December 6, 2024
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : দেশের তিন মহাসড়কে যানজট দিন দিন বাড়ছে। এর অনেকগুলো কারণ আছে। আমরা জানি, দুই ঈদের সময় অস্বাভাবিক রকমের বেশি যাত্রী চলাচল করে রাস্তাগুলোতে। সাধারণ যে যাত্রী পরিবহন বা যাত্রী সংখ্যা তার চেয়ে বহুগুণ বেশি যাত্রী চলাচল করে এই সময়ে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বাস, ট্রাক ইত্যাদি চলাচল করে। সাধারণ সময়ে সড়কের যে ধারণ ক্ষমতা সেই তুলনায় অনেক বেশি চাপ লক্ষ্য করা যায়। শুধু যাত্রীবাহী পরিবহনই নয়, বিশেষভাবে কুরবানির ঈদে কুরবানির পশুবাহী যানবাহন বিপুল সংখ্যায় চলাচল করে। এটা যানজটে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এটা পৃথিবীর আর কোনো শহরে হয় বলে আমার জানা নেই। আমাদের মহাসড়কগুলো ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। সড়ক তো তৈরি করা হয় কিন্তু সেখানে উন্নতমানে তৈরি হয় না এটাও একটা কারণ। আবার এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার ফলে সমস্যাটা আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
আবহাওয়াজনিত কারণেও এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকের চেয়ে অতিবৃষ্টি হলে সড়কগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের দেশের সড়কগুলো পিচঢালা হওয়ার কারণে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কংক্রিটের হলে হয়তো এত দ্রুত নষ্ট হতো না। এবার বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় সড়ক ভেঙে গেছে, সেতু ভেঙে গেছে, কালভার্ট ভেঙে গেছে এসব কারণে যানজটটা আরও বেশি হচ্ছে। ব্যবস্থাপনার সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বহুবিধ সমস্যার কারণে এটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের যানজট কমিয়ে আনা একেবারে সহজ হবে না। মানুষের চলাচল কিভাবে কমাবেন। এই সমস্যাগুলো দূর করতে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন দ্বিকেন্দ্রিক করতে হবে। এটা তো আমি বলে ফেললাম দুটো শব্দের মাধ্যমে কিন্তু এটা করাটা খুব কঠিন। তবে এটাই হলো দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা। ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন দ্বিকেন্দ্রিকরণ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আগামী পাঁচ বছরে, দশ বছরে, বিশ বছরে একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতেই হবে। অর্থাৎ বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহরে যেন উন্নয়ন হয়। দেশের সব মানুষকে যেন ঢাকায় আসতে না হয়। সব মানুষকে আবার ঢাকা থেকে যেন বেরিয়ে না যেতে হয়।
পৃথিবীর আর কোনো শহরে এই মাত্রায় যানজট লক্ষ্য করা যায় না। কম বেশি হয়। যেমন পূজার সময় কলকাতা, দিল্লিতে যানজট হয় কিন্তু ঢাকার মাত্রায় হয় না। কাজেই এই সমস্যা সমাধানে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন দ্বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। মহাসড়কগুলোর লেন বাড়াতে হবে। এবং এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কের উপর চাপ কমাতে নৌ ও রেলপথ সম্প্রসারণ করতে হবে। রেলওয়ের মান উন্নয়ন করতে হবে, তাহলে মহাসড়কের উপর চাপটা কমবে।
পরিচিতি: স্থপতি ও শিক্ষাবিদ
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি