September 24, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক সফরে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে তা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো শর্ত নেই। আমরা আমাদের মতো করে এ অর্থ ব্যয় করতে পারব।’
বুধবার রাতে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ রেখেই বন্ধুত্বপূর্ণভাবে ভারতের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো শর্ত দিয়ে আমরা কিছু নেই না।‘
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে এর আগে এক বিলিয়ন ডলার পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে এসেছিল। এগুলো মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এ সব উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংক থেকে একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যে জিডিপির টার্গেট করেছে তা পূরণ করে দেশকে যেভাবে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে, সেভাবে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যে যে খাতে অর্থ ব্যয় করা প্রয়োজন সেগুলো মাথায় রেখে অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণ করা হবে।’
এদিকে, সরকারি দলের সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের আইনসভায় সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন সাত হাজার ১১০ একর। চুক্তি অনুযায়ী যে ছিটমহল যে দেশের অভ্যন্তরে আছে, সেই দেশ ওই ছিটমহলের মালিক হবে। এই বিনিময়ের ফলে ছিটমহলবাসীর মানবিক সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লাভবান হবে।’
মোস্তফা রশিদীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তিকে অনেকে ‘দেশ বেচা’, ‘গোলামির’ ও ‘দাসত্বের চুক্তি’ বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। তারাই এখন এই চুক্তিকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এটি আসলে এদের রাজনৈতিক চরিত্র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি করেছে। বিরোধীরা বলেছিলেন, “এই পানিতে মাছ পাওয়া যাবে না। অজুও করা যাবে না।” তখন আমি বলেছিলাম, আপনাদের নেত্রীকে পানিতে নামান। দেখেন সেখানে কোমর পানি না হাঁটু পানি। আমার এই কথায় তাঁরা ক্ষেপেও গিয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে যেসব প্রটোকল ও চুক্তি সই হয়েছে। এতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হবে। এভাবে প্রতিটি চুক্তি প্রটোকল এবং অন্যান্য সমঝোতা স্মারকগুলো দেখলে দেখা যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্জন করেছে। উপর দিয়ে ঝগড়াঝাটি করে ভিতরে ভিতরে তোষামোদি করবেন, এভাবে কোন অর্জন হয় না। বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফরকালে মোট ৬টি চুক্তি, ৬টি প্রটোকল ও অন্যান্য ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমানে নতুনমাত্রা লাভ করেছে।