December 6, 2024
এম সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অভিপ্রায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শরিক বলে পরিচিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে কিছু বিষয়ে ধারণা এবং মতামত নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই দেশের কিছু বরণ্য ব্যক্তি, যাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে গণ্য করা হয় তাদের সঙ্গে এবং গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এখন চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা। আলোচনার এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কারণ বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা তখনই পায় যখন জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ না থাকে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচন কমিশনের একার কাজ নয়। সবার, বিশেষ করে শরিক বলে বিবেচিতদের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন। যার প্রথমেই রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী আইন ও বিধান মেনে চলা।
যাহোক আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের এবার একমাত্র চাওয়া ছিল যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য হয়। নির্বাচন কমিশনও তেমনটাই ব্যক্ত করেছে। যেহেতু এ পর্যন্ত এসব আলোচনা মোটা দাগে হচ্ছে, নির্দিষ্ট কোনো ছকে হয়নি তাই বহু ধরনের মতামত এসেছেÑ যার সারবত্তা বের করাই দুরূহ হবে। তবে দুটি বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত তুলে ধরা হয়েছে, যা নির্বাচন কমিশনের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই এ দুটি বিষয়ই সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র নিয়ামক নয়। এর একটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন এবং অপরটি ‘না ভোটের’ বিধান যুক্ত করা। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কী হবে না, হলে কীভাবে হবে এ বিষয়টি রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে পড়েছে। এর কারণ ২০১১ সালে সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বাদ দেওয়া। আলোচনায় এ দুটি বিষয় উঠে আসায় পরবর্তীকালে যেভাবে আলোচিত হয়েছে তাতে মনে হতে পারে ভালো নির্বাচনের জন্য এ দুটি বিষয়ই অন্তরায়। তেমনটা মোটেই নয়, এ দুই বিষয় অনুষঙ্গ মাত্র। যারা এ দুটি বিষয়ের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী না রাখা এবং না ভোটের বিধান ‘যা এখন’ আমাদের প্রক্রিয়ায় নেই, ভারতে গত নির্বাচন থেকে যুক্ত হয়েছে। না রাখার কথা জোর দিয়ে কেন বলেছেন তারা, কেন নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন তার কোনো জোরালো যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।
যেমনটা আগেও বলেছি, সামরিক বাহিনীর সাহায্য এ পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োজন হয়েছে, এ নির্বাচন এ সহযোগিতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে বা হতে পারবে তা মনে হয় না এবং বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, ওই সময়ে সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন এবং তাদের কার্যক্রম রিটার্নিং অফিসার তথা নির্বাচন আইনের আওতায় হবে, না সিআরপিসির আওতায় হবে? এখানেই প্রয়োজন মতামতের, যদিও আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কারও মতামত খুব জরুরি তেমনটা মনে করি না।
এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে ভোটারদের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের পরিবেশ আয়ত্তে রাখার জন্য। নির্বাচন কমিশন যদি শুধু অস্ত্রবিহীন আনসার-ভিডিপি দিয়েও অথবা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাতে পারে সেটাই হবে কাম্য। তবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নির্বাচনী সংস্কৃতির পরিবেশে তা সুখ-স্বপ্নই মাত্র। আদৌ এ স্বপ্ন বাংলাদেশে কোনোদিন বাস্তব হবে কিনা জানি না। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেকের অনেক মত থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তেমন থাকেনি।
আগামী নির্বাচনের পরিবেশ বা নির্বাচন কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে। কারণ বিগত দিনগুলোতে সাধারণ মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, যার দায়-দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সব সময়ই আশাবাদ প্রকাশ করেছে যে, তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। হালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বর্তমান সংবিধানের আওতায় দলীয় সরকারের অধীনেও শুধু নির্বাচন সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব যদি সে পরিবেশ তৈরিতে সবার প্রচেষ্টা এবং সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
আলোচনা শুরু করেছিলাম নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর কী ভূমিকা থাকবে তা নিয়ে। আমি মনে করি না এটি একটি বিতর্কের বিষয়। বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তবে প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়োগ দিতে হলে তা নির্বাচনী আইন, আরপিও-১৯৭২ সংযোজন করতে হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি।
আমাদের দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অধিকাংশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত আধুনিক তাত্ত্বিক কাঠামোতে উদাহরণ বলে বিবেচিত হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনায় একটি অত্যন্ত কার্যকরি শক্তিশালী নির্বাচনী আইন রয়েছে। রয়েছে সহজে আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের ব্যবস্থা। একটি স্বাধীন এবং আইন দ্বারা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে এবং মনোনয়ন নির্ধারণে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনি ক্ষমতা ও নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আইনের বিধান ও আদালতে আবেদন করার ও ত্বরিত মীমাংসার ব্যবস্থা। তদুপরি নির্বাচন কমিশনের বিশাল বহরের মাঠ পর্যায়ের এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহের (খড়মরংঃরপং) ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। এতকিছুর পরও প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক যে, তা হলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেন গ্রহণযোগ্য হবে না? তাত্ত্বিকভাবে হওয়ার কথা, তবে বাস্তবটা কি তেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে অন্তর্নিহিত রয়েছে তাত্ত্বিক ব্যবহারিক বা বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে তফাৎ। আমাদের দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুখকর হয়নি, এর উদাহরণ টানার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায়ও হিমশিম খেতে হয়েছে। দু-চারটি ভালো স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সার্বিক বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। স্মরণ থাকার কথা যে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো কেমন হয়েছিল তা নিয়ে কথা বলারও তেমন কিছু নেই।
যেমনটা বলেছি, তাত্ত্বিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব কাঠামোই বিদ্যমান তথাপি দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে এযাবৎ নির্বাচন নিয়ে এত বিতর্কের কারণ প্রধানত তত্ত্বকে প্রয়োগে পরিণত করার মতো পরিবেশ তৈরি করা। বিদ্যমান পরিবেশে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অন্তরায়, যেগুলো আমার গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লব্ধ, উল্লেখনীয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা সুবিধাভোগী চধঃৎড়হ পষরহঃ রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। দুটি সামরিক ও আধাসামরিক শাসনের সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা ব্যাপক দলীয়করণ যা ১৯৭৫-এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা, বিশেষ করে স্থায়ী গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় দলীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগ বিস্তারিত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনার সমস্যা।
এ পর্যায়ে আমি সংক্ষিপ্তভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আমাদের মতো দেশে, যেখানে ভালো নির্বাচনের অন্তরায়গুলো দারুণভাবে নির্বাচনের মুখ্য নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় তার অন্যতম নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের মতো দেশে যে কোনো নির্বাচনে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে নির্বাচন কমিশনের মাথা ব্যথা এবং সবচেয়ে দুরূহ কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয় নিরাপত্তার বিষয়।
একটি নির্বাচন নিরাপত্তার পরিকল্পনা করতে হয় তিন ধাপে (১) প্রাক-নির্বাচন ভোট গ্রহণ; (২) নির্বাচনের দিন এবং (৩) নির্বাচনের পর। এই তিন ধাপের প্রতিটিতে চার স্তরের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো, এর প্রশিক্ষণ, বাহিনীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের মতো দেশে জনগণের আস্থার বিষয়টি বিবেচনায় এনে স্তরগুলো বিন্যাস করতে হয়। এই স্তরগুলো হলোÑ (১) কাঠামোগুলোর নিরাপত্তা; নির্বাচনী অফিস, রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস, ভোটকেন্দ্রসহ গণনাকেন্দ্র এবং অংশগ্রহণকারী দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অফিসগুলো; (২) নির্বাচনে ব্যবহার্য দ্রব্যাদির নিরাপত্তা; (৩) তথ্যের নিরাপত্তা, ভোটার তালিকা, বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও নির্বাচনের ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট আইনানুগ অন্যান্য তথ্যাদি এবং (৪) ভোটার, জনগণ ও নির্বাচনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা। চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই স্তরের নিরাপত্তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি না হলে ভোটাররা, বিশেষ করে নারী ভোটার ও পক্ষান্তরে সংখ্যালঘু ভোটাররা নির্বাচন থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরত থাকেন।
ওপরে আলোচিত ধাপ এবং স্তর বিবেচনা না করে নিরাপত্তার পরিকল্পনা কার্যকর হয় না। একই সঙ্গে প্রতি ধাপ এবং স্তরের জন্য কী ধরনের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের প্রশিক্ষণ এবং নির্ভরযোগ্য বাহিনীর প্রয়োজন সেটা বিবেচনা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। পরিকল্পনাকালে আরও মনে রাখতে হবে বর্তমান পরিবেশে জঙ্গি হামলার বিষয়টিকেও।
আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা বিষয়টি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তার সামান্য উদাহরণ নির্বাচনী বাজেটে নিরাপত্তার খরচ। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে শুধু নিরাপত্তা বাবদই খরচ হয়েছে একশ নিরানব্বই কোটি বিরানব্বই লাখ নয় হাজার একষট্টি টাকা (১৯৯,৯২,৯০৬১) নির্বাচনী বাজেটের ৭০ শতাংশ (৭০%)। স্মরণযোগ্য যে, মাত্র ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অপরদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যয় ছিল চুরানব্বই কোটি আটষট্টি লাখ ষাট হাজার ছাপান্ন টাকা (৯৪,৬৮,৬০,০৫৬) মাত্র এবং ১৯৯১ সালে খরচ হয়েছিল আটাশ কোটি তেপান্ন লাখ বাহাত্তর হাজার একশ সাঁয়ত্রিশ টাকা মাত্র (২৮,৫৩,৭২,১৩৭)।
শুধু জাতীয় সংসদেই নিরাপত্তার এত বিশাল খরচ নয়, অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আরও বেশি মাত্রায় খরচ হয়েছে এবং হয়। উদাহরণস্বরূপ ২০১৬ সালের ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে ২৪৪,১৫,৩৬,৮৪১ টাকা মাত্র টাকা (দু’শ চৌচল্লিশ কোটি পনেরো লাখ ছত্রিশ হাজার আটশ একচল্লিশ টাকা মাত্র) নিরাপত্তার জন্য খরচ করেও একশর ওপর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউনিয়ন কাউন্সিলের ওই নির্বাচন ছিল এযাবৎ সবচেয়ে বেশি সহিংসপূর্ণ। একই নির্বাচনে ২০১১ সালে খরচ হয়েছিল ১৩৪,৮১,০০,০০০ টাকা (একশ চৌত্রিশ কোটি একাশি লাখ টাকা মাত্র) অবশ্য ওই নির্বাচনে সহিংসতার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে কম। সূত্র : নির্বাচন কমিশন-নির্বাচনী পরিসংখ্যান।
ওপরের পরিসংখ্যান থেকেই প্রতীয়মান, আমাদের দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় যজ্ঞ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। এত ব্যাপক আয়োজন ইঙ্গিত দেয় যে, নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে নিরাপত্তা বিধানই নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। এত বড় যজ্ঞের পরও সুষ্ঠু নির্বাচন করা দুষ্কর যখন রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে এবং জনমনে বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গত কারণে ঘাটতি থাকে। তবে আমার মতে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক প্রশাসনের নিরপেক্ষতা। প্রশাসনের সংজ্ঞায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমার বিদ্যমান রাজনৈতিক বিভাজন এবং সংস্কৃতির কারণ নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কাজেই ওপরের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণের আঙ্গিকে আগামী নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় যা এখন থেকেই শুরু করা উচিত, কী ধরনের বাহিনী কোন ধাপ এবং স্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে তা যেমন আইনি কাঠামো ও নিরাপত্তা পরিকল্পনায় রাখতে হবে, তেমনি রি-অ্যাকটিভ নয় প্রো-অ্যাকটিভ নিরাপত্তার পরিকল্পনায় সামরিক বাহিনী ব্যবহারের প্রশ্নটিরও উত্তর পাওয়া যাবে নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ও সামর্থ্য থেকে। আমি মনে করি, প্রো-অ্যাকটিভ নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে রাখতে নির্বাচনী আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করাই শ্রেয়। কাঠামোতে রাখা মানেই এই নয় যে, সামরিক বাহিনী অথবা আইনে উল্লেখিত সব বাহিনীকেই নিয়োগ দিতে হবে। কোন কোন বাহিনী কোন কোন স্তরের জন্য প্রয়োজন সে নির্ণয় নির্বাচন কমিশনের। কাজেই এ বিষয় নিয়ে বিতর্কও অবান্তর।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। এ কাজ করতে নির্বাচন কমিশনকে যা যা করা প্রয়োজন তেমন ক্ষমতাই সংবিধানের ১১৯ ধারার মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখেই নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন ও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক