্থানে এক সেন্টিমিটার পরিমাণ জায়গাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না জঙ্গিরা। মক্কায় এ বছর হজ পালনে সারা বিশ্ব থেকে ৩০ লাখ হজযাত্রী সমবেত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজ ডেস্ক: শোনা যাচ্ছে মার্কিন গায়িকা জ্যানেট জ্যাকসন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়েছেন। ২০১২ সালে কাতারের মুসলমান শিল্পপতি ওয়াসাম আল মানাকে বিয়ে করেন তিনি। ঞ্জন উঠেছে, ৪০ বছর বয়সী মানাকে বিয়ের পরই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন জ্যানেট। আর এরপর থেকেই কনসার্টে খোলামেলা পোশাক পরিধান এবং যৌন আবেদনময় ভঙ্গিতে নাচাও কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক সূত্র বলছে, “নতুন ধর্মের মধ্যে জ্যানেট যেন আপন ঘর খুঁজে পেয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে তার পরিবার ও বন্ধুদের জানিয়েছেন, তারা সবাই জ্যানেটের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছেন।” সূত্রটি আরও বলছে, “জ্যানেট অনেকটা সময় ধরে ইসলাম এবং অনুসারীদের নিয়ে পড়াশোনায় ব্যয় করেছেন। অশালীন ভঙ্গীতে নাচ ও যৌনাবেদনময় গানের কথা এখন তার জন্য অতীতের বিষয়।” ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান বলছে, জ্যানেট তার সর্বশেষ ট্যুরের ইতি টানার সময় বলেন ‘ইনশাআল্লাহ্’। ২০০৮ সালে জ্যানেটের ভাই মাইকেল জ্যাকসন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে দাবী করেছিল ট্যাবলয়েডটি।
মাগরিবের ফরয এবং সুন্নাতের পর কমপক্ষে ছয় রাকআত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকআত নফলকে আওয়াবীনের নামায বলা হয়। হাদিসে এই ছয় রাকাত আওয়াবীনের ফযিলতের বার বছরের ইবাদত করার সওয়াব অর্জিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। অপর এক হাদিসে বিশ রাকআত পাঠ করলে জান্নাতে আল্লাহ তার জন্য একটা ঘর তৈরি করবেন বলা হয়েছে।
এ নামাযটির ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস
হযরত হুযাইফা (রা) বলেন “আমি নবীজি (সা)-র কাছে এসে তার সাথে মাগরীবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরীবের পরে ইশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।” সহীহ হাদিস। (ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ, নসাঈ, সুনানুল কুবরা)।
অন্য হাদীসে আনাস (রা) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন।”
হযরত হাসান বসরী বলতেন, ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাযও রাতের নামায বা তাহাজ্জুদের নামায বলে গণ্য হবে। (বাইহাকী, আস সুনানুল কুবরা)।
আওয়াবীনের নামাযের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি
অনেকে বলেন, সালাতুদ দুহাই (চাশতের নামায) হল আওয়াবীনের নামায। সুতরাং মাগরিবের পরের নফল নামাযকে আওয়াবীনের নামায বলা ভুল। এবং এই নামাযের কোনো ভিত্তি নেই। তাদের ধারণাটি ভুল।
চাশতকে আওয়াবীনের নামায বলা হলে এ একথা বলাও কি অপরিহার্য যে, মাগরিবের পরের নফল নামাযও আওয়াবীনের নামায হবে না? বা সেটাকে আওয়াবীনের নামায বলা ঠিক হবে না? এটা তো ফজর মাগরিবের মতো ওয়াক্তের সাথে সম্পৃক্ত কোনো নাম নয় যে, এক নাম দুই নামাযের জন্য হতে পারবে না। সালাতুল আওয়াবীনের অর্থ কী? এর অর্থ হল, যারা খুব বেশি আল্লাহমুখী হয় তাদের নামায। তাছাড়া অনেক সাহাবী-তাবেয়ীন থেকে সহীহ সনদে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময় নফল পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত।
নামাযটি নিয়ে একটি ভুল ধারণা
কারো কারো ধারণা, আওয়াবীনের নামায নির্দিষ্টভাবে ছয় রাকাত। অতএব যদি কেউ আওয়াবীন পড়তে চায় তাহলে তাকে ছয় রাকাতই পড়তে হবে। অন্যথায় পড়বে না। এমন ধারণা অবশ্যই পরিহারযোগ্য। এখানে মাগরিবের পর দুই রাকাত সুন্নতের পর দুই রাকাত, চার রাকাত, ছয় রাকাত যত রাকাত ইচ্ছা কেউ পড়তে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে এমন কোনো রাকাত সংখ্যা নেই যার বিপরীত করাটা গুনাহ বা মাকরূহ! এক হাদীসে তো এসেছে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের পর থেকে ইশা পর্যন্ত নামায পড়েছেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা,
নামাযের নিয়ত
আমি দুই রাকাত আওয়াবীনের নিয়ত করছি।
পবিত্র হজ আসন্ন। হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেছেন। সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত বাদশাহ আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে (কেএআইএ) বিমান অবতরণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। কেএআইএ’র পরিচালক আবদুল হামিদ আবাল আরিই জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪৬৯টি বিমানে ১ লাখেরও বেশি হজযাত্রী হজ টার্মিনালে পৌঁছেছেন। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারার প্রক্রিয়াকে বেশ দ্রুততর করেছে। আগে যেখানে ইমিগ্রেশনসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে ৩ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হতো, এখন সেখানে প্রয়োজন হবে ৪৫ মিনিট। সার্বক্ষণিকভাবে চালু রয়েছে হজ টার্মিনালের জয়েন্ট অপারেশন্স কক্ষটি। ফলে, এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না পবিত্র হজব্রত পালনে যাওয়া হাজীদের। এ খবর দয়েছে অনলাইন সৌদি গ্যাজেট। আবদুল হামিদ বলেন, আশা করা হচ্ছে দুল যিলহজের শুরুতে ফ্লাইটের সংখ্যা অনেক বাড়বে এবং হজ টার্মিনালে প্রতি ঘণ্টায় ৬টি করে বিমান অবতরণ করবে। দ্য জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন (জিএসিএ) হাজীদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে একত্রিত বা অঙ্গীভূত করেছে হজ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তারা নতুন এক্যবদ্ধ ব্যবস্থাপনার আওতায় কাজ করছে। অন্যান্য আরও সংস্থা এবং বিভাগও এই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এদিকে হজ মন্ত্রণালয়ের ই-পোর্টাল সার্ভিস হাজীদের জন্য গত ১৬ই আগস্ট চালু হয়েছিল। পোর্টালটি আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকবে। সৌদি আরবের নাগরিক ও দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য হজের জন্য নিবন্ধনের এ কার্যক্রম চালু থাকবে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, হাজীদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন হজ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে ইলেক্ট্রনিক পোর্টালটি। মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট সংখ্যক হজ প্রচারণা ও হজের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে। হজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে হাজীরা তাদের পছন্দের ও যথাযথ প্যাকেজ ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারবেন। ওই সূত্রে বলা হয়েছে, হজের জন্য নিজেদের পছন্দের সুবিধা ও সেবাসমূহ বেছে নেয়ার জন্য একটি ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন তাদের সাহার্য্য করবে।
ইসলাম ডেস্ক: মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার ছালাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া। (অর্থাৎ কিছু লোকে কাজটি করলে অন্যরা দায়মুক্ত হবে। অন্যথা সকলেই গুনাহগার হবে)
গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার পিতা। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ।
স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরকে গোসল দিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছা আয়েশা (রা কে বলেন: “তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যু বরণ কর, তবে আমি তোমার গোসল দিব।” (আহমাদ, হাদীছ সহীহ্) আর আবু বকর (রা ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আবর্দু রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)
মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোন পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে।
গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে (মুছে) দিবে।
কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম। আল্লাহ্ বলেন: (ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً) “আপনি তাদের (কাফের মুনাফেকদের) উপর কখনই জানাযা সালাত আদায় করবেন না।” (তওবাহ্- ৪৮)
গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অত:পর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (না তাকিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং সালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।
পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।
গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী (সা তাঁর কন্যা যায়নাবের (রা শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশী বড় থাকে তবে তা কেটে দেয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না।
সাত বার গোসল দেয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে ওযু করাবে।
কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার।
মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে।
হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী (সা বলেন: “তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ধর্ম যুদ্ধে শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না, এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা নবী (সা “ওহুদের শহীদদের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে গোসল ছাড়া তাদের পরিহিত কাপড়ে দাফন করা হবে।” (বুখারী) “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম)
গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার ছালাত আদায় করবে। কেননা নবী (ছা বলেন: “মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস অতিক্রম করে তখন সেখানে একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” (মুসলিম) আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি মাংশের টুকরা গণ্য হবে। যা কোন গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোন স্থানে মাটিতে পুঁতে দেয়া হবে।
মৃত ব্যক্তি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খন্ড-বিখন্ড হওয়ার কারণে বা পানি না পওয়ার কারণে যদি তাকে গোসল দেয়া সম্ভব না হয়, তবে পূর্ব নিয়মে তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
শেয়ার করে বিষয়টি সবাইকে শেখার সুযোগ দিন।
ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যাতে আমরা সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ধর্ম প্রভৃতি সকল কিছুরই রূপায়ন দেখতে পাই। কোনো জীবনব্ যবস্থা পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও আইন-কানুন অত্যাবশ্যক। পবিত্র কুরআন এ জীবন ব্যবস্থা পরিচালনার মৌলিক আইন-কানুন ও বিধি-বিধান ব্যতীত আর কিছুই নয়।
সাধারণ জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা ছাড়াও কুরআনের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজে পবিত্র কুরআনের অংশ বিশেষ মূল আরবিতে পাঠ করতে হয়। এ জন্য ইসলাম যেখানেই গিয়েছে, আরবিতে গ্রন্থিত এর কোষ-গ্রন্থটি আর এর ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। ফলে, বিভিন্ন দেশে মানবগোষ্ঠীকে ইসলাম কেবল ধর্মান্তরিতই করেনি বরং সেখানকার ভাষাকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। কুরআনের প্রভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের এক-তৃতীয়াংশ লোক আরবি ভাষীতে পরিণত হয়েছে। তদুপরি এশিয়া ও আফ্রিকার বহু ভাষা, যথা— ফুলানি, হাউসা, উলফ, সোয়াহিলি, উর্দু, ফার্সি পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি প্রভৃতি আজও আরবি বর্ণমালায় লেখা হয়। এ থেকে একটি বিষয় স্বচ্ছ যে, কুনআন সর্বতভাবে প্রভাব তৈরি করে। এই কুরআনের সাথে রমজানের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দেহের সঙ্গে পোশাকের যেমন নিবিড় সম্পর্ক, রমজানের সঙ্গে কুরআনের সর্ম্পকটা তেমনি গভীর। মানবজাতির ইহ ও পরকালীন সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এই মহাগ্রন্থ রহমত, রবত মাগফিরাতের পবিত্র রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমজান হল এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং পথ চলার নির্দেশিকা ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ। [সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫]
কুরআন ও রমজান বান্দার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজান এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! সারাদিন আমি তাকে খাবার এবং বৈধ উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করে নাও। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখছি। রাতের ঘুম ছেড়ে দিয়ে সে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদে আমায় তিলাওয়াত করেছে। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ তুমি কবুল করে নাও। রাসূল (সা.) বলেন, রোজা এবং কুরআনের সুপারিশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে নিয়ে বান্দাকে মাগফিরাত এবং ক্ষমার পুরস্কারে ভূষিত করবেন। [মিশকাত শরীফ : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা-১৭৩]
সুতরাং আসুন আমরা কুরআন পাঠ ও এর গবেষণায় মনোযোগ দিই। কুরআনের কারণে যেমন রমজানের মর্যাদা, তেমনি অন্যান্য কয়েকটি আসমানি কিতাবও এই রমজান মাসে নাজিল হয়েছে, এদিক থেকে রমজানের মর্যাদার উৎস একাধিক।
মুসনাদে ওয়াসেল বিন আসকা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজানের ১ম রাতে হযরত ইবরাহীমের (আ.) সহীফা, ৬ই রমজান হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত, ১৩ই রমজান ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল এবং ২৪ শে রমজান (দিবাগত রাত) কুরআন নাজিল হয়েছে। কথিত আছে যে, ১৮ই রমজান হযরত দাউদ (আ.)-এর নিকট যাবুর কিতাব নাজিল হয়েছে।
এই রমজান মাসেই অতীতের উম্মতগুলোর কাছেও আল্লাহর হেদায়াতের বাণী এসেছিল। এদিক থেকে রমজান হচ্ছে, মহাকল্যাণ, পুরস্কার ও হেদায়াতে ভরা মওসুম। তাইতো রমজানে কুরআন পড়া ও শেখা আরও বেশি উত্তম।
কুরআন এসেছে মানুষকে সহজ-সরল পথ দেখাতে। কুরআন হচ্ছে অন্তরের চিকিৎসা ও আলো এবং জ্ঞান ও দলিল। কুরআন হচ্ছে সৌভাগ্য ও সওয়াবের বিষয়। কুরআন হচ্ছে আল্লাহর শিক্ষা ও চিরন্তন শাসনতন্ত্র। তাই কুরআনকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ ও অনুধাবনের চেষ্টা চালাতে হবে।
রমজানে কুরআন বুঝার জন্য আমাদের অতীত নেক পূর্ব পুরুষরা যা করে গেছেন তাও আমাদের জন্য উৎসাহের কারণ হতে পারে। হযরত ওসমান (রা.) প্রতিদিন একবার কুরআন খতম দিতেন। ইমাম মালেক (র.) রমজান আসলে কুরআন পড়া ছাড়া বাকি সব কাজ বন্ধ করে দিতেন। তিনি শিক্ষা দান, ফতোয়া ও লোকজনের সাথে বসা বন্ধ করে দিয়ে বলতেন এটা হচ্ছে কুরআনের মাস।
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফিয়ী (র.) রমজানে তারাবীর সালাত ছাড়াই ৬০ বার কুরআন খতম করতেন। আবু হানিফা (র.) রমজানে শুধু কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি দিনে এক খতম, রাতে এক খতম পড়তেন। রমজানে খুব কমই কেউ তার সাথে কথা বলতে পারতো। রমজান এলে ইমাম জুহরী বলতেন, রমজান হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত ও খান খাওয়ানোর মাস। ইমাম মালেক (রা.) রমজান এলে হাদিস অধ্যয়ন ও জ্ঞানীদের আসর ত্যাগ করতেন এবং শুধু কুরআন অধ্যয়নে ব্যস্ত থাকতেন। তারা এ মাসকে সৃষ্টির সাথে বয়কট এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্কের মাস বলে অভিহিত করতেন।
এখানে আমরা পয়েন্ট আকারে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে দৃকপাত করছি।
কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব
১. কুরআন শিক্ষা ফরয : প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবি করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা—
﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١)
অর্থ: ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আলাক : ১)।
কুরআন শিক্ষায় কোনো প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
�تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ�
অর্থ: ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’ (মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ : ৮৫৭২)।
২. সালাত আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা : আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের ওপর প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। সালাত আদায় করার জন্যও কুরআন শিখতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে—
﴿ فَٱقۡرَءُواْ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]
অর্থ : ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ (সূরা আল-মুযযাম্মিল : ২০)।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
�لاََ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ�.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। (সহীহ বুখারী : ৭৫৬)
৩. কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা : কুরআন মাজীদে কুরআন প্রচারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রচার-প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে? সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে বলা হয়েছে—
﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ﴾ [المائدة: ٦٧]
অর্থ: হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও (সূরা মায়িদাহ : ৬৭)।
৪. কুরআন শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি : মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এ জন্য কুরআনে বলা হয়েছে—
﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ٢٨ ﴾ [الرعد: ٢٨]
অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ (সূরা আর-রা‘দ : ২৮)।
৫. হেদায়াত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা : কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সে জন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে । কুরআনে বলা হয়েছে—
﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ﴾ [الاسراء: ٩]
অর্থ: ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’। (সূরা বনি ইসরাঈল : ০৯)।
৬. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা : প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হল জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদিসে এসেছে—
�اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ�.
অর্থ: সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (মুসনাদ আহমাদ : ৬৬২৬)।
প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা প্রত্যেকে বাকি যে কটা দিন রমজানের রোজা রয়েছে এর প্রত্যেকটি দিন হেলা না করে কাজে লাগাই। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে নিজের কামাই হাসিল করি। সামগ্রিক জীবনে কুরআনের শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই। আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক এনায়েত করুন। আমিন।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
রোজায় যে জিনিসগুলো থেকে বিরত থাকতে হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন সম্পর্ক বা সহবাস। কেউ যদি এই কাজটি রোজার দিন করে বসে তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এর প্রমাণ হচ্ছে সূরা বাকারাতে আল্লাহ্র বক্তব্যঃ “রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে”। [আল-বাকারাঃ ১৮৭] এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে রোজার দিনে সহবাস হালাল করা হয়নি।
যৌন সম্পর্ক বলতে শরি’আর ভাষায় বোঝানো হচ্ছে পুরুষাঙ্গের সাথে স্ত্রী-অঙ্গের মিলন। এক্ষেত্রে বীর্যপাত শর্ত নয়। অর্থাৎ এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে, বীর্যপাতের ঘটনা না ঘটলেও। শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীন এই মতটিই ব্যক্ত করেছেন। যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেই রোজা পরবর্তীতে কাযা করতে হবে এবং “ভারী কাফ্ফারা” দিতে হবে। সেই প্রসঙ্গ পরে আসছে।
কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক করেন সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না। এর কারণ আমরা আগে উল্লেখ করেছি। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) ইবন ‘আব্বাস বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন”। [প্রসঙ্গত আজকাল যেহেতু খবর পাওয়া যাচ্ছে নারীরা জোর করে পুরুষদের বিয়ে করছেন, ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্য অনুরূপ ফিকহি আলোচনা করতে হতে পারে।
৫.৮ শারীরিক স্পর্শ বা চুম্বন
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কামনাবসত শারীরিক স্পর্শ যেমন স্রেফ চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম। চুম্বন যদি কামনাবশত না হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতি নেই।
৫.৯ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বীর্যপাত ঘটানো
যদি কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের বীর্যপাত ঘটান সেক্ষেত্রে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন নিজে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে অথবা স্ত্রী কর্তৃক হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত ঘটে তাহলে রোজা ভাঙবে। কোনো ব্যক্তি যদি যৌনউত্তেজক কোনো কিছু দেখে, শোনে বা পড়ে – এক্ষেত্রে বীর্যপাত ঘটলে তার রোজা ভাঙবে। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে করা কোনো কাজের ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ভাঙবে।এভাবে রোজা ভেঙ্গে গেলে কাযা করাই যথেষ্ট, যৌনমিলনের ক্ষেত্রে যে ভারী কাফ্ফারা দিতে হয় সেটি দিতে হবে না। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ঘটানো বীর্যপাতের ফলে যে রোজা ভাঙবে তার প্রমাণ হচ্ছে হাদীস কুদসীতে আল্লাহ বলছেনঃ “সে (বান্দা) আমার জন্যই খাদ্য, পানীয় ও কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে”। [বুখারী] যুক্তিসংগত কারণেই যে ব্যক্তি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বীর্যপাত ঘটায় সে কামনা-বাসনা বা “শাহওয়াহ” পরিত্যাগ করল না।
তবে বীর্যপাত যদি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে না হয় সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না। যেমন স্বপ্নদোষের ফলে রোজা ভাঙবে না। কোনো ব্যক্তির চিন্তায় যদি আচমকা কোনো যৌন ভাবনা এসে উদয় হয় বা কোনো যৌন উত্তেজক চিন্তা চলে আসে যা সে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মাথায় আনেনি এবং এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না।
৫.৯ মাযী ও মানীর মাঝে পৃথকীকরণ
বীর্যপাত প্রসঙ্গে আমাদের দুটি তরলকে আলাদা করতে হবে। এদের একটি হচ্ছে মাযী (المذي)। এটি একটি স্বচ্ছ পিচ্ছিল পদার্থ যা চূড়ান্ত বীর্যপাতের আগে নিঃসরিত হয় ফোঁটায় ফোঁটায়। মাযী নিঃসরণের ফলে রোজা ভাঙে না (যদি না সেটা যৌনমিলনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, যেক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের সাথে যোনির মিলনই যথেষ্ট রোজা ভাঙার জন্য)। শুধু মাযী নিঃসরণের ফলে যেহেতু রোজা ভাঙে না, কাযারও প্রশ্ন আসছে না। যদিও ইমাম মালেকের একটি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মাযী নিঃসরণকে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেছেন, কিন্তু অধিকাংশ ‘উলামা একে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেন না।
মানী হচ্ছে যাকে বাংলায় বীর্য। মানী বের হয়ে আসে চূড়ান্ত বীর্যপাতের সময় দফায় দফায়। এটির সাদা থিকথিকে একটি পদার্থ। মানী বের হলেই কেবল রোজা ভাঙবে উপরেল্লিখিত কারণগুলোতে। এ ব্যাপারে কোনো ইখতিলাফ নেই।
রোজায় যে জিনিসগুলো থেকে বিরত থাকতে হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন সম্পর্ক বা সহবাস। কেউ যদি এই কাজটি রোজার দিন করে বসে তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এর প্রমাণ হচ্ছে সূরা বাকারাতে আল্লাহ্র বক্তব্যঃ “রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে”। [আল-বাকারাঃ ১৮৭] এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে রোজার দিনে সহবাস হালাল করা হয়নি।
যৌন সম্পর্ক বলতে শরি’আর ভাষায় বোঝানো হচ্ছে পুরুষাঙ্গের সাথে স্ত্রী-অঙ্গের মিলন। এক্ষেত্রে বীর্যপাত শর্ত নয়। অর্থাৎ এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে, বীর্যপাতের ঘটনা না ঘটলেও। শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীন এই মতটিই ব্যক্ত করেছেন। যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেই রোজা পরবর্তীতে কাযা করতে হবে এবং “ভারী কাফ্ফারা” দিতে হবে। সেই প্রসঙ্গ পরে আসছে।
কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক করেন সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না। এর কারণ আমরা আগে উল্লেখ করেছি। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) ইবন ‘আব্বাস বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন”। [প্রসঙ্গত আজকাল যেহেতু খবর পাওয়া যাচ্ছে নারীরা জোর করে পুরুষদের বিয়ে করছেন, ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্য অনুরূপ ফিকহি আলোচনা করতে হতে পারে।
৫.৮ শারীরিক স্পর্শ বা চুম্বন
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কামনাবসত শারীরিক স্পর্শ যেমন স্রেফ চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম। চুম্বন যদি কামনাবশত না হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতি নেই।
৫.৯ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বীর্যপাত ঘটানো
যদি কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের বীর্যপাত ঘটান সেক্ষেত্রে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন নিজে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে অথবা স্ত্রী কর্তৃক হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত ঘটে তাহলে রোজা ভাঙবে। কোনো ব্যক্তি যদি যৌনউত্তেজক কোনো কিছু দেখে, শোনে বা পড়ে – এক্ষেত্রে বীর্যপাত ঘটলে তার রোজা ভাঙবে। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে করা কোনো কাজের ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ভাঙবে।
এভাবে রোজা ভেঙ্গে গেলে কাযা করাই যথেষ্ট, যৌনমিলনের ক্ষেত্রে যে ভারী কাফ্ফারা দিতে হয় সেটি দিতে হবে না। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ঘটানো বীর্যপাতের ফলে যে রোজা ভাঙবে তার প্রমাণ হচ্ছে হাদীস কুদসীতে আল্লাহ বলছেনঃ “সে (বান্দা) আমার জন্যই খাদ্য, পানীয় ও কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে”। [বুখারী] যুক্তিসংগত কারণেই যে ব্যক্তি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বীর্যপাত ঘটায় সে কামনা-বাসনা বা “শাহওয়াহ” পরিত্যাগ করল না।
তবে বীর্যপাত যদি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে না হয় সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না। যেমন স্বপ্নদোষের ফলে রোজা ভাঙবে না। কোনো ব্যক্তির চিন্তায় যদি আচমকা কোনো যৌন ভাবনা এসে উদয় হয় বা কোনো যৌন উত্তেজক চিন্তা চলে আসে যা সে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মাথায় আনেনি এবং এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না।
৫.৯ মাযী ও মানীর মাঝে পৃথকীকরণ
বীর্যপাত প্রসঙ্গে আমাদের দুটি তরলকে আলাদা করতে হবে। এদের একটি হচ্ছে মাযী (المذي)। এটি একটি স্বচ্ছ পিচ্ছিল পদার্থ যা চূড়ান্ত বীর্যপাতের আগে নিঃসরিত হয় ফোঁটায় ফোঁটায়। মাযী নিঃসরণের ফলে রোজা ভাঙে না (যদি না সেটা যৌনমিলনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, যেক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের সাথে যোনির মিলনই যথেষ্ট রোজা ভাঙার জন্য)। শুধু মাযী নিঃসরণের ফলে যেহেতু রোজা ভাঙে না, কাযারও প্রশ্ন আসছে না। যদিও ইমাম মালেকের একটি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মাযী নিঃসরণকে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেছেন, কিন্তু অধিকাংশ ‘উলামা একে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেন না।
মানী হচ্ছে যাকে বাংলায় বীর্য। মানী বের হয়ে আসে চূড়ান্ত বীর্যপাতের সময় দফায় দফায়। এটির সাদা থিকথিকে একটি পদার্থ। মানী বের হলেই কেবল রোজা ভাঙবে উপরেল্লিখিত কারণগুলোতে। এ ব্যাপারে কোনো ইখতিলাফ নেই।