December 6, 2024
ডেস্ক রিপোর্ট : ইজারাদারদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাট। দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও সরকার নির্ধারিত কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এবছর দর কম পড়েছে পাঁচটি হাটের। যাতে সিটি করপোরেশন বাধ্য হয়েই কম দরে হাট ইজারা দেয়। সেজন্য সিন্ডিকেটটি এ কাজ করছে। ওই হাটগুলোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। ফলে দুই সিটি করপোরেশনের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এ বছর দুই সিটি করপোরেশন ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১৩টি এবং উত্তর সিটিতে ৯টি। দক্ষিণের হাটগুলো হচ্ছে-মেরাদিয়া বাজার,উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ,কমলাপুরের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ,কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা,জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ,কামরাঙ্গী চর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা,আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা,ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা,দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা,শ্যামপুর বালুর মাঠ ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা।
এই হাটগুলোর মধ্যে প্রথম দফায় ২৬ জুলাই ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের বিপরীতে কোনও দরপত্রই জমা পড়েনি। এছাড়া গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাট এবং আরমানিটোলা হাটের বিপরীতে সরকারি মূল্যের (হাটের গত তিন বছরের ইজারা মূল্যের গড়) চেয়ে কম মূল্য দেওয়া হয়। পরে এ পাঁচটি হাটের দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।
দ্বিতীয় দফায়ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের জন্য একটি দরপত্রও জমা পড়েনি। তৃতীয় দফায় হারুন-অর রশীদ নামে একজন সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ৬৮ লাখ টাকা। যা সরকারি মূল্য এক কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৯১৬ টাকা থেকে ৪৪ লাখ ১২ হাজার টাকা কম।
গরুর হাট (ছবি: সংগৃহীত)
বাকি চারটির মধ্যে শুধু ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে মাত্র ২১ হাজার ২৫০ টাকা বেশি মূল দিয়ে হাজী মো.শামসুজ্জোহা নামে এক ব্যক্তি ইজারা পান। বাকি তিনটি হাটের বিপরীতে বাধ্য হয়েই তৃতীয় দফার জন্যও দরপত্র আহ্বান করে সিটি করপোরেশন। এতেও সরকারি মূল্য থেকে কম মূল্য দিয়েছে ইজারায় অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়া প্রতিটি হাটেই মাত্র দুজন করে দরপত্র জমা দিয়েছে।
আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা নিয়ে গঠিত হাটের বিপরীতে দ্বিতীয় দফার টেন্ডারে ইংলিশ রোডের আশিকুর রহমান সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলেন এক কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা সরকারি মূল্যে থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা কম। তৃতীয় দফায় তিনি দরপত্রেই অংশই নেননি। এ হাটের বিপরীতে তৃতীয় দফায় অংশ নেন দুজন। এতে সর্বোচ্চ দর এক কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়েছেন এরফান এন্টারপ্রাইজের জাহাঙ্গীর আলম। ফলে এ হাটে সরকারি মূল্য চার কোটি ৮৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭০ টাকার মধ্যে তিন কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা দর কম উঠেছে।
একইভাবে কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটের সরকারি মূল্য ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা। কিন্তু আমির খান নামে এক ইজারা প্রত্যাশী দর দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা সরকারি মূল্যের চেয়ে ৩২ লাখ ১৬ হাজার ১৭৩ টাকা কম।
একই অবস্থা গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠের হাটের। এ হাটটির সরকারি মূল্য এক কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার ৪২৭ টাকা। দ্বিতীয় দফায় সৈয়দ মাসুম আলী সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলেন ৬২ লাখ টাকা। তৃতীয় দফা দরপত্রেও তিনি ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন। ফলে এ হাটে ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা কম দর উঠেছে।
কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ হাটগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে হাট ইজারার সিদ্ধান্ত।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও হাটবাজার ইজারা কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চারটি হাটের কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় নীতিমালা অনুযায়ী তিনটি হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আর আরমানিটোলা খেলার মাঠের হাটটি বাতিল করা হয়েছে।’
সিন্ডিকেটের বিষয়ে জনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। ব্যবসায়ীরা তাদের পলিসি অনুযায়ী কাজ করে থাকেন।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এ বছর ৯টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটি হাটের ইজারাদার চূড়ান্ত হয়েছে। বনরূপা ও আশিয়ান সিটির পশুহাটের ইজারা চূড়ান্ত হয়নি। বনরূপার হাটে ৫১ লাখ এবং আশিয়ান সিটির হাটে ৫৩ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে। কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় এ দুটি হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে হাট দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’বাংলাট্রিবিউন।